সাজিয়া আক্তার, ফিচার রাইটার, বাংলাদেশ:

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আম বাগানে ‘স্থায়ী নীড়’ হচ্ছে ‘বাড়ি ছাড়ার নোটিশ’ পাওয়া শামুকখোল পাখিগুলোর।আর তাদের হয়ে ‘বাসা ভাড়া’ দেবে সরকার।তাই যতদিন ইচ্ছে নিরাপদ নীড়ে থাকতে পারবে পাখিগুলো।কেউ তাদের তাড়িয়ে দিতে পারবে না।এরই মধ্যে তাদের বাসা ভাড়ার টাকা নির্ধারণ করেছে রাজশাহী জেলা প্রশাসন।সেই আবেদন পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়েও।অনুমোদন পেলে পাখিগুলোর ভাসা ভাড়া হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত আমবাগান ইজারাদার বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা করে পাবেন।শর্ত একটাই- বাসা ভাঙা যাবে না।

এর মধ্য দিয়ে কয়েকশ বাচ্চা নিয়ে আপন নিবাস হারানোর শঙ্কায় থাকা শামুকখোল পাখিগুলো নির্ভার হতে চলেছে।তাদের কলকাকলিতে সব সময়ই মুখর হয়ে থাকবে বাঘার প্রত্যন্ত খোর্দ্দ বাউসা গ্রাম। শিগগিরই মন্ত্রণালয় থকে তাদের বাসা ভাড়ার টাকা ছাড় পাবে বলেও আশা করা হচ্ছে।

পাখিরা বাসা ভাড়ার টাকা পাচ্ছে জানিয়ে রাজশাহীর বাঘা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, ঘটনাটি নজরে আসার পর পরই পাখির বাসা রক্ষার উদ্যোগ নেয় রাজশাহী জেলা প্রশাসন।এরই মধ্যে হাইকোর্ট থেকেও নির্দেশনা আসে।তিনি বিষয়টি নিয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনিই সব নির্দেশনা দেন।

পরে রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নির্দেশে ওই আমবাগানে গিয়ে জরিপ চালান।উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন রেজার নেতৃত্বে তারা বাগানে গিয়ে দেখেন, মোট ৩৮টি আমগাছে বাসা বেঁধেছে শামুকখোল পাখিগুলো।সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলার পর তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করেন।

আমগাছে শামুকখোল পাখির বাসাজরিপ শেষে ওই আমগাছগুলো থেকে বছরের সম্ভাব্য আম উৎপাদন ও তার সম্ভাব্য দাম নিরূপণ করেন।তাদের হিসাব অনুযায়ী বছরে ৩ লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে বাগান মালিক বা ইজারাদারের। ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণের পর তারা রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কাছে প্রতিবেদন দেন। নিরীক্ষণের পর প্রস্তাবনাসহ সেই প্রতিবেদন কৃষি মন্ত্রণালয়ে পাঠান জেলা প্রশাসক।   

এর সত্যতা নিশ্চিত করে রাজশাহী জেলা প্রশাসক মো. হামিদুল হক বলেন, গত ৫ নভেম্বর পাখিদের জন্য বাসা ভাড়া চেয়ে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।এই টাকা আম বাগানের মালিক বা ইজারাদারকে দেওয়া হবে।এতে আর কেউ পাখিগুলোকে বাসা থেকে তাড়াতে পারবেন না। যতদিন ইচ্ছা পাখিরা সেই বাসায় থাকবে।পাখিদের জন্য প্রতি বছর এই ব্যয় বহন করবে সরকার।

গত চারবছর থেকে রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে রয়েছে। তারা বর্ষা শেষে এই বাগানে গিয়ে বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে বাচ্চারা উড়তে শিখলে তাদের নিয়ে চলে যায়।এবার পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে।তবে বাচ্চারা এখনও উড়তে শেখেনি। কিন্তু এবছর ইজারাদার আম উৎপাদনের জন্য বাগানের পরিচর্যা করতে চান।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours