আহসান হাবিব, লেখক, বাংলাদেশ:

সেই গান যা সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল। ওয়াকা ওয়াকা...আফ্রিকা...
কলাম্বিয়ান শিল্পী শাকিরার এমনতর গান শুনে মুগ্ধ হয় না, এমন সংগীতপ্রিয় মানুষ পৃথিবীতে বিরল। আমরা তাঁর গান শুনে আসছি দীর্ঘ সময় ধরে। একজন শিল্পীকে আমরা যেভাবে দেখি তার একটা সামাজিক ছবি অবচেতন ভাবেই এঁকে নিই। শিল্পের বাইরে অন্য কোন রূপে তাঁদের দেখতে অভস্ত্য নই, তাই সাহিত্যের নোবেল লরিয়েট গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ যখন সংগীত শিল্পী শাকিরাকে নিয়ে নিবন্ধ লেখেন, আমরা খানিক বিস্মিত হই, আমাদের সাংস্কৃতিক বোধে খটকা লাগে, কিন্তু আমরা অচিরেই বুঝে যাই শাকিরা শুধু মাত্র একজন গায়িকা নন, শুধু একজন মামুলি শিল্পী নন, তিনি একজন সমাজ সচেতন মহান মানুষ । তিনি যখন খুব ছোট, কলাম্বিয়ার রাস্তায় দেখতে পান অসংখ্য শিশু কাজের জন্য ঘুরছে, তাদের শরীর অপুষ্টিতে ভাঙা, দারিদ্র তাদের পেঁচিয়ে আছে । তিনি বুঝতে পারেন না এই শিশুরা কেন এমন, কি তাদের এই পথে নামিয়েছে অবেলায় ? তিনি যখন একটু বড়, বুঝতে পারেন কলাম্বিয়ায় বিরাজ করছে বৈষম্য, নানা কুসংস্কার, শিক্ষা থেকে বঞ্চনা । তখন থেকেই তিনি স্থির করেন শিশুদের জন্য কিছু একটা করবেন।

আজ পৃথিবীর সব মানুষ জানে তিনি একজন বিশ্ববিখ্যাত সংগীত শিল্পী । কিন্তু তিনি একজন শিল্পী হয়েই থেমে থাকেননি, তিনি শিশুদের ওই অবস্থার জন্য শিক্ষা বঞ্চনাকে দায়ী করেন এবং সিদ্ধান্ত নেন তাদের শিক্ষা বিস্তারে কাজ করবেন। তিনি বেছে নেন প্রত্যন্ত এলাকা যেখানে সভ্যতার কোন আলো পৌঁছেনি, গড়ে তোলেন স্কুল যেখানে সব ধরণের আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করেন । দেখতে দেখতে পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে, শিশুরা স্কুলে যেতে শুরু করে, পথশিশুরা ছাত্র হয়ে লেখাপড়ায় মন দেয় এবং ক্রমে তা ছড়িয়ে পড়ে। যে শিশুরা একদিন বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছিল, তারাও সেসব পথ ছেড়ে দেয়, নিজেদের শিক্ষিত করে তোলে এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হয় । সরকার এই কাজে তাকে সহায়তা করতে বাধ্য হয়। কলাম্বিয়ার পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে।

শাকিরা জানাচ্ছেন এই বছর তিনি ৫৪ হাজার শিশুকে শিক্ষার সংস্পর্শে নিয়ে আসবেন। শিশু শিক্ষাকে তিনি 'অনুপ্রেরণা' মনে করেন এবং বলেন 'যে কোন গ্র্যামি অ্যাওয়ার্ড এর চেয়ে এটা মুল্যবান।

আমি আমার দেশের দিকে তাকাই, হতাশ হই। কাউকে তেমন চোখে পড়ে না । সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত । আর সমালোচনায় দিন পার করে তৃপ্তির অসীম ঢেকুর তুলে তারা ঘুমিয়ে পড়েন । এখন বুঝতে পারি নোবেল লরিয়েট গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ কেন শাকিরাকে নিয়ে নিবন্ধ লেখেন ! একজন শিল্পী শুধু শিল্পের চর্চা করে কাটিয়ে দিলে মানুষ তাঁকে যতটা মনে রাখবে, চারপাশের সমস্যা, বিশেষত বঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সংগ্রামী ভূমিকা নিলে মানুষ তাকে ইতিহাসের অংশ হিসেবে মনে রাখবে। তখন মানুষটি শুধু শিল্পী থাকেন না, একজন অসাধারণ মানুষ হয়ে ওঠেন। শাকিরা তেমন একজন মহান মানুষ এবং শিল্পী।

স্যালুট শাকিরা, স্যালুট...
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours