ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য ফিচার রাইটার দুর্গাপুরঃ
( আজ থেকে আবার এই ধারাবাহিক লেখাটি শুরু হচ্ছে ...)
বহু চেষ্টা করেও নন্দ চাটুজ্যেরা একবগ্গা রূপেন্দ্রকে জব্দ করতে পারলেন না! ষোল আনার ডাকে চন্ডী মন্ডপের সালিশীতে রূপেন্দ্র যে এমন কিস্তি মাৎ করা চাল দেবে, ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি গাঁয়ের মতব্বরা!
গ্রামের সকলেই জানতো রূপেন্দ্র ঘোর নাস্তিক,একগুঁয়ে, সমাজের প্রথাগত নীতির বিরূদ্ধবাদী! কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্য এবং কবিরাজ হিসাবে সোঁয়াই সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামাগুলিতে তিনি ধন্বন্তরী! এটা অস্বীকার করার ক্ষমতা নন্দ চ্যাটুজ্যেরও নেই!
পঞ্চায়েতের ষোলআনার ডাকে হাজির হয়ে মাথা উঁচু করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রূপেন্দ্র ঘোষনা করেছিলেন," সোঁয়াই গ্রামের পঞ্চায়েত যদি তাঁর স্বপ্নের 'ব্রজ সুন্দরী মহিলা বিদ্যালয় ' বন্ধের নিদান দেন তিনি সোঁয়াই গ্রাম ত্যাগ করে তাঁর গুরুদেব জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের নিকট ত্রিবেনী চলে যাবেন এবং ব্রজ সুন্দরী মহিলা বিদ্যালয় স্হাপন করবেন!
গ্রামের গরীব গুর্বো অশিক্ষিত মানুষগুলো অতশত বোঝেনা , তারা পঞ্চায়েতের বিধানের বিরোধিতা করেছিল কারন, সোঁয়াই গ্রামের মেয়েরা লেখাপড়া শিখল কি শিখল না তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই! কিন্তু তারা এটা ভালভাবে বুঝেছে, ওলাওঠা, মা মনসা, মা শিতলা মাথায় থাকুক , দেব দেবীর কৃপায় রোগ নিরাময় হয় না, চিকিৎসা ছাড়া ! তাই গ্রামের মানুষের জন্যই ধন্বন্তরী বাবা ঠাকুরকে গ্রামে প্রয়োজন!তারা কোন অবস্হাতেই কোবরেজ বাবা ঠাকুরকে গ্রামা ছাড়া হতে দেবেন না!
পঞ্চায়েতের বিচার সভা ডেকেও নন্দ চাটুজ্যেরা শেষরক্ষা করতে পারলেন না!বিজয় গৌরবের শিরোপা জুটল রূপেন্দ্রর! কিন্তু কুচক্রী নন্দ চাটুজ্যেদের চক্রান্ত থামল না! ব্রজসুন্দরী মহিলা বিদ্যালয়ের বাহ্ আটটি ছাত্রীর সংখ্যা কমতে লাগল!
মোট চার পর্বে পড়ানো হতো! সকালে ঘুম থেকে উঠে রূপেন্দ্র ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন গ্রামে রোগী দেখে ফিরে এসে প্রথম পর্বের শিক্ষাদান শুরু হতো,এই পর্বে তিন জন শিক্ষার্থী, পিতাম্বর মুখার্জীর দিদি ষাট বছর অতিক্রান্ত গিরিবালা! তাঁর শেষ ইচ্ছা, কৃত্তিবাসী রামায়ন নিজে পড়া! অক্ষর পরিচয় করার জন্যই তাঁর পাঠশালায় আগমন!ভাই বিরোধিতা করায় ঘর ছেড়ে রূপেন্দ্রর সংসারে ঠাঁই নিয়ে বাংলা পড়তে শিখছেন! দ্বিতীয় ছাত্রী তারাসুন্দরী, জমিদার তারা প্রসন্নের সহ ধর্মিনী, তাঁর পিতৃদত্ত একটি নাম থাকলেও জমিদার পরিবারের রেওয়াজ অনুযায়ী স্বামীর নামের সাথে সংগতিপুর্ন নতুন নামকরন, জমিদারের নাম তারাপ্রসন্ন তাই তাঁর নাম রাখা হয় তারা সুন্দরী,তিনি রূপেন্দ্রর বয়জ্যেষ্ঠা! তৃতীয় ছাত্রী পুটুরানী, তিনিও বিধবা হবার পর১ বাপের বাড়ী ফিরে এসেছে! এঁরা শিখতেন বাংলা ভাষা! তখন বাংলা অক্ষর পরিচয়ের কোন বই ছিল না!থাকার কথাও নয়, বাংলা ছাপার জন্য প্রথম হরফ নির্মানকারী পঞ্চানন কর্মকারের তখন জন্মই হয়নি! কিন্তু এজন্য বাংলা শেখা বন্ধ হয়নি! তখন হাতে লেখা পুঁথি ছিল, তাই বাংলা অক্ষরও ছিল!কৃত্তিবাসী রামায়ন বাংলা ভাষাতেই২ লেখা হয়েছিল! রূপেন্দ্র সেই অক্ষর পরিচয় করাতে সচেষ্ট হলেন!অক্ষর পরিচয়ের সাথে সাথে রূপেন্দ্র তাঁদের শোনাতেন উপনিষদের তত্ব , পুরান ও রামায়ন মহাভারতের কাহিনী! শোনাতেন সতী - সাবিত্রী,সীতা, দময়ন্তীর পাশাপাশি গার্গী, না, মৈত্রী, মদালসা, বিশ্ববারার কথা !হিন্দু, বৌদ্ধ জৈন মুসলিম, ধর্মের মূলকথা!
দ্বিতীয় পর্বে দুজন ছাত্রী ঘনশ্যাম সার্বভৌমের বিধবা মালতী ও দুর্গা গাঙ্গিলীর অনূঢ়া কন্যা শোভারানী ! কুলীন ব্রাক্ষ্মন পরিবারে জন্মেও তিরিশ বছর বয়েস পার করে তার সিঁথিতে লাগাতে পারে নি! সে প্রতিদিন পাঠাশালায় আসে! পড়া শোনায় খুব একটা মন না থাকলেও রূপেন্দ্রর কথা তন্ময় হয়ে শোনে!
তৃতীয় পাঠের আসরে এক ছাত্র ও দুই ছাত্রী! শুভা প্রসন্ন, রূপমঞ্জরী ও পুঁটিরানীর চার বছরের কন্যা! শুভা প্রসন্ন রূপমঞ্জরীর থেকে চার - পাঁচ বছরের বড়, সে বাংলার সাথে সংস্কৃত শেখে!
পড়ন্ত বেলায় চতুর্থ পাঠের আসরে একজন ছাত্রী মৌলবী সাহেবের বোন স্বামী পরিত্যক্তা মেহেরজান! ভাইয়ের সাথে সে আসে! মৌলবীসাহের মাতৃভাষা বাংলা তাই বুঝতে পারলেও অক্ষর জ্ঞান নেই! তিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের হুকুমে রামায়নের একটি 'কান্ড ' ফার্সিতে অনুবাদ ও কোরানসরিফ বাংলায় অনুবাদ করার জন্য বোনকে এখানে রূপেন্দ্রর নিকট বাংলা শেখাচ্ছেন!বোরখা পরে মেহের বসে পাঠশালা সংলগ্ন মাটির দাওয়ায়!
( আজ থেকে আবার এই ধারাবাহিক লেখাটি শুরু হচ্ছে ...)
বহু চেষ্টা করেও নন্দ চাটুজ্যেরা একবগ্গা রূপেন্দ্রকে জব্দ করতে পারলেন না! ষোল আনার ডাকে চন্ডী মন্ডপের সালিশীতে রূপেন্দ্র যে এমন কিস্তি মাৎ করা চাল দেবে, ঘুনাক্ষরেও বুঝতে পারেনি গাঁয়ের মতব্বরা!
গ্রামের সকলেই জানতো রূপেন্দ্র ঘোর নাস্তিক,একগুঁয়ে, সমাজের প্রথাগত নীতির বিরূদ্ধবাদী! কিন্তু চিকিৎসা শাস্ত্রে তাঁর পান্ডিত্য এবং কবিরাজ হিসাবে সোঁয়াই সহ পার্শ্ববর্তী গ্রামাগুলিতে তিনি ধন্বন্তরী! এটা অস্বীকার করার ক্ষমতা নন্দ চ্যাটুজ্যেরও নেই!
পঞ্চায়েতের ষোলআনার ডাকে হাজির হয়ে মাথা উঁচু করে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় রূপেন্দ্র ঘোষনা করেছিলেন," সোঁয়াই গ্রামের পঞ্চায়েত যদি তাঁর স্বপ্নের 'ব্রজ সুন্দরী মহিলা বিদ্যালয় ' বন্ধের নিদান দেন তিনি সোঁয়াই গ্রাম ত্যাগ করে তাঁর গুরুদেব জগন্নাথ তর্কপঞ্চাননের নিকট ত্রিবেনী চলে যাবেন এবং ব্রজ সুন্দরী মহিলা বিদ্যালয় স্হাপন করবেন!
গ্রামের গরীব গুর্বো অশিক্ষিত মানুষগুলো অতশত বোঝেনা , তারা পঞ্চায়েতের বিধানের বিরোধিতা করেছিল কারন, সোঁয়াই গ্রামের মেয়েরা লেখাপড়া শিখল কি শিখল না তা নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই! কিন্তু তারা এটা ভালভাবে বুঝেছে, ওলাওঠা, মা মনসা, মা শিতলা মাথায় থাকুক , দেব দেবীর কৃপায় রোগ নিরাময় হয় না, চিকিৎসা ছাড়া ! তাই গ্রামের মানুষের জন্যই ধন্বন্তরী বাবা ঠাকুরকে গ্রামে প্রয়োজন!তারা কোন অবস্হাতেই কোবরেজ বাবা ঠাকুরকে গ্রামা ছাড়া হতে দেবেন না!
পঞ্চায়েতের বিচার সভা ডেকেও নন্দ চাটুজ্যেরা শেষরক্ষা করতে পারলেন না!বিজয় গৌরবের শিরোপা জুটল রূপেন্দ্রর! কিন্তু কুচক্রী নন্দ চাটুজ্যেদের চক্রান্ত থামল না! ব্রজসুন্দরী মহিলা বিদ্যালয়ের বাহ্ আটটি ছাত্রীর সংখ্যা কমতে লাগল!
মোট চার পর্বে পড়ানো হতো! সকালে ঘুম থেকে উঠে রূপেন্দ্র ঘোড়ায় চড়ে বিভিন্ন গ্রামে রোগী দেখে ফিরে এসে প্রথম পর্বের শিক্ষাদান শুরু হতো,এই পর্বে তিন জন শিক্ষার্থী, পিতাম্বর মুখার্জীর দিদি ষাট বছর অতিক্রান্ত গিরিবালা! তাঁর শেষ ইচ্ছা, কৃত্তিবাসী রামায়ন নিজে পড়া! অক্ষর পরিচয় করার জন্যই তাঁর পাঠশালায় আগমন!ভাই বিরোধিতা করায় ঘর ছেড়ে রূপেন্দ্রর সংসারে ঠাঁই নিয়ে বাংলা পড়তে শিখছেন! দ্বিতীয় ছাত্রী তারাসুন্দরী, জমিদার তারা প্রসন্নের সহ ধর্মিনী, তাঁর পিতৃদত্ত একটি নাম থাকলেও জমিদার পরিবারের রেওয়াজ অনুযায়ী স্বামীর নামের সাথে সংগতিপুর্ন নতুন নামকরন, জমিদারের নাম তারাপ্রসন্ন তাই তাঁর নাম রাখা হয় তারা সুন্দরী,তিনি রূপেন্দ্রর বয়জ্যেষ্ঠা! তৃতীয় ছাত্রী পুটুরানী, তিনিও বিধবা হবার পর১ বাপের বাড়ী ফিরে এসেছে! এঁরা শিখতেন বাংলা ভাষা! তখন বাংলা অক্ষর পরিচয়ের কোন বই ছিল না!থাকার কথাও নয়, বাংলা ছাপার জন্য প্রথম হরফ নির্মানকারী পঞ্চানন কর্মকারের তখন জন্মই হয়নি! কিন্তু এজন্য বাংলা শেখা বন্ধ হয়নি! তখন হাতে লেখা পুঁথি ছিল, তাই বাংলা অক্ষরও ছিল!কৃত্তিবাসী রামায়ন বাংলা ভাষাতেই২ লেখা হয়েছিল! রূপেন্দ্র সেই অক্ষর পরিচয় করাতে সচেষ্ট হলেন!অক্ষর পরিচয়ের সাথে সাথে রূপেন্দ্র তাঁদের শোনাতেন উপনিষদের তত্ব , পুরান ও রামায়ন মহাভারতের কাহিনী! শোনাতেন সতী - সাবিত্রী,সীতা, দময়ন্তীর পাশাপাশি গার্গী, না, মৈত্রী, মদালসা, বিশ্ববারার কথা !হিন্দু, বৌদ্ধ জৈন মুসলিম, ধর্মের মূলকথা!
দ্বিতীয় পর্বে দুজন ছাত্রী ঘনশ্যাম সার্বভৌমের বিধবা মালতী ও দুর্গা গাঙ্গিলীর অনূঢ়া কন্যা শোভারানী ! কুলীন ব্রাক্ষ্মন পরিবারে জন্মেও তিরিশ বছর বয়েস পার করে তার সিঁথিতে লাগাতে পারে নি! সে প্রতিদিন পাঠাশালায় আসে! পড়া শোনায় খুব একটা মন না থাকলেও রূপেন্দ্রর কথা তন্ময় হয়ে শোনে!
তৃতীয় পাঠের আসরে এক ছাত্র ও দুই ছাত্রী! শুভা প্রসন্ন, রূপমঞ্জরী ও পুঁটিরানীর চার বছরের কন্যা! শুভা প্রসন্ন রূপমঞ্জরীর থেকে চার - পাঁচ বছরের বড়, সে বাংলার সাথে সংস্কৃত শেখে!
পড়ন্ত বেলায় চতুর্থ পাঠের আসরে একজন ছাত্রী মৌলবী সাহেবের বোন স্বামী পরিত্যক্তা মেহেরজান! ভাইয়ের সাথে সে আসে! মৌলবীসাহের মাতৃভাষা বাংলা তাই বুঝতে পারলেও অক্ষর জ্ঞান নেই! তিনি মুর্শিদাবাদের নবাবের হুকুমে রামায়নের একটি 'কান্ড ' ফার্সিতে অনুবাদ ও কোরানসরিফ বাংলায় অনুবাদ করার জন্য বোনকে এখানে রূপেন্দ্রর নিকট বাংলা শেখাচ্ছেন!বোরখা পরে মেহের বসে পাঠশালা সংলগ্ন মাটির দাওয়ায়!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours