দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
কত যে মৃত্যু আনন্দ দায়ক হতে পারে এদের না দেখলে বোঝা যেত না- স্বগতোক্তি কোন নাটকের চরিত্রের নয়।  সিউড়ির বড় বাগান মোড়ে বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে সজল মাজি  নামে এক পথচারীর কথা।

এখন জানার কি এমন দেখলেন তিনি!

তারস্বরে ডিজে বক্স বাজিয়ে দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে এক বৃদ্ধকে। বয়স ৯৭। তিন বছর কম একশ। যেন ওয়ান ডে ক্রিকেটে রিটায়ার্ড হার্ট। ইস আর তিন বছর হলে আনন্দ টা আরও বেশি করতাম, মৃতের চব্বিশ নাতির কথা। মৃতের  নাম শঙ্কর চরণ মাল।  তিনি ডি আই অফিসের কর্মী ছিলেন। মৃতের এক নাতির নাম  সুকান্ত মাল।  তিনি বলেন, দাদুকে বলেছিলাম, তুমি মরলে আনন্দ করবো। ডিজে বক্স বাজিয়ে নাচতে নাচতে শ্মশান যাব। দাদুকে দেওয়া কথা রাখলাম। তিনটি ট্রাকে ডিজে বাজিয়ে শ্মশান যাওয়া-- জানালেন মৃত শঙ্কর বাবুর দশ মেয়ের এক মেয়ে টুনু মাল। তাঁরা কেউই এটার মধ্যে মন্দ কিছু দেখছেন না।ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের সিউড়ি থানার অন্তর্গত আনন্দপুর ডাঙ্গালপাড়ায়।  সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কেউ মারা যাওয়ার পর তাকে শব দাহ করতে নিয়ে যাওয়ার সময় খোল করতাল বাজানোর রীতি প্রাচীন কালের। এই ব্যাতিক্রমী ঘটনায় জেলার মানুষ হতবাক। সকলের একটা কথা, মানুষ এমন পারে? মৃত্যুকে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন শ্যাম সমান। আর এখানে মৃত্যু ডিজের গান "হরিনাম সঙ্গে যাবে"। তার সাথে উদ্বাহু কিম্ভুত নৃত্য। আমাদের রাজ্যে। এই অভিনব শব যাত্রা আগে হয় নি তা নয়। কয়েক বছর আগে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার নয়াবসত গ্রামে ১০৫ বছরের বৃদ্ধা পিয়ারী চালক বা  কালনার শ্বাসপুর এলাকার ১০৫ বয়সের রাসমণি দাসের, ক্ষেত্রে একই ঘটনা ঘটেছিল।
আসলে বেশি দিন বেঁচেছে বলেই নাতিপুতিদের এই উৎকট আনন্দে অনেকের অস্বস্তি বোধ হলেও পরিবারের তাতে অসুবিধা নেই।  পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বৃদ্ধ সরকারি চাকরি ছাড়াও অন্যান্য বিভিন্ন কাজের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। বৃদ্ধের ১০ মেয়ে। তাঁরা প্রত্যেকেই বিয়ের পর ওই এলাকাতেই বাড়ি তৈরি করে বসবাস করেন। কিছুদিন আগেই অশীতিপর বৃদ্ধকে অসুস্থ অবস্থায় সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার তেমন কোনও পরিবর্তন না ঘটায়, চিকিৎসকরা রোগীকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। এরপরই বুধবার রাতে মৃত্যু হয় ওই বৃদ্ধের।
ওই বৃদ্ধের এক জখমাই তপন বাগদি জানান, "ওনার ১০ মেয়ের সব সন্তান মিলে ২৪ জন নাতি রয়েছে। তাই ওই নাতিদের একটা আনন্দ তো আছে! গতকাল রাতে আমার শ্বশুরের মৃত্যুর পর ওরাই সিদ্ধান্ত নেয় বক্স বাজিয়ে অন্তিম ক্রিয়া সম্পূর্ণ করার। তারপরই তারা তিনটি গাড়ি ভাড়া করে ও ডিজে বক্স বাজিয়ে বক্রেশ্বর যায় শেষকৃত্য সম্পূর্ণ করতে।" জামাইয়ের বক্তব্যকে সম্মতি জানিয়ে শঙ্করী চরণ মালের আরেক মেয়ের বক্তব্য, "বাবার অনেক বয়স হয়েছিল। আর তারপর এমন হওয়ায় সব নাতিরা আনন্দ করার জন্য বক্স বাজিয়ে অন্তিম ক্রিয়া করতে গিয়েছে।"

প্রিয়জনের মৃত্যু যে এত আনন্দময়, চাক্ষুষ করলেন বৃদ্ধের  স্ত্রী মায়া মাল। তাঁরও বয়স হয়েছে।  হয়তো, তিনিও মনে মনে ভাবছেন, ঘাটের মরা,তো শেষ পর্যন্ত চলেই গেল। আমাকে নিয়ে গেল না!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours