ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
মালতি সৌম্যকে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন! এর মধ্যেই রূপেন্দ্র ফিরে আসবেন! তাঁকে যা বলার সরাসরিই বলা ভাল!
কিন্তু সৌম্য জানাল, একটু পরেই তাঁকে নবদ্বীপ রওনা দিতে হবে!
হটী জানতে চাইল, তাদের পোষা ঘোটকী ফুল্লরারকে কে নিয়ে যাবে?
সৌম্য জানাল, তাদের বাড়ীর বিশ্বস্হ পাইক রঘুদা নিয়ে যাবে!
নিয়মভঙ্গের পরদিনই নবদ্বীপ প্রত্যাবর্তন করেছিল সৌম্য! কিন্তু একমাস পরেই তাকে কাকার নির্দ্দেশে ফিরে আসতে হয়েছে! বাড়ী ফিরে সে জানতে পারে তার কাকা ও দাদা তার উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ কারন সৌম্য সুন্দর তার বাবার উইলের বিষয়ে তার শ্বশুর ওই উইলের একজন অছি পার্ষদ তাঁকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টাই করেনি!তাই সম্পত্তি দখলের কোন সুরাহা হয়নি!
নায়েব -কানুনগো মশাই সম্পত্তির অর্ধেক নবাবের তহবিলে ' খাস ' করার সুপারিশ করেছেন! বাকী অর্ধেক উত্তরাধিকারীতের মধ্যে বন্টিত হবে!যেহেতু তিনি সদস্যের অছি পরিষদের এক তৃতীয়াং অর্থাৎ সৌমের শ্বশুর রূপেন্দ্র অন্য দুজন মিত্র মশাই ও গুরুদেবের সাথে একমত হয়ে একবগ্গা দিঘী খনন বন্ধ করে সমস্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকীদের মধ্যে বন্টনে সহমত হননি, তাই সরকারী তত্বাবধানে ' একবগ্গা ' দিঘী খননের কাজ শুরু হবে! এই কারনে সৌম্য সুন্দরের উপর ঘোষাল পরিবারের সকলেই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ!
মালতি সৌম্যের কাছে জানতে চায়, "মামনিকে তুমি শ্রাদ্ধ বাড়ীতে যেতে নিষেধ করেছিলে কেন বাবা?"
সৌম্য উত্তরে জানলো," সোনা মা ,শুধু আমাদের পরিবার নয়, সারা তিজলহাটির ব্রাক্ষ্মন পরিবারে একটি কদর্ষ প্রথা প্রচলিত আছে! যাদের শুরুনিপাত হয় ,অশৌচপালনের দশদিন তাদের স্ত্রীদের এক বস্ত্রে থাকতে হয়! ঊর্ধাঙ্গে কোন বস্ত্র ধারন নিষিদ্ধ! পুরুষ মানুষের ভিড়ে নববধূর চরম বিড়ম্বনা! এমন কি অঙ্গ মার্জনার অধিকারও নাই!প্রচন্ড শীতেও সিক্ত বস্ত্র এক বস্ত্রার অঙ্গেই শুখায়!
.অবাক হয়ে হটী প্রশ্ন করে," দিদিকেও তাই করতে হয়েছিল?"
আবেগ বিহ্বল হয়ে, স্হান কাল পাত্র ভুলে তার স্ত্রীকে আদর করে যে নামে ডাকে সেই নামে সম্বোধন করে সৌম্য বলল,"হ্যাঁ, রূপা! সেই দশদিন বৌঠানের দিকে চোখ তুলে তাকাকে পারিনি!"
মালতি জানতে চাইলো," মাস খানের মধ্যে তোমাকে নবদ্বীপ ডেকে পাঠানো হ'লো কেন?"
ম্লান হেসে সৌম্য বলল,"সে এক ন্যক্কার জনক ঘটনা!বাবা মশাইয়ের উইলের জন্য যেহেতু আমরা তিনজন সম্পত্তির অধিকার পাইনি সেজন্য ওঁরা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন! যেহেতু পিতৃদেবের উপর শোধ নেওয়া যাবে না! তাই ওঁদের সমস্ত রাগ এসে পড়েছে শ্বশুর মশাইয়ের উপর! ওঁদের বক্তব্য উনি শংসাপত্রে স্বীকৃতি দেন নি বলে ওঁদের এতবড় আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল!"
এর সাথে সৌম্যকে ডেকে পাঠানোর কি সম্পর্ক ? জানতে চাইলো মালতী!
সৌম্য বলল," দাদা আর খুড়ো মশাই প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর! তাঁদের নির্দেশে আমি আমার পত্নী হটীকে পরিত্যাগ করে দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ করি! সেজন্যই আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল! তারা ইতিমধ্যেই কন্যার সন্ধান ও কোষ্ঠী বিচার করেছেন "
একথা শুনে স্তম্ভিত মালতি ও হটী দুজনেই!
সৌম্যসুন্দর আবার শুরু করে," সেই বিষয়েই বাবামশাইয়ের সাথে আলোচনা করতে এসেছিলাম !"
ক্ষুব্ধ মালতি বলল," ঠাকুরপো কি বলবেন? সে তো তোমার অভিরুচি বাবা! কুলীন ঘরের সুপাত্র! পাঁচটা দশটা নয়, দ্বিতীয়বার বিয়ে করা তো স্বাভাবিক!
"না, সোনা মা সর্বক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক নয়! আমার গুরুদেব তর্কসিদ্ধান্ত মশাই কুলীন কিন্তু এক পত্নীক! শ্বশুর মশাই বিপত্নীক কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহ করেন নি!"
হটী এবার প্রশ্ন করল," তুমি মেয়েটিকে দেখেছো?"
হেসে সৌম্য উত্তর দিল " হ্যাঁ, দেখতে বাধ্য হয়েছি! আমাকে দেখানোর জন্য আমাদের বাড়ী তাকে এনে রাখা হয়েছে!"
" তুমি রাজী হওনি?" প্রশ্ন করে মালতি!
সৌম্য শুধু বলে, "এটা অবান্তর প্রশ্ন সোনা মা!"
এবার হাসি ফোঁটে হটীর মুখে! সে সৌমের কাছে দুপুরে খেয়ে যাওয়ার আব্দার করে রান্না ঘরে যেতে চাইলে মালতি নিজে যায়! ওদের দুজনকে একাধিক কথা বলার সুযোগ দিতে!
সৌম্য হটীকে বলে," তোমার পরামর্শ না নিয়েই তোমার বাবার কাছে একটা প্রস্তাব রেখেছিলাম!আয়ুর্বেদশিক্ষা শেষ করে আমরা দুজন তিজলহাটীতে একটা আরোগ্যনিকেতন প্রতিষ্ঠা করব! আমি পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা করব! তুমি মেয়েদের!"
হটী বলল," হ্যাঁ বাবা আমাকে বলেছেন!"
"কিন্তু বর্তমানে সেটা হয়তো আর হবে না! ওঁদের সপিন্ডকরনের প্রস্তাব আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি!দাদা আর বাবা বাবার শ্রাদ্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, কিন্তু আমি করিনি! আমি এক বছর অশৌচপালন করব! তাই নখও কাটিনি! তাই ওরা আর পীড়াপীড়ি করে নি! কিন্তু বাৎসরিক শ্রাদ্ধের পর সংঘর্ষ অনিবার্য! ফলে আশঙ্কা করছি , আমি পিতৃগৃহ থেকে বিতাড়িত হ'ব! সম্পত্তির দখল ওরা দুজন নেবে! আমি বিচারের জন্য কাজীর দ্বারস্হ হ'ব না! তাহলে আমরা কোথায় সংসার পাতব?" একটানা বলে গেল সৌম্য!
হটী বলল,"আমাদের সারাটা জীবন পড়ে আছে! এই বঙ্গে রোগশূন্য কোন গ্রাম আছে বলে আমার মনে হয় না! আমাদের যদি নিষ্ঠার অভাব না থাকে তাহলে বঙ্গের যে কোন বর্ধিষ্নু গ্রামে গিয়ে আমারা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারি!"
সেদিন সন্ধ্যায় রূপেন্দ্র ফিরে সব১ শুনে বললেন,"এখনো এগারো মাস সময় আছে! উপায় একটা হবেই!"
(চলবে)
মালতি সৌম্যকে সন্ধ্যা পর্য্যন্ত অপেক্ষা করতে বললেন! এর মধ্যেই রূপেন্দ্র ফিরে আসবেন! তাঁকে যা বলার সরাসরিই বলা ভাল!
কিন্তু সৌম্য জানাল, একটু পরেই তাঁকে নবদ্বীপ রওনা দিতে হবে!
হটী জানতে চাইল, তাদের পোষা ঘোটকী ফুল্লরারকে কে নিয়ে যাবে?
সৌম্য জানাল, তাদের বাড়ীর বিশ্বস্হ পাইক রঘুদা নিয়ে যাবে!
নিয়মভঙ্গের পরদিনই নবদ্বীপ প্রত্যাবর্তন করেছিল সৌম্য! কিন্তু একমাস পরেই তাকে কাকার নির্দ্দেশে ফিরে আসতে হয়েছে! বাড়ী ফিরে সে জানতে পারে তার কাকা ও দাদা তার উপর প্রচন্ড ক্ষুব্ধ কারন সৌম্য সুন্দর তার বাবার উইলের বিষয়ে তার শ্বশুর ওই উইলের একজন অছি পার্ষদ তাঁকে প্রভাবিত করার কোন চেষ্টাই করেনি!তাই সম্পত্তি দখলের কোন সুরাহা হয়নি!
নায়েব -কানুনগো মশাই সম্পত্তির অর্ধেক নবাবের তহবিলে ' খাস ' করার সুপারিশ করেছেন! বাকী অর্ধেক উত্তরাধিকারীতের মধ্যে বন্টিত হবে!যেহেতু তিনি সদস্যের অছি পরিষদের এক তৃতীয়াং অর্থাৎ সৌমের শ্বশুর রূপেন্দ্র অন্য দুজন মিত্র মশাই ও গুরুদেবের সাথে একমত হয়ে একবগ্গা দিঘী খনন বন্ধ করে সমস্ত সম্পত্তি উত্তরাধিকীদের মধ্যে বন্টনে সহমত হননি, তাই সরকারী তত্বাবধানে ' একবগ্গা ' দিঘী খননের কাজ শুরু হবে! এই কারনে সৌম্য সুন্দরের উপর ঘোষাল পরিবারের সকলেই বিরক্ত ও ক্ষুব্ধ!
মালতি সৌম্যের কাছে জানতে চায়, "মামনিকে তুমি শ্রাদ্ধ বাড়ীতে যেতে নিষেধ করেছিলে কেন বাবা?"
সৌম্য উত্তরে জানলো," সোনা মা ,শুধু আমাদের পরিবার নয়, সারা তিজলহাটির ব্রাক্ষ্মন পরিবারে একটি কদর্ষ প্রথা প্রচলিত আছে! যাদের শুরুনিপাত হয় ,অশৌচপালনের দশদিন তাদের স্ত্রীদের এক বস্ত্রে থাকতে হয়! ঊর্ধাঙ্গে কোন বস্ত্র ধারন নিষিদ্ধ! পুরুষ মানুষের ভিড়ে নববধূর চরম বিড়ম্বনা! এমন কি অঙ্গ মার্জনার অধিকারও নাই!প্রচন্ড শীতেও সিক্ত বস্ত্র এক বস্ত্রার অঙ্গেই শুখায়!
.অবাক হয়ে হটী প্রশ্ন করে," দিদিকেও তাই করতে হয়েছিল?"
আবেগ বিহ্বল হয়ে, স্হান কাল পাত্র ভুলে তার স্ত্রীকে আদর করে যে নামে ডাকে সেই নামে সম্বোধন করে সৌম্য বলল,"হ্যাঁ, রূপা! সেই দশদিন বৌঠানের দিকে চোখ তুলে তাকাকে পারিনি!"
মালতি জানতে চাইলো," মাস খানের মধ্যে তোমাকে নবদ্বীপ ডেকে পাঠানো হ'লো কেন?"
ম্লান হেসে সৌম্য বলল,"সে এক ন্যক্কার জনক ঘটনা!বাবা মশাইয়ের উইলের জন্য যেহেতু আমরা তিনজন সম্পত্তির অধিকার পাইনি সেজন্য ওঁরা প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছেন! যেহেতু পিতৃদেবের উপর শোধ নেওয়া যাবে না! তাই ওঁদের সমস্ত রাগ এসে পড়েছে শ্বশুর মশাইয়ের উপর! ওঁদের বক্তব্য উনি শংসাপত্রে স্বীকৃতি দেন নি বলে ওঁদের এতবড় আর্থিক ক্ষতি হয়ে গেল!"
এর সাথে সৌম্যকে ডেকে পাঠানোর কি সম্পর্ক ? জানতে চাইলো মালতী!
সৌম্য বলল," দাদা আর খুড়ো মশাই প্রতিশোধ নিতে বদ্ধপরিকর! তাঁদের নির্দেশে আমি আমার পত্নী হটীকে পরিত্যাগ করে দ্বিতীয় দার পরিগ্রহ করি! সেজন্যই আমাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল! তারা ইতিমধ্যেই কন্যার সন্ধান ও কোষ্ঠী বিচার করেছেন "
একথা শুনে স্তম্ভিত মালতি ও হটী দুজনেই!
সৌম্যসুন্দর আবার শুরু করে," সেই বিষয়েই বাবামশাইয়ের সাথে আলোচনা করতে এসেছিলাম !"
ক্ষুব্ধ মালতি বলল," ঠাকুরপো কি বলবেন? সে তো তোমার অভিরুচি বাবা! কুলীন ঘরের সুপাত্র! পাঁচটা দশটা নয়, দ্বিতীয়বার বিয়ে করা তো স্বাভাবিক!
"না, সোনা মা সর্বক্ষেত্রে তা স্বাভাবিক নয়! আমার গুরুদেব তর্কসিদ্ধান্ত মশাই কুলীন কিন্তু এক পত্নীক! শ্বশুর মশাই বিপত্নীক কিন্তু দ্বিতীয় বিবাহ করেন নি!"
হটী এবার প্রশ্ন করল," তুমি মেয়েটিকে দেখেছো?"
হেসে সৌম্য উত্তর দিল " হ্যাঁ, দেখতে বাধ্য হয়েছি! আমাকে দেখানোর জন্য আমাদের বাড়ী তাকে এনে রাখা হয়েছে!"
" তুমি রাজী হওনি?" প্রশ্ন করে মালতি!
সৌম্য শুধু বলে, "এটা অবান্তর প্রশ্ন সোনা মা!"
এবার হাসি ফোঁটে হটীর মুখে! সে সৌমের কাছে দুপুরে খেয়ে যাওয়ার আব্দার করে রান্না ঘরে যেতে চাইলে মালতি নিজে যায়! ওদের দুজনকে একাধিক কথা বলার সুযোগ দিতে!
সৌম্য হটীকে বলে," তোমার পরামর্শ না নিয়েই তোমার বাবার কাছে একটা প্রস্তাব রেখেছিলাম!আয়ুর্বেদশিক্ষা শেষ করে আমরা দুজন তিজলহাটীতে একটা আরোগ্যনিকেতন প্রতিষ্ঠা করব! আমি পুরুষ রোগীদের চিকিৎসা করব! তুমি মেয়েদের!"
হটী বলল," হ্যাঁ বাবা আমাকে বলেছেন!"
"কিন্তু বর্তমানে সেটা হয়তো আর হবে না! ওঁদের সপিন্ডকরনের প্রস্তাব আমি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছি!দাদা আর বাবা বাবার শ্রাদ্ধের পর আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, কিন্তু আমি করিনি! আমি এক বছর অশৌচপালন করব! তাই নখও কাটিনি! তাই ওরা আর পীড়াপীড়ি করে নি! কিন্তু বাৎসরিক শ্রাদ্ধের পর সংঘর্ষ অনিবার্য! ফলে আশঙ্কা করছি , আমি পিতৃগৃহ থেকে বিতাড়িত হ'ব! সম্পত্তির দখল ওরা দুজন নেবে! আমি বিচারের জন্য কাজীর দ্বারস্হ হ'ব না! তাহলে আমরা কোথায় সংসার পাতব?" একটানা বলে গেল সৌম্য!
হটী বলল,"আমাদের সারাটা জীবন পড়ে আছে! এই বঙ্গে রোগশূন্য কোন গ্রাম আছে বলে আমার মনে হয় না! আমাদের যদি নিষ্ঠার অভাব না থাকে তাহলে বঙ্গের যে কোন বর্ধিষ্নু গ্রামে গিয়ে আমারা নতুন করে জীবন শুরু করতে পারি!"
সেদিন সন্ধ্যায় রূপেন্দ্র ফিরে সব১ শুনে বললেন,"এখনো এগারো মাস সময় আছে! উপায় একটা হবেই!"
(চলবে)
Post A Comment:
0 comments so far,add yours