আনন্দিতা রায়, লেখিকা ও সঙ্গীতশিল্পী, দুর্গাপুর:

কিন্তু এতসব প্রিয় খাদ্যের বৃহৎ তালিকা থাকলেই তো হল না, তা খেয়ে হজম ও তো করতে হবে। বিশেষ করে সে খাদ্যে যদি ভেজাল থাকে:-
দাদাঠাকুরের দৌহিত্র শ্রী রতন বন্দোপাধ্যায় রবীন্দ্রনাথের "পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে" গানের অনুসরণে লিখলেন:-

ফোকলা দাঁতে ভেজাল গিলে
 আমার পেট ফেঁপে ওঠে
জানাশোনা কোন বাইরে
তাড়াতাড়ি ডেকে আয়রে
জীবনে মরণ যে আসে ছুটে।
মনের সুখে খাব কি রে
সেদিন কি আর আসে ফিরে
খাব না খাব না ভেজালে যতসব
গেল ভরে
মিষ্টি ডিসে ভরা খাবার বেলা
কোন পেটুক রামের আমি চেলা
আমার অন্ন ঘিরে যত মাছি ওড়ে
যত পিঁপড়া জোটে।
যা না চাইবার তাই আজি খাই গো
যা না সইবার তাই আজই সই গো
খাব না খাব না
মরি খাবার আগে পেটে ব্যথা ওঠে।

শুধু কি খাদ্য? পানীয় নিয়েও প্যারোডি খুঁজলে মেলে বৈকি!!

পরিমল‌ গোস্বামীর লেখা ‌

"চিঠি ,বন্ধুকে লেখা"
Tea পাইনি তার খবর জানাতে মন খুব নহে রাজি,
আজি বাজে লিকারের চুমুকের শব্দে বেদনা উঠিছে বাজি
ভালোবেসেছিনু ডুয়ার্স চায়েরে সেই স্মৃতি মনে আসে ফিরে ফিরে,
সেদিনের আড্ডা মাঝে মাঝে এসে জমায়েছে নজরুল কাজী.........। " ইত্যাদি।

(রবীন্দ্রনাথের" কি পাইনি তার হিসাব মিলাতে" অনুসরণে।)
শ্রী সতীশচন্দ্র ঘটকের লেখা "বিস্ময়ের পরাকাষ্ঠা"

তুমি কেমন করে পান করো হে চুনী?
আমি অবাক হয়ে গুণী কেবল গুণী
যে পেগ ঢালো সে পেগ ফেলো খেয়ে,
রঙিন ধারা ঝরে দু কস বেয়ে,
সাবাস বটে বলাই দাদার চেয়ে
ভড়কিয়া যান স্বয়ং জহ্নুমুনি।
মনে করি অমনি তুড়ে খাই
কন্ঠে আমার ঝাঁজ সহে না তাই....."।
(রবীন্দ্র সংগীত "তুমি কেমন করে গান করো হে "অনুসরণে)।

আবার, দে-প্র-ব

"মাতলামি গান

সূরার বোতল আজ ভেঙেছে,
উছলে পরে মাল ও
সুরেশ্বরী বন্ধু আমার, গন্ধসুধা ঢালো।
মাতাল কানাই বুঝতে নারে,
মাল পড়েছে দেখাই তারে
ভাটি খানায় যারেই দেখি
তারেই লাগে ভালো।"
(মূল রচনা রবীন্দ্রনাথের""চাঁদের হাসি বাঁধ ভেঙেছে"অনুসরণে।
পেটপুজো নিয়ে বাঙালির রঙ্গ রস তথা বিলাসিতার শেষ নেই। এই ধরনের প্যারোডি সংখ্যায় প্রচুর। বড় নির্মল হাস্যরসের সেগুলি।
এ প্রসঙ্গে নলিনীকান্ত সরকার এর কথা না বললেই নয়। বাংলা প্যারোডি সাহিত্যে তাঁর উল্লেখযোগ্য সংযোজন অবিস্মরণীয় হয়ে থাকবে। একমাত্র সজনীকান্তের প্যারোডি প্রেমের সাথে তাঁর ছন্দ প্রেম তুলনীয়।

ক্ষুদিরামের ফাঁসির পর যে গানটি বহুল প্রচলিত হয়েছিল সেই গানের অনুসরণে নলিনীকান্ত সরকার লিখলেন প্যারোডি" বিদায় প্রার্থনা":-

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি।
কাহাতক দাঁত ছিরকুটে
আর হাসবো দেঁতো হাসি।
যেমন খাওয়া তেমনি পরা
সব জিনিসই দামে চড়া
মা গো--
মেয়ে মদ্দর হাল বেহদ্দ
ভুগছে ভদ্দর চাষী।
চাল মেলে না সস্তা 'রেট' এ
গমের গাছ গজালো পেটে
মা গো---
আবডালে ওই ডালের দাম ও
চলছে পাশাপাশি।
আলু পটল ঝিঙে বেগুন
সবার অঙ্গে জ্বলছে আগুন
মা গো--
মাছের দোরে no admission
তেমনি পাঁঠা খাসি.....।" (ক্রমশ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours