কাজল ভট্টাচার্য, কার্টুনিস্ট ও সিনিয়র জার্নালিষ্ট, কলকাতা:

(কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী স্মরণে)

পঁচিশে ডিসেম্বর।
বেথলেহেমে এক শিশু জন্মালেন।
কলকাতায় এক শিশু মারা গেলেন।
মধ্যে সময়ের ফারাক প্রায় সাড়ে বারো ঘণ্টা।

কলকাতার এই শিশুর নামও যিশু।
প্রথমজন ঈশ্বরপুত্র। দ্বিতীয়জন মানবপুত্র। বেথলেহেমের যিশুর মতোই কলকাতার যিশুও নিষ্পাপ। অসীহ সাহসী। রাজার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতে পারতেন,

- "রাজা তোর কাপড় কোথায়?"

প্রশ্ন করার আর কেউ থাকলো না। ক্যালেন্ডারের হিসেবে, ঠিক একবছর আগে চলে গেছিলেন সেই তুখোড় প্রশ্নকর্তা- কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।

মাথা নোয়ানো তাঁর ধাতে ছিল না। আজীবনের শিশু। শিশুর অসীম সাহসে ভরপুর জীবনের শেষপ্রান্তে এসেও। রাজার সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে বলতে পারতেন- উলঙ্গ রাজা!
রবীন্দ্র পরবর্তী জমানার প্রতিনিধি। আজ যে আধুনিক কবিতা নিয়ে এত হইচই, নীরেন্দ্রনাথবাবুর মেধার কলম থেকে তা জন্ম নিয়েছিল বহুযুগ আগেই। তবে আধুনিক কবিরাও চালাকি করে সময়কে এড়িয়ে যান। সময়ের দাবিকে উপেক্ষা করেন সচেতন ভাবেই। পাছে রাজরোষে পড়তে হয়। সে সবের বালাই ছিল না বর্ষীয়ান কবির।

আর থাকবেই বা কিভাবে?
চেয়েছিলেন তো 'রোদ্দুর' হতে। আসল অমলকান্তি তো তিনিই। কবিরা সাধারণত চাঁদ, তারা, জোনাকির হাটেই মশগুল। আর নীরেন্দ্রনাথবাবুর আরাধ্য ছিল রোদ্দুর। তাই তিনি আপনমনে লিখে যেতেন,

"..সেই অমলকান্তি, রোদ্দুরের কথা ভাবতে ভাবতে
যে একদিন রোদ্দুর হতে চেয়েছিল..."

দুপুরের রোদ তখন জ্বলজ্বল করছে।
দিবাকর মধ্যগগনে। ঘড়িতে বারোটা বেজে পঁচিশ মিনিট। সেই রোদ্দুরেই বিলীন হয়ে গেলেন কবি।
রোদ্দুর চলে গেল বাংলা শিল্প, কবিতার।

কলকাতার যিশু চলে গেলেন।
বেথলেহেমের যিশু মর্তে এলেন।
দিনটা একই- পঁচিশে ডিসেম্বর।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours