জয়ন্ত কুমার সাহা, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

চটিজুতো পরেই হাজির হয়েছিলেন এশিয়াটিক সোসাইটির দরজায়। এসে জানলেন যে বুটজুতো পরে প্রবেশাধিকার থাকলেও চটিজুতো পরে সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। চটিজুতো হাতে বহন করে ভিতরে ঢুকতে হবে।
তৎক্ষণাৎ এশিয়াটিক সোসাইটির দরজা থেকেই ফিরে এলেন তিনি। এই বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে লেখালেখি শুরু করলেন। কিন্তু আর কখনোই এশিয়াটিক সোসাইটিতে যাননি ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

প্রেসিডেন্সি কলেজে ইউরোপীয় অধ্যাপকদের তুলনায় অনেক কম বেতন দেওয়া হ'তো সমযোগ্যতাসম্পন্ন ভারতীয় অধ্যাপকদের। অন্যত্র চাকরি করতেই পারতেন। কিন্তু চাকরি ছাড়েননি।বরং প্রথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তিন বছর বেতন গ্রহণ না করেই অধ্যাপনা চালিয়ে গেছেন জগদীশ চন্দ্র বসু।
একটি উচ্চ পর্যায়ের শিক্ষা কমিটির নেতৃত্ব দিয়ে তাঁকে ইংল্যান্ডে পাঠাতে চেয়েছিলেন বড়লাট। মায়ের অনুমতি না থাকায় তিনি সেই প্রস্তাব অগ্রাহ্য করলেন। বিরক্ত বড়লাট বললেন যে তাঁর জননীকে যেন বলা হয় বড়লাটের কথায় ভারত সরকারের প্রতিনিধি করে তাকে ইংল্যান্ডে যেতে বলা হচ্ছে। আশুতোষ মুখোপাধ্যায় তৎক্ষণাৎ জবাব দিলেন, 'সেক্ষেত্রে তাঁর মায়ের তরফ থেকে জবাব হলো এই যে, তিনি মনে করেন যে তিনি ছাড়া আর কেউই তাঁর ছেলেকে আদেশ করতে পারেন না'।

আত্মমর্যাদাবোধের সাথে একটু আপোষ করে নিলেই হাতে আসতো প্রচুর রেকর্ড করার সুযোগ। করেননি। দেশভাগের প্রতিবাদ জানিয়ে আজীবন কাঠবাঙাল ভাষায় কথা বলে গেছেন দেবব্রত বিশ্বাস ।

উদাহরণ আরো আছে। প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, সত্যেন বোস, দাদাঠাকুর, শম্ভু মিত্র এবং এমন অনেকেই।

বাঙালীর সে দিন গেছে। শিরদাঁড়া আর আত্মমর্যাদাবোধ দুইই। সঙ্গে মেধা, রুচি, সংস্কৃতি, চরিত্র সবই।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours