পারমিতা দাস, লেখিকা, কলকাতা:
আজকাল আমরা সবাই সবসময় রেগে আছি। কেন রেগে আছি? কারণ প্রতিনিয়ত একটা ভয় আমাদের তাড়া করছে। কিসের ভয়? হেরে যাবার ভয়। কার থেকে হেরে যাবার ভয়? ওটাই তো ঠিক জানা নেই। কিন্তু কথায় বলে জীবন-যুদ্ধ। জীবন যখন একটা যুদ্ধ তখন হার জিত তো থাকবেই। একটা প্রতিপক্ষও থাবে। সেই প্রতিপক্ষ টা যে কে সেটা ঠিকমত ঠাহর করে ওঠা যায় না বলেই প্রতিনিয়ত ভয়, এই বুঝি হেরে গেলাম। সদাসর্বদা একটা মনগড়া প্রতিপক্ষ খাড়া করে নিয়ে আমরা লড়ছি। আমার মাস মাইনে পাশের বাড়ির বিল্টুর মায়ের মাস মাইনের থেকে কম, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, এই বুঝি আমি বিল্টুর মায়ের কাছে হেরে গেলাম। ব্যানার্জীবাবুর মেয়ে দিল্লির এইমসে ডাক্তারি পড়ে আর আমার ছেলে তিন বছর ধরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েও আই আই টি ক্র্যাক করতে পারছে না, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, এই বুঝি আমি ব্যানার্জীবাবুর কাছে হেরে গেলাম। আমি বাপের জন্মে পড়শোনা করিনি, লক্কাবাজি করে কাটিয়েছি। উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া পানের দোকান চালাই, রাতে শুকনো রুটি আর ধোঁকার ডালনা খেতে খেতে মোবাইলে দেখি মুকেশ আম্বানীর বউ সকালে ঘুম থেকে উঠে তিন লাখ টাকা কেজির চা খায় বা দীপিকা পাড়ুকোন- রণবীর সিং ষোল কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছে। অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, আমি তো গোহারা হেরে গেছি মুকেশ আম্বানী বা দীপিকা পাড়ুকোনের কাছে। আমি এক কালে পড়াশোনায় তুখোড় ছিলাম, ক্লাসের ফার্স্ট বয়, বেশ ভালোই চাকরি করি, গাড়ি বাড়ি সবই আছে। হঠাৎ করেই দেখা স্কুলের ফেলু ছেলের সঙ্গে, সে এখন বিশাল বড় ব্যবসাদার। তার সামনে পিছনে হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়ায়। নেতা, মন্ত্রী, যত রাজ্যের কেউকেটাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, আমি ফার্স্ট বেঞ্চার হয়ে বুঝি ওই লাস্ট বেঞ্চারের কাছে হেরে যাচ্ছি। কিন্তু এই যে আমরা সদা সর্বদা রেগে যাচ্ছি ,যার ওপর রাগ হচ্ছে তাকে তো ঠিক বাগে পাচ্ছি না যে মোক্ষম করে রাগটা ঝেড়ে দেব। অতএব আমাদের রাগ জমছে। রাগ বাড়ছে। তাহলে উপায়? উপায় একটাই, আমরা রাস্তায়-ঘাটে, দোকানে-বাজারে, বাড়িতে-অফিসে, ট্রেনে-বাসে-মেট্রোয় যেখানে যেটুকু সুযোগ পাচ্ছি রাগ দেখাচ্ছি। পান থেকে চুন খসলেই শুরু করে দিচ্ছি কথা কাটাকাটি। তা থেকে ঝগড়াঝাটি। তা থেকে গালাগালি। কখনও হাতাহাতি, মারামারিও। কারণ ততক্ষণে এই ঝগড়াঝাটি মারামারিও নিজে নিজেই একটা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, যে যুদ্ধটাও আমরা জিততে চাই। নাহলে ভয়, এই বুঝি হেরে গেলাম। এই বুঝি সামনের জন জিতে গেল।
আচ্ছা ধরুন, জীবনকে যদি আদৌ যুদ্ধ না বলা যায়। ধরুন জীবন একটা যাত্রা। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে কিছুটা রাস্তা হেঁটে যেতে হবে আমাদের। তাহলে তো আমরা কেউ কারোর প্রতিপক্ষ নই। কেউ কারোর প্রতিযোগী নই। আমরা সবাই সহযাত্রী। ধরুন, একটা খুব সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গেছি। এমন একটা পথ দিয়ে হাঁটছি যেখানে চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকালেই নতুন কিছু দেখতে পাওয়া যায়। আমি কি হুড়মুড় করে হেঁটে পথটুকু ফুরিয়ে ফেলব? ফেলব না তো? এই হাঁটাটুকু প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চাইব। সেইরকম জীবনেও গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য তাড়াহুড়ো করে লাভ কি? এই অসাধারণ যাত্রাপথে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে করতে যাওয়াই তো ভালো। কে আমায় পাশ কাটিয়ে হনহন করে হেঁটে গেল তাতে আমার কি আসে যায়? আমি তো আমার যাত্রাপথ উপভোগ করে নিই। কে জানে আবার এই যাত্রার সুযোগ আসে কি না!!!
আজকাল আমরা সবাই সবসময় রেগে আছি। কেন রেগে আছি? কারণ প্রতিনিয়ত একটা ভয় আমাদের তাড়া করছে। কিসের ভয়? হেরে যাবার ভয়। কার থেকে হেরে যাবার ভয়? ওটাই তো ঠিক জানা নেই। কিন্তু কথায় বলে জীবন-যুদ্ধ। জীবন যখন একটা যুদ্ধ তখন হার জিত তো থাকবেই। একটা প্রতিপক্ষও থাবে। সেই প্রতিপক্ষ টা যে কে সেটা ঠিকমত ঠাহর করে ওঠা যায় না বলেই প্রতিনিয়ত ভয়, এই বুঝি হেরে গেলাম। সদাসর্বদা একটা মনগড়া প্রতিপক্ষ খাড়া করে নিয়ে আমরা লড়ছি। আমার মাস মাইনে পাশের বাড়ির বিল্টুর মায়ের মাস মাইনের থেকে কম, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, এই বুঝি আমি বিল্টুর মায়ের কাছে হেরে গেলাম। ব্যানার্জীবাবুর মেয়ে দিল্লির এইমসে ডাক্তারি পড়ে আর আমার ছেলে তিন বছর ধরে জয়েন্ট এন্ট্রান্স দিয়েও আই আই টি ক্র্যাক করতে পারছে না, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, এই বুঝি আমি ব্যানার্জীবাবুর কাছে হেরে গেলাম। আমি বাপের জন্মে পড়শোনা করিনি, লক্কাবাজি করে কাটিয়েছি। উত্তরাধিকার সুত্রে পাওয়া পানের দোকান চালাই, রাতে শুকনো রুটি আর ধোঁকার ডালনা খেতে খেতে মোবাইলে দেখি মুকেশ আম্বানীর বউ সকালে ঘুম থেকে উঠে তিন লাখ টাকা কেজির চা খায় বা দীপিকা পাড়ুকোন- রণবীর সিং ষোল কোটি টাকার ফ্ল্যাট কিনেছে। অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, আমি তো গোহারা হেরে গেছি মুকেশ আম্বানী বা দীপিকা পাড়ুকোনের কাছে। আমি এক কালে পড়াশোনায় তুখোড় ছিলাম, ক্লাসের ফার্স্ট বয়, বেশ ভালোই চাকরি করি, গাড়ি বাড়ি সবই আছে। হঠাৎ করেই দেখা স্কুলের ফেলু ছেলের সঙ্গে, সে এখন বিশাল বড় ব্যবসাদার। তার সামনে পিছনে হাজার হাজার মানুষ ঘুরে বেড়ায়। নেতা, মন্ত্রী, যত রাজ্যের কেউকেটাদের সঙ্গে তার ওঠাবসা, অতএব রেগে যাচ্ছি। কারণ ভয়, আমি ফার্স্ট বেঞ্চার হয়ে বুঝি ওই লাস্ট বেঞ্চারের কাছে হেরে যাচ্ছি। কিন্তু এই যে আমরা সদা সর্বদা রেগে যাচ্ছি ,যার ওপর রাগ হচ্ছে তাকে তো ঠিক বাগে পাচ্ছি না যে মোক্ষম করে রাগটা ঝেড়ে দেব। অতএব আমাদের রাগ জমছে। রাগ বাড়ছে। তাহলে উপায়? উপায় একটাই, আমরা রাস্তায়-ঘাটে, দোকানে-বাজারে, বাড়িতে-অফিসে, ট্রেনে-বাসে-মেট্রোয় যেখানে যেটুকু সুযোগ পাচ্ছি রাগ দেখাচ্ছি। পান থেকে চুন খসলেই শুরু করে দিচ্ছি কথা কাটাকাটি। তা থেকে ঝগড়াঝাটি। তা থেকে গালাগালি। কখনও হাতাহাতি, মারামারিও। কারণ ততক্ষণে এই ঝগড়াঝাটি মারামারিও নিজে নিজেই একটা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, যে যুদ্ধটাও আমরা জিততে চাই। নাহলে ভয়, এই বুঝি হেরে গেলাম। এই বুঝি সামনের জন জিতে গেল।
আচ্ছা ধরুন, জীবনকে যদি আদৌ যুদ্ধ না বলা যায়। ধরুন জীবন একটা যাত্রা। একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে কিছুটা রাস্তা হেঁটে যেতে হবে আমাদের। তাহলে তো আমরা কেউ কারোর প্রতিপক্ষ নই। কেউ কারোর প্রতিযোগী নই। আমরা সবাই সহযাত্রী। ধরুন, একটা খুব সুন্দর জায়গায় বেড়াতে গেছি। এমন একটা পথ দিয়ে হাঁটছি যেখানে চোখ মেলে এদিক ওদিক তাকালেই নতুন কিছু দেখতে পাওয়া যায়। আমি কি হুড়মুড় করে হেঁটে পথটুকু ফুরিয়ে ফেলব? ফেলব না তো? এই হাঁটাটুকু প্রাণ ভরে উপভোগ করতে চাইব। সেইরকম জীবনেও গন্তব্যে পৌঁছনোর জন্য তাড়াহুড়ো করে লাভ কি? এই অসাধারণ যাত্রাপথে সঞ্চিত অভিজ্ঞতা উপভোগ করতে করতে যাওয়াই তো ভালো। কে আমায় পাশ কাটিয়ে হনহন করে হেঁটে গেল তাতে আমার কি আসে যায়? আমি তো আমার যাত্রাপথ উপভোগ করে নিই। কে জানে আবার এই যাত্রার সুযোগ আসে কি না!!!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours