শ্বেতা ঘোষ, ফিচার রাইটার, নৈহাটি, উত্তর ২৪ পরগনা:

শীত আর উষ্ণতা যেন দুই মেরু প্রান্তর। অথচ যাব যাব বড়দিনের আবহে এই বৈপরিত্যই এক সঙ্গীত চারণে পরিণত হয়ে গেল রূঢ় শিল্পাঞ্চলের ইস্পাত নগরীতে। আক্ষরিক অর্থে বৃহস্পতিবার হিমেল সাঁঝবেলায় দুর্গাপুর সুর পরিষদ মিউজিক্যাল স্থানীয়  রবীন্দ্রভবনে একমুঠো সাংস্কৃতিক রোদ্দুর ছড়িয়ে দিল পরিশীলিত পরিবেশনায়।
সাধন সঙ্গীতকার মুকুন্দ দাসের দেশাত্মবোধ গান হাসিতে খেলিতে গীতব্যঞ্জনায় সুচিত হলো এই সান্ধ্য যাত্রাক্ষণ। আর শীতের জড়তা তুড়ি মেরে রবিকবির আগুনের পরশমনিতে পরিসমাপ্তি ঘটল এই সুন্দর স্বর্নালী সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক মাইলস্টোনের। হঠাৎ মাইলস্টোনেরই বা প্রসঙ্গ উঠলো কেন? আসলে ভারতে সম্ভবত প্রথম বাংলা সম্মেলক প্যারোডি গানের আসর মাতালেন পুরুষের সঙ্গে মহিলারাও। পাশাপাশি একই সঙ্গে। এমনই দাবি করলেন উদ্যোক্তাদের পক্ষে আনন্দিতা রায় ও পূর্বাশা আন।
আসলে এই অভিনব প্যারোডি গানের আসর জাঁকিয়ে বসেছিল বৃহস্পতিবার হিমশীতল সন্ধ্যায় দুর্গাপুরের রবীন্দ্র ভবনে। এই সমবেত প্যারোডি গানে দাঁত ভেঙ্গে দাও, হাঁই মারো মারো ঠেলা, টাক বিপত্তির সংমিশ্রন যেন সমাজের বুকে রঙ্গ ও ব্যঙ্গ মোড়কে কড়া চাবুকের বার্তা।
দুর্গাপুর সুর পরিষদ মিউজিক্যাল একাডেমি আয়োজিত এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় তেরোজন কিশোর কিশোরী একশ্বরে পরিবেশন করলেন ঠাটের গান। সঙ্গে তাঁদের কন্ঠে চিড়েতন হরতন ইস্কাবন যেন মজার সুবাস ছড়িয়ে দিয়েছে গোটা প্রেক্ষাগৃহে জুড়ে। ইতিমধ্যেই ঘোষক প্রসূন চট্টোপাধ্যায় বড়দিনের গান আচমকা গাইতে শুরু করলে দর্শক আসনের পিছন থেকে সবার কাছে হঠাৎ হাজির হন এক ছদ্মবেশী সান্টা ক্লজ। এই ঘটনায় উপস্থিত সকলে হকচকিয়ে যান। বাচ্চাদের মধ্যে হুরোহুরি লেগে যায় উপহার প্রাপ্তির আশায়।
এমনই এক জমকালো পরিবেশ দেখে হতবাক এই শিল্পশহরের বিশিষ্ট সাহিত্যিক মোহিত গঙ্গোপাধ্যায়। আমন্ত্রিত অতিথির আসন গ্রহণ করে তিনি বলেন, "আজ যেখানে সমগ্র বাংলায় এক সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের পরিস্থিতি ক্রমশ বিরাজমান নানা সংকটের হাত ধরে সেখানে এইরকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আমায় অবশ্যই আশান্বিত করে তোলে। উদ্যোক্তাদের এই প্রয়াস অপসংস্কৃতির উল্টো স্রোতের এক ঝলক দক্ষিণা বাতাস।"
চলতি বছর বাংলার দুই মহান সঙ্গীতশিল্পী মান্না দে ও হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জন্ম শতবার্ষিকী। দুই শিল্পীকে গানে গানে শ্রদ্ধার্ঘ্য জানাতে এদিন সন্ধ্যায় উদ্যোগী প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা পরিবেশন করেন শিল্পীদ্বয়ের‌ অবিস্মরণীয় বেশকিছু গানের মেডলি। কাহারবা নয় দাদরা তালে তারে বলে দিও মেডলির তুঙ্গ মূর্ছনা গম গম করে যেন খান খান করে দিয়েছিল মঞ্চ শৈত্য। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের প্রধান আনন্দিতা রায় প্যারোডি গানের ইতিবৃত্ত নিয়ে এক তাৎপর্যপূর্ণ বক্তব্য রাখেন ইতিহাস ও সাম্প্রতিক তথ্যের মেল বন্ধনে।
মেঘলা ঠান্ডা বাতাসে রাতের যখন হাল্কা ইশারা ঠিক তখনই অনুষ্ঠান সমাপ্তির শুধুই একরাশ মুগ্ধতা শ্রোতাদের চোখে মুখে। ঠিক সেই মাহেন্দ্রক্ষণে ওই মুগ্ধতার আবেশ বুঝতে পেরে উদ্যোক্তারা নিশ্চয় গুনগুন করে উঠেছেন আমার গানের স্বরলীপি লেখা রবে...


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours