জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

জাতীয়  স্বাধীনতা আন্দোলনের মতো একটা জাতীয় সমাবেশকে যখন কোন রাজনৈ্তিক দলে বদলে ফেলা হয় এবং এই বদল করতে গিয়ে, সেই সমাবেশকে
সংবিধান
-----  সেখান  থেকে উৎসারিত অধিকারগুলির আধারে  যখন সেই
দলের কর্মসূচী নির্ধারিত না হয় এবং সেই কর্মসূচীর ভিত্তিতে যদি দলের
সাংগঠনিক কাঠামোকে পুনর্গঠিত না হয়, তখন স্বাভাবিক কারনেই, সেই জাতীয় দলের ভেতরেই
----- অতীতের ঔপনিবেশিক-দাসত্ব আধারিত সামন্তিক এবং পুজিতান্ত্রিক ভাবসমুহের জগাখিচুরি বাসা বাধবে।পরিনামে দলের এই জগাখিচুরী অবস্থান যেমন একপ্রান্তে সরকারকে পেছন থেকে টানতে থাকবে অন্যপ্রান্তে সরকার এবং দলের পারস্পরিক বিরোধীতা
------ সংসদীয় কাঠামো এবং সংবিধানিক সত্বার উপরে চাপ বাড়াতে থাকবেই। এই চাপের মুখে, দেশের ভবিষ্যত, স্বাভাবিক কারনে ক্রমে সুচিন্তিত পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে 'জগাখিচুরি মার্কা দলের আধিপত্তে পরে জাবে। 
------  সেখানে যত দিন সংবিধান রচয়িতারা তাদের জনসত্বা নিয়ে মানুষের উপরে প্রভাব রেখে চলতে পারবেন ততদিন দল এবং সংবিধানের সংঘাতে র মাঝখানে, সরকারকে এবং সংসদীয় ব্যবস্থাকে সংবিওধানের অধীন রাখতে পারবেন। কিন্তু নেতার সেই গন-ঔজ্জ্বল্য টিকে থাকবে, ততদিন , অন্তত খন্ডিত ভাবে হলেও সংবিধান থাকবে।
নেহেরু এবং নেহেরু পরিবারকে গালাগালি দিয়ে, যারা ইতিহাসে নিজেদের দায় অস্বিকার করতে চায়, তাদের উল্লেখিত দল-সরকার এবং সংবিধানে অন্তসম্পর্কের সুত্রে, কেমনভাবে গনশক্তিকে দাড় করানোর কাজে কিভাবে, সমাজ বিজ্ঞানের অভিমুখ টি নির্মান করতে হয়, সেটা জানা উচিত ছিলও\
তাদের এবং নেহেরু পরিবারকেও বোঝা প্রায়োজন ছিলও
----- দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বে মোহনবাগান কিংবা ইষ্ট বেংলের মতো ক্লাবকেই সমাজ বিজ্ঞানের  সাধারন নিয়মগুলিকে না মেনে চলা সম্ভব নয়, আর এখানে শাসনের বিষয় হোল, বিশ্বে, জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। এটা এমন এক দেশ
-- - যেখানে 'সাধু-সন্ত' এবং  'মহাপুরুষদের' উত্থান ও পতনের উপর ভর করে রাজ চলেছে, পাচ হাজার বছর ধরে এই 'পুরষদের ইচ্ছায় ভর করেই, দাসত্ব থেকে পুজিতন্ত্র এবং পুজিতন্ত্রও বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে নিয়েছে, কোন সমাজ বিপ্লব না হওয়া সমাজের পুজ-রক্তের পাঁপাচারের উপরে।
---- এই পাপাচারের যদি প্রধান থাকে, তবে তা থেকে যখন ব্যাধী বলুন কিংবা গুন বলুন পরম্পরাগত ভাবে নেমে আসা চিন্তার 'দাসত্ব' জনগনকে 'জড়ভরত' করে রাখতে চেয়েছে, ব্যক্তিসর্বস্ব শাসক দলিয় অভিমুক যেমনভাবে মুখ থুবরে পরেছি, আমরা তত চাকর হয়েছি।
----- এরই সাথে বৃটিশদের তরফ থেকে কেরানীকরনের শিক্ষাগত অভিমুখ যখন নব্য আমেরিকান কেরানীসত্বার সাথে মিশে যায় তখন রাজনৈ্তিক হালত সহজেই অনুমেয়। আগের লেখায় উল্লেখ করেছি, কিভাবে এদেশে 'মানবসত্বা' বিকাশের সব জ্ঞানগত কিংবা স্থায়ী জ্ঞানগত পথ রুদ্ধ করে দিয়ে, মুলতঃ আমেরিকা সহঃ উন্নত দেশগুলিতে   'যন্ত্র কেরানী ' যোগানের  জন্য হাজার হাজার 'যন্ত্র কেরানী ইঞ্জিনিয়ারিং' কলেজ নির্মান করেছি।
-----  প্রকৃত অর্থে, বৃটিশকালে, কেরানী সত্বার সাথে সাথে ইউরোপিয় , রেঁনেশাঁর ,তির্য্যক রশ্মি রেখার দৌলতে বহু ব্যক্তিত্ব মাথা তুলে দাড়ীয়েছে, দাসত্বের জগদ্দল পাথরের মধ্যেও ইউরোপীয় গনতান্ত্রিক বিপ্লবে সৃষ্ট  আত্মমর্য্যাদাবোধের সম্ভাব থেকে কিছু বীজ রেখে গেছে। এই বীজ পরবর্তীকালে, নেহেরু-স্তালিন চুক্তি রেখা ধরে ভারতের শিল্পযুগকে শক্ত গাথুণীর উপর দাড় করিয়ে দিয়েছিল। সেটা ঘটেছিলো বলেই, জরুরীকালিন অবস্থায় মানুষ মাথাতুলে দাড়ানোর একটা যায়গা খুজে পেয়েছিলো।
------ অথছ দ্বিতিয় পরাধীনতার কাল, বা বলা যেতে পারে, আমেরিকান চাপের কাছে আত্মসমর্পনের পর, যে দেশ ইতিমধ্যেই বিশ্বের পঞ্চম যন্ত্র শিল্পীর বাসস্থান হিসেবে স্বিকৃতি পেয়েছিলো, সেই দেশটা তারবোধগত এবং যান্ত্রিক স্বয়ংসস্মপূর্নতার সব হারিয়ে বসে আছে, পরিনামে পেয়েন্ত্র যন্ত্র কেরানীর যোগানদারির মর্য্যাদা।  বাকি সব শেষ, রোজগার করা আত্মমর্য্যাদাবোধটুকু পর্য্যন্ত।
আজকাল, যে সময় থেকে আমরা কমিউনিষ্টরা,
------- সামাজিক গতি নির্মানকে প্রধান  দলগত  গতি বলে চিনতে ভূলে গেছি এবং সরকারীয়ানার দৌলতে,  'অনুসরনের' সংস্কৃতিকে যখন থেকে সাম্যের অভিমুখ বলে মেনেছি -
---- তখন থেকে ইতিহাস গবেষনার অতিপ্রয়োজনীয়  উপাদানটিকে  বোধে রেখে ইতিহাসের কালগত ধারাকে চিহ্নিত করতে হোত, সেটাই  ভুলে গেছি। প্রশ্নটা এখানে,
----- ভারতের মতো একটা দেশের, এমন একটা স্বাধীনতা আন্দোলন, যেটা সংস্কার আন্দোলনের একটা উচ্চতর ধাপ হিসেবেই বিবেচনা করে, জাতীয়তার উন্মেস আন্দোলনই বলা যেতো। স্বাধীনতাটাও পাওয়া গেছে চুক্তি করে এবং অনেকটাই  দ্বিতীয় যুদ্ধের পরিনাম হিসেবে এবং
------ দল যেখানে একটা ক্রাউড বই কিছু নয়,যেটাকে মহাত্মা স্বাধীনতার পরেই বেংগে দেওয়ার পরামর্ষ দিয়েছিলেন, সেই দলটাকে ঘাড়ে বয়ে,
-------   নেহেরু থেকে ইন্দিরা পর্য্যন্ত দুই প্রধান মন্ত্রি যদি, জাতীকে অন্ততঃ চার-চারটি যুদ্ধ অতিক্রম করে  বিংশ শতাব্দীর নব্বই দশকের মধ্যেই দেশকে বিশ্বের অন্যতম শিল্প প্রধান মর্য্যাদা  ছিনিয়ে নিতে  পেরে থাকেন তবে
-------  সেই সাফল্যের  পেছনেঃ  বিশ্বরাজনীতির সাথে,আভ্যন্তরীন রাজনীতি অন্তসম্পর্কগুলিকে চিহ্নিত করতে পারলেই, বর্তমান কালে শিল্প উৎপাদনের গুনগত পতনের সাথে সাথে
--------- জ্ঞানগত পতন এবং তার সাথে শিক্ষার ক্রম অধগতি,আত্মমর্য্যাদাসবোধের অবনতির সাথে সাথে আন্তর্জাতীকতা বিনাসের সাথে সাথে জাতীয়ত্তার পতনের ধারাটিকে চিহ্নিত করা যাবে।

যদি মেনে চলা হয়,
শিক্ষার আধুনিকরন এবং আধুনিকরনকে একপ্রান্তে ফলিত বিজ্ঞান এবং অন্যপ্রান্তে আধুনিক উৎপাদন সম্পর্কের সাথে সংযুক্তিকেই  জ্ঞানগত উত্তোরন
বলা যায়, তবে ভারতে তার
----- সামাজিক রাজনৈতিক উত্তোরনের সাথে সাথে জাতীয়তা-আন্তর্জাতীকতার বিকাশের হাত ধরে শিক্ষার জ্ঞানগত উত্তোরনকে  তিনটি ধাপে বিভাজন করা যাবে
প্রথাম অধ্যায়ঃ
  দু'শ বছর পূর্বে ঈশ্বর চন্দ্রে আবির্ভাব, বংকীম কালের ভেতর দিয়ে,
শিপাহী বিদ্রোহের কাল, দেশে সরাসরি বৃটিশাসন হয়ে, রবীন্দ্রকালের আবির্ভাব, কংগ্রেস দলের জন্ম, মহাত্মাগান্ধীন নেতৃ্ত্বে ভারতবোধের জন্মের কাল।নানা ধারা ধরে প্রথমে সংস্কার আন্দোলন এবং পরে স্বাধীনতা সংগ্রাম
দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
রেনেশাঁর এবং ভারতীয় জাতীয়তার উন্মেসের  কল্যানে ভারতীয়  শিক্ষা এবং সংস্কৃতির আন্তর্জাতিক অভিমুখ নির্মান, রবীন্দ্র সাহিত্যের প্রভাব বিশ্ব  সংস্কৃতি-দর্শন এবং বিশ্বের প্রথম মহাবিপ্লবের সংযোগে মহা-মানবিক ও ভাবমুক্তির সংগ্রাম সংকেত, কল্লোল যুগের প্রতিবাদী সাহিত্য,সাহিত্যের সাথে সাথে ললিতকলার বিভিন্ন ধারার সাথে বিজ্ঞান এবং সমাজ বিজ্ঞানের সংযুক্তি
তৃ্তীয় অধ্যায়ঃ
নেহেরু-রবীন্দ্রনাথ দৌত্বে শিক্ষা এবং সংস্কৃতির বহূমূখীনতার চিহ্নিতকরন, দ্বিতীয় যুদ্ধে ফ্যাসিবাদ বিরোধী মহামানবিক সত্বার নতুন উত্তোরন, দেশে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের বিস্তারের সুত্রে রাজনৈ্তিক শক্তি হিসেবে মেহনতির আত্মপ্রকাশ, বিভিন্নতার মধ্যে ঐকের ভিত্তিতে ভারতে সাংবিধানিক শাসন ব্যবস্থার পত্তন, নেহেরু--সাম্যবাদী দলের বিরোধের মধ্যে একতার নীতি রাষ্ট্রীয় নীতি, নেহেরু-স্তালিন চুক্তির মধ্য দিয়ে -ভারতে মেহনতের মুক্তি এবং তার উত্তরোত্তর সৃজনের বিকাশ।

উল্লেখিত প্রকৃয়া ততদিন সক্রীয় ছিলোঃ
যতদিন উপরে বর্ণিত ধারাবাহিকতাকে অব্যাহত রাখার মতো রাজনৈতক কাঠামো এবং সামাজিক সম্পর্কগুলি গতিশীল থাকতে পেরেছে।
এতে ভাংগন শুরু হোলঃ
মূলতঃ দুটি কারনে
প্রথমতঃ
 শ্রীমতি গান্ধীর হাতে সংগঠন নিজেকে  কার্যতঃ নেতৃদাসে বদলে দেওয়ায়,  সরকারের উপরে,  আমেরিকার সোভিয়েত বিরোধীতার চাপ  ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে,
 অন্যপ্রান্তে সোভিয়েত-চিন বিরোধীতায় সাম্যবাদী শিবিরে ভাংগন, চিনেও অতি বিপ্লবী প্রতিক্রীয়া শক্তির অভ্যুত্থান,  ইতিহাসের অভিমুখে নিদৃষ্ট নীতিতে ভারতের একমাত্র সাম্যবাদী দলটিকে  তার অভিন্ন সত্বায় ধরে রাখার  অক্ষমতাও কংগ্রেস দল নীতি হিসেবে যতটুকু বেঁচে ছিলও, ভেতরকার সন্তুলনো এমনভাবে আবর্তীত হচ্ছিলো, যা সংসদীয় এবং সাংবিধানিক ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পরছিলো।
এসব কিছুর মধ্যেই যখন সোভিয়েত রাসিয়ে ভেংগে গেলো, তখন দেখা গেলো কংগ্রেস, ভাবাদর্শ হিসবে নেহেরুকে তো বটেই ইন্দিরাকেও খুইয়ে বসেছে।মতাদর্শের দিক থেকে একটা সংগঠিত দলের মান্যতাও সে পেতো না।স্বাভাবিকভাবে সোভিয়েতহীন বিশ্ব পরিস্থিতিতে
----- আমেরিকার গলা টিপে ধরার পরিশিতিটা নির্মান হয়ে গিয়েছিলো।
 ইতিমধ্যে দেশে, যেঁ সাম্যবাদী দলটিকে মানুষ একমাত্র হিসেবে সাম্যের স্বিকৃ্তি দিয়েছিলো, সেই দলটিও, সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার পর নিজেকে ধীরে ধীরে গুটিয়ে এনে, সরকারীয়ানায় ডুবিয়ে দেওয়ায়।
------- পরবর্তী সরকারগুলির উপরে বাম মুখীন দিক থেকে চাপে রাখার যোগ্যতা হারিয়ে ফেললো।
অন্যথায় কিউবা নামক ছোট দেশটি যদি প্রায় সত্তোর বছর অবরুদ্ধ থেকেই
বিশ্বের প্রথম ক্ষুদাহীন রাষ্ট্রের স্বিকৃ্তি পেয়ে থাকতে পারে তবে
-----    ভারতবর্ষ কেন, বিশ্বের পঞ্চম প্রযুক্তি কর্মীর দেশ হয়েও, এমনভাবে
অর্থনীতি, রাজনীতি, প্রতিরক্ষার সর্বক্ষেত্রে আমেরিকার মিলিটারি তন্ত্রের কাছে আত্মসমর্পন করে
=====    দেশের জাতীয়তা, আন্তর্জাতীকতাকে নিঃশেষ করে , সে শিক্ষার সব দিগন্তকেই জ্ঞান সত্বা থেকে বিমুক্ত করে আজ জাতীয় স্বাধীনতাকে বিপন্ন করার কারন হয়ে দাঁড়াবে। (ক্রমশঃ)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours