নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেট, অস্ট্রেলিয়া:


নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেট, অস্ট্রেলিয়া:

কস্তুরী মৃগ তুমি–
যেন কস্তুরী মৃগ তুমি–
আপন গন্ধ ঢেলে–
এ হৃদয় ছুঁয়ে গেলে,
সে মায়ায় আপনারে ঢেকেছি।

সুগন্ধী এমনই এক জঞ্জাল
গায়ে ছড়ালে নিজের গন্ধে নিজেই মাতাল।
এখন শীতকাল নানান ফুলের গন্ধে মন পাগল পাড়া। হিমেল হাওয়া। শুকনো পাতা ঝরার বেলা, তার খসখসানি। রুক্ষ দিন। সব মিলিয়ে সামান্য হলেও যেন বিবর্ণতা গ্রাস করতে আসে শীতকে (Autumn-Winter Season)। যদিও তার মধ্যেই হাজার ফুলের মেলা। ম্যাগনোলিয়া, জারবেরিয়া, সূর্যমুখী, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা। আর উৎসবের মেজাজ। তার মধ্যে আপনি স্পেশ্যাল সুগন্ধির (Fragrances) গুণে। হিমেল হাওয়া নিমেষে দখিনা বাতাস মশলা, ফুল, ফলের মিলিত সুবাসে। আর আপনি যেন নিজেই কস্তুরী মৃগ। নিজের গন্ধে নিজেই ভোলেন---
সুগন্ধীর নামের মাঝেও আছে যেন মাদকতা।
যেমন -নার্সিসো রডরিগজ ফ্লেয়ার মাস্টার, ভলগারি জেসমিন নেয়ার, এলিজাবেথ আর্ডেন ফিফথ অ্যাভিনিউ, স্কিন বাই তিতান ন্যুনতম, নীনা রিচি লুনা, আজারো ক্লাব উইমেন, ডোলকে অ্যান্ড গাব্বানা দ্য ওনলি, ডেসকোয়ার্ড২ উড, পুলিশ পাচৌলি, আহা নাম তো নয় যেন কত অজানারে জানা হয় , সুগন্ধী তোমার নাম কি গন্ধে পরিচয়!
যতই আমি দূরে যাই ততই আসি কাছে....আমার গায়ে তোমার গায়ের গন্ধ লেগে আছে!

পৃথিবীতে সবচেয়ে ভালো পারফিউম তৈরি হয় ফ্রান্সে।  ফ্রান্সের মেয়েরা কখনো স্নান করতো না তাই তাদের গায়ে বাজে গন্ধ থাকতো, সেই গন্ধ দূর করার জন্য পারফিউম আবিষ্কার হয় , পারফিউম (স্টোরি অব মার্ডারার) একটা মুভিও আছে । চাইনিজ মেয়েরা কখনো মুখ ধোয় না, কারণ চাইনিজ ছেলেরা সেই গন্ধে দিওয়ানা।  স্পেনের রানী ইছাবালা কোনদিন স্নান করতো না তাই সে কাপড়ও পরতে পারতো না, কাপড় পরলে গা চুলকায় তাই….চেদীরাজ উপরিচর বসুর কন্যার গায়ে তীব্র মাছের গন্ধ থাকায় তার নাম রাখা হয় মৎস্যগন্ধা । মানুষের গায়ে গন্ধের ব্যাপারটা রাশির কারনেও হয়ে থাকে….. অনেকে বলে তুলারাশির মেয়েদের গায়ে ভয়ংকর দুর্গন্ধ থাকে… …অনেক মেয়ে আছে যাদের গায়ে কোন গন্ধই নাই….. আবার অনেকে আছে মৃগনাভি /সুগন্ধা/যোজনগন্ধা বা চাঁপাফুলের।
আমি ভীষণ গন্ধ পাগল মানে পারফিউম ভালোবাসি।
ফরাসী ছাড়াও অন্য দেশের পারফিউমের মধ্যে আমার প্রিয় : হিউগো বস, পাকো রাব্যান, ওপিয়াম, জিভঁছি, নিনা রিচ্চি,  ডিওর, ডেইজি, বোগারী, ইভ সাঁ লরঁ। এরা সকলেই বিমোহিত, গুঞ্জিত, সমর্পিত ও প্রবলভাবে আসক্ত হওয়ার মতো। মাঝে মাঝে উপহার পেলে এক আধটু এদিক সেদিক গন্ধ বিলিয়ে দিই বডিতে । কিন্তু সংগ্রহের তালিকায় এগুলোই সেরা।

সুগন্ধী আমাকে কখনো গভীর স্বেচ্ছাচারী, অপ্রতিরোধ্য ও  রহস্যময় অনুভূতি দেয় । জানি না অন্যদের কি হয়!
আমার ছোট্ট দুটো মেয়ে সুগন্ধীর দারুন ভক্ত।fragrance ছাড়া কোন শ্যাম্পু কিংবা লোশন তারা ব্যবহার করতে নারাজ।
এদেশে আসার পর বিশেষজ্ঞদের লেখা পারফিউম রিভিউ গুলো খুব পড়ি । পারফিউম বিশ্লেষন নিয়ে একটা লেখা পড়েছিলাম শংকর লাহিড়ীর অসামান্য , সেই বিশ্লেষনটা তুলে ধরলাম , আমার মনে খুব দাগ কেটেছিল এবং অভাবনীয় ভাবে উনার সাথে আমার পছন্দের বেশীর ভাগ পারফিউম মিলে যাওয়াতে আমি বিশ্মিত হয়ে গেছিলাম।

“পারফিউমের ‘পিরামিড সদৃশ’ গঠনে সাধারণতঃ তিনটে স্তর থাকে। টপ নোটস (বা হেড নোটস), মিডল নোটস (বা হার্ট নোটস) এবং  বেস নোটস। কোনও পারফিউমের গন্ধ নাকে এলে, এই টপ বা হেড নোটসের গন্ধটাই সবচেয়ে প্রথমে আমরা শনাক্ত করি, এবং এটা খুব অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় কারণ, এদের ‘হাই ইভাপোরেটিং রেট’।
এদের মধ্যে পড়ে লেমন এবং ল্যাভেন্ডার জাতীয় সুরভি। এর সামান্য পরেই, আমাদের ঘ্রাণশক্তি চিহ্ণিত করে নেয় দ্বিতীয় পর্যায়ের সুরভি বা, মিডল নোটস-কে ; যেমন হিবিস্কাস ফুলের গন্ধ, গোলাপের গন্ধ, ইত্যাদি। এরা চেতনায় ক্রমশঃ প্রকাশ্য হয়ে কিছুক্ষণ আচ্ছন্ন করে রাখে। এদের পরেই আসে দীর্ঘস্থায়ী বেস নোটস, যেমন কস্তুরী, ভ্যানিলা, মাস্ক। এরাই সম্মিলিতভাবে চিহ্ণিত করে একটা বহুস্তরীয় পারফিউম বা সুগন্ধীকে।
এদের মধ্যে বিভিন্ন স্তরে সাজানো থাকতে পারে আরও অনেক মৃদু, স্বল্প মৃদু, এক্সহটিক সুগন্ধী তেল বা নির্যাস : পাহাড়ি অর্কিডের ফুল, ইউরোপের নানা রসালো সিট্রেস ফল, তামাক, মাখন, চন্দন, এলাচ, লবঙ্গ, মহুয়ার ফুল, শিরিষ ফুল, ল্যানটানা, প্রাচীন কাঠ, লেদার, বৃষ্টিবন, ভিজে মাটি, চকোলেট, পায়েস, বেকারি, কুয়াশা, অথবা নানান ভেষজ তেলের সুগন্ধ। ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়, বিন্যাসে, গঠনে, তাদের অপার কামনা বাসনার সাঙ্গীতিক আবেদন। এর সবটাই যে শিশিতে থাকে, তাও নয়। কিছুটা থাকে আমাদের মনেও।“

পারফিউমের স্তরীয় ও সূক্ষ্ম আবেদনকে উপভোগ করার জন্য প্রয়োজন হয় পরিশীলিত ঘ্রাণচেতনার, আজকের এই গন্ধ নিয়ে লেখাটা আসলো আসলে আমার এক ইন্ডিয়ান বন্ধুর কাণ্ড দেখে।
ঘটনাটা শেয়ার করছি।
গন্ধ পাগল বন্ধু আমার!
Hilary duff ... With love ) এর পারফিউম আজ সাত সকালে ইউজ করেছি ... বিকেলে আমার এক ইন্ডিয়ান বন্ধু এসেছে বাসায় ... এসেই যথানিয়মে যা আমাদের মধ্যে হয় আলিঙ্গন করতেই সে আমাকে আর ছাড়ে না , বললো বন্ধু তুমি কোন পারফিউম  ইউজ করছো আজ ? ততক্ষণে আমি ভুলেই গেছি যে আজ কোন পারফিউম লাগিয়েছিলাম ! ঠোঁট উল্টে বললাম না তো ! সে বললো প্লিজ নাম বলো আমি তো মোহিত হয়ে গেছি ! আমি যথারীতি হাসি দিয়ে বললাম বলবো না ... আমি ইচ্ছে করে বলিনি , ওকে বিদায় দেওয়ার সময় ও কোলাকুলি করতে গিয়ে  সে আমাকে শক্ত করে ধরে আছে , আমি ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললাম with love ... বাকীটা পরে বলবো , এখন যা বাসায় যা ! সে আবার বললো ইয়ার পুরে নাম তো বাতা দিয়ে হোতে নাজ , আপ বহুত কামিনি হো ! ওর আমার মাঝে এমন গালা গাল আকসার চলে ! বাসায় যাওয়ার পর কত বার যে মেসেজ করছে তার ইয়াত্তা নাই, অবশেষে তাকে এই পারফিউমের এড সহকারে নাম ও বোতলের ছবি তুলে পাঠালাম এখন রক্ষা ... আল্লাহ মানুষ এমন গন্ধ পাগল হয় নাকি !
পারফিউম তৈরীর পেছনে কত কত যে কাহিনী আছে ! এক সময় আমি পাগলের মতো আগ্রহ নিয়ে পড়তাম , কোন অভিনেত্রীর কোন পারফিউম ব্রান্ড।

একটা গল্প শুনেছিলাম বিখ্যাত ফরাসী সুগন্ধি ‘শ্যানেল নাম্বার ফাইভ’-এর স্রষ্টা, কোকো শ্যানেল-এর বিচিত্র ওঠাপড়ায় ভরা শিল্পীজীবনের সংকট ও সাফল্য। বহু পুরুষের শয্যাসঙ্গিনী তিনি, সফল ফ্যাশান ডিজাইনার ও ক্যাবারে সিঙ্গার। জার্মান নাৎজি বাহিনীর গুপ্তচর ছিলেন বলেও শোনা যায়। অথচ ওঁর স্বপ্ন ছিল একদিন এমন একটা সুগন্ধি সৃষ্টি করা, যাতে থাকবে একজন পূর্ণ নারীর অন্তর-শরীরের মৃদু সুরভি। সেই হোল ‘শ্যানেল নাম্বার ফাইভ’।

আতর বা পারফিউমের মতো, মদিরা বা ওয়াইনেরও আছে স্তরীয় জটিলতা যা ক্রমশঃ প্রকাশ্য হয় আমাদের স্নায়ুতন্ত্রে, মননে।
আমার ভালো লাগে ওয়াইন টেস্টারদের রিপোর্ট পড়তে। এটা নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করবো । বিশেষজ্ঞরা বলেন উৎকৃষ্ট ওয়াইনের রসাস্বাদন করার জন্য যেমন একটা পরিশীলিত মনের প্রয়োজন হয়, ঠিক তেমনই কবিতার ক্ষেত্রেও। এগুলো যাঁরা ভালো বোঝেন, যাঁদের ঘ্রাণ ও স্বাদগ্রন্থি উচ্চমানের, যাঁরা অনুভব করতে পারেন স্বাদ ও ঘ্রাণের তারতম্যের সূক্ষ্মতা, তাঁরাই কনোশেয়র (connoisseur)। সুগন্ধি সুবাস বিশুদ্ধ, সমৃদ্ধ এবং সুগন্ধি, গোপন, কোন তীব্র গন্ধ সঙ্গে হওয়া উচিত।

তথ্য সুত্র : আমি প্রাজ্ঞদের কথা কোট করেছি কিছু।  (নেট থেকে পড়া , ম্যাগাজিন  চষে , ভ্রমন কাহিনী থেকে , ফিচার পড়ে , এবং পারফিউম সপে গিয়ে একবার পারফিউম একবার কফি বীন শুঁকে এই অভিজ্ঞতা হয়েছে ... কার্টিসি সব্বার পাওয়া)




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours