নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেট, অস্ট্রেলিয়া:
একজন মা যখন গভর্বতী হয় তখন থেকেই তিল তিল করে সন্তানের সাথে কথা বলতে থাকে , পেটে হাত বুলিয়ে আদর করতে থাকে , 
কল্পনায় আঁকতে থাকে সন্তানের মুখ । তারপর খুব আগ্রহ হয় জানতে আচ্ছা ও কি ছেলে না ও মেয়ে , আধুনিক যুগের আলট্রাসাউন্ড করে অনেকেই জেনে নেয় , আবার অনেকেই ভাবে থাক না একবারেই ভূমিষ্ট হলেই জানবো । তবে অনেক অনেক দিন আগে গর্ভবতীর পেটের কালো দাগ , নাভির আকৃতি দেখে দাইমা’ রা বলে দিতে পারতেন কি হবে ছেলে বাবু না মেয়ে বাবু । এটা বিশেষ অভিজ্ঞতার আলোকে তারা বলে দিতে পারতেন । এই বিশেষ লক্ষণ গুলো দেখেই তখনকার দিনের মায়েরা অনুমান করে নিতেন , আসলে পেটে ছেলে না মেয়ে - যেমন বিশেষ লক্ষণ গুলো এমন -সন্তান পেটে এলে মায়ের পেটে কালো দাগ লিনিয়া নিগ্রা বা কালো দাগ, যেটা মায়ের তলপেটের নিচের দিক থেকে নাভি অবধি যদি সেই দাগটি গর্ভাবস্থার শেষের দিকে মিলিয়ে যায়, আশা করতে পারেন যে ছেলে সন্তান হতে চলেছে। অন্য মতে - দাগটি যদি তলপেটের নিচের দিক থেকে শুরু করে পাঁজর অবধি আসে, তাহলে আপনার গর্ভে ছেলে সন্তান আশা করতে পারেন। পেটের জন্য পেণ্ডুলাম কৌশল জানতে চান তো, পেটে আপনার ছেলে কি না? তাহলে আপনার বিয়ের আংটিটা নিয়ে আসুন। এতে আপনার একটা চুল জড়ান। শুয়ে পড়ে আংটিটা পেটের ওপর দোলান।
যদি সেটা গোল গোল হয়ে ঘুরতে থাকে, এটা লক্ষণ আপনার ছেলে হতে চলেছে। যদি সেটা পেণ্ডুলামের মত দোলে, তাহলে বুঝবেন যে পেটে কন্যা সন্তান। পেটের ভেতরের নড়াচড়া এটা অনেকেই মানেন যদি আপনার পেটে ছেলে সন্তান থাকে তাহলে নড়াচড়া কম করে। কিন্তু মেয়ে হলে, সে পেটের মধ্যে অনেক বেশি ঘোরে, যার ফলে আপনার পেটটা কখন বেশ সুন্দর কখনও বা অদ্ভূত দেখতে লাগে।
যদি সেটা বাস্কেটবলের মত দেখায়, সেটা লক্ষণ ছেলে সন্তানের। আমার আম্মা আমাকে গল্প করতেন , কি করে উনি জেনেছিলেন আমি তার পেটে বড় হচ্ছি , তাই হয়তো সে আমাকে জন্মের আগেই মা মা বলে ডাকতে শুরু করেছিলেন। 
যখন আমি গর্ভে সন্তান ধারণ করলাম , তখন তো আমি অলট্রাসাউন্ড করেই জেনেছি কে আসছে আমার আঙুল ধরে হেঁটে বেড়াবার জন্য। আমার স্বপ্ন আর আমি পার করছি সময় 
তখন আমি মা হয়েছি।
তখন আমি সন্তান আর লেখাকে একসাথে যত্ন করে আদর করে শব্দে কাউকে ঘুম পাড়াচ্ছি , আর কাউকে শব্দে বাঁধছি। 
মা! এই একটি মাত্র অক্ষরের বিশালতা এবং গভীরতা এত বেশি যে, পৃথিবীর শত শত শব্দ একত্রিত করেও এর বিশালতার ধারে কাছে আনা যাবে না । তাই 'মা' শুধু একটি অক্ষরই নয়, 'মা' মানে অনেক অনেক অ-নেক কিছু । যা বলে শেষ করা যায় না...।
মাতৃত্ব বোধহয় সব মেয়ের জীবনেই অন্যতম সুন্দর অধ্যায়। বাড়িতে ছোট একজন সদস্য আসছে, এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন মহিলা আস্তে আস্তে মা হয়ে ওঠেন। শিশুকে নিয়েই তখন তাঁর চাওয়া-পাওয়া। যে এখনও আসেনি, তাকে ভাল রাখার জন্য ওয়ার্কাহলিকরাও নিয়ম মেনে খাওয়াদাওয়া করেন, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমোন, স্ট্রেস থেকে নিজেকে দূরে রাখেন। আর ন'মাস পর যখন তার আবির্ভাব হয়, তখন সদ্য মা হওয়া মেয়েটির যেন নব জন্ম হয়। বাচ্চার খাওয়া, ঘুম, তার ভাল থাকাটাই প্রধান হয়ে দাঁড়ায়। নিজের ইচ্ছে, চাহিদা,আকাঙ্ক্ষাগুলো কেমন করে যেন ব্যাকফুটে চলে যায়। তাই বুঝি কবি বলেছেন -কাজী নজরুল ইসলাম
“যেখানেতে দেখি যাহা
মা-এর মতন আহা
একটি কথায় এত সুধা মেশা নাই,
মায়ের মতন এত
আদর সোহাগ সে তো
আর কোনখানে কেহ পাইবে ভাই!
হেরিলে মায়ের মুখ
দূরে যায় সব দুখ। “
এই ছবিটি একজন সদ্য মা হওয়া নাজ এর , মাত্র রায়ার বয়স ছিল ১মাস ৫ দিন , তখনো দীর্ঘ নয় মাস বেলুনের মতো পেট ফুলে যাবার অনুভূতি বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছিলো , কারন অকারণে পেটে হাত বুলিয়ে দেখতো বাবুটা নড়াচড়া করছে তো ! সেবার বই মেলাটা ছিল আমার কাছে বিশেষ একটা মেলা , বই বের হয়েছে , রায়া পৃথিবীতে এসেছে , আমি মা হয়েছি , মা হওয়ার সমস্ত চিহ্ন আমি বয়ে বেডা়চ্ছি মহাতৃপ্তিতে ।  ঠোঁট ফোলা ,মুখে দাগ , চোখ ফোলা , প্রকৃতির অদ্ভুত এক ব্যপার , যখন বাবুটার তেষ্টা পেতো , আমার স্তনভাড়ের একটা টান টান ভাব , অনুভব করতাম । ছুটে সন্তানের কাছে ছুটে যেতাম । শরীর কি করে শরীরের ইশারা বোঝে , নারী শরীর সাধারণ নয় , নারী শরীর যে প্রকৃতি তখন জেনেছিলাম মরমে। তাই নিজের পেটের স্ক্রেচ মার্ক গুলো 
দেখি আর গর্বে হাত বুলিযে বলি আমি মা হয়েছি। 
এই ছবিটা খুব পছন্দের ..... একজন মায়ের ছবি।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours