গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

মশার কামড়ে আপনি নিশ্চয়ই অতিষ্ঠ! মাঝে মাঝে মনে হয় না যে এমন কোনো যায়গা কি পৃথিবীতে নেই যেখানে গেলে অন্তত এই মশার হাত থেকে একটু রেহাই পাওয়া যাবে! আমাদের জীবনে প্রতিদিন এই মশার অত্যাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে!  মশারি টাঙিয়েও বাঁচা যাচ্ছে না আর!  মশার কামড়ে নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে উঠেছে, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু আর তেমনই আছে ভয়ংকর জিকা ভাইরাস বহনকারী মশা, যাদের কামড়ে আপনার প্রাণ সংশয়ও হতে পারে!  এখন যদি আপনাকে বলি, এমন একটি দেশ আছে এই পৃথিবীতেই যেখানে একটাও মশা নেই!  সে হলো শান্তির দেশ আইসল্যান্ড, বিশ্বাস করুন সেখানে একটাও মশা নেই, অদ্ভুত ভাবে আইসল্যান্ডের আশপাশের দেশগুলোতে মশার উপদ্রব থাকলেও এই দেশে দেখা মিলবে না একটিও মশার।  কেন এই দেশে মশা নেই!  এর কারণ বিজ্ঞানীরা বলছেন, আইসল্যান্ডে খুব দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, ফলে মশা তাদের জীবনচক্র সম্পূর্ণ করতে পারে না, যার ফলে  মশার বংশবৃদ্ধি বা তাদের বেঁচে থাকাও সেখানে অসম্ভব হয় রায়। তবে শুধু মশা নেই বলেই আইসল্যান্ডে অখণ্ড শান্তি আছে ভাবার কোনো কারণ নেই!  'দ্য ইন্সটিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস' (আইইপি) এর তত্ত্বাবধানে তৈরি 'গ্লোবাল পিস ইনডেক্স' অনুসারে, বিগত দশ বছর ধরে আইসল্যান্ড পৃথিবীর মধ্যে প্রথম পাঁচটি শান্তির দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে জায়গা করে নিয়েছে, অথচ  তালিকায় থাকা আর চারটি শীর্ষ দেশ নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রিয়া, পর্তুগাল ও ডেনমার্কের দেশের তুলনায় আইসল্যান্ডই হলো সব থেকে কম সামরিক শক্তিসম্পন্ন দেশ! তবু কি করে সম্ভব হলো শান্তিতে থাকা তালিকায় টিঁকে থাকা! উল্লেখ করা যেতে পারে, 'দ্য ইন্সটিটিউট ফর ইকোনোমিকস অ্যান্ড পিস' এর এক সমীক্ষায় এ তথ্য উঠে এসেছে যে, মূলত বিশ্বের শতকরা 99.7 হারে  মানুষের আবাসস্থল 163 টি স্বাধীন দেশকে নিয়ে এই তালিকা তৈরি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।  মুলত তিনটি মানদণ্ডের ভিত্তিত আর তেইশটি গুণগত ও সংখ্যাগত নির্দেশকের প্রেক্ষিতে এই তালিকা তৈরি হয়।  'বিশ্ব শান্তি সূচক 2018' এর নির্ধারিত সেই তিনটি মানদণ্ডের মধ্যে রয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা, দেশের বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দ্বন্দ্ব এবং সামরিক শক্তির অবস্থা। 2008 থেকে এই সমস্ত মানদণ্ডের ভিত্তিতেই আইসল্যান্ড প্রথম সারিতে নিজের অবস্থানটি সফল ভাবে ধরে রাখতে পেরেছে।
কেন এই আইসল্যান্ডকে এইসব চুলচেরা বিশ্লেষণ ছাড়াও সবাই শান্তিপূর্ণ দেশ মনে করে:-
'আইসল্যান্ড' শব্দটি শোনামাত্রই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বরফে আচ্ছন্ন শীতল শান্তির এক স্বপ্নের দেশের ধবধবে সাদা ছবি, যাকে ক্যালেন্ডার ছবি বলে। তবে বাস্তবে কিন্তু মোটেও সেরকম কিছুই নয়, বরং দেশটি নামের কারণে বরফে আবৃত কোনো ঠান্ডা জায়গা মনে হলেও, দেশটি সব অর্থেই প্রাকৃতিক রুপে পরিপূর্ণ। ওয়াল-পেপারের মতো নৈসর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যে পরিপূর্ণ একটা সুন্দর দেশ।
এই ছোট্ট দেশটিতে মাত্র তিন লাখ বত্রিশ হাজারের মতো মানুষের বসবাস, সাড়ে তিন লক্ষেরও কম জনসংখ্যার দেশ এই আইসল্যান্ড  জনসংখ্যার বিচারে মালদা জেলার ইংরেজবাজার ব্লকের চেয়েও কম!  ইউরোপের সবথেকে জনবিরল দেশ এই আইসল্যান্ড, বিশ্বকাপ ফুটবলের ইতিহাসে অংশগ্রহনকারী দেশগুলির মধ্যে জনসংখ্যার বিচারে সবথেকে ক্ষুদ্রতম দেশ!  আয়তন মাত্র এক লাখ তিন হাজার বর্গ কিমি।  আইসল্যান্ডের এই সামান্য জনসংখায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা কিন্তু সাতটি, তার মধ্যে চারটে সরকারী এবং তিনটি প্রাইভেট। এর মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় আবার পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। আইসল্যান্ডের এই তিন লাখ বত্রিশ হাজার মানুষের  এর মধ্যে প্রায় এক লাখ কুড়ি হাজার মানুষ অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক মানুষ আইসল্যান্ডের রাজধানী রিকজাভিক বা এর সংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে। প্রায় এক হাজার বছর আগে ভাইকিং অভিযানকারীরা প্রথম আইসল্যান্ডে এসে বসতি স্থাপন করে, আইসল্যান্ডবাসীরা আজও তাদের ভাইকিং ঐতিহ্য নিয়ে বেশ গর্ব করে। আইসল্যান্ডের আর একটা প্রকৃতির অসামান্য উপহার হলো, আইসল্যান্ডের জল, এই জল এতটাই বিশুদ্ধ যে, কোনো রকম বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়া ছাড়াই প্রত্যেক মানুষ নিশ্চিন্তে এই জল পান করতে পারে।
একটি দেশ কতটা শান্তির দেশ, সেই দেশের মানুষের জন্য, তা পর্যালোচনা করার জন্য সেই দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের অবস্থা, যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং অবশ্যই তার ধর্মীয়-অবস্থান এবং ধর্মীয়-উদারতা, এই সমস্ত ক্ষেত্রের প্রকৃত অবস্থা বিচার করে দেখতে হয়। অবাক হওয়ার মতো ঘটনা যে আর্থিক ভাবে এতো সমৃদ্ধ হওয়া সত্তেও আইসল্যান্ডের অধিবাসীদের মধ্যে ধনী-গরিবের কোন রকম ভেদাভেদ নেই! সেখানকার অধিকাংশ নাগরিক নিজেদের মধ্যবিত্ত বলেই আখ্যায়িত করতেই পছন্দ করে, এর অর্থ খুব পরিষ্কার যে  আইসল্যান্ডের অধিবাসীদের মধ্যে কোনো আর্থিক অস্থিতিশীলতা বা অস্থিরতা নেই।  তারা তাদের সন্তানদের একই ধরনের স্কুলে পাঠান এবং নিজেরাও খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন। বিস্ময়কর হলেও সত্যি যে তাদের মধ্যে ধর্মীয় কোনো বিষয় নিয়েও একদম উত্তেজনা নেই! সেই দেশে বেশিরভাগ নাগরিকই  ইভানজেলিকাল লুথেরান ধর্মে বিশ্বাসী।  শতকরা আশি ভাগ মানুষই লুথারান স্টেট চার্চের অংশ বা তার অনুসারী।  প্রায় দশ হাজার মুসলিমও কিন্তু রয়েছে আইসল্যান্ডে, এছাড়াও অন্যান্য ধর্মের মানুষও আছে এখানে। নাস্তিক নাগরিকের সংখ্যার দিক থেকে আইসল্যান্ড দেশটি একদম নিচের ধাপে আছে! ধর্ম পালন নিয়ে বাড়াবাড়ি তো নেই বরং এখানে ধর্ম নিয়ে রয়েছে বৈধ আইন। নাগরিকরা যার যার ইচ্ছে অনুযায়ী ধর্ম চর্চা করতে পারে, ধর্ম মানার কোনো বাধ্যবাধকতা একদম নেই। তাই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কথাটা আইসল্যান্ডে খুব অচেনা শব্দের মত।  আইসল্যান্ডের আরও একটি উন্নতি-সূচক হলো এই দেশে লিঙ্গ বৈষম্য নেই, 'ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি' এর তালিকা অনুসারে, আইসল্যান্ড পরপর সাত বছর ধরে লিঙ্গ সমতার দিক থেকে এক নম্বর অবস্থানে রয়েছে।  একশ চুয়াল্লিশটি দেশের তালিকায় এই ছোট্ট দেশটি শিক্ষা ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নারীদের অবস্থানটি বেশ পোক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।  দেশের প্রায় শতকরা ছেষট্টি ভাগ নারীই উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত। 
এই অবস্থাটা তো আমাদের দেশের তুলনায় একদম উল্টো! আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো আইসল্যান্ডে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ পুরুষদের তুলনায় বেশি,  পার্লামেন্টের বাষট্টিটি আসনের মধ্যে তিরিশটিই এই মূহুর্তে তাই নারীদের দখলে, অর্থাৎ দেশের প্রায় অর্ধেক ক্ষমতা নারীদের হাতে। আইসল্যান্ডের আশি ভাগ নারীই বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে জড়িত, তাই পারিবারিক ক্ষেত্রে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেরই অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য বাধ্যতামূলক পিতৃত্বকালীন ও মাতৃত্বকালীন ছুটি দেওয়া হয়।  1980 তে ভিগদিস ফিনবোগাদোত্তির শুধু আইসল্যান্ডের নয়, বরং সমগ্র বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম নারী রাষ্ট্রপতি হিসেবে ক্ষমতায় আসেন। অবস্থানগত দিক থেকে আইসল্যান্ড উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের ঠিক মাঝখানে অবস্থিত, চতুর্দিক সমুদ্র দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট দেশ। তাছাড়াও এই দেশ রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত নিরপেক্ষ, সাধারণ মানুষের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে সেভাবে মাতামাতি নেই, মাথা ব্যথাও নেই! আর আমাদের ভারতবর্ষে ঠিক উল্টো! শিক্ষা, স্বাস্থ্য, উন্নয়ন নিয়ে মাথা ব্যথা নেই, আছে শুধু ধর্ম আর রাজনীতি নিয়ে মাথা ব্যথা! বিশ্ব মানচিত্রে হয়তো আইসল্যান্ডই একমাত্র দেশ যাদের নিরাপত্তার জন্য সব থেকে কম অর্থ আর লোকবল লাগে! তবে আইসল্যান্ড একটি ছোট উপকূলীয় রক্ষীবাহিনী প্রস্তুত রেখেছে, যেখানে অবশ্য মেরেকেটে চারশো সৈনিক আছে, এছাড়াও মাত্র চারটি যুদ্ধবিমান এবং তিনটি যুদ্ধজাহাজা আছে।
আইসল্যান্ড নিরাপত্তার জন্য ন্যাটোর সদস্য হিসেবে সই ও করেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাদের একটি চুক্তিও করা আছে যে যুক্তরাষ্ট্র কখনোই আইসল্যান্ডের উপর হামলা করবে না।   ভারতের মাত্র তিন বছর আগে 1944 এ স্বাধীন হওয়া এই দেশটি চুয়াত্তর বছর এভাবেই শান্তিতে কাটিয়ে দিয়েছে। সেই দেশের মানুষও এই অবস্থার কোনো রকম পরিবর্তনের চেষ্টা করেনি। দিব্যি হেসে খেলে আনন্দে আছে!  অথচ আমরা ভারতীয়রা শুধু রাজনৈতিক প্ররোচনায় সত্তর বছর ধরে মারামারি করে যাচ্ছি!  শুনলে আশ্চর্য হবেন, আইসল্যান্ডের পুলিশ সাধারণত বন্দুক, পিস্তল বা এই ধরনের কোনো আগ্নেয়াস্ত্র সচরাচর ব্যবহার করে না।  প্রশিক্ষণের সময় যদিও তাদেরকে এগুলো দক্ষতার সাথে যথাযথ ব্যবহার শেখানো হয়। জানলে অবাক হবেন  আইসল্যান্ডে কিন্তু সাধারণ জনগণ ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য নিজে কোনো অস্ত্র কিনতে বা রাখতে পারে না এবং অবৈধ ভাবে সেখানে কোনো আগ্নেয়াস্ত্র কেনারও সুযোগ নেই। একটি উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো গুলি বন্দুকের ব্যবহার কম হলেও আইসল্যান্ডের পুলিশদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য তিন বছরের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যেখানে ভারতবর্ষে বড়জোর এক বছর!  আইসল্যান্ডের এই পুলিশ প্রশিক্ষণে,  অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর লক্ষ্য রাখা হয়, যেমন  সেখানে পুলিশ বাহিনীর তিন বছরের প্রশিক্ষণে শুধু পুলিশর নিরাপত্তা প্রদান নিশ্চিত করার পাঠের বাইরেও বহু সামাজিক দায়-দায়িত্বও শেখানো হয়। একটি মজার এবং অদ্ভুত বিষয় হলো আইসল্যান্ডবাসীর মধ্যে খুন করার প্রবণতাও অত্যন্ত কম।  বছরে মাত্র শতকরা দেড় শতাংশ খুনের ঘটনা দেখা যায়, এছাড়া সেভাবে কোনো বড় অপরাধ তো দূরের কথা, ছোটখাটো চুরির ঘটনাও বিরল ব্যাপার! তাই সেভাবে সেনাবাহিনীর বা পুলিশের প্রয়োজনও সেভাবে হয়না।  আইসল্যান্ডের ইতিবাচক দিকগুলোর মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য প্রশাসনিক বিষয় হলো, এই দেশে আয়কর তুলনামূলক ভাবে অনেক কম, বিনামূল্যে শিক্ষা ব্যবস্থা এবং চিকিৎসা পরিষেবা ইত্যাদি সরকারি ভাবে দেওয়া হয়,  মূলত কোনো একটি দেশের নাগরিকদের অবস্থা, ছয়টি নির্দেশকের উপস্থিতির ভিত্তিতে বোঝা সম্ভব,  যেমন মাথাপিছু জিডিপি, সুস্থভাবে জীবনযাপনের আয়ুষ্কাল, সামাজিক সহায়তা, বিশ্বাস, নিজের জীবনের স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ, এছাড়াও আরও অনেক কারণ রয়েছে যার জন্য আইসল্যান্ড বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশ হতে পেরেছে।  তাদের কাছ থেকে সবটুকু না হোক যদি সামান্য কিছুও শিক্ষা গ্রহণ আমারা করতে পারি তাহলে হয়তো ভারতবর্ষও একদিন 'বিশ্ব শান্তি সূচক' এর তালিকায় কিছুটা উপরে উঠে আসতে পারবে!! গতবছরই আইসল্যান্ডের সর্বপ্রথম ফুটবল বিশ্বকাপে পদার্পন করে, এর আগে 2016 তে ইউরো কাপে প্রথমবার ছাড়পত্র পেয়েই শেষ আটে প্রবেশ করে ফুটবল দুনিয়াকে চমকে দিয়েছিল। আইসল্যান্ড পৃথিবীর সবথেকে ধনী দেশগুলির মধ্যে একটি, এখানে মানুষের মাথাপিছু গড় আয় 54,288 ডলার চমকে যাওয়ার মতোই অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ছত্রিশ লক্ষ টাকার মতো!!
তবে এত কিছুর পরও সবথেকে আকর্ষণীয় বিষয়, দেশটির আসল সম্পদ হলো  দেশের মানুষের সাহিত্যপ্রীতি বা বই পড়ার অভ্যাস।  বিশ্বায়ন, যুদ্ধ, ব্যস্ততা, ইন্টারনেট বা স্মার্ট ফোনের গ্রাসও এই অভ্যাসকে বিন্দুমাত্র ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি! দেশটির প্রতি দশজন মানুষের মধ্যে একজন কোন না কোন বইয়ের লেখক!  এদেশে মাথাপিছু বুকস্টোরের সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বাধিক!  মাথাপিছু বই ও পত্রপত্রিকা প্রকাশনার সংখ্যাও সারা বিশ্বের মধ্যে সবথেকে বেশী!  আয়তনের বিচারে দুনিয়ার মধ্যে সর্বাধিক আন্তর্জাতিক সাহিত্য আমদানী ও অনুবাদ এই আইসল্যান্ডেই হয়! প্রতিবছর সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অবধি আইসল্যান্ডে সব থেকে বেশী বই বিক্রি হয়, এই সময়টাকে ওদেশে বই কেনার মরশুম মনে করা হয়। এই মরশুমকে ওদের ভাষায় বলা হয়, "Jolabokafold"  অর্থাৎ "বড়দিনের জন্য বইয়ের বন্যা"! এই বইয়ের বন্যা শুরু হয় আইসল্যান্ড পাবলিশার্স এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে, প্রতি বছরের নতুন প্রকাশিত সমস্ত বই ও ম্যাগাজিনের একটি তালিকা প্রকাশ করে উৎসাহ সহকারে জনসাধারণের মধ্যে তা বিলি করা হয়,  এমনকি সেই তালিকা বিনামূল্যে প্রতিটি আইসল্যান্ড বাসীর ঘরে ঘরে পৌঁছেও যায়।  এই অসাধারন সাহিত্যপ্রীতি এবং তার সাথে সম্পর্কিত শিক্ষা ও খেলাধুলার প্রতি গভীর ভালোবাসাই হয়তো নিশ্চিত ভাবে আইসল্যান্ডকে বিশ্বের সবথেকে সুখী দেশগুলির মধ্যে একটিতে পরিনত করেছে।  সাধারণ সাহিত্যেপ্রমী হিসেবে তাই  কুর্নিশ জানাই আইসল্যান্ডবাসীদের, তাদের এই শান্তিপূর্ণ মহান সাহিত্য-প্রেমকে। এবার আপনারাই বলুন কেন আইসল্যান্ড বিশ্বের সবথেকে শান্তিপূর্ণ দেশ! অবশ্যই শিক্ষা আর সাহিত্যেপ্রম থেকেই তৈরী হওয়া চুড়ান্ত মূল্যবোধই আইসল্যান্ডকে বিশ্বের সবথেকে শান্তিপূর্ণ দেশে পরিণত করেছে।

                    


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours