জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

যদি মেনে চলা হয়, রেঁনেশার উত্থান এবং তার বিনাশের বিষয়টি পুজিতন্ত্রের মানবিক বিকাশ এবং তার পতনের সাথে সম্পৃক্ত, তবে এটাও মানতে হবে,
------ মানবিকতা কিংবা চিন্তা মুক্তির ভাবাদর্শের জনক হিসেবে যদি মার্ক্সের আবির্ভাব ঘটে থাকে তবে, তার ইতিহাসগত তাৎপর্য্য এখানেই যে মার্ক্সের আবির্ভাব কাল আর রেঁনেশার পতনকাল এক বিন্দুতে মিলিতে হয়েছে। কালগত দিক থেকে রেনেশার পতনটাই শুরু হয়েছিলো, পুজিতন্ত্রের সংকটের সুচনা কাল থেকেই।

রেনেশারঁ অর্থটাই হোল, শিক্ষা এবংললিতকলা সহ  সংস্কৃতির সর্বশাখার  মিলিত এক মিলিত শ্রোতের সাথে সমাজের গনতান্ত্রিকি-করনের  সংগ্রামের কালগত বিচারে সর্বত্তোম রুপ। এই বিকাশের ধারাটাকে বুঝতে হবে, জাতীয়তার তার অন্ধকুপ থেকে আন্তর্জাতীয়কতায় মুক্তি,। ইতিহাসের বিচারে সামন্তিক কালে বা গনজ্ঞান যখন 'শূণ্যে'  তখন জাতীয়তা তার নিদৃষ্ট উপাদানগুলিকে নিয়ে জন্মেরই সম্ভব নয়। সেজন্যেই বলা হয়, বৃটিশরা এসে সব কিছু গুড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে,  কিঞ্চিতার্থে   রেনেশাঁ নিয়ে আসার পর থেকেই নানা ঘাত-প্রতিঘাতে রেঁনেশার বিকাশকাল শুরু হয়েছে ভারতে।

ভাবাদর্শের দিক থেকে,
সামন্তিক বা রাজাকে ঘিরে যে ব্যবস্থার জন্ম হয়েছিলো, সেই ব্যবস্থার
বিরুদ্ধে জনজাগরনের লক্ষকে
----- সামনে রেখেই রেনেশাঁর আবির্ভাব ঘটেছিলো ইতিহাস এবং প্রকৃ্তি বিজ্ঞানের সঙ্গমের মধ্য দিয়ে। । এই মিলন যেভাবে শক্তিশালী হয়েছে সে রকমভাবেই আন্তর্জাতীকতার বিকাশ ঘটেছে।

এই সুত্র ধরেই রেনেশাঁ  বুঝতে হোত  অজ্ঞানতা থেকে জ্ঞানগত উত্তরনের অর্থহোল, একজনের সর্বোতোমুখী মানবিক বিকাশ। সেটা শিক্ষা ললিতকলার সর্ব শাখায় বিকশিত করা এবং তার প্রয়োজনে অশী এবং মশীর উভয় প্রান্তে সংগ্রাম।  সাথে আরো দুটি সুত্র বুঝে নিতে হোত,
------ বুর্জোয়ার যদি জ্ঞানগত উত্তোরনের পথ বেয়ে জনসত্বা এবং জনগনের গনতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের মধ্য দিয়েই, সামন্ততন্ত্র বিরোধী জনসমাবেশ ঘটিয়ে থাকে,  তবে বুর্জোয়া সমাজের সংকট কালে
------ সমাজ-রাজনীতির ধারক হিসেবে শ্রমিক শ্রেনীকে, উত্তরকালের পথ দেখাতে, জ্ঞানসত্ত্বাকে  এগিয়ে নিয়ে যেতে
----    অশী ও মশীর সংহতিকে  কী না বিপুল গতিতে নিয়ে যেতে হোত। এইভাবেই, সামন্তিক কালের অজ্ঞানতার অন্ধকুপ থেকে জ্ঞান প্রথাগত এবং অপ্রথাগত শিক্ষার পথ বেয়ে, জাতীয়তা থেকে আন্তর্জাতীকতার সিংহ চুড়ায় আরোহন করে। ইতিহাস অন্ততঃ সে কথাটাই বলে।
 ইতিহাসের অভিমুখে জ্ঞান ও  বিজ্ঞান, সাহিত্য কলার সমারোহের সেই উত্তোরন কালকে  বলতে গিয়ে এঙ্গেলস  লিখছেনঃ
"মানব জাতির এযাবৎ অভিজ্ঞতায় এটা ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রগতিশীল বিপ্লব। এটা ছিল এমন একটা সময় যখন প্রয়োজন ছিল বিরাট মানুষের এবং সৃষ্টিও হয়েছিলও বিরাট মানুষদের - যারা বিরাট ছিলেন চিন্তা-শক্তিতে, আবেগে এবং চরিত্রে,সার্বজনীনতায় এবং  জ্ঞানে। যেঁ মানুষেরা বুর্জোয়াদের আধুনিক শাসনের প্রবর্তন করেছিলে তাদেন ছিল কেব্ল বুর্জোয়া সীমাবদ্ধতা। অন্যদিকে সেকালের দুঃসাহসী চরিত্র তাদের কম বেশি পরিমানে উদ্ভদ্ধ করেছিলো...তারা প্রায় সবাই সমসাময়িক  আন্দোলনগুলির মধ্যে, বাস্তব সংগ্রামগুলির মধ্যে, তাদের জীবনযাপ্ন ওঃ কর্মসম্পাদন করেছেন। তারা পক্ষ  বেছে নিয়েছিলেন ওঃ সংগ্রামে অংশগ্রহন করেছিলেন , কেউ ভাশণেড় অ লেখণির মাধ্যমে, কেউ বা বরবারীর সাহায্য, অনেকে দু'ভাবেই"।
 এইভাবেই গনশিক্ষা এক সামগ্রিক শ্রোত হয়ে উঠে তখনই জাতীয়তা যেমনভাবে আন্তর্জাতীকতার অভিমুখে গনশক্তি হয়ে উঠার সুযোগ পায় তখনই সামাজিক গতি তীভ্রতা পেতে থাকে।
 এখানেই রবীন্দ্রনাথের সেই কথা সার্থকথা
------ যখন তিনি বলছেন," যাকে তুমি পশ্চাতে ঠেলছো, সে তোমাকেই পশ্চাতে টানিছে।
 একপ্রান্তে শিক্ষার সামগ্রিকতা অন্যপ্রান্তে , সাহিত্য, ললিত কলার সমস্ত বিভাগ  অন্যশ্রোতে আবার শ্রমিক সংগ্রাম যখন এক মহাঅন্যশ্রোতে রেখে কিছুতেই জ্ঞান সত্ত্বা এগয়ে যাওয়ার পথ খুজে পেতো না। রেনেশাঁকে বুঝেই যদি রেনেশা উত্তরকালের জ্ঞান সত্বাকে বুঝতে হয়, তবে সেখানে জ্ঞান যে ইতিহাসের অভিমুখ নির্মানের সাথে যুক্ত সেটা বুঝতে হবেই।

এখন সামগ্রীকতার বিচারে কাকে জ্ঞানী বলা যাবে সেটা লিখেই আজকের প্রতিবেদনটি শেষ করা  যেতে পারে।
মশী আর অশীর এবং উভয়ের সংহতিতে যিনি নিম্ন জ্ঞানশক্তির অধিকারী হয়েছেন তাকেই জ্ঞানী বলা যাবেঃ
(১) যিনে বিশ্বপ্রকৃ্তি এবং ইতিহাসের ঢ্যারায় সমসাময়ীক কালকে নিজের বোধ বা জ্ঞানের আয়নায় ধারন করতে সক্ষম হবেন। ইংরাজীতে যাকে বলা হয় perceive করার যোজ্ঞতা।
(২) সেই ধারন ক্ষমতাকে বিশ্লেষন করার যোজ্ঞতা
(৩) এই বিশ্লেষনের মধ্যে দিয়ে নিজেকে আবিস্কার করা এবং এই আবিস্কারে ইতিহাস, প্রকৃ্তি বিজ্ঞান  এবং শ্রমের রুপান্তর ঢ্যারায় নিজেকে দিয়ে পারিপার্ষিকতা বুঝে নেওয়া।
(৪) এই বোধ শক্তিকে কাজে লাগিয়ে, যারা প্রতিষ্ঠানগত একতাবদ্ধ যেমন ছাত্র এবং মেহনতিরা, তাদের বিশেষ মর্য্যাদায় সংগঠিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া।
(৫) ছাত্রদের প্রতিষ্ঠানগত আবেগকে এক বিদ্রোহী রুপে প্রস্ফুটিত হওয়া এবং শ্রেমিক শ্রেনীর বৈপ্লবিক আলোক রশ্মিতে আলোকিত করার সুযোগ করে দেওয়া।
(৬) স্মরনে রাখা শ্রমিক শ্রেনী শুধু প্রতিষ্ঠানিক দিক  থেকেই নয়, উৎপাদনের দিক থেকেও সংগবদ্ধ। সে কারনে বিশ্বের ইতিহাসে কোথায়ো কোন দিন, কোন সাম্প্রদায়ীক কিংবা জাতিগত দাঙ্ঘার জন্ম হওয়াস্র সুযোগ নেই।
(৭) অনুরুপভাবে ছাত্ররাও যেহেতু, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে একতাবদ্ধ, সেজন্য সেক্যুলারিজম এবং তার সাথে মানবিকতার আবেদন সর্বপ্রথম সেখানে নির্মান হয়। সেজনেই এদের আবেগ বিদ্রোহী সত্বায় পরিবর্তিত হওয়ার প্রথম সুযোগ শিক্ষায়তনেই নির্মান হয়। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours