নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

ছোটবেলায় পাড়ায় পাড়ায় মাইক বাজিয়ে আইসক্রিম হাওয়াই মিঠাই...কিংবা হরেক রকম মাল বিক্রি হতো, নৌকায়, গ্রামের হাটেও এই হাটুরে কবিতা একটা মাইকে অনর্গল সুর করে কেচ্ছার মতো করে বলে যেত নারী এবং পুরুষ কন্ঠে, বেশ নাটকীয় ভঙ্গিতে , শুনতে খুব ভালো লাগতো , আমি কান পেতে শুনতাম । আমাদের সময়ে খুব আলোচিত একটা ঘটনা ছিল...
মনির খুকু আর শারমীনের ত্রিভূজ প্রেমের কাহিনী , এই ট্রাজিক কাহিনীতে শারমীনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সেই কাহিনীটিই সুর করে কিছুটা পুঁথির মতো কিছুটা মেয়েলি গীতের ঢঙে মিশ্রিত একটা সুরে গানটা গেয়ে যেতো । আসলে সেটা ছিল ভাট কবিতা । একদিন ফেরিওয়ালাকে বললাম ভাই দশটা আইসক্রিম নেব আপনি পুরো কেচ্ছাটা শোনান , উনি বললেন না আপা এটা কেচ্ছা না এটা ভাট কবিতা । অবাক হোলাম ভাট কবিতা ! আমি তো কোনদিন নামই শুনিনি । যাই হোক মনোরম ভঙ্গিতে কন্ঠ ও আবেগের একটা খেলা খেলে গায়কেরা, পুরো কবিতাটাই যেন চোখের সামনে ভিজুয়ালাইজ হয়।

কেচ্ছা পালা, বা গ্রাম্য কবিতার কবিদের কলমের ধার জলের মতো তাঁদের কলম থেকে বেরিয়ে আসে বাংলা কবিতা । তারা এতোই সাবলীল  যে মনেপ্রাণে সাধারণ ঘটনা গুলোর বর্ণনা করে যান , তারা শুধু কবি নন বাংলা ভাষার সাধকও বটে!

প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে ভাষার চর্চা করা, ঘটনাকে ছন্দে বাঁধা  তাঁদের চাই–ই চাই। ঘরের চৌকিতে বসে, কিংবা মাঠে , ক্ষেতে একমনে লিখে চলেন বাংলা ভাট কবিতা আর তা পড়ে শোনান বন্ধুদের , প্রতিবেশীদের। তাঁদের কবিতা শুনে মোহিত হতেই হয়, কারণ ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনার বর্ণনা হৃদয়ার্ত করে মানুষের মনকে।
আমি এসব কবিকে কবিরত্ন বলি।
আট - দশ পাতার ভাট কবিতাটি লেখা হতো কোন এক বিশেষ ঘটনা বা কাহিনিকে ঘিরে। যেমন প্রেমের কারণে কোন মেয়ের আত্মহত্যা বা গোপনে ঘর ছেড়ে যাওয়া, শ্বশুর বাড়ির নির্যাতনে কোন বধূর আত্মহত্যা কিংবা কোন পরকীয়া প্রেম ইত্যাদি কাহিনি উপজীব্য হয়ে উঠত এসব কবিতায়। যারা এই কবিতাগুলো রচনা করতেন তাদেরকে বলা হতো ভাট কবি কিংবা হাঁটুরে কবি।

বাস্তবিক প্রেক্ষাপটে ভাটকবিতা এখন দুষ্প্রাপ্য এবং বিলুপ্তির পথে। ভাটকবিতা এখন লেখাও হয় না এবং চর্চাও নেই। তাই স্বাভাবিক ভাবেই যে সময়ের ভাটকবিতা সংগ্রহ করা হয়েছে তা নিতান্তই অপ্রতুল।
থেকে থাকতে পারে বাংলা একাডেমীর সংগ্রহ শালায়। বাংলাদেশে যে সময়টাতে ভাটকবিতার বিকাশ ঘটেছিল সে সময়টাতে গ্রামের সাধারণ মানুষের বিনোদনের মাধ্যমও ছিল এটি।  দোভাষি পুঁথির আসরের মতো। তবে ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় সবচেয়ে বেশী ভাট কবিতা লেখা হয়েছিল মুক্তি যুদ্ধের পর, নানান মর্মান্তিক ও পাকিস্তানিদের অত্যাচার অনাচারের কথা ভাট কবিতায় নিখুঁত ভাবে ফুটে উঠেছে । ভাটকবিতায় সুষ্পষ্টভাবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়। ভাটকবিরা তাদের আত্ম উপলব্ধি ও দেশপ্রেমের জায়গা থেকে কবিতার যে শব্দবুনন শুরু করেছিলেন তা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল বটে
ভাটকবিতা —

ভাটকবিতা প্রসঙ্গ:
ভাট সাধারণ অর্থে ঘুরে ঘুরে গান বা নিজের লেখা পালা পরিবেশনের মাধ্যমে বিশেষ কোন ভাবধারার প্রচারকারীকেই চারণ বলা হয়।
ভাটকবিতা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। রংপুরে শিকুলি, ঢাকা ময়মনসিংহ অঞ্চলে কবিতা, কোথাও শায়েরি নামেও প্রচলিত। স্বল্প শিক্ষিত এক শ্রেণীর কবি কোন বিশেষ ঘটনা বা কাহিনিকে উপজীব্য করে তার কল্পনার জগৎ প্রসারের মধ্য দিয়ে অনেকটা গীতিকবিতার আদলে ও পয়ার ছন্দে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘকবিতা রচনা করেন। পরে বিশেষ ভাঁজে একটি কাগজে ছাপিয়ে তা বিভিন্ন হাটবাজার, লঞ্চ-স্টিমার, ট্রেন , বাস বা কোনো জনবহুল স্থানে দাঁড়িয়ে অনেকটা পুঁথি পড়ার মতো সুর করে পড়েন। এভাবে ঘুরে ঘুরে আসর জমিয়ে ভাট বা হাটুরে কবিতা বিক্রি করে কবি বা বিক্রেতারা। ভাটকবিতার প্রচলন মধ্যযুগ থেকেই দেখা যায়। মূলত ভাটকবিতার বিষয়বস্তু হলো সমাজে ঘটে যাওয়া মুখরোচক এবং নর নারীর অসঙ্গতিপূর্ণ প্রেম, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দাঙ্গা, অগ্নিকান্ড, ভূমিকম্প, রাজনৈতিক আন্দোলন সংগ্রাম ও যুদ্ধ বিগ্রহ। তাছাড়া রয়েছে অপরাধ, শাস্তি, খুনখারাবি, ফাঁসি, শোকগীতি, কিংবদন্তী, লোকবিশ্বাস, ঐতিহাসিক কাহিনি, ব্যক্তি বন্দনা, সমাজ ও অধ্যবসায়মূলক কবিতা। অনেকেই ভাট কবিতাকে গ্রাম্য কবিতাও বলেন।

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির অনেক জায়গা জুড়ে রয়েছে প্রাচীন লোকসাহিত্য। লোকসাহিত্যের একটি উল্লেখ যোগ্য শাখা ভাটকবিতা। নিভৃত গ্রামীণ জনপদে বসবাস করলেও বাংলার ভাটকবি, চারণকবি, ছড়াকার, নাট্যকার, বাউল-কবিয়াল, জারিসারি গানের রচয়িতাগণ দেশের চলমান ঘটনাপ্রবাহ আন্দোলন সংক্রান্ত সংঘর্ষ, রক্তপাত, শোষন-নির্যাতন, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক উত্থান-পতন, গণআন্দোলন, নির্বাচন, স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা উত্তর দেশের অবস্থার প্রতি সজাগ ছিলেন- যা তাদের রচিত গান, ছড়াকবিতা, যাত্রা-নাটক, পালা, জারি সারি এবং ভাটকবিতায় ফুটে উঠে এবং এসবের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জনগণ দেশ ও মাটির চলমান নানা ঘটনাপ্রবাহ ও চালচিত্র সম্পর্কে অবহিত হয়ে উদ্দীপ্ত হয় এবং জাতীয় আন্দোলন সংগ্রামে এগিয়ে আসে।

বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতা সংগ্রাম, পাকিস্তানী বর্বর সেনাবাহিনীর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ এবং রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে রচনা করেছেন অসংখ্য কবিতা ছড়া, যাত্রা পালা, ভাওয়াইয়া ও লোকগাঁথা যেমন আছে তেমন ভাট কবিতাও আছে প্রচুর ।
মানুষ দীর্ঘক্ষণ একটি বিষয় ধৈর্য সহকারে শুনতে পারে না সম্ভবত এ জন্যই ভাটকবিরা তাদের রচনার পরিসরটি সংক্ষিপ্ত করেছেন।
ভাটকবিতাগুলো যদিও কবিতা, তবু এগুলো কবিতার মতো গুরুগম্ভীর স্বরে পঠিত হয় না। এগুলো একটি স্বতন্ত্র সুরের মাধ্যমে পঠিত হয় যা ফোকলোরের অন্যান্য সঙ্গীতের মধ্যে দুর্লভ ফলে ভাটকবিতা ফোকলোরের একটি আলাদা দিক উন্মোচন করছে এর সুর দ্বারাও একটি পৃথক জগতের সৃষ্টি হয়েছে। সুরের বৈচিত্র বেশি না থাকলেও মাঝে মাঝে ধুয়া ও অন্যান্য সুর পরিলক্ষিত হয়। পয়ার ও ত্রিপদী ছন্দেই অধিকাংশ ভাটকবিতা রচিত।

কবিতার শুরু থেকে প্রতি বেজোড় সংখ্যক পংক্তির তিন মাত্রাবৃত্তের প্রথম পদটি দুবার পঠিত হয় যার ফলে এটি একটি ভিন্ন মাত্রা পায় এবং বক্তব্যটি একটি আকর্ষণীয় ধ্বনি ব্যঞ্চনায় শ্রোতাকে মোহবিষ্ট করে তোলে। খুব সম্ভবত দিত্ব উচ্চারণের এই রীতিটি মধ্যযুগের পুথি থেকে অনুসৃত। প্রেমকাহিনিমূলক কবিতায় যেমন রগরগে বর্ণনা রয়েছে তেমনি ভাষা ও শব্দচয়নেও যৌনগন্ধি বিষয় লক্ষ্যণীয়। যেমন- শিউলী বাদলের প্রেমের খেলা, গৌরীবালা ও সুবোধের মধুর মিলন কবিতা, বউ বদলের কবিতা, সাহেদ আলী ও জরিনার হালকা প্রেমের কবিতা, খুনি এরশাদ শিকদার কবিতা রসের ভান্ডার, বজলু মিয়া ও কমলা সুন্দরীর কবিতা, রিক্সাওয়ালা জলিল মিয়া ও ফুলমালার প্রেমের কবিতা, পদ্মার গাঙে প্রেমের খেলা কবিতা, হক ও লতার প্রেমের কবিতা। লিপিরানী ও আনোয়ারের প্রেমের কবিতা, নোয়ার আলী ও প্রিয় বালার প্রেমের কবিতা, বকুল মিয়া ও চান মিয়ার পীরিতের তুফান কবিতা , মনির খুকুর প্রেমের কবিতা উল্লেখ যোগ্য ।

এছাড়া অসম প্রেমের সম্পর্ক বিষয়ক অনেক ভাটকবিতা রচিত হয়েছে, যেগুলোর শিরোনাম দেখলেই সহজে অনুমেয়। যেমন- লাং ধইরাছে স্ত্রী তাই, স্বামী করছে স্ত্রী জবাই, নাতী করে দাদী বিয়া-দশ লাখ টাকা মহর দিয়া, বেতিন গাঁয়ের গফুর হাজী - ভ্যাস্তাবউকে করছে রাজী, চাচা-ভাস্তির প্রেম-কাহিনী কবিতা, শ্যালীদের প্রেমে দুলাভাই- সাত বোনের এক জামাই, খালা বোনপুতের প্রেম কাহিনী, শ্বাশুড়ীর প্রেমে জামাই খুন, মামা শ্বশুড় ও ভাগ্না বউয়ের কবিতা, শোনেন আমার পাঠকগণ, বউ কাটিছে স্বামীর ধুন, খোদার গজব দারুন কড়া, জামাই শ্বাশুড়ী লাগছে জোড়া এ ধরনের কবিতা উল্লেখযোগ্য।।
এ ধরনের কবিতা উচ্চাঙ্গ সাহিত্য পদবাচ্য না হওয়ায় বিদগ্ধজনের দৃষ্টিতে বরাবরই এগুলো অপাংক্তে়য় থেকে গেছে।

এদের অনেকেই নিরক্ষর কেউবা স্বল্প শিক্ষিত। তারা কবিতার ‘গ্রামার ব্যকরণ’ জানেন না- সে বিবেচনায় সাধারণ মানুষের জন্য সহজবোধ্য ভাষায় কবিতা লেখার প্রয়াস পান। তারা এই কবিতা বিক্রির অর্থেই জীবিকা-নির্বাহ করেন।

চাঞ্চল্যকর সামাজিক, রাজনৈতিক কিংবা প্রেমঘটিত ঘটনাকে তাৎক্ষণিক কবিতায় রূপ দেন একশ্রেণির কবি। আবার পুস্তিকা আকারে ছাপিয়ে গ্রাম-গঞ্জের হাটবাজার কিংবা রেলস্টেশনে ঘুরে সেসব কবিতা পুঁথির সুরে গেয়ে থাকেন তাঁরা ।
এর শ্রোতা হলো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তারা এর মধ্যে খুঁজে পায় ভিন্নমাত্রার বিনোদন। এ ধরনের ঘটনামূলক কবিতা রচয়িতাদের কেউ ‘হাটুরে কবি’, কেউ ‘চারণকবি’, কেউ ‘পথকবি’, আবার কেউ ‘কবিসম্রাট’ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকেন।

বর্তমানে ‘হাটুরে কবি’দের দুর্দিন যাচ্ছে বলা যায়। হাটবাজার আর স্টেশনে কবিতার পুস্তিকা এখনো পাওয়া যায়। তা আবৃত্তি করে বিক্রির দৃশ্যও হারিয়ে যায়নি। তবে আগের মতো এখন আর কেউ নতুন করে কবিতা রচনা করেন না। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বলা যায় জালাল খান ইউসুফী। শত কষ্টের মধ্যেও তিনি তা বুকে ধরে আছেন। তাঁকে চারণকবি কিংবা হাটুরে কবির শেষ সূর্য বলা হয়।
সবাই এই পেশা ছেড়ে দিলেও তিনি বুকে আঁকড়ে আছেন প্রাচীন এই সাহিত্যকে। তাঁর বাবা প্রখ্যাত হাটুরে কবি ইউসুফ খান। একসময় তিনি সারা দেশের উল্লেখযোগ্য হাটবাজার আর গঞ্জ চষে বেড়িয়েছেন স্বরচিত কবিতা পাঠ করে। লিখেছেন শতাধিক কবিতা।

আরও হাটুরে  উল্লেখযোগ্য কবি হলেন আব্দুল করিম খান, মোকছেদ আলী, ইউসুফ খান, সোলায়মান খোয়াজপুরী প্রমুখ। তাঁদের পথ ধরে পরবর্তী সময়ে হাটুরে কবিতায় অমর হয়ে আছেন চট্টগ্রামের আহমেদ রহমান, নাজির হোসেন পণ্ডিত, নাজিরুজ্জামান, খুলনার আব্দুল কুদ্দুছ, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার নূর মোহাম্মদ হাওলাদার, জামালপুরের ওসমান গনি, ফেনীর নুরুল হক সরকার, মানিকগঞ্জের রহমত আলী, মাদারীপুরের সেকেন্দার আলী, নারায়ণগঞ্জের গাজী মিজানুর রহমান, এম এ মতিন, সিরাজগঞ্জের চাঁদ মিয়া, আসগর আলী সরকার, বগুড়ার আবুল কালাম, সিলেটের ওসমানীনগরের জালাল খান ইউসুফী প্রমুখ।

মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের পুঁথিকাব্য থেকে। যুগের আবহে পুঁথিসাহিত্যের অবসান হলেও পরবর্তীকালে গ্রাম-গঞ্জের কিছু স্বশিক্ষিত কবি পুঁথির আঙ্গিকে কবিতা লেখা শুরু করেন। আদিতে পুঁথি নির্দিষ্ট কিছু সুরে পড়া কিংবা গাওয়া হতো—কবিতার সুর, পয়ার সুর, ধুয়ার সুর, পঞ্চপদী সুর ও ভাটিয়ালি সুর। এই ভাট কবিতা গুলো গাওয়া হয়ে থাকে ।
এখন কিছু কিছু ভাট কবিতা কিচ্ছা নামে ইউ টিউবে শুনতে পাবেন ।

কৃতজ্ঞতা:
হাসান ইকবালের লেখা থেকে, তথ্য নেয়া হয়েছে এছাড়া এবং কালের কন্ঠে ছাপা হয়ে ছিল আপেল মাহমুদের একটা লেখা থেকে হাটুরে কবির তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এবং ফোকলোর সাহিত্যর বই থেকে ও শৈশবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours