দি এডিটোরিয়াল ব্যুরো, দ্য অফনিউজ:

ঠিক কার বিরোধিতায় নেমেছে জঙ্গী আন্দোলনকারীরা?
অসমের আঁচ এবার বাংলাতেও।
এতো যেন উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে।
বিজেপির বিরোধিতা করতে গিয়ে তৃণমূলের বিরোধিতা করে ফেলছে জঙ্গী আন্দোলনকারীরা।
ক্যাব, এনআরসি'র প্রতিবাদে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ জানাতে গিয়ে, অস্বস্তিতে ফেলে দেওয়া হচ্ছে মমতা সরকারকে।

আন্দোলনকারীদের দাপাদাপিতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় দক্ষিণ থেকে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ। ধীরে ধীরে তা ছড়িয়ে পড়ে রাজ্যের অন্যান্য জেলাগুলিতেও।
রাজ্যের মানুষকে অসুবিধায় ফেলে নিজের দাবি আদায় করে নেওয়ার চেষ্টা কিছু জেহাদীর। বাস জ্বলছে। ট্রেন জ্বলছে। রাস্তা অবরোধ। স্তব্ধ গাড়িঘোড়া। মাঝপথে আটকে থাকছে ট্রেন। ডিউটি সেরে ঘরে ফেরার পথ বন্ধ। মাঝরাস্তায় আটকে কিশোরী, তরুণী। মাঝরাস্তায় অসহায় যাত্রী। চিকিৎসা না পেয়ে রাস্তায় আটকানো অ্যাম্বুলেনসে ছটফট রোগীর। অসহায় পরিবার পরিজন। রাস্তাঘাট, স্টেশন চলে গেছে লাগামছাড়া জেহাদিদের হাতে। এরই মধ্যে একমাত্র স্বস্তির খবর এটুকুই, জখম হলেও কোনও সাধারণ মানুষের প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।
ওদিকে শনিবার থেকে শান্তি ফিরছে অশান্ত অসমে। কার্ফু উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে রাজ্যের বেশকিছু জায়গা থেকেও। মানুষ বেরিয়ে পড়েছে রাস্তায়।

নাগরিক বিল এবং নাগরিক সংশোধনী বিল নিয়ে মুখ খোলায় বাধা নেই। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় দেখানো যেতে পারে বিক্ষোভও। কিন্তু একজনের গণতন্ত্র রক্ষা করতে অন্যজনের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া বেআইনি। আর ঠিক এই ভুলটাই করে বসেছেন প্রতিবাদীরা। রবিবার বিক্ষোভের আঁচ তুলনামূলক ভাবে কিছুটা কমলেও, তা পুরোপুরি থামেনি। আজও যাত্রী হয়রানির সেই একই ছবি। বাতিল হয়েছে বহু ট্রেন।

"প্রতিবাদীরা আসলে মোদির হাত শক্ত করছেন," যথার্থই বলেছেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। কারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে প্রতিবাদে বিশ্বাসী মানুষরা, এই জঙ্গী আন্দোলনকে মেনে নিতে পারছেন না। সোমবার থেকে ওই দুই বিলের প্রতিবাদে রাস্তায় নামছেন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।  তার আগে রবিবার সকাল থেকেই জেলায় জেলায় মিছিলে নেমে পড়েছে তৃণমূল। তাহলে কি জেহাদিরা ভরসা রাখতে অরাজি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশ্বাসেও? তাণ্ডব ছড়িয়ে পড়ছে জেলা থেকে জেলাতে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বারেবারে ভরসা দিয়ে চলেছেন ক্যাব, এনআরসি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। বাংলায় প্রতিটি নাগরিক সুরক্ষিত। তারপরেও আশ্বস্ত হতে পারছে না বিক্ষোভকারীরা। তারা সরাসরি জেহাদের রাস্তা নিয়েছেন। যার ফলে বিল বিরোধীদের মধ্যেও বিভাজন রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠার সম্ভাবনা অস্বীকার করা যায় না।

একেই বলে ঝি পিটিয়ে বউকে শিক্ষা দেওয়া।
বেপরোয়া আন্দোলনকারীরা যথেচ্ছ ঢিল ছুঁড়েছেন চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে। জখম হয়েছেন বেশকিছু যাত্রী। রেহাই মেলেনি রেল ড্রাইভার, গার্ড, স্টেশনে কর্তব্যরত কর্মীদেরও। প্রাণ হাতে দৌড়ে বেঁচেছেন তাঁরা। ওদিকে ততক্ষণে স্টেশনে যথেচ্ছ ভাঙচুর। আগুনে দাউ-দাউ করে জ্বলছে স্টেশনের অফিস। যাত্রীদের ট্রেন থেকে নামিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে একের পর আরেক কামরায়। গোটা স্টেশন চত্বরে শুধু দাপাদাপি। এত কান্ডের পরেও জিআরপি,  আরপিএফের দেখা মিললো না। কেন? শুক্রবারেও তো একইরকম জঙ্গীপনা দেখা গেছিলো। শনিবারেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো মাত্র। প্রতিটি স্টেশনে যে কজন জিআরপি, আরপিএফ থাকে, তাদের পক্ষে ওই মারমুখী বিক্ষোভ সামাল দেওয়া বাস্তবেই অসম্ভব ছিলো। কিন্তু শুক্রবারের ঘটনা থেকে কেন শিক্ষা নিলো না রেল প্রশাসন? রেলের যে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি নষ্ট হলো, তা কিন্তু রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি। আমার আপনার করের টাকার অপচয়। প্রয়োজনে যদি জিআরপি, আরপিএফের দেখা না মেলে, তাহলে মাসমায়না দিয়ে তাদের পোষা কেন?
বাংলায় অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে, আন্দোলনকারীরা কি মোদি সরকারকে শিক্ষা দিতে চাইলেন ?

রাস্তাতেও একই ছবি। মাঝরাস্তায় বাস থামিয়ে নামিয়ে দেওয়া হলো যাত্রীদের। সেই অসহায় যাত্রীদের সামনেই পুড়িয়ে দেওয়া হলো একের পর আরেক বাস। সব বাসগুলিই যে বেসরকারি ছিলো তা নয়। বিক্ষোভের আঁচে ভস্মীভূত হয়েছে একের পর আরেক সরকারি বাসও। আগুন নেভাতে গিয়ে হামলার মুখে পড়তে হয় দমকল কর্মীদেরও। বিক্ষোভ হঠাতে গিয়ে ঢিলের ঘায়ে রক্তাক্ত হয় পুলিস। জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিসের গাড়িও। বেপরোয়া প্রতিবাদীদের সামনে পড়ে অনেক জায়গাতেই পুলিস কার্যত পিছু হটতে বাধ্য হয়। রাজ্য পুলিসের দিকেও সরাসরি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় এই ক্যাব, এনআরসি বিরোধী জঙ্গীবাহিনী।

রাজ্যের সাধারণ মানুষ সুনজরে দেখছেন না আন্দোলনের নামে এই জঙ্গীপনাকে। বাংলার মানুষকে পাশে না নিয়েই মোদি সরকারকে চাপে ফেলার ভুল পথে পা বাড়িয়েছে আন্দোলনকারীরা। স্বাভাবিক জনজীবন স্তব্ধ করে তাঁদের বিপদে ফেলে দেওয়ার জন্য, কৈফিয়ত দাবি করেছেন রাজ্যবাসী। ওদিকে শোনা গেছে বিদ্বজ্জনদের গলাও। তাঁরা তাঁদের স্বভাবোচিত নীচু গলায় প্রতিবাদ জানিয়েছেন এই তাণ্ডবের বিরুদ্ধে। "কোনরকম প্ররোচনার ফাঁদে পা দেবেন না," বারবার সতর্ক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সবাইকে সাবধান করে জানিয়েছেন, কোনও মতেই যেন এমনকিছু না ঘটানো হয় যাতে সাম্প্রদায়িক ছাপ লাগতে পারে। ওদিকে নাগরিক এবং নাগরিক সংশোধন বিলের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই ক্ষোভ জাহির করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই শাসকদলের তরফে বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করে, তাতে সামিল হওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

মোদি সরকারের বিরুদ্ধে পথে নেমেছে কংগ্রেসও। ইতিমধ্যেই ওই দুই বিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে শীর্ষ আদালতেও। কিন্তু কোনও কিছুতেই ভরসা রাখতে পারেনি বিক্ষুব্ধরা।
জঙ্গী আন্দোলন কড়া হাতে থামানো না গেলে তা ক্রমেই বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। বিল বিরোধিতার থেকে নজর ঘুরে যেতে পারে জঙ্গী আন্দোলনের দিকে। রাজ্যের আইন-কানুনের যাবতীয় দায় নবান্নের। এরকম চলতে থাকলে কড়া পদক্ষেপ করতে বাধ্য হবে রাজ্য সরকার। কারণ রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা সুনিশ্চিত করতে,  সরকার রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে দায়বদ্ধ। পাশাপাশি রাজনীতির ঘোলাজলে এই ডামাডোলের ফায়দা তোলার চেষ্টা করতে পারে বিরোধীপক্ষও।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours