ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:

সোঁয়াই  গ্রামে  প্রায় পনেরো  আনা  বাড়ীতে  সন্ধ্যা  প্রদীপ জ্বলে  না! দুর্ভিক্ষে  হয়  মানুষ  মরেছে  নয়তো  গ্রাম  ছেড়ে  পালিয়েছে!পাশের  গাঁ পোন্ডালী  জনশুন্য! মোল্লাহাটী( মাধবমাঠ) মসজিদে  আজান  দেওয়ার লোক  নেই! সোঁয়াই  গ্রামের  গাঙ্গলী পাড়া,চাটুজ্যে  পাড়া,কায়স্হ  পাড়া  জনমানবহীন! বড় বাড়ীর  সবাই  আগের  খরার  বছরেই  কাশীধামে  চলে  গেছেন!শুধু  ভিটে  আগলে  আছেন  জমিদার  মশাই! সেবার  তারাসুন্দরী  হটীকে  সাথে  নিয়ে  যাওয়ার  জন্য  পীড়াপীড়ি  করেছিলেন! কিন্তু হটী  রাজী  হয়নি!এ বছর  গ্রাম  প্রায়  জনশুন্য! এমন  অবস্হা  যে  সদ্যমৃতকে  শ্মশানে  নিয়ে  যাওয়ার  লোকও পাওয়া  যাচ্ছে  না!
                 একমুঠিবাবা  দেহ  রাখলেন  মাঘ  মাসে! ইহ জগৎ থেকে মুক্তিলাভের  আগে  তিনি  তাঁর  ভবানী মায়ের হাতে  তাঁর  তুলে  দিয়েছিলেন  তাঁর  সম্পদ  ত্রিশূলটি ! বলেছিলেন," ইয়ে  রাখ  দে  মাঈ! দুনিয়ামে  বহুত  বিড্ বরাহ  হ্যায়!"
       হটী  এই  অপ্রচলিত  কথাটা  শুনেছিল  তাঁর  বাবার  কাছে! শ্রী মদ্ভাগবতগীতার  দ্বিতীয়  অংকের  তৃতীয়  অধ্যায়ে  লেখা  আছে! শুভ প্রসন্ন  বলেছিল,এর  অর্থ বৃষ্ঠাভোগী  শূকর! সন্ন্যাসীর দেহ  দাহ  হয়  না!তাঁর  দেহ  সমাধিস্হ  করা  হ'লো  হটীর  বাড়ীর  উঠানে!হটী  তাঁর  সমাধির  শিয়রে  একটি শ্বেত  করবীর  চারা  রোপন  করে  দিল!
        মন্বন্তর  ভয়াবহ  আকার  ধারন  করল! রাস্তায়  ঘাটে  কুকুর  বেড়ালের  মতো  মানুষের  মৃতদেহ  পড়ে  থকলেও  সৎকার  করার  লোক  নেই! একমুঠো  খাবারের  জন্য   মানুষ  বিবেক  মনুষ্যত্ব  সব  কিছু  বিসর্জন  দিতে  বাধ্য  হয়েছে! শিশুর  মুখ  থেকে  খাবার  কেড়ে  খাচ্ছে  বাবা! একমুঠো  খাবারের  জন্য  মা  মেয়ে  একসাথে  রাস্তায়  দাঁড়িয়ে  থাকছে  দেহ  বিক্রির  জন্য! কিন্তু  সোঁয়াই  গ্রামে  একজনই মন্বন্তরে  বিন্দুমাত্র  চিন্তিত  নন  ! তিনি নন্দচাটুজ্যে! তিনি  দু বছর ধরে  শষ্যভান্ডার  পূর্ন  করেছেন! আর  নিরন্ন  গ্রামবাসীরা  যাতে১ সেই  ফসল  লুঠ  না  করতে  পারে  তার  জন্য  পাইক  বরকন্দাজের  সংখ্যা  বেড়িয়েছেন! (চলবে)

Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours