জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

নেহেরু বুঝেছিলেন, রাষ্ট্রকে পুঁজির নিয়ন্ত্রনে রেখেই ভারতীয় জনগনের সার্বজনীন  জ্ঞানকে তার অখন্ড সত্বায় অনেক দূর পর্য্যন্ত এগিয়ে দেওয়া সম্ভব। অন্ততঃ ইউরোপ যতটুকু ভারত থেকে এগিয়ে ছিল স্বাধীনতার সময় ততটুকু। তিনি এটাও বুঝেছিলেন, জ্ঞানের সার্বজনীনতাকে এগিয়ে দিয়ে, একটা স্বাধীন জাতীসত্বাকে এগিয়ে রাখা না হয় তবে, পুজিতন্ত্রও নিজেকে ইউরোপীয় পুঁজির সাথে প্রতিযোগীতায় নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে না কিছুতেই।
----- কিন্তু সারা সংগঠন চালাতেন, তারা  মনে করলেন, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার পরিমানগত দিক থেকে নয়, কালগত দিকে যেখানে অখন্ড জ্ঞান দেওয়া বন্ধ করেছেন, সেখানেই ভারতের থেমে যাওয়া উচিত। তাই তারা
'জনগনমন' আধারিত জ্ঞানের অখন্ড দিকটিকে বর্জন করে, 'বন্দেমাতারম' আধারিত সিপাহী বিদ্রোহ উত্তরকালের জ্ঞানকে আদর্শ রেখে, জ্ঞানের সার্বজনীনতাকে যতদূর সীমিত রাখা যায় সেটাকেই ধ্যান-জ্ঞান করে নিলেন।
---- এখানেই কিন্তু আর এস এস এর সমাজ চিন্তার সাথে কংগ্রেসের সাংগঠনিক সমাজ চিন্তার মধ্যে একটা একাত্মতা গড়ে উঠার সুযোগ পেয়ে যায়। নেহেরু যেখানে সদ্য স্বাধীন দেশগুলির জাতীয়তা অনেক দূর পর্য্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার রয়েছে বলে মানলেন, সেটাকে সাধারন কংগ্রেসীরা 'সাম্যের' কাছে নেহেরুর আত্মসমর্পন হিসেবে ধরে নিলেন।
----  যদি সংবিধানে রাজনীতিতে সর্বজনের সম অধিকারের দিকের সাথে গোষ্টি নিরপেক্ষতা, সমবন্ঠন, ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে নেহেরুর শিক্ষানীতিকে মিলিয়ে দেখা হয়, তা থেকে সেই সমাজ দর্শনকেই খুজে পাওয়া যাবে
----- যেখানে তার বোঝাবুঝি সেই বিন্দুতে গিয়েই মিলবে, যেখানে তিনি মনে করেছেন সাম্যকে যদি আটকাতে হয়, তবে পুঁজিতন্ত্রকে তার স্বাধীন সত্বায় বিকশিত হোয়ার সুযোগ করে দিয়ে, ইউরোপীয় পূঁজির সাথে প্রতিযোগীয়তায় নিয়ে আসতে হবে। সেখালে মিশরের নাসের, ইন্দোনেশিয়ার সোয়াকর্ণ, যুগোশ্লোভিয়ায় মর্শাল টিটো এবং চিনের চৌ এন লাই এর সাথে যে পঞ্চশীলের নীতি নির্মান করে বিশ্বে তৃ্তীয় শক্তি গড়ে তোলার পেছনেও সেই নীতি কাজ করেছে।

যদি কেউ সুস্থমনস্কতা দিয়ে ৭০ এর দশকে  শ্রীমতি ইন্দিরা এবং কংগ্রেস সংগঠনের তুমুল দ্বন্দ্বকে, খুটিয়ে দেখেন সেখানে সত্য হিসেবে, নেহেরু এবং কংগ্রেসের সাধারন লাইনের সংঘাতটিই ফুটে বেরুবে। শেষ পর্য্যন্ত এটাও প্রমান হয়ে গিয়েছিলো।
---- রাজনীতি যদি কালমুখীন হয়, তবে একজন ব্যক্তিই সব কিছু তোলপাড় করে দিতে পারতেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে, ইন্দিরার পতনের কারনটা তবে কোথা থেকে শুরু হোল। প্রথমতঃ শ্রীমতি গান্ধী নেহেরুর সচেতন অনুসারি ছিলেন বলে মনে হয় না। তাই যদি হোত তবে, কয়লা , ব্যংক, ইন্সিয়োরেন্স জাতীয়করন এক বিপুল পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হলেও, পুঁজির খেয়ে ফেলা শিল্পগুলির জাতীয়করন, নেহেরু লক্ষের অনুসারি বলে মানা যায় না।
---- দ্বিতীয়তঃ একটা নীতি নিয়ে কিছু কাজ করে দিলেই, তো একটা রাষ্ট্রের জাতীয় অভিমুখকে নিশ্চিত রাখা সম্বব নয়। তাকে সেই নীতি অনুযায়ী  তার সাংগঠনিক এবং রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত নীতিকে সঠিক
পথে পরিচালনা করতেই হবে।
---- দলকে যদি তার মানবসম্পদ উন্নয়ন নীতি এবং সাধারন রাজনৈতিক লাইনের সাথে এক সুত্রে না নিয়ে আসা যায় তবে তার কী পরিনতি, এদেশের সাম্যবাদী দলগুলির পরিস্থিতি থেকেও আন্দাজ করা যেতে পারে।যেঁ সব ভিত্তির উপর সি পি আই এম দল, সি পি আই থেকে বেড়িয়ে আসলো, এখন 'সরকারী' হয়ে যাওয়ার পর থেকে তা থেকেও পেছনে। মূল কথাঃ দল হলেই চলবে না দলীয় ণীতি এবং সরকার যদি এক তালে চলতে সক্ষম হয়, সরকারীয়ানাটাই সব কিছুকে খেয়ে ফেলবে। আর সরকারীয়ানা তখন ণীতি থেকেও পরম্পরা ধরে চলবে। হিসেব করে দেখা যাবে,নক্সালপন্থী কমিউনিষ্টরা যদি লেনিনবাদ অনুযায়ী, শ্রমিক নেতৃ্ত্ব মানতো, তবে দল বাচতো, ভারতের সাম্যবাদী আন্দোলনও অনেক দূর এগিয়ে যেতো।

কাজেই রাজীব জমানা থেকেই যখন হিন্দুত্বের সাথে কংগ্রেসের সংঘাত শুরু হোল তখন জাতীয়তাবোধের যদি ক্রমাবনতির কারনে, কংগ্রেসের আত্মসমর্পন করা শুরু হয়ে থাকে তার প্রধান কারন
----- ইতিমধ্যেই নেহেরুর অখন্ড জ্ঞান সত্বা এবং মানবসম্পদ উন্নয়নের নেহেরুকালীন ভিত্তিটি প্রায় বারোটা বাজিয়ে দেওয়া হয়েছে। মজার বিষয় নেহেরুর 'ভারবের সন্ধান' কিংবা 'কন্যার কাছে লেখা চিঠি', অখন্ড জ্ঞানের ভিত্তিতে লেখা হলেও, সেই সব লেখা 'জাতীয়তা আন্তর্জাতীকতায়' অনেকদুর প্রবেশ করলেও, কখনোই তিনি সেই আন্তর্জাতীকতা সাম্যের অভিমুখে নেওয়ার চেষ্টা করলেন না।
----  এসব আপোষই ক্রমে শ্রী রাজীব গান্ধীকে 'মাচানবাবার লাথি' খাওয়ার জন্য তার আশ্রমে পাঠিয়েছিলো। তিনি আর এস এস এর খন্ডিত ইতিবাসবোধের বিপরীতে সংগ্রামে না  এসে 'হিন্দুত্বের প্রতিযোগীয়তায় নেমে আসলেন।
------ এই প্রশ্নে বাপের তুলনায় শ্রীরাহুলকে অনেক বোধসম্পন্ন মনে হয়েছে। অবশ্য নির্বাচনের শেষ পর্বে 'বদ পাল্লায়' পড়তে হোল।

যাইহোক, সব মিলিয়ে বিষয় এই দাড়ালো। ভারত ক্রমে সংবিধানের মুল অভিমুখ থেকে অনেক দূরে চলে এলো। ভারতীয় জাতীয়তাকে, জাতীয়তাবিহীন ইতিহাসের অতীত খোলষে ঢুকিয়ে দেওয়া হোল।
----- এখন আর জাস্তীয়তা কিঙ্গা ইতিহাস-বিজ্ঞানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে সাহিত্য কিংবা কোন অখন্ড জ্ঞান নয়। এখন সামন্তিক ধারনায় জ্ঞানকে খন্ড খন্ড করে
দেখানো হতে লাগলো। 
IN THE SAME LINE COURSE OF DEMOCRACY HAS BEEN DETERMINED:
এর প্রথম ধাপঃ জ্ঞানবোধ রাষ্ট্র বা রাজার, ভোট জনগনের।
দ্বিতীয় ধাপে বলা হোলঃ ভোট কাকে দিতে হবে সেটাও রাজাই ঠিক করে দেবেন। জনগনকে কেবল ফেলে দিয়ে  আসতে হবে।
 এটাই এখন ভারতীয় জাতীয়তা।  HERE STANDS THE INDIAN NATIONALISM. (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours