জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

আজকাল সংবাদ মাধ্যম, বিজেপির নীতিকে উঘ্র জাতীয়তাবাদ হিসেবে চিহ্নিত করছেন।একদিকে হয়তা ঠিক, হিটলার বা ফ্যাসিস্তদের  উঘ্রজাতীয়তাবাদের তকমা দেওয়া হোত। সেখানে রক্তের বিশুদ্ধতার বিষয়টিকে জার্মান জাতীর অর্থনৈতিক বিকাশের প্রশ্নের সাথে যুক্ত করা হয়েছিলো।
-----  এখানে তথাকথিত উঘ্রজাতীয়তার অভিমুখ ফ্যাসিবাদী হলেও,  এর প্রকাশ কিন্তু  হিন্দুত্বের নামে। সেখানে জাতীয়তার নামগন্ধ নেই। ইতিহাসের দিক থেকে থাকার কথাও নয়।
 জার্মানীতে যা ছিল,  অর্থনীতির স্বয়ংসম্পূর্নতার বিষয় তো নেই-ই, বরং ভারতীয় শিল্পের বিসর্য্যনের কর্মসূচীকেই ক্রমে বিদেশের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।সেটাই এবং আমেরিকার যুদ্ধনীতির সাথে ভারতকে বন্দী করে ফেলাটাই এখানে নীতি।
অন্যপ্রান্তে হিন্দুত্বের বিষয় সম্পর্কে যা বলা হচ্ছে, তা মূলতঃ প্রাক- ঐতিহাসিক যুগে ফিরে যাওয়ার কথা বলা হচ্ছে। সে কালে  রামচন্দ্র কিংবা অন্য অনেক চন্দ্রের রাজত্ব হয়তো ছিল, কিন্তু সে সব রাজত্বকে ঘিরে কোন জাতীয়
সত্বা গড়ে ওঠার প্রশ্ন  ছিল না ।আধুনিক জাতীয়তার উন্মেসের সুচনা, সামন্ততন্ত্রের পর, রেনেশাঁর কাল ধরে। সেখানে শ্রীরাম কিঙ্ঘা পৃত্থিরাজকে ঘিরে, ভারতে এমন কি ছত্রপতি শিবাজীকে ঘিরে কোন জাতীয়তবাদের উন্মেসের কোন বিষয়ই ছিল না ।
-----  ইউরোপে জাতীয়তাবাদের সুচনা পুঁজির শক্তিবৃ্দ্ধির সাথে সাথে। প্রায় চৌদ্দ শ' শতকের সময় কাল থেকে। এর আগে গায়ের জোরে রাজারা যেভাবে জমি দখল করেছে, সে রকমভাবেই মানুষ সেই রাজাকে মেনে নিয়েছে। তেমনটিই হওয়ার কথা। কারনঃ সেকালে কোন নিদৃষ্ট ভূখন্ডে, শিল্প স্থাপন এবং সেই শিল্পকে ঘিরে কোন সামাজিক সম্পর্ক নির্মানের প্রয়োজন দেখা দেওয়ার কারন ছিল না। কাজেই জাতীয়তাকে সামনে রেখে  কোন কিছু করা কিংবা না- করার নিয়ম তো নয়েই, এমন কী ভাবগত চিন্তারো যায়গা নির্মান হওয়ার কথাও নয়।
তেমনটি যদি হোত,  ১৭৫৭ তে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী পা' রাখতেই পারতো না।  যদি তখন জাতীয়তার  কিঞ্চিত উন্মেষের সুযোগ থাকতো, পরাধীনতার সুযোগই হোত না।
----   এদেশে জাতীয়তার সুচনা, বৃটিশদের ধ্বংসাত্মক ভূমিকার সাথে সাথে ইউরোপে জাতীয়তার উন্মেসের সুত্র ধরেই।সেটা দানা বেধেছে, হিন্দুবাদী সামন্তিক পথেই মূলতঃ বংকিমের হাত ধরে। সেখানেও  বৃটিশ বিরোধীতার সুযোগ কমছিল। মানুষকে এক করার প্রশ্নে বংকীম চন্দ্র তৎকালিন গেরুয়া ভূষন-ব্যষন এবং মুসলিম বিরোধীতাকেই সহজ পথ হিসেবে মনে হয়েছিলো । মন্ত্র-তন্ত্র বিলাসি দেশে , ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিদ্রোহে ফাটতে শুরু করেছে, কৃ্ষকদের কথাও মনে ধরার কারন ছিল না। এই সুত্রেই 'বন্দেমাতারম' সঙ্গীতের জন্ম।
প্রকৃ্ত অর্থে জাতীয়তার উন্মেষ শুরু হয়েছে, শিপাহি বিদ্রোহের সময়কাল থেকে। সেটা স্থায়ীত্ব পেয়েছে, এক চিলতে রেনেশাঁ যেমনভাবে ইউরোপীয় ভাবনা এবং শিল্পগত দিক থেকে ভারতে রেল আসলো। খুব লকপকে হলেও ভারতীয় পুৃজির সাথে সাথে, শিল্প শ্রমিকদেরো আবির্ভাব হোল।
------- বিজেপির হিন্দুত্বে জাতীয়তা-টাতিয়তার কোন সুযোগই ছিল না, উঘ্র-জাতীয়তার কোন সম্ভাবনাই ছিল না।
সেই অর্থে আর এস এস এর তথাকথিত 'উঘ্র-জাতীয়তাবাদ"
---- জাতীয়তা পূর্ব  আদি-ভৌতিকবাদ, উঘ্র হিংস্রতা, বর্ণাশ্রম,  নারী-পরাধীনতা,  ধর্মান্ধতা ইত্যাদি দাসত্ব চেতনার সমাহার,
---  অন্যপ্রান্তে  আধুনিক দাসত্বের অংশ হিসেবে
---- অর্থনীতি স্বয়ংসম্পূর্নতার আত্মসমর্পন এবং
 আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্র নির্ভর 'যুদ্ধনীতি।
------লক্ষনীয় ভারতে কোন দিন 'যুদ্ধ' মিনিষ্ট্রি ছিল না,আভ্যন্তরীন নীতির আলোতেও সামরিক দপ্তরকে প্রতিরক্ষা বলা হোত। বিজেপি সরকারে আসার পর থেকে ক্রমে প্রতিরক্ষাকে যদি 'যুদ্ধ বিভাগের' পর্য্যায়ে তুলে আনা হয়ে থাকে  তবে, সেটা ঘটছে, আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রের সাথে একাত্মতার সুত্র ধরেই।,

সব মিলিয়ে,
যে চরিত্রগুলি তুলে ধরা হোল, সেগুলির সমাহারে, উদিয়মান ভারতীয় 'ফ্যাসিতন্ত্রের' চেহারা স্বাভাবিক ভাবেই, শিল্পপুজি নিয়ন্ত্রিত জার্মান ফ্যাসিবাদের তুলনায় অনেকগুন ধ্বংসাত্মক এবং হিংস্র হতে বাধ্য।

যারাই ভালো করে নিরিক্ষন করবেন, দেখা যাবে এদের আক্রমনের লক্ষ কেবল সাম্য নয়,
----- মুলতঃ রেনেঁশার পুরুষ,  আধুনিক শিক্ষা এবং ইতিহাসের ধারাবাহিক সত্বা। সমাজ বিজ্ঞানী রা তাই, শিক্ষা, চিকিৎসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে যেঁ সব লোম হর্ষক কথাবার্তা এদের নেতারা চালান দিচ্ছে,
----  সেগুলির সাথে মিলিয়েই রবীন্দ্র বিতারনে, বংকীম কালকে, 'জনগনমন' বাতিল করে  'বন্দেমাতারম' নিয়ে আসার কথাবার্তাকে মিলিয়ে, বিজেপি দলটার ভবিষ্যতের মতিগতির একটা রুপরেখা টানবেন।
সেজন্যেই  যারা ভারতীয় তথা
এই উপ মহাদেশে ফ্যাসিবাদ বিরোদী
সংগ্রামে নামবেন -তাদেরকে নিশ্চিত ভাবে ভাবগত দিকে এক অখন্ড নিরন্তরতায় সমৃদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করতে হবে।সেখান ভাবের অখন্ডতার কারনেই
----- বিজ্ঞান ও ইতিহাসের একাত্মতায় যুক্তিবাদ এবং সাহিত্যের সেকাল এবং একালের একটা মিলন সেতু নির্মানের চেষ্টা চালিয়েই যেতে হবে।

এই সুত্রেই বঙ্কিম এবং রবীন্দ্রযুগের কালগত দুরত্বের সাথে সাহিত্যের রুপান্ত্রেরের মধ্যেই ইতিহাসের কালগত চালচিত্র চিহ্নিত করা প্রয়োজন হবে। মানতে হবে বাংলার জাতীয়তাবাদের প্রাথমিক উন্মেষকালকেই বঙ্কিম চন্দ্র প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
----- ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের উত্তরকালের প্রতিনিধী হিসেবে বাংলা সাহিত্যের ভিত্তিটা পেয়েগিয়েছিলেন। এমনিতেও ইংরাজী সাহিত্য থেকেও অনেক রশদ পেয়ে যাওয়ার সুবিধা পেয়েছেন।
----- কিন্তু সিপাহি বিদ্রোহের পূর্বকালের প্রতিনিধি এবং ইংরাজ শাসন ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তার সমাজচেতনয়া বিকশিত হওয়া এবং ভারতীয় জাতীয়তা অতিনিম্ন স্থরে এবং সাধু-সন্ত-কাপালিকদের বাইরে ভারতীয় রাজনীতির অস্তিত্ব  তখনো প্রসারীত হতে না পারার কারনে, বঙ্কিম জাতীয়তা, স্বাধীনতা আন্দোলনে যথেষ্ট ফলদাসয়ী হলেও,
-----  প্রজাতন্ত্রের সর্বত্রগামী হওয়ার  সুযোগ পায় নাই । সেখানে ভারতীয় জাতীয়তাবাদি আন্দোলনের বিকাশকাল  প্রথম যুদ্ধোত্তোর কালা এর পরবর্তি 'রেনেঁশা' আলো এবং সর্বশেষ অক্টোবর বিপ্লবের আলোতে
----   রবীন্দ্রনাথ সেকালে, ছিলেন, তৎকালীন পরিস্থিতিতে ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পূর্ণশশী। এই সুত্রে বলে রাখা দরকার। অক্টোবর বিপ্লব বিশ্ব ইতিহাসে প্রথম ,মহামানবিক বিপ্লব নামে ক্ষ্যাত ।
এই সুত্রেই ভারতের আধুনিক সাহিত্যে তিন যুগ পুরুষ - ঈশ্বর চন্দ্র, বঙ্কিম চন্দ্র এবং রবীন্দ্রনাথের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব বা বিরোধের কারন দেখি নে। আবার এটাও বোঝা প্রয়োজন, এদের একে অন্যের হাত ধরে উটলেও , প্রত্যেকের মধ্যে----- জাতীয়তার কালগত রুপান্তরের ছাপ রয়েছে। অনেকটা পূর্নিমার চাঁদ যেমন , তিলে তিলে গড়ে ওঠে।
----  এই সুত্রেই 'বন্দেমাতারম'  এর বিষয়টা সামনে আসবে। রবীন্দ্রনাথ যখন কংগ্রেস অধিবেশনে, সম্ভবত প্রথম অধিবেশন, 'বন্দেমাতারম' গাইলেন তখন জাতীয় কংগ্রেস
---     ভারতে  আধুনিক জাতীয়তাবাদের একেবারে প্রাথমিক কালের প্রতিনিধীত্ব করছেন। পরবর্তীকালে, তিনি যখন বন্দেমাতারমকে জাতীয় সংগীতের মর্য্যাদা দিতে আপত্তি করলেন তখন, সেই জাতীয়তাবাদ অনেক বিকশিত। এই আপত্তিটাই যদি তার শেষ গ্রন্থ, 'ঘরে-বাইরে'তে' বিদ্রোহের
চেহারা নিয়ে থাকে
------ তবে মানতে হবে, আধুনিক জাতীয়তাবাদ, ইতিমধ্যেই বঙ্কিম কালের
আংগন ভেংগে বেড়িয়ে এসেছে।
সেখানে  কংগ্রেস দল যদি 'জনগনমন' থাকা সত্যেও, 'বন্দেমাতারম'কে সামনে এনে 'সাম্যকে' আটকানোর চেষ্টা করে থাকে, এই চরম সুবিধাবাদের  সুযোগকে  এখন আর এস এস ভারতে ফ্যাসিবাদ নিয়ে আসার কাজে লাগাচ্ছে।মিডিয়ার দৌলতে এই 'ফ্যাসিবাদ' একটা সুন্দর নামও পেয়ে গেছে - 'ঊঘ্র জতীয়তাবাদ" (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours