নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেট, অস্ট্রেলিয়া:

তুমি অহেতুক রাগো যখন, নাবালক শিশুর মতোন , আমি মনে মনে হাসি, তোমার রাগ যে বড় ভালোবাসি!”

পৃথিবীতে প্রত্যেকটি মানুষের কাছে জীবনের অর্থ আলাদা। আমার জীবনের অর্থ যেমন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বদলায়, তেমনি আমার মনে হয় প্রত্যেকটি মানুষ তার জীবনকে ভিন্ন সময়ে ভিন্ন অর্থে খুঁজে পায়। কোন কোন মানুষের জন্য এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকার নামই জীবন। আবার কেউ কেউ শুধু বাঁচাটাকে জীবনের অর্থ মনে করে না, তারা জীবনে সুখ খুঁজে পাওয়াটাকে মনে করে জীবন। কিছু মানুষ মনে করেন অনেক টাকা- পয়সা এবং সম্পত্তির মালিক হতে পারলেই জীবনের আসল অর্থ খুঁজে পাওয়া সম্ভব। আসলে জীবন হলো-
একটি সুন্দর সকালের শুরু মানে জীবন...
প্রতিটি মুহুর্তটিকে আনন্দের সাথে কাটানোর মানে জীবন!

আত্নসন্তুষ্টি লাভ করার মানে জীবন
সবরকমের যন্ত্রণাকে লাঘব করার মানে জীবন
সব দুঃখ কষ্টকে জয় করে ... প্রতিটি বাধা- বিপত্তি পেরিয়ে বেঁচে থাকার মাঝেই জীবন।
নিজের ইচ্ছায় চলা এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াঁনোর মাঝেই জীবন। মানুষের জীবনে
কোনটি অগ্রহণযোগ্য ও অযৌক্তিক। ব্যর্থতা, অযৌক্তিক প্রত্যাশা, হিংসা-বিদ্বেষ ও অন্যের দোষ খুঁজে বেড়ানোর মতো কিছু অভ্যাস ও ঘটনার পাশাপাশি অবিচার, জুলুম ও দারিদ্র্যের মতো সামাজিক অসঙ্গতিগুলো মানুষের রাগের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তবে রাগ প্রকাশের ধরনের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিভেদে পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। কিছু লোক আছে, একজনের ওপর রাগ পুষে রেখে অন্যের ওপর তার প্রকাশ ঘটায়। অনেকে আবার সরাসরি প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ কেউ আছেন, শত অন্যায়ের পরও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখান না। এ ধরনের প্রতিক্রিয়াহীন অবস্থা শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য ভালো নয়। তবে যারা রাগকে কৌশলে সংবরণ করে সেই শক্তিকে ভালো কাজে লাগাতে পারেন।

এই এক জীবনে পাওয়া না পাওয়া নিয়ে যেমন আছে হতাশা এবং স্বপ্ন। তেমনি কিছুতে না পেলে স্বপ্ন ভেঙ্গে গেলেই আমরা নিজের উপরে নিজেই রেগে যাই ।
শরীরের উপরে অত্যাচার করি , মনের উপরে চাপ নেই , কথায় কথায় রাগ করি , মানুষকে কষ্ট দিই নিজে কষ্ট পাই , আসলে এই রাগ নিয়ে আমি খুব চিন্তা করি ! কেন মানুষ রাগে , রাগ হয় কেন , রাগী মানুষদের কি কি নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা নেই ,প্রায় আমি এ্যাংরি ম্যানেজমেন্টের উপরে লেখা বিভিন্ন ফিচার পড়ি , রাগ নিয়ে একটা ফিচার পড়লাম সেটা ছিল এমন “রাগ
আমরা অনেকেই রাগ দমন নিয়ে জানতে চাই।প্রায়ই স্বভাবজাত ভাবে যারা রেগে যান, সেই স্বভাবজাত রাগের প্রধান কারণ ব্যক্তিগতভাবে নির্ধারিত কিছু “বিধি” বা নিয়ম লংঘন। আমরা নিজেদের ভেতর কিছু নির্দিষ্ট “স্ট্যান্ডার্ড” তৈরি করে নিই। সে স্ট্যান্ডার্ড বজায় রাখাকে আমরা অবশ্যই কর্তব্য বলে মনে করি। কোথাও কেউ আমাদের নিজেদের তৈরি করা সেই “স্ট্যান্ডার্ড” বা বিধি এতটুকু লংঘন করলেই আমরা মনে করি সে তার নিয়ম বা বিধি লংঘন করেছে।আমরা তখন ক্রুদ্ধ হই, রেগে যাই এবং তাকে বিভিন্নভাবে শায়েস্তা করার চেষ্টা করি।বাকি, ধমকের ঝাপ্‌টা তখন প্রবল বেগে ছুটতে থাকে।যার প্রতি এমনটি করছি সে হয়ত পুরো ব্যাপারটি বুঝতেই পারছে না যে এত রেগে যাওয়ার কি আছে। এটি এত সামান্য ভুল বা অন্যায় তার জন্য এত খারাপ খারাপ কথা, বকা, মন্তব্য করতে হবে? লোকটি আসলেই বদ রাগী।এই বদরাগী লোকটি আসলেই খুব ভালো মানুষ। কিন্তু তীব্রভাবে, অন্যদের ভাষায় তুচ্ছ কারণে প্রায়ই রেগে যান এ কারণেই সেই লোকটি হয়ে পড়ে অপ্রিয় ও মন্দ মানুষ। রাগের কারণ? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঐ নীতি বা বিধি ভঙ্গ করা? ছেলে মেয়ে ঠিক মত বাসায় থাকবে, রুটিন মতন পড়াশোনা করবে এটি যে কোন বাবার অলংঘীয় বিধি। যখনই এর ব্যত্যয় হবে, এমনি ভাবে চোটপাট করে অতিষ্ঠ করে তুলবেন সেই ছেলে বা মেয়েদেরকে। ঘরে সংসারে, অফিসে সবখানে ঐ নির্দিষ্ট বিধি বা নিয়ম ভঙ্গের সামান্য লক্ষণ দেখলেই তিনি তেলে বেগুনে জ্বলে উঠেন। কেননা তিনি ভাবেন তারা অবশ্য পালনীয় নীতি লংঘন করেছেন। এই ধরণের লোক যেহেতু ঐ সব সার্বজনীন সাধারণ নীতিবোধ বা নিয়ম ভঙ্গকে অন্যায় ও অনিয়ম মনে করেন, তাই তারা মেজাজ ধরে রাখতে পারেন না। মনের সব ঝাল মিটিয়ে বকাবকি না করা পর্যন্ত তার মন-প্রাণ শান্ত হয়না। তাই কানে কানে অন্যদেরও বলে রাখি, আপনার যে সব প্রিয়জনকে বদরাগী ভাবছেন, মনে রাখবেন তারা অন্য অনেকের চেয়ে ভালো মানুষ। সৎ ও বিবেকবান মানুষও। তাদের আপনার নিয়ন্ত্রণে রাখাও সহজ। উপরোক্ত টিপস্‌টি বুঝে নিন।তাদের কিছু অতি ব্যাপারে ব্যক্তিগত স্ট্যান্ডার্ড বা বিধি রয়েছে। কৌশলে ও একটু চিন্তা করলেই সেই সব বিধিগুলো কি বুঝতে পারবেন।বেশ, আর কিছু করতে হবে না, কেবল সেই সব “তথাকথিত অলংঘনীয় নীতি” গুলো সম্বন্ধে একটু সচেতন থাকুন। এসব ব্যাপারে তার সঙ্গে আলোচনা করুন। আপনি যে এসব নিয়ম ইচ্ছে করে ভেঙ্গে তাকে ছোট বা অপমান করতে চেয়েছেন, সেই ধারণাটি যে ঠিক নয়, ঠান্ডা মাথায় তাকে তা বুঝতে দিন। প্রয়োজনে সে রকম প্রমাণ দিন। দেখবেন এই বদরাগী লোকটির মত হৃদয়বান, সৎ, মহৎ ও আপনজন আর কেউ নেই।
তবে এটাও তো ঠিক সবসময় সব রাগ নেগেটিভ নয় , কিছু রাগ থেকে যে প্রেম মেলে , ছোটদের মেলে খেলনা , তাই হয়ত কবিরাও রাগ নিয়ে কাব্যে মাতেন যেমন...
তোমার রাগ শিরোনামে তিরোহিত ধানিকার একটা কবিতা মনে পড়লো -
তোমার দুপুর সকালটাকে
করো সঠিক ভাগ
আমার জন্য কখন কখন
করবে তুমি রাগ।
তোমার রাগের সময়টুকু
খুবই ভালো লাগে
নরম কোমল স্বর্ণ ঘাম
নাকের অগ্রভাগে।
রাগের সময় মুখটা তোমার
আমার দিকে ফিরে
কি যেন সব বলতে থাকে
খুবই ধিরে ধিরে।
রাগের সময় কাঁচের চুড়ি
ভাঙে তোমার হাত
তখন আমার স্বপ্নে আসে
শুধুই বাসর রাত।
রাগলে যাদের মন্দ লাগে
তুমি তেমন নয়
তোমার আমার জীবনটা তাই
হোক না রাগময়।”
আমরা রাগ নিয়ে যতই কবিতা বা গান বানাই না কেন  রাগ মানুষকে ধ্বংস করে । মানুষের জীবনের একটি মন্দ দিক হলো রাগ বা ক্রোধ। কারও রাগ যখন মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তখন সেটা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। রাগান্বিত মানুষ বেসামাল হয়ে যায়। তখন অন্যের ওপর অবলীলায় অত্যাচার করে। রাগ মানবিক আবেগেরই অংশমাত্র। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ ক্ষতিকারক, যা মানুষের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। যে ব্যক্তি রাগকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, সে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রসহ সব অঙ্গনে সফল। মাত্রাতিরিক্ত রাগ কখনোই ভালো নয়। সবকিছুর মধ্যে ভারসাম্য জরুরি। রাগ নেই, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। জ্ঞানীরা বলেন, “রাগ হলো বারুদের গুদামের মতো, “যা মানুষের স্বাভাবিক অর্জনকে মুহূর্তে ধ্বংস করে দেয়। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণের কোনও বিকল্প নেই।

কুরআন ও হাদিসের আলোকে রাগ থেকে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে প্রিয়নবী (স.) এর এ হাদিসটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য। তিনি বলেন, রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। কোরআন ও হাদিসে রাগ দমনের একাধিক উপকারিতা বর্ণনায় এসেছে। রাগ দমনকারীর ... রাগ নিন্দনীয়, তবে সব রাগ দোষের নয়। তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ ক্ষতিকারক, যা মানুষের জন্য নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। যে ব্যক্তি রাগকে দমন করতে পারে না তার ধ্বংস অনিবার্য । এ বিষয়ে একটি ছোট গল্প বলি “এক সাহাবি হজরত রাসূলুল্লাহর (সা.) কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমাকে অল্প কথায় কিছু নসিহত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। সাহাবি কয়েকবার বললেন, আরও নসিহত করুন। প্রত্যেকবারই রাসূলুল্লাহ (সা.) বললেন, রাগ বর্জন করো। -বোখারি”
তাই বলা হয় , প্রকৃত বাহাদুর সেই ব্যক্তি, যে ক্রোধের সময় নিজেকে সংযত রাখতে পারে।' মানবজীবনে রাগকে নিয়ন্ত্রণ করা বড় সাফল্য। এক হাদিসে বলা হয়েছে, 'যখন তোমাদের কারও রাগ আসে, তখন সে দাঁড়িয়ে থাকলে যেন বসে পড়ে। তাতে যদি রাগ দমে না যায়, তাহলে সে যেন শোয়ে পড়ে।' -তিরমিজি।

(তথ্যসূত্র - রাগ বিষয়ে গুণীজনের বনানী,
রাগ বিষয়ে ফিচার , হাদিসের বই থেকে
এবং পত্রিকার পাতা থেকে সংগ্রহ করা তথ্য।)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours