জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

এবারের ভাইফোটায় নানা কারনে কিনিত আবেগ তারিত হয়ে অংশ নেওয়া  এবং প্রায় ২০ বছরবাদ শ্যামনগরের  পৈ্ত্রিক বাসভবনে ছয়-ভাই বোন,  এই উপলক্ষে একসাথ হওয়ার কারনে এই লৌকিক উৎসবের  আয়োজনে বোনদের একটু সাহায্যো করতে হয়েছে।

 এই সুত্রেই  একপ্রান্তে যেমন বুঝলাম, 'ভাই-ফোটা' বাংলার সব থেকে বড় লৌকিক উৎসব। কিঞ্চিৎ খন্ডিত হলেও, প্রায় নির্ভেজাল জাতীয় উৎসব । অন্যপ্রান্তে বুঝলাম, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সব লোকাচারের সাথে, এসব ছোটবড় উৎসবগুলিকে, যারাই একত্রিত করে কোন বিশ্বজনীনতার অভিমুখ দিতে পেরেছে, তারাই জাতীসত্বাকে আন্তর্জাতীকতার রুপ দিতে পেরেছে।

বাজার হাট আর দোকানদারদের সাথে কথাবার্তায়, জাতীয় লোকাচারগুলিকে সুত্রবদ্ধ করার গতিটা সাধারন প্রকৃতিগত অভিমুক বলে মানলেও, এই অভিমুখকে আটকানোর মতো উপাদানগুলিও বিপুল্ভাবে শক্তিশালী হচ্ছে। এই বিরোধীতার উপাদানগুলি যেমন একপ্রান্তে অতি-অতীতের জাতীয় উপাদানের ভেজালগুলি কাজ করে, তেমনি বাইরে থেকেও উদ্দামগতিতে এমন সব উপাদানের অনুপ্রবেশ ঘটছে, যেগুলি জাতীয়তার প্রকৃ্তিগত  আন্তর্জাতিক অভিমুখটিকে সরাসরি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করছে প্রানপনে।

মনে হোল, সে কারনেই সম্ভবতঃ লেনিনবাদ, জাতীয়তা যাতে কোন মতেই বিপথগামি না হতে পারে, সে কারনেই একটা সাম্যবাদী সুরক্ষার প্রস্তাব রেখেছেন সর্বক্ষেত্রে। ষাট বছরে এটাও দেখেছি, এই সাম্যবাদী সুরক্ষার ছিদ্রপথে কেমণভাবে,'পূরানো মদিরা' নতুন বোতলে অনুপ্রবেশ করে।

তাই গত লোকাচারে যোগদানের অভিজ্ঞতায় প্রথমতঃ বুঝলাম, জাতীয়তার ভগিরথ হওয়ার কাজটা সম্ভবতঃ  চিত্তের সর্বোৎকৃ্ষ্ট সৃজনী।  আরো বুঝতে সাহায্য করেছে,  এই সৃজনীতে তারাই সাফল্য পাবেন, যাদের চিত্তে এসব উপাদানগুলির জাতীয়তা বিরোধী উপাদানগুলিকে সরিয়ে রেখে একটা অভিন্ন সত্বায় মুক্তি দেওয়ার মতো  মনের পবিত্রতা এবং উদারতা, এই উভয় গুনের অধিশ্বর।

 দুই বোনের  আয়োজনে সাহায্য করতে গিয়ে, দু'বেলা বাজারে যাওয়ার সুবাদে, একটা বিকট ধরনের অভিজ্ঞতা হয়েছে।
----  শ্যামনগরের বড় বাজারেও আগের দিন সন্ধ্যায় দেখলাম কিঞ্চিত লোক সমাগম। মাছ বাজারের অবস্থা আরো সোচনীয়। অথচ তিন বছর পূর্বেও দেখেছি, লোকজনে গিজগিজ করতো, বিশেষ করে বোনদের  সমাগম হোত বিপুল।
------ কপাল থাবরাতে থাকা, দোকানীদের কাছ থেকে যে চিত্রটা পেলাম, তাতে আমার চোখ চরকগাছ। তারা জানালো। আধুনিক  বোনেরা এখন আর বাড়ীতে রান্না করে ফোটা ভাইদের খোয়াতে ভূলে গেছে। এখন হয় বাড়ীতে, রেষ্টুরেন্ট থেকে  আনা ' বিড়িয়ানী' ভোজেই কাজ সারা হচ্ছে এবং অনেকেই রেষ্টুরেন্টে গিয়েই কাজটা সেরে ফেলছেন।
-----   আরো একটু জিজ্ঞাসা করায়  জানা গেলোঃ 'ফোটাটা'  এখনো বাড়ীতে
আগামী দিনে নিশ্চিতভাবে বিশেষ আয়োজিত রেষ্টুরেন্টেই এ কাজটা সম্পন্ন হতে পারে, দোকানদারদের অভিমত।

এসব শুনেই মনে হয়েছিল, জীবন রায়ের দেওয়ালে, হটাৎ করেই ছবিগুলি ছাপানোর আগে 'পাবলিক মুডের' গতিপ্রকৃ্তি যাচাই করে নেওয়া ভালো। কেননা সমাজের নিচু স্তরে, প্রচলিত লৌ্কিক উৎসবগুলি যে মুছে যাওয়া থেকে যেমন বিপদ দেখা দিয়েছে
----  তেমনি,  যারা রাজনীতিতে বিজ্ঞান ধর্মীতা নিয়ে গবেষনা করছেন, তাদের মধ্যেও, কোন বিকল্পের কথা না ভেবেই এরকম লৌ্কিক অনেক আচারের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। তারা তখন মনেই করতে পারেন, ভাইফোটা, বিজয়া কিংবা রাখি-বন্ধন অথবা লক্ষী কিংবা স্বরস্বতী পুজোর মতো যে সব উৎসব হিন্দু-ভাবের সাথে  কিঞ্চিত পরিমান যোগাযোগ রয়েছে, সেগুলি নিজে থেকেই যদি বন্ধ হয়ে যায়, তবে ভালোই হবে।

এই সুত্রগুলিকে সামনে রেখেই মনে হোল,
ভাইফোটায় ছয় ভাইবোনের এক হওয়ার
ছবিগুলি পাঠানোর পূর্বেঃ
জাতীয়তা-আন্তর্জাতীকতার পারস্পরিকতা সম্পর্কীত, কয়েকটি লেখা লিখে পাঠাবো। সেই সুত্রেই এই প্রসংগে কয়েকটি লেখা যেমন একটি পোর্টালে পাঠাই, তেমনি নিজেও ফেস বুকে সরাসরি  লিখি। আরো কয়েকটি লিখতে হবে।
আসলে বুঝতে হবে, সব লৌকিক উৎসব কিংবা ধর্মীয় উৎসব ক্রমে লৌ্কিকতার রুপ পেয়েছে, কালে কালে  সেগুলির আবেদনে  পরিবর্তন এসেছে, জাতীয় সত্বাকে সংহত করার এক প্রাকৃ্তিক অভিমুখ ধরে। এর সাথে যেমনভাবে আন্তর্জাতীক ভাবপ্রবাহ মিশেছে, তেমনভাবে লৌ্কিকতার আবেদন বিকশিত হয়েছে।
-----  এই সুত্রেই বলা হয়েছে, জাতীয়তা এবং আন্তর্জাতীকতার উভয়েই উভয়ের সাথে একাত্ম। এই একাত্মতায় নিশ্চিতভাবে দুটি পরস্পর বিরোধি অভিমুখ  রয়েছে।
----   আন্তর্জাতীকতার অর্থ  যখন 'সীমায় দাড়িয়ে অসীমের অন্বেষন এবং অসীমতার অভিমুখে দাড়িয়ে জাতীয়তার প্রকৃত স্বরুপকে চিহ্নিত করা।
----- এই সুত্র ধরেই, এসব রুপান্তর প্রকৃয়াগুলি হটাৎ করেই পূর্ন বিকশিত হয় না। গায়ের জোর দেখাতে গেলে হিতে বিপরীত ঘটে। স্মরন রাখতে হবে, যা বিদ্যমান তাতেই অতীব ধৈ্র্যের সাথে, নতুন উপাদান যুক্ত করে সেগুলিকে, স্যাকুলার এবং পরে সাম্যবাদী বা আন্তর্জাতীক চরিত্র দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
------  সেজন্যেই মানতে হবে, বিশ্বের প্রতিটি কোনা ধরে, সংস্কৃতির সাধারন অভিমুখ সাম্যমুখীন হলেও, সংস্কৃতির রুপ কিন্তু সব সময়  ভিন্তনতর হতে বাধ্য একটা কারনেই। স্থান কাল ধরে মিশ্রনের প্রকৃয়ায় আন্তর্জাতীক রুপটি বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
----  শেষ কথাটি, হয়তো এখনো বলা বাকি। উৎসবের এই রুপান্তর ধারায় কেন এবং কতটুকু  আন্তর্জাতীকতাকে বিবর্তনমুখীনতায় সাহায্য করবে। এই কিঞ্চিৎ হস্তক্ষেপটি ঘটবে একটা কারনেই। শুরুতে যে কথাটি বলা হয়েছে
----  ভাইফোটাকে 'বিড়িয়ানী' বা 'রেষ্টুরেন্ট' উৎসবে বদলে দেওয়ার 'বাজার মুখীনতাকে' রোধ করে,
------ 'ভাইএর কপালে দিলাম ফোটা'টা যাতে সংকীর্নতা থেকে বিশ্বজনীন আবেদনে মুক্তি পায়, সেটিকে দেখা। (ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours