দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

খুঁজে দেখা কিছু পিছনে ফেলে গেছে কিনা?
যাকে ছাড়া চলে না; হয় ক্রিসমাস!
এই লাইনটি রবার্ট ফ্রস্টের ক্রিসমাস ট্রি কবিতার অংশ বিশেষ।

আর যাকে নিয়ে এই কবিতা, সেই ক্রিসমাস ট্রি  বড়দিনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়া ক্রিসমাস জমে না।

যদিও জার্মানিতে ষোড়শ শতকে এই ক্রিসমাস ট্রি নিয়ে মাতামাতির শুরু। এটা ছিল পুরোপুরি একটি প্যাগান উৎসব। অর্থাৎ অখ্রীষ্টিয় উৎসবে রীতি। একবার ইংলণ্ডের ডেভন রাজ্যের ক্রেডিটন গ্রামের পোপ বনিফেস জার্মানি যান। সেখানে দেখেন, ওক গাছের উদ্যেশ্যে ওখানকার প্যাগান মানুষ এক বালককে বলি দেওয়ার তোড়জোড় শুরু হয়েছে। ক্রুদ্ধ বনিফেস ওক গাছ কেটে দিলেন। তার পর দেখা গেল সেখানে একটি সুন্দর দেবদারু চারা গাছ জন্ম নিয়েছে। শীতপ্রধান দেশে দেবদারু বা পাইন সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। যাই হোক সেই দেবদারু চারাকেই খ্রীষ্ট ধর্মের প্রতীক হিসেবে ধরলেন। সেই রাতেই তাদের খ্রীষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করলেন। এছাড়াও, দেবদারু ও পাইন গাছের তৈরি ক্রিসমাস ট্রি অশুভ শক্তিকে দূর করতে সক্ষম বলে ধরে নেওয়া হয়।

মোমবাতি, পাখি, ফুল, ফল, ঘন্টা,  স্বর্গদূত আর রঙবেরঙের কাগজ ও বাতি দিয়ে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো হয়।

ক্রিসমাস ট্রি হিসেবে যে গাছটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করা হয় সেটি হলো ফার গাছ। এটি মূলত দেবদারু জাতীয় গাছ। এই গাছেই বিভিন্ন রংয়ের আলোক সজ্জা আর বিভিন্ন দ্রব্যে সাজিয়ে রাখা হয়।
ক্রিসমাস ট্রি’তে আলোর ব্যবহার ছাড়াও বিভিন্ন অলঙ্কার দিয়ে সাজানো হয়। এই গাছের ওপরে একটি তারা বা স্বর্গদূত বসানো হয়। এই স্বর্গদূতটি বেথেলহেমে জন্ম নেয়া যিশুখ্রীষ্টের প্রতীক। যদিও ক্রিসমাস ট্রির প্রচলন যীশু খ্রীষ্টের জন্মের বহু আগে।

যদিও, বড়দিনে ক্রিসমাস ট্রি সাজানো এবং উপহার দেওয়ার শুরু কীভাবে হয় তার সুস্পষ্ট কিছু লিখিত  নেই। এ নিয়ে প্রচলিত আছে বিভিন্ন গল্পকাহিনী।

এমন একটি গল্প হলো রোমের এক গরিব কাঠুরের ঘরে একদিন এক শীতার্ত শিশু হাজির হলো। কাঠুরে দম্পতি ছিল যিশুভক্ত। তারা শিশুটিকে আদর করে খাওয়ালেন, নরম বিছানায় শুতে দিলেন। সকালে ওই শিশু দেবদূতের রূপ ধরে বলল, ‘আমিই যিশু’।
তাকে আদর-আপ্যায়ন করার জন্য কাঠুরে দম্পতিকে তিনি একটি গাছের ডাল দিলেন এবং তা মাটিতে পুঁতে রাখতে বললেন। এরপর ক্রিসমাসের দিন দেখা গেল ডালটি সোনালি আপেলে ভরে গেছে। তখন তারা এ গাছের নাম দেন ক্রিসমাস ট্রি।

একদিন এক গরিব শিশু কিছু পাইন গাছের চারার বিনিময়ে পয়সা দেওয়ার অনুরোধ করল এক গির্জার মালিকে। মালি গাছগুলো নিয়ে গির্জার পাশে পুঁতে রাখল।

ক্রিসমাসের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখল, গাছগুলো গির্জার চেয়েও বড় হয়ে গেছে এবং সেগুলো থেকে অজস্র তারার আলো ঝরে পড়ছে। মালি তখন গাছগুলোর নাম দিল ক্রিসমাস ট্রি।

গল্পই যতই থাকুক, ক্রিসমাসে যতটা মজা হয়, তার অনেকটাই কিন্তু জুড়ে থাকে এই ক্রিসমাস ট্রি বানানো নিয়ে। বাড়ির বাচ্চারা মুখিয়ে থাকে এই আনন্দ নিয়েই! হতে পারে মূর্তি পুজোর মত এই প্রথা প্যাগান! তবে প্যাগানিজম ছাড়া সাহিত্য, লোক সাহিত্য বেঁচে থাকে না। বাঁচার রসদ সেখানেই। তাই খ্রীষ্টানরা একে একেবারে ছুঁড়ে ফেলে দেয় নি। আর তাই ইংরেজি সাহিত্য এর কাছে ঋণী। রোমান্টিক যুগের ইংরেজ কবি জন কিটস তো নিজেকে প্যাগান বলতে বেশি পছন্দ করতেন!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours