অর্পিতা দে, সাংবাদিক, কলকাতা: 

স্কুলে প্রতিটা ব্যাচেই পেছন পাকা গোছের কিছু ছেলে পিলে থাকেনা ? যারা ক্লাসে দুষ্টমির জন্য পরিচিত মুখ কোনো রকম দুষ্টুমি হলে তারা করুক কিংবা না করুক সরাসরি দোষ তাদের ঘাড়ে চাপানো হত।
মানে ওই এক কথায় যাদের দুষ্টুমি,পাশ করে যাওয়ার পর ও দিদিমণিরা বেশ কিছু বছর মনে রাখে , রাস্তা ঘাটে দেখলে চিনতে টিনতে পারে!! বরাবর আমি ওই ওমন গোছের একজন ছাত্রী , স্কুল জীবন চলছিল বেশ এভাবেই। ফেসবুকে অ্যাকাউন্ট খুলি ওই ক্লাস ১০ এর দিকে, বাড়ির লোকের কথা অনুযায়ী যে সময় ডানা গজায় আরকি! তবে তার আগে অরকুটে একটা প্রোফাইল ছিল যদিও সেটা সেভাবে ব্যাবহার করা হয়ে উঠত না। এর পর ফোন পেলাম এবং টুকটাক ফেসবুক করা শুরু হল, তবে সমস্যা একটা ছিল, ফোন থেকে ফেসবুক করলে অনলাইন দেখাত না,এবং একটা ম্যাসেজ পড়ে তার রিপ্লাই দেওয়া কমপক্ষে মিনিট খানিকের ব্যাপার।বলাবাহুল্য তখন সবার অ্যাকাউন্ট ছিল না যাদের বা ছিল তারা খুব বিশেষ অ্যাক্টিভ থাকত না নিজের ছবিও দিত না ,আজকের মতো ডেইলি লাইফের আপডেট তো দূরের কথা, তবে আমার প্রোফাইল পিকচারে কোনোদিনই আমি তাদের মত ফুল গাছ লতাপাতা শালপাতা কলাপাতা মানে ওই ওসব পাতা ফাতার তোয়াক্কা না করেই নিজের ছবি আপলোড করেছিলাম !! এক দিন স্কুলে গিয়ে শুনি আমার ছবি নাকি কেউ একজন ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়েছে আমি তো অবাক যদিও পরে বুঝলাম ওটা ওই ফেসবুক ডিপি র কথাই বলা হচ্ছিল !! যাগ গে ফেসবুক থাকলেও কি হবে তখন hutch সবে ভোডাফোন হয়েছে ১১ টাকার ১১০ টা ম্যাসেজের রমরমা বাজার !! কখনও কোনো টেলিকম সংস্থা বেশি ম্যাসেজের অফার দিলেই টুক করে চেন্জ করে নিচ্ছি নম্বর বেশ কাটছে জীবন,মাঝে মাঝে একটু আধটু ফেসবুক করছি! এর পর মাধ্যমিক পাশ করলাম বন্ধু গুলো দলছুট হল কিছু দিন ম্যাসেজ চালাচালি হলেও শেষ মেষ ব্যাপারটায় তার কাটত !!
নতুন উপায় হল বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখার চটপট ফেসবুকে অ্যাড করে নেওয়া !! কিন্তু সমস্যা হল কারোর তো নিজের ছবি নেই কেউ বলছে আমার নামটা সার্চ করে দেখবি যেটাতে একটা লাল জামা বার্বি ডলের ছবি ওটাই আমি, তো আবার কেউ বলছে একটা লাল গোলাপের ছবি আছে ওটাই আমি। আমি পড়লাম মহা ফ্যাসাদে লাল জামা বার্বি ডলের ছবিও খান ত্রিশেক আর গোলাপ ও নিদেন পক্ষে দশ বারোটা , জিগ্যেস করে জানা গেল ফেসবুকে ছবি দেওয়া মানা !! তাতে বেশ খারাপ কিছু হতে পারে।  ভালো কথা আমিও খুঁজে না পেয়ে বন্ধুত্ব প্রীতি কাটিয়ে পড়াশুনায় মন দিলাম বেশ কিছু বছর কাটল দেখলাম একে একে তারা সব ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে কিন্তু কারোর ডিপিতে আর লাল গোলাপ কিংবা বার্বি ডল নেই । বেশ ভালো লাগলো যে মার্ক জ্যুকার বার্গ মানে ফেসবুকের আবিষ্কর্তা এক কথায় জ্যুকু দাদা তাহলে সবার ভয় টয় কাটিয়ে দিতে পেরেছে এতদিনে !! না আমি তাদের এ বিষয়ে কিছু জ্যিগ্যেস করিনি যে তাদের ভয় কিভাবে কাটল , তবে হ্যাঁ জ্যুকু দাদার মায়ায় আজ তাদের শুধু মুখ গুলো নয় বর, বাচ্চা, কাকিমা, জেঠিমা, মামিমা, নিজের মা, শাশুড়ি মা থেকে ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, কাঁচা লঙ্কা, ফ্যায়েড রাইসের হাড়ি এবং চিলি চিকেনের কড়া সব দেখতে পাই!! এভাবেই সময় পাল্টানোর সাথে সাথে বন্ধুত্বগুলোর ধরন বদলালো , রোজের গোপন আড্ডা গুলো হারিয়ে গেল চ্যাট বক্সের ভীড়ে, দেখা সাক্ষাত গুলো জায়গা নিল ফেসবুক ওয়ালের স্টাটাস আর ফটো ট্যাগে ,ভালো লাগা গুলো বন্দী হল লাইক আর কমেন্টে, আর স্কুল ফিরতি প্রেম ভালোবাসও বৈধ হল রিলেশনশিপ স্টেটাস আর কাপল_গোল হ্যাশট্যাগে। স্কুলের পরে বাড়ি ফিরে ১০০ টা ম্যাসেজ কম পরত অফুরন্ত গল্পের কাছে, সে সব কেমন যেন বদলে গেল ম্যাসেন্জারের টুং শব্দে কিংবা একটা অ্যাড ফ্রেন্ড বা ব্লক বাটন ক্লিকে, আজ আর স্কুল শেষে কলেজে বা নতুন স্কুলে যাওয়া মানেই প্রিয় বন্ধুকে হারিয়ে ফেলা বা বাড়ি বদল মানে তাকে আর ল্যান্ড লাইনে না পাওয়ার ভয়টা নেই ।ছোটবেলার মত না হলেও জুকু দাদার দৌলতে বেঁচে থাকল বেশ কিছুটা বন্ধুত্ব ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে ।
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours