জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আন্তর্জাতীকতা যে জাতীয়তার ধারাবাহিক সত্বা, সে কথাটা প্রকাশ্যে স্বিকার করে কংগ্রেস রাজনীতি যারা চালাতেন তাদের পক্ষে পঞ্চাসের দশকের পর থেকে,ভারতীয় সাম্যের সাথে ভাবাদর্শগত প্রতিযোগিতা সম্ভব ছিল না । কাজেই তারা সমাজ বিজ্ঞানের এই  ধারাটিকে উল্লংঘন করেও, সাম্যবাদী শিবিরের দু'টি দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েই  একপ্রান্তে  ভারতের একচেটে পুঁজির হয়ে অন্যপ্রান্তে আমেরিকার মিলিটারিতন্ত্রের বেশ সেবা চালিয়ে গেছে।  সাম্য শিবিরের সেই দুর্বলতা এবং কংগ্রেস দলের ইতিহাসের অভিমুখ থেকে সরে আসার কারনেই
----  আজ ভারতকে, বিগত  কয়েক হাজার  বছরের আবর্জনা ঘাটার পথেই নয়, এক ভয়ংকর গৃহযুদ্ধের  দিকে ঠেলছে।অন্তত বিশ্ব ইতিহাসকে বিকৃ্ত না হতে পারার নেহেরুর চেষ্টার উপরেও  সমাধি নির্মান করা হয়েছে।
---- আজকের জাতীয়তার সাথে, আগামীকালের জাতীয়তার অর্থ যে চিন্তা এবং মননের আধুনিকতা, সে কথাটি যারা বুঝতে চান না, তাদের কখনো প্রকৃত অর্থে যে জাতীয় দল বলা যাবে না, সে  কথাটি যারা বোঝেন নাই, তাদেরকে প্রকৃ্ত  সমাজ বিজ্ঞানী্র তকমাই দেওয়া যেতে পারে না।অনুরুপভাবে, যে সব মাম্যবাদী দল কিংবা গোষ্ঠি, জাতীয়তার আধুনিক রুপ যে ধর্মনিরপেক্ষতা এবং জাতিগতভাবে আত্মনির্ভরতা এবং উভয়কে
----  কার্যকরি করার সর্ত যে শিক্ষাকে তার আধুনিক স্তরে উঠিয়ে আনতে এক অখন্ড জ্ঞানের সাথে যুক্ত করতে, তার সাথে    জ্ঞান যে আসলে, অখন্ড শিক্ষা এবং সেই সাথে সংগতি রেখে সংস্কৃতিক উঠিয়ে আনার একাত্ম রুপ এবং এই একাত্মতার  নিশ্চিধ্রতায় সংগ্রামকে পরিচালনা
----  এই নিয়মটা যারা ভূলে যান এবং জাতীয়তার নামে, সজ্ঞানে কিংবা অজ্ঞানতায়, যারা উল্টো দিকে চলছেন,  তাদের উপর চাপ রেখে চলতে ব্যর্থ হন
----- তাদেরকে সাম্য বা বাম পথে চলছেন বলে স্বিকার করা যাবে না।  যদি প্রশ্ন উঠে কেন তেমন হবে? কোন জাতীয় দল   যদি জাতীয়তার অর্থটুকুই না জানেন তবে, তার জন্য সাম্যবাদীরা কেন মাথা ঘামাতে যাবে?
----  এর জবাবে,  'গনশক্তির' বাম দিকে স্তালিনের নামে যে কথা কয়টি, লেখা থাকতো এবং পরে তুলে নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যেই, জবাবটি  লিপিবদ্ধ ছিল। সেখানে বলা হয়েছিলো । 'বুর্জোয়ারা' যখন নিজেরাই নিজেদের, পতাকে নামিয়ে নিয়েছে, তখন সেই  পতাকাকে সাম্যবাদীদেরকেই তুলে নিতে হবে।
------ অর্থ খুব স্পষ্ট।  জাতীয়তাবাদীরা যখন জাতীয়তাবাদী কর্ত্যব্য  থেকে দূরে চলে যান , তখন সাম্যবাদী বা শ্রমিক শ্রেনীকেই সে কাজটা শেষ করেই তাকে সাম্যের কাজে হাত দেওয়া প্রয়োজন হবে।
-----  এই সুত্র ধরেই, সি পি আই এম এর কর্মসূচীটাকে বুঝতে পারা যাবে। অন্যথায় নয়। এই কর্মসূচীতে সাম্য কেন, সমাজতন্ত্রের আহ্বান পর্য্যন্ত দেওয়া হয় নাই । এখানে কংগ্রেস দল একটি জাতীয়তাবাদী দল হিসেবে, সংবিধানে বর্নীত অধিকারগুলিকে কার্য্যকরী করতে অস্বিকার করাটাকেই আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। শ্রমিক শ্রেনী বা সাম্যকে সামনে আনা হয়েছে, শ্রেফ সব জাতিয়তাবাদীদের পালিয়ে যাওয়ার পথটি বন্ধ করে দিতে।

দ্বিতীয় অংশ।

গত সত্তোর বছরের, বিশেষ করে নেহেরু এবং ইন্দিরার কালের কংগ্রেস শাসনের অভিজ্ঞতা থেকেই বলতে হয়
---- যতই সংবিধানে সেক্যুলারিজম কিংবা স্বয়ংসম্পূর্ণতার কথা বলা হক, সেই লক্ষকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে আর্থ-সামাজিক কাঠামো নির্মানে কিছু কাজ যদিও বা করা হয়
---- সে সব সাফল্যকে ধরে রাখা এবং এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে যদি এক অখন্ড ধারনা এবং অখন্ড কর্মসূচী নিয়ে যদি 'মানব সম্পদের সাধারন উন্নয়নের সাথে সাথে  যদি জাতীয়তাবাদী ধারায়
------ , শিক্ষাকে অখন্ড জ্ঞানের পথে এগিয়ে দেওয়ার পথটাই ভূলে যায়
----      মানুষকে পরিত্যাগ করে   দেশীয় একচেটে এবং বিদেশীদের প্রতি ঝুকতে শুরু করার ঘটনা যে স্বাভাবিক  সেটা অক্টোবর বিপ্লবোত্তর বিশ্ব ইতিহাস  জুড়েই পরিব্যপ্ত।
-------   এমনটি ঘটতে পারে আত্মসর্পন কিংবা  বোধহীনতা- উভয় পথেই।
তৃতীয় অংশ।

 তখন যদি শ্রমিক শ্রেনী বা সাম্যবাদীরাও 'জাতীয়তার সর্ত'টাকে তার চিত্তপটে রাখ তে ব্যর্থ হয় 
---- তবে তাদের পক্ষে যেমন অখন্ডতার সর্তগুলিকে একা একা পুরন করার যোজ্ঞতাই সে হারিয়ে ফেলে।  তথাকথিত জাতীয়বাদীরা যখন নিজের পথ ছেরে দিয়ে অন্য পথে হাটা দেয়, তাদের উপরেও চাপ বাড়ানোর যোগ্যতাও খুইয়ে বসে।

গতির সাধারন নিয়মটাই এখানেঃ কোন গতি  পথ হারিয়ে ফেলার কারনে যখন কোন শূন্যতা নির্মান হয় তখন,
----- সেই শূণ্যতায়,  অণ্যগতি ঢুকে পড়বেই। জাতীয়তা যদি নিজে পথ হারিয়ে ফেলে , তখন সেখানে সাম্যকে হস্তক্ষেপ করতে হবে সাম্যের কারনেই নয়, সেখানে যাতে 'বিশ্বফ্যাসীবাদী' অথবা অতি-অতীতের আচার বিচার ঢুকে না যায়, সেটা দেখতেও। 

চতুর্থ অংশ।

বিপ্লবের মাধ্যমে স্বাধীনতা. আর  চুক্তি  করে স্বাধীনতার তফাৎ টা যদি চিন এবং ভারতের ভেতরের তফাতটাকে চিহ্নিত করে দিয়ে থাকে
---- তবে এই তফাতের  দুরুত্বটাই হোল,   অখন্ড বা আধুনিক যুক্তিবাদী  জ্ঞানের আধার হিসেবে একটি 'মুক্ত চিত্ত' এবং  অন্যপ্রান্তে পাচ হাজার বছরের আবর্জনা সিক্ত একটি 'অনুমান কিংবা বিশ্বাস সর্বস্বতার আধারের উপরে
স্বাধিন অর্থনীতি, তার সাথে সামাজিক সম্পর্কগুলির নির্মান। 

স্বাধীন ভারতবর্ষ, বৃটিশ এবং আমেরিকার হাত ধরে জাতীয়তাকে এগিয়ে দিতে, যখন প্রতারিত হোল উভয় দিকে থেকে তখন সোভিয়েতের হাত ধরে, তার পক্ষে, সংবিধানে প্রদত্ত  গনতন্ত্রের উপাদানগুলিকে ধারন করার আধারটি নির্মানের অর্থনৈ্তিক ভিত্তিটা পেয়ে গেলো বটে, কিন্তু আধুনিক জাতী হিসেবে দাড়ানোর,
-------মানবিক উপাদানগুলিকে, অতীতের পাল্টা চাপকে অতিক্রম করে, ভেতরের একচেটে এবং জমিদারদের স্বার্থ ডিঙ্গিয়ে, পাশ্চাতের৪ কায়েমী স্বার্থকে অতিক্রম করে সংহত করা সম্ভব ছিল না।
 সেখানে কংগ্রেস দল এবং সরকারের সম্পর্কের পারস্পরিকতাতেও, দলের উপরে, সেই দাংগাবাজদের প্রাধান্যই বেশী ছিল যারা দাংগা লাগিয়ে স্বাধীনতায় বাধা দিয়েছিল এবং বর্তমানে
------ তদজনিত অসুবিধাগুলিকে কাজে লাগিয়ে, অতি-অতীতের গাঁঁধার পিঠে চড়ে, অনাধুনিকতার সুযগ নিয়ে, মানুষকে বিবষ করে দিয়ে, ভারতের অবিকশিত  জাতীয়তার অবশিষ্টাংশকে ধ্বংস করে দেওয়ার পথে
---    পা বাড়ানোর সুযোগ পেয়ে গেলো। (চ ল বে )


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours