দেবর্ষি মজুমদার, লেখক বীরভূম:

রাত পোহালেই আরেকটি শিশু দিবস। ১৪ নভেম্বর! পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরুর জন্ম দিন! এই দিন মঞ্চ কাঁপানোর দিন। অনুপ্রেরণা মূলক বক্তৃতায় যখন সব কিছু থরহরিকম্প। তখন কোন এক অজপাড়া গাঁয়ে অবোধ কিশোরের কাহিনী কে শোনে!

আজকে যে শিশুদের কথা বলবো, তারা বোতলের রঙ দেখে মুহূর্তের মধ্যে বলে দিতে পারে কোনটা টারবো, কোনটা কিংফিশার! কেউ, তৃতীয় আবার কেউ চতুর্থ শ্রেণীর পড়ুয়া!   তারাই তো আজকের দিনে অপু। এই গ্রামের অপুদের কাছে ছুটির দিন মানে দু'পয়সা আয়। ওরা হিসেব রাখে কোন দিন স্কুল ছুটি। সেদিন তারা করমচার মত গাছের তলায় বৃষ্টি ধরা দেখে না। বলে না --"যা, বৃষ্টি ধরে যা, নেবুর পাতায় করমচা"। দুই নিষ্পাপ চোখে খোঁজে খালি মদের বোতল! আর মুখস্থ করে তার ব্র্যান্ড নাম!

যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে, তাই এখন তাদের হাতে বিয়ারের লাল সবুজ বোতল।  তারা শুধু এটুকু জানে ওই খালি বোতলের দাম পাঁচ টাকা।

নলহাটি থেকে নগরার মোড় হয়ে গোপাল নগর, মণিপুর হয়ে বিরোলচৌকি গ্রাম ঢোকার মুখে আজকের অপুদের দেখা পাওয়া যায়।

মঙ্গলবার গুরু নানকের জন্ম দিনে দেখা মিলল এক কিশোরের। তার আপত্তি থাকায় আসল নাম গোপন রেখেই বলি, দেবল বাগদি জানায়, স্কুল ছুটি থাকলে তারা গরু চড়াতে আসে। বিরলচৌকি গ্রাম ঢোকার মুখে  পড়ে থাকে প্রচুর মদের বোতল। বড়রা সুখের মৌতাত করতে হাজির হয় এই বট গাছের নিচে। দেবল জানায়, এই মদের  খালি বোতল তারা সংগ্রহ করে। এক একটা বোতল পাঁচ টাকা দাম। ভদ্রপুরে এক কাকুর কাছে বিক্রি করে। এদিন দেবল একাই এসেছে। আঙুল দেখিয়ে দুকিমি দূরে অনির্দিষ্ট এক দোকান কাকুর দিকে আঙুল দেখিয়ে সে বলে, ওখানেই এই বোতল বিক্রি করে সে। তবে, বাড়িতে জানে না। আজ তার সংগ্রহে "কিংফিশার" ও "টারবো" বোতল। স্কুলে পড়িস? - জিজ্ঞেস করতেই, কেমন ভয়ের ছাপ ফুটে উঠল তার চোখে মুখে! -- ভয়ে ভয়ে বলল বিরলচৌকি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ি। নামও বলল। তার পর বললো-- তোমরা কাগজের লোক? আমার নাম লিখ না প্লিজ! বললাম ঠিক আছে। আগে বল, তোরা প্রতিদিন আসিস? - সে জানালো- স্কুল থাকে তো। অন্যদিন, মা আসে। বুধবার বাদ দিয়ে, বৃহস্পতিবার কি একটা আছে। ওই দিন স্কুল ছুটি আছে বলছিল, মাস্টার! ওই দিন আবার আসব। --- ক'টাকা হয়? -- ওই তো বললাম, বোতল পিছু ৫ টাকা।    পঞ্চাশ টাকার বেশি হয়। ওই তো ক্যানেলের ধারে পড়ে থাকে। আমরা অনেকে থাকি। বিকেলে ডিমের চপ খাই!

শিশু দিবস কি গায়ে মাখে, না মাথায় দেয়, এদের কাছে জানা নেই। এরা জানে, ওই দিন স্কুল না গেলেও চলে। তার মানেই, কিছু লাল, সবুজ বোতল!  আজ এই বোতল, তাদের কাছে ডিমের চপ! হয়তো কোন দিন, মদের চাট হবে এই ডিমের চপ!  এই শিশু দিবসে এমন উপহার আমরা তাদের জন্য ফেলে রাখছি কিনা? কে বলতে পারে? গুটখা বন্ধ হতে পারে! কিন্তু মদ নৈব চ!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours