জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

এক কথায়, আকাশ যেখানে যেখানে সীমানে ছুয়েছে, দিশাকে তার বাইরে নিয়ে নিজেকে আবিস্কার করার নামকেই আন্তর্জাতীকতা বলে জেনেছি। আরো ছোট করে বলতে গেলে, আত্মবোধ থেকে আত্মমর্য্যাদায় উত্তোরনে ভাবজগতের সীমাকে ক্রমাগত উত্তরনের নামকেই আন্তর্জাতিকতা বলে বুঝতে পারার মধ্যে দিয়েই, শ্রমিক আন্দোলনে আন্তর্জাতীকতার অর্থটাকে আয়ত্ব করার চেষ্টা করেছি।
এভাবেই বুঝেছি, দিকবলয় ভেদ করে, এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টাতেই শ্রমিক আন্দোলন তার অভিষ্টে পৌছুতে সক্ষম এব্ং এই যাত্রা পথকেই বলাযাবে প্রগতীপথ। ব্যক্তি, সমষ্টি, সমাজ,  জাতি কিংবা বিশ্ব ভাবনায়  রুপান্তরের একই পথ।
এই যাত্রায় জাতীয়তা থেকে আন্তর্জাতীকতা অনেকটা আজ থেকে আগামী কালের যাত্রা, এক পল থেকে অন্য পলে যাত্রা, নিজ ঘর থেকে পাড়া, সমাজ  দেশ এবং বিশ্ববোধ ----  এই পথ বেয়ে নিজেকে আবিস্কারের নামকেই বুঝতে হবে  বিশ্ব চেতনা।
ভাবজগতের  এ এক নিরবিচ্ছিন্ন রুপান্তর প্রকৃয়া। একপ্রান্তে  বিশ্বজগতের রুপান্তর ধারার, প্রতিবিম্ব এবং অন্যপ্রান্তে রুপান্তরের প্রকৃয়ায় ব্যক্তি সমাজ দেশ এবং বিশ্বের অনুদান।
এইভাবে বুঝেছি রবীন্দ্রনাথের চিত্তমুক্তির পথটিকেই, মার্ক্স  প্রগতি বা আন্তর্জাতীকতার অভিমুখে,  এক মহামানবিক যাত্রা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।আরো সোজা কথায়, কার্ল মার্ক্সের জ্ঞানতত্ব  কুপমন্ডুকতা থেকে বিশ্ববোধে উত্তোরনে,
------- দ্বি-মুখীনতাকেই বুঝিয়েছেন; নিজ মুক্তি- পথের অন্বেষনে  বিশ্বমুক্তির অভিমুখ হিসেবে ।সেই সুত্র ধরেই, মার্ক্স যখন  বল্লেন, রুপান্তর প্রকৃয়ায় অংশগ্রহনের মধ্য দিয়েই, বিশ্বকে জানা বা নিজেকে 'আন্তর্জাতীকতাবোধে উত্তরন করা সম্ভব, তিনি মানবিকতাকে মহামানিবিক উত্তরনের কথাটি বুঝিয়েছেন।
 এই অভিমুখে 'জাতীয়তা থেকে আন্তর্জাতীকতা'য় উত্তোরন  বলতে,  প্রকৃতির রুপান্তর প্রকৃয়া অনুধাবন ও অনুবেক্ষনের ধারার প্রয়োগে, ,  মানবিক রুপান্তর প্রকৃয়া্র সাধারন বিবর্তনমুলক ধারাকে,   এক অখন্ড  মহামানবিক রুপান্তরের পথে
-----  এগিয়ে দেওয়ার বিষয়টিকে আন্তর্জাতীকতা হিসেবে বুঝিয়েছেন । এই ভাবে  মহাজ্ঞান ও আন্তর্জাতীকতার মধ্যে সম্পর্ক এবং  সীমানাটাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
এখানেই সেই গুরুতর প্রশ্নটি উঠে আসছেঃ
মানবিকতা থেকে মহামানবিক উত্তোরন প্রকৃয়ায়টি যদি প্রাকৃ্তিক বলে বিবেচিত হয়, তবে সেখানে মানবিক হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তাটি কোথায়?
সেখানে মার্ক্স বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই হস্তক্ষেপটাই প্রাকৃ্তিক।অজৈবে যেমন নতুনের হস্তক্ষেপ ব্যাতিত প্রকৃ্তি জগৎ স্তব্ধ, তেমনি মানবিক অগ্রগতিকে -  ভাবে বা বিজ্ঞানে অথবা ইতিহাস-চেতনায়, স্তব্ধ করে দেওয়ার প্রকৃয়া্টি যখন সমাজিক-রাজনৈ্তিক দিক থেকে বাস্তব
--------, তখন সেই স্তব্ধতা রোধ করার মানবিক কার্য্যকলাপো প্রাকৃ্তিক । অর্থাৎ এই বিশ্ববিক্ষার সুত্র ধরেই তিনি বুঝিয়েছেন - প্রকৃ্তিতে প্রতিটি অণুকনা থেকে কণা,  বস্তু, বিশ্ব থেকে সূর্য্য, পর্য্যন্ত যে দ্বান্দিকতা, একই দ্বান্দ্বিকতা বিদ্যমান মানবিক রুপান্তরের ধারায়। এই রুপান্তরের পথে দ্বন্দ্বকেই বলা যাবে, ইতিহাস। এই দ্বন্দ্বের মানবিক দিকটিকেই বুঝতে হবে, আন্তর্জাতীকতা।
আজকের পরিস্থিতিতে এই আলোচনার তাৎপর্য্যঃ
আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্র যখন সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার ছুতো দেখিয়ে যখন ঢ্যারা পিটিয়ে -  মানবিকতার জয়যাত্রার অবসান, ইতিহাস স্তব্ধতার তত্ব এবং বিশ্বের পরিনতি হিসেবে 'চিরন্তন দাসত্বের' যে তত্ব চালু রেখেছে,
----- বিশ্বকে যখন   মিলিটারীতে ছেয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন জাতীয়তার আন্তর্জাতীকতায় কিংবা মানবিকতার মহামানবিক মুক্তির সংগ্রাম অতি গুরুত্বপূর্ন হয়ে উঠেছে । এই সংগ্রাম, জ্ঞানকে খন্ডিত রাখা এবং সংস্কৃতিকে আঞ্চলিকতা বা জাতীয়তায় অবরুদ্ধ রেখে, দাসত্বের পথকে প্রসস্ত করার পথে এগুতে থাকবে। এই পথকেই জাতীয়তার আন্তর্জাতীকতায় মুক্তি বলে জানতে হবে। এই মুক্তি পথটাকে প্রগতি যাত্রা বলে জানতে হবে বাকি সব প্রতিক্রীয়া।
ইতিহাসের বিচারে, আন্তর্জাতীকতা এবং প্রতিক্রিয়া,  পরস্পরের মধ্যে বৈরিতা মুলক। প্রতিকৃয়ার অর্থ মানবিকতার বিকাশকে রুদ্ধ করতে, ইতিহাসের জাতীয় অভিমুখকে আন্তর্জাতীকতায় উত্তরনে বাধা দিয়ে, ইতিহাসের যাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া।আন্তর্জাতীকতার অর্থ ইতিহাসকে অবরুদ্ধ  করাকে কিংবা অবরুদ্ধ ইতিহাসের দাসত্ব মুক্তিতে রেনেশাকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে চলা। এই এগিয়ে দেওয়াটাকেই, স্তালিন এই বলে উল্লেখ করেছেন - বুর্জোয়ারা যে গনতন্ত্রের পতাকাকে ভূলুন্ঠিত করেছে, সেখান থেকে তাকে উঠিয়ে নেওয়া এবং মুক্তির  পথে এগিয়ে দেওয়াঃ
এখানের জাতীয়তার আন্তর্জাতীক মুক্তির পথকে  পরিমিতির এক এক ধাপে, সাধারন জ্ঞানের পূনঃর্গঠন, বিস্তার, গন-অংশগ্রহনের প্রতিটি
ধাপকে সুত্রবদ্ধ করে এগুতে হয়। কোথায়ো ভুল-চুক, উল্লম্ফন ইত্যাদি ঘটলেই
-----  জাতীয়তাকে অতি- উঘ্রতায় ঠেলে নিয়ে যেতে, তাকে ক্রমান্বয়ে আঞ্চলিকতার সংকীর্নধারায় নিক্ষেপ করে, ইতিহাসের স্তব্ধতা এবং দাসত্বকে চিরন্তন করতে গিয়ে,  আন্তর্জাতীকতার উপর আক্রমন শুরু করবে। সেটা শুরু করা হবে, আন্তর্জাতীকতার রক্ষক হিসেবে শ্রমিক শ্রেনীকে নিশ্চল করে দিয়ে। (ক্রমশ)




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours