নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

“মাগি ভাতার খাকি
এক ভাতারে পোষায় না “
বাংলাভাষার এমন গালিগালিজ আমরা কান খোলা রাখলে হরহামেশাই শুনতে পাই , গ্রামে কিংবা শহরে  নারীতে নারীতে ঝগড়া বাঁধলেই , এর চাইতেও শব্দ বোমা তারা ব্যবহার করে থাকেন , যে গুলোকে আমরা আসলে গালি বলি।

আমার পরিচিত একজন বিখ্যাত লেখক আছেন , অনেকেই তাঁকে চেনেন , কিন্তু আমার মতো করে কতজন তাঁর লেখার ডিসেকশন করে পড়েন তা জানি না । ভীষণ প্রতিভাধর লেখক , কবি । উনার নাম নবারুন ভট্টাচার্য যিনি কবিতায় গালিবাজীর সূচনা করেছেন। লেখিকা মহাশ্বেতা দেবী এবং নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যের ছেলে তিনি। পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার (১৯৯৩), বঙ্কিম পুরস্কার এবং নরসিংহ দাস পুরস্কার।
তিনি হরহামেশাই কবিতায় গালি ব্যবহার করেছেন অনায়াশে যেমন-
“এক দিকে চাষিরা মার খাচ্ছে
অন্যদিকে ওনারা দাঁত কেলাচ্ছে
কবিতা পাঠ করছে
বানচোদগুলো মানুষ না অ্যামিবা!”
কবিতায় গালিগুলো তার প্রতীক মাত্র।
তবে এটাও ঠিক যে এখন আর মানুষ গালি দেখলেই চমকে ওঠার অভ্যাস নেই বললেই চলে।
তবে গালির ব্যপারে একটা জিনিস কিন্তু ঠিক -‘গালি যখন আবর্জনাময় মস্তিষ্কের মুখ থেকে বেরোয়, তখন সে মুখ সুন্দর হলেও সেটা গালিই বটে। কিন্তু একজন তীক্ষ্ণ বিবেকবান মানুষ যখন গালি দেন, গালির দিকে না তাকিয়ে সময় এবং বিষয়ের দিকে মনোযোগী হন। তখনি গালি হয়ে ওঠে শিল্প।

অষ্ট্রেলিয়ায় আসার পর সবচেয়ে বেশী যে শব্দটা শুনেছি , সেটি হচ্ছে স্ল্যাং। সবচেয়ে বেশী নাকি অষ্ট্রেলিয়ান’রা স্ল্যাং ব্যবহারে পটু ।
তারমানে কি হলো তবে ? অস্ট্রেলীয়রা যা বলে তাই স্লেজিং!’ তার মানে কী? অস্ট্রেলীয়দের মুখে সব সময় খিস্তিখেউরের তুবড়ি ছোটে, গালিবাজ!
 ক্রিকেটে নাকি অস্ট্রেলীয়রা যা বলে তাই স্লেজিং! তবে শুনেছি  অজিরা স্লেজিং গুলো নির্দোষ চটুল বাক্য বিনিময়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। সেটিকে নিয়ে গেছে শিল্পের পর্যায়ে। আমাদের প্রিয় কবি নবারুণের পর্যায়ে । আসলে শুধু অষ্ট্রেলিয়ান বা লেখক , কবি সকল গালিবাজ না , কমবেশী সবাই গালিবাজিতে পটু।
আচ্ছা , এই গালাগালা কেন করে মানুষ , সেটার একটু বিষদ ব্যাখা নিয়ে  আলোচনা করছি তবে...

গালি শব্দটির সাথে আমরা সবাই পরিচিত। এই গালি শব্দটি বলতে আসলে সেই সব শব্দকে বোঝায় যা অন্যের প্রতি ব্যবহার করলে তাকে আহত, পীড়িত এবং লজ্জিত করে অন্তত মানসিক ভাবে । আর এই ‘গালি’ শব্দটির মধ্যে অনেক সময় থাকতে পারে প্রচ্ছন্ন ভাবে হননেচ্ছা, ঘাতেচ্ছা, ধর্ষণেচ্ছা ইত্যাদি ইত্যাদি।গালিগালাজ বা গালমন্দ হল ভাষার অন্যতম বহুল ব্যবহার। গালিগালাজ মানুষের মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে বটে তবে ক্ষেত্রবিশেষ এর প্রয়োজনীয়তাকে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। মানুষ যেদিন থেকে ভাষার ব্যবহার শিখেছে সেদিন থেকেই শুরু হয়েছে গালির ব্যবহার। এই গালিগালাজের প্রকার ও ধরণ আবার সমাজ ভেদে ভিন্নতর। এক স্থানের স্তুতি কথা অন্যস্থানে গালি হিসাবে ব্যবহারের নজির দেখা যায়। যেমন, যুক্তরাজ্যে fag মানে সিগারেট, কিন্তু যুক্তরাষ্টে fag বলতে হোমোসেক্সুয়াল পুরুষ বোঝায়,
এ জন্যই বলে বলে “এক দেশের গালি অন্য দেশের বুলি"

আবার লালন ফকির ও বলেছেন - “এক দেশে যা পাপ গণ্য অন্য দেশে পূর্ণ তাই , পাপ পূর্ণের কথা আমি কারে বা সুধাই।“ আবার সমাজের অশিক্ষিত মানুষের কাছে যা বুলি তা অনেকসময় শিক্ষিত মানুষের কাছে গালি হিসাবে চিহ্নিত হয়।

গালি হিসাবে যে শব্দগুলো ব্যবহার করা হয় লক্ষ্য করলে দেখা যাবে তার বেশির ভাগই এসেছে প্রাণী বা নিম্নশ্রেণীর জীব থেকে, যেমন- কুত্তা, গাধা, ছাগল, পাঠা, শুয়োর, ছুঁচো, পেঁচা , হুতুম , গরু , বলদ , শেয়াল , গন্ডার , দোমুখো সাপ , মোষ, বাঁদর ইত্যাদি কিছু এসেছে নেতিবাচক শব্দ থেকে। অনেক সময় বিদেশী শব্দ থেকেও গালি আসে, যেমন- হারাম খোর , বিচ , বুলশিট , মাদার-ফাকার, হেল, বাস্টার্ড, ফ্রড, শয়তান, কামিনে, কাফের; কিছু গালি এসেছে ইতিহাস এবং পুরাণের পাতা থেকে, যেমন- মীরজাফর, হিটলার, রাজাকার, নমরুদ, ফেরাউন ইত্যাদি , আবার শব্দ coinage-এর মাধ্যমে কোন কোন সাহিত্যিক গালি নিয়ে আসেন, যেমনটি শেক্সপিয়ার করেছেন। আবার অনেক শব্দ বুৎপত্তিগত অর্থে অশালীন না হলেও প্রয়োগের কারণে গালি হিসাবে গণ্য করা হয় যেমন, মাগী। শব্দটি । এই শব্দটির বুৎপত্তিগত অর্থ হচ্ছে নারী। কিন্তু প্রায়োগিক অর্থে খারাপ স্বভাবের নারী বা বেশ্যার সমার্থক হিসাবে গণ্য করা হয়। অথচ, মাগীর বিপরীত শব্দ মাগ সাধারণ অর্থেই ব্যবহৃত হয় বেশি।
শিক্ষিত সমাজে কথার মারপ্যাচে গালি দেওয়ার প্রবনতা বেশি।  কিছুটা শব্দের সৌন্দর্য রেখেই এজন্য ভাষা-জ্ঞান ভাল হওয়া দরকার , গালি দিলেও সেটা মধুর গালি যাকে বলি আমরা। শুনেছিলাম ক্রিকেট শ্লেজিং এ যেমন, ক্রিকেট মাঠে রড মার্শ একবার ইয়ান বোথামকে বলেছিলেন, ‘হায় ইয়ান, তোমার বউ আর আমার বাচ্চারা কেমন আছে?’ জবাবে বোথাম বলেছিলেন, ‘বউ ভালোই আছে কিন্তু বাচ্চারা সব বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মেছে দেখছি।” অসাধারণ কথার মারপ্যাচে গালি কাউন্টার গালি দেওয়াই এখানে প্রকাশ পেয়েছে।

তাই বিভিন্ন জনের মতে গালি হচ্ছে “গালি হচ্ছে ভাষার মেটাফরিক উপস্থাপন। যেমন- সে আস্ত একটা গাধা (metaphor), লোকটি কুত্তার মত ঘেউ ঘেউ করছে (simile)। পেট হাগস-এর মতে, ‘Slang is a non-standard language composed of exaggerated metaphors’। কে.জি. চেস্টারসন বলেছেন, ‘all slung is metaphor and all metaphor is poetry’।”
আসলে আমরা কি জানি কেন মানুষের মধ্যে এমন গুঢ় ইচ্ছার উদ্ভব হয়, বা এর কারণটা কি?

এসব উত্তর সচরাচর সমাজ বিজ্ঞানী, মনোবিজ্ঞানীরাই দিয়ে থাকেন। একদল সমাজ বিজ্ঞানীর মতে নাকি “ব্যক্তিগত সম্পত্তির উদ্ভবের সঙ্গে এই সব গুঢ় বা প্রচ্ছন্ন ইচ্ছার কিছু না কিছু যোগ থাকে।"

মানুষের অবচেতন মনের এমন সব ইচ্ছা সামাজিক বিধি নিষেধের দ্বারা অবদমিত থাকে।
ইচ্ছার অবদমনকে বলা হয় inhibition। তবে এই অবদমন অনেক সময় মানুষের মানসিক স্বাভাবিকতাকে পঙ্গু করে দিতে পারে । মানসিক ভারসাম্য কে বিপর্যস্ত করে দিতে পারে। মনোবিজ্ঞানীরা তাই বলে থাকেন । কিছু কিছু মানুষ এই অবদমন থেকে মুক্তি খোঁজে। প্রথমত স্বপ্নের মাধ্যমে, দ্বিতীয়ত নানা ব্যক্তিগত সমষ্টিগত অপরাধ মূলক কাজকর্মের (যেমন চুরি ডাকাতি ছিনতাই হত্যা কিংবা ধর্ষণ, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামা ইত্যাদি) মধ্য দিয়ে এবং তৃতীয়ত: গালি বা টিটকারীযুক্ত শব্দ প্রয়োগের দ্বারা।
এরা এটাও মনে করেন যে গালির মধ্য দিয়ে মানুষ দুই ধরনের অবদমন থেকে মুক্তি খোঁজেন।

নারী, নারী দেহ এবং যৌন সংযোগ সম্পর্কিত বিধি নিষেধ লঙ্ঘন, আঘাত বা হত্যা সম্বন্ধে বিধি নিষেধ লঙ্ঘন হচ্ছে অবদমন থেকে মুক্তি খোঁজার পথ। একটা রকম ফের। কাউকে গালি দিয়ে বা কোন মেয়েকে টিটকারী করে অবচেতন মনের অবদমিত ইচ্ছা পূরণের তৃপ্তি সাধন হয়ে থাকে।
তবে এটাও ঠিক যে সব মানুষ গালি দেয় না। সারা জীবনে গালি দেয়নি এমন মানুষ আছে কিনা কে জানে? এক্ষেত্রে দেখেছি মা-ছেলের সাথে গালি ব্যবহার করেই কথা বলেন, আবার টেম্পু-বাসের হেল্পার, কন্টাক্টার, ড্রাইভার এমনকি -রিক্সা-ঠেলাগাড়ি-ভ্যানচালকরা পরস্পর গালি দিয়ে পরস্পরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে। মেথর ও হরিজনদের জীবনে গালিই কখনো কখনো দৈনন্দিন ভাষা! তবে, গালি কখনও কখনও পারস্পারিক যোগাযোগের ভাষাও বটে। ঢাকার ক্ষুদ্র পেশাজীবীদের অনেকে গালিকে ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে।

কেউ যখন কাউকে ‘শালা’ বলে সেটা কিন্তু গালি বলে গণ্য হয়। এই শব্দের মধ্যে কিন্তু ব্যক্তির বোনের সঙ্গে একটা অবৈধ সংসর্গের ইঙ্গিত থাকে। ঠিক একই কারণে কিন্তু ‘মামা’ শব্দের মধ্যেও গালির আভাস থাকে । আমরা যারা গ্রামের জীবন দেখে এসেছি তারা কমবেশী সকলেই জানি মহিলাদের মুখে মুখে অভিসম্পাত করে গালি দেয়া যেমন “ওলাওঠে মরবি , জহরে কহরে মরবি (বিষ খেয়ে নতুবা পিপাসায় ), তোর কলেরা হবে, অলপ্পেয়ে (স্বল্প আয়ু হোক ) তোর খাল আমি ভরবো (কবর খোরা)" এমন সব গালি শোনা যায় যা থেকে হননেচ্ছার ইঙ্গিত থাকে।
আর পুরুষদের মধ্যে কিছু গালি দিতে শুনি যেমন সে গুলোতে সচরাচর ধর্ষণ এবং সমকামিতা অবৈধ সংসর্গ নানা ধরনের যেমন – মাতৃকাম, ভগ্নিকাম, কলা কাচকলা যা পুরুষাঙ্গের প্রতীক, গালি হিসেবে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখানো একই ব্যপার।
এমন গালি অসংস্কৃত নিরক্ষর মহিলার মুখেও শোনা যায় – ভাইভাতারী, বাপভাতারী এই সব শব্দ গুলো স্পষ্টই অজাচারের ইঙ্গিত বহন করে।
এছাড়াও গালি হিসেবে পশুর নামের মধ্যেও অবৈধ সংসর্গের আভাস থাকে, পশুর সঙ্গে মানুষের যৌনতার ইঙ্গিত। যেমন কুকুরের বাচ্চা, শুকোরের বাচ্চা এসব শব্দ চরম অপমানকর ও অশ্লীল।
তবে গালির শব্দ ব্যবহারে স্ত্রী পুরুষের মধ্যে ভেদ আছে তা স্থানিক ও সাংস্কৃতিক গত ভেদ।
আমরা সাধারণত জানি যে নিষিদ্ধ শব্দ হচ্ছে বয়স্ক মানুষের ব্যপার যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে তাদের গালির ভাণ্ডার ও বাড়তে থাকে। তাই তো দেখি দাদী নানী দাদুদের মুখে টিটকারী ছলে অকথ্য শব্দ ব্যবহার।

তবে হ্যাঁ এটাও সত্যি যে গালি শব্দ ব্যবহারের প্রতি মানুষের আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত হচ্ছে গালির ঝোঁক। বহুদিন আগে একটা গালির অডিও ভাইরাল হয়েছিল সে যে কত ধরনের গালি তা বলবার মত শব্দ আমার জানা নাই, শুধু থ বনে গিয়েছিলাম একবার শুনেই । আমার মনে হয় বাংলাভাষার গালি শব্দগুলোর ব্যপক সংগ্রহ বিজ্ঞান সম্মত ভাবে যদি করা হয়, তবে গালি শব্দের ব্যবহার গত প্রভেদ যেমন গ্রামীন, শিক্ষা, ধর্মগত, বয়স, লিঙ্গ, সামাজিক , সাংস্কৃতিক স্তর গুলোর ভেদ রেখা স্পষ্ট হয়ে উঠতে পারে। আমার জানা নেই বাংলাভাষায় গালি নিয়ে ফোকলোর গবেষক’রা  বিষদ কাজ করেছেন কি না বা পুস্তক আকারে তা প্রকাশিত হয়েছে কি না, টুকরো টুকরো কিছু লেখা পড়েছি নেটে । তবে এ ব্যপারে আমার জানা তথ্য খুব কম।

যে সমাজে শ্রেনী শোষণ অবাধ, পুরুষের আধিপত্য প্রশ্নাতীত – সেই সমাজে গ্রামের নিরক্ষর মেয়েদের মুখে উচ্চারিত গালি শব্দ গুলোতে প্রতিবাদ ক্ষোভ ও হননের ইচ্ছা একটা প্রচ্ছন্ন জায়গা জুড়ে থাকে ।

রবীন্দ্রনাথের সংগৃহীত “ছেলে ভোলানো ছড়ায় ‘ভাতার খাকী’ শব্দটি দেখে বেশ অবাক হয়েছিলাম। তেমনি বাংলা সিনেমার গানে গালি শুনেছি “তুমি একটা চোর! এই সব গালির শব্দ গুলো সচরাচর পুত্র কন্যা, প্রিয় পরিজনদের উপর বর্ষিত হয়। আর আমরা বাঙ্গালীরা তো টিটকারীতে পটুই বলা যায়।
গালির শব্দগুলোকে সামাজিক অর্থনৈতিক ও মনস্তাত্বিক দিক থেকে সুনিপূন ভাবে বিশ্লেষণ করলে বেশ বোঝা যায় যে দরিদ্র নিপীড়িত, সমাজ লাঞ্ছিত, পরিবার পরিজনের হাতে নিগৃহীত অসহায় , নিরুপায় নারী হৃদয়ের হাহাকার কত বাস্তব ও মর্মান্তিক।

আসলে গালিগালাজ সবসময় নেগেটিভ অর্থে আমরা ব্যবহার করলেও কিছু কিছু গালি শৈল্পিকতা ছুঁয়ে যায় । সাহিত্যেও গালির অবদান অনেক - আমরা জানি যে -‘কারও কারও সাহিত্য অত্যধিক গালির কারণে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সাহিত্যিকদের হাত ধরে আমদানি হয়েছে হরেক রকমের গালি। যেমন, শেক্সপিয়ারের মাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় যুক্ত হয়েছে অনেক নতুন গালি। গ্রীক ড্রামা ’লিসিসট্রাটা’ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল অতিরিক্ত খোলামেলা ভাষা বা bawdy language ব্যবহারের কারণে। বাংলাসাহিত্যে গালিগালাজের জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছে, তসলিমা নাসরিন, হুমায়ূন আজাদ সহ অনেককেই ।
চলতি সময়ে চলচ্চিত্রে গালির ব্যবহার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। ইংরেজি সিনেমা এই দিক দিয়ে সবার উপরে। মাদার ফাকার, ফাক্, সাকার, ব্ল্যাডি হেল, ডিক, শব্দগুলো গালি হিসাবে হরহামেশাই ব্যবহৃত হচ্ছে। যেমন- ‘mother fucker snakes in the mother fucker plain!’ (Movie: Snakes on a Plane)।’
ভাষা ক্লাস (শ্রেণী ) এজেন্ট হিসাবে কাজ করে। তাই তো সমাজের অর্থনৈতিক অবস্থার তারতম্যের কারণে গালির পার্থক্য ঘটে থাকে। অবশ্যই অর্থনীতি অন্যসব কিছু নির্ধারণের পাশাপাশি মানুষের ভাষা নির্ধারণ করে থাকে। যারা সমাজে উঁচু স্থানে অধিষ্ঠিত বা যাদেরকে আমরা উচ্চবিত্ত বলছি তারা নিম্নমধ্যবিত্ত বা শ্রমিকশ্রেণীকে তুচ্ছার্থে নানাবিধ গালি ব্যবহার করে থাকে। বাংলাদেশে শ্রমিকশ্রেণীদের সাথে মালিকশ্রেণী খুব বাজে ভাষায় কথা বলে। এমনকি রিকশাচালক, মুটে, কুলি-মজুর সবাই এই ভাষা-বৈষম্যের স্বীকার হয়। এটা এক ধরনের অপরাধ বটে।’

গালি কখনই ভাষার সৌন্দর্য নষ্ট করে না বরং তা আরও picturesque করে তোলে। ভাষাকে ক্ষেত্রবিশেষ করে তোলে প্রাণবন্ত-সজীব। গালি না থাকলে সবচেয়ে বড় যে ক্ষতিটা হত তা হল, মানুষে মানুষে দৈহিক হাঙ্গামা বেড়ে যেত বহুগুণে। মানুষ ভাষা বা অভিব্যক্তির মধ্য দিয়ে রাগ মেটাতে না পেরে একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তো। হারামখোর, শুয়োরের বাচ্চা বলে যে কাজটি অনায়াসে হয়ে যায়, সেই কাজটি হতে লাঠি চালাচালি হত। বিশৃঙ্খলা বেড়ে যেত কয়েকগুণে।
তবে গালি নিয়ে এটুকু বলাই যায় যে গালি কিছু কিছু সময় শুনতে ভালো লাগে , আবার প্রতিবাদটা জবানে হয়ে যায় বলে , শরীরে বর্তায় না , সে ক্ষেত্রে কিছু কিছু গালি যদি দিয়ে কেউ প্রাণে না মারে , তবে তো সেই গালিই ভালো।
তাই না।
যাহ শা..লা... লিখতে লিখতে অনেক লিখে ফেললাম তো!

(তথ্য সুত্র -নেট ফিচার এবং বাংলা ফোকলোর সাহিত্য থেকে)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

1 comments so far,Add yours

  1. ধন্যবাদ,অনেক ভালো লেগেছে লেখা টা। আর টাইটেল টা ছিলো অসাধারণ।

    ReplyDelete