জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

এখন নিশ্চিত করে বলা যায়, মধ্যমবর্গের বোধজগতে ছিদ্র নির্মান করে, তাতে শ্রমিক অবস্থান দৃঢ় করার সর্ত-পুরনের পূর্বেই, শ্রমিক চিন্তন নিজেই অবরুদ্ধ নিজের মধ্যে।
এর পরিনামে মধ্যমবর্গীয় বোধে কলুষিত পথ ধরে ছিদ্র নির্মান করে, ফ্যাসিস্ত চিন্তা তাকে অক্টোপাষের মতো, চারদিক থেকে অবরুদ্ধ করছে।এমন এক বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে --
---- ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন এবং মধ্যবিত্তকে ঘিরে যে দ্বন্দ্বগুলি বিদ্যমান রয়েছে, তার দ্রুত সমাধান ব্যাতিত এখন নিশ্চিত, দল হিসেবে সাম্যবাদীদের, শ্রেনী হিসেবে শ্রমিকদের, ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে তাদের যারা সর্বাত্মক একতার শপথে অতীত থেকে ছিন্ন হয়ে বেড় হয়ে এসেছিলেন, মধ্যবিত্ত হিসেবে গনতন্ত্রীদের,
ইতিহাসকে স্থবির করে দিয়ে, ভারতে দাসত্ব নিয়ে এসে, ভারত নামক দেশটিকে ভেংগে দেওয়ার পথে কাউকেই ইতিহাস থেকে এদের বিচ্ছিন্ন করতে হবে না, নিজেই নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।
কোথায় দেশ, কোথায় দেশের ৭০/৮০ ভাগ মানুষের অবস্থান আর রাজনীতিটা কোথায় হচ্ছে তথাকথিত উদারনৈতিক দলগুলির মধ্যে,
কি হচ্ছে
------ ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনে - নিজের অভ্যন্তরে এবং বাইরের
সামাজিক সম্পর্কের বদলের ভেতর দিয়ে, সাম্যবাদী এবং গনতান্ত্রিক দলগুলিতে শক্তি যোগানোর মধ্যে দিয়ে, নিজের এবং শ্রমিক আত্মমর্য্যাদা ও শক্তি বৃদ্ধির জন্য, ভেতরে ও, বাইরে -
সাংগঠনিক, ভাবাদর্শগত এবং রাজনীতির সমন্বয় ও সন্তুলনে, সাংগঠনিক কাঠামোতে শতমুখীনতা নির্মানে জনগনের সর্বস্তরে গিয়ে পৌছে যাওয়ার কোন কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে?
----- সে সব প্রশ্ন, গনতান্ত্রিক সমর্থক অংশ, শ্রমিক আন্দোলনের নেতাদের সামনে তুলতেই পারতেন। আরো এগিয়ে গিয়ে বলা যাবে -- দিন থেকে প্রতিদিন সামাজিক সন্তুলন ফ্যাসিস্ত সত্বার দিকে চলে যাওয়া সত্বেও কেন গনতান্ত্রিক মানুষ প্রশ্ন তুলছেন না ......,
----- সেসবকে নিয়েই, ট্রেড ইউইউনিয়ন আন্দোলনকে নিজের কাছে প্রশ্ন তুলতে পারতোন। নিজের মধ্যেও যখন প্রশ্ন উঠছে না, তখন তো মানতে হবে, অতীত হয়ে যাওয়া চিন্তন থেকে আন্দোলনের নেতারা বেড়িয়ে আসতে পারছেন না। সেখান থেকেই প্রস্ন উঠবে...
-----, আজকের দিনে যে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে নিজেকে খুজা দরকার , হিশেব নেওয়া দরকার, কেন কালকের শ্রমিক আন্দোলন
---- কতটুকু আজকে উঠে আসতে পেরেছে, চিন্তনে-সংগঠনে-সংগ্রামে।
আসলে ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রের আকাশচুম্বি রুপের সাথে, দলের দিক নির্দেশক ভূমিকা যে প্রাচীনত্বের শেকল ভেংগে , সম্পর্ককে আধুনিক স্তরে উঠে
------ প্রতিবাদী রুপ থেকে শ্রমিক আন্দোলনকে বিদ্রোহী সত্বা এবং সেখান থেকে বিপ্লবী সত্বার তুলে আনার আধুনিক রুপটিকেই, চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। শুধু তাই নয় ষাট ও সত্তোর দশকে, আধুনিক শ্রমিক শ্রেনীর আবির্ভাবের সাথে সাথে, ইতিহাসের বাধ্যবাধকতার কারনেই, ট্রেড ইউনিন সম্পর্ককে, সামন্তিক পরিস্থিতি অতিক্রম করে, আধুনিকতার দাবীতে
----- শ্রমিক আন্দোলনকে ইতিহাসের পরবর্তী সংখ্যবৃত্তে তুলে আনার যে প্রকৃয়া শুরু হয়েছিলো, ভেতর থেকেই প্রাচীনত্বের চাপের মুখে, শ্রেনী উদ্বেলতার স্বতস্ফুর্তাতাকেই চাপা পরেগিয়েছিলো। এই চাপা পড়ে যাওয়ার পরিনতিতেই আন্দোলনে
----- শ্রেনী আন্দোলনের অভিমুখটি, দলিয় অভিমুখের নিচে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। পরিনতি গনসত্বাও দলিয় সত্বা এবং শেষ পর্যন্ত দলের নামে ব্যক্তি সত্বর নিচে চাপা পড়তে বাধ্য ছিল। অন্যথায় যে দেশে যান্ত্রিক শ্রমিকদের সংখ্যা বিশ্বের অষ্টম স্থান অধিকার করেছিলো এক সময়, সেই দেশের শ্রমিক আন্দোলনের শ্রেনীগত অভিমুখ আত্মমর্য্যাদাহীনতার ব্যক্তিসর্বস্যতায় ডুবে যেতে পারতো?
আসলে এ আই টি ইউ সির সাথে বিচ্ছেদের মূল বিন্দুটাই সেখানে ছিল, যখন উৎপাদনে অর্ধদক্ষতা ইতিমধ্যে 'যান্ত্রিক স্তরে, তখনো ট্রেড গনতন্ত্র সেই আনস্কিল্ড স্তরের 'হূকুম সর্বস্বতাতেই' বিরাজমান ছিল।
------ শিক্ষিত আধুনিক শ্রমিকের অভ্যুত্থানের পর, যে অতীত সম্পর্ক নিয়ে চলাটা আত্মহত্যার নামান্তর কমরেড ডাংগের নেতৃ্ত্বাধীন নেতাদের বোধগম্যতায় আসার সুযোগ পায় নাই।
ভেংগে যাওয়ার সাথে সাথে,দুর্গাপুর যেমন বিপুল আন্দোলন নিয়ে যোগ দিলো, তেমনি সাধারনভাবেই আধুনিক শ্রমিকদের ঝোকতাইটাই নতুন সংগঠনের দিকে চলে আসলো।
সময় সুযোগ পেলে, এলাকা ধরে ধরে দেখানো যেতে পারে, যে ত্রুটী এ আই টি ইউ সি তে ছিল, গনতন্ত্রকে উন্মুক্ত করে পরিচালনার যোগ্যতা না থাকায়, এমন নিয়েন্ত্রন সুরু হোল
----- এই অত্যাধুনিক শ্রমিকদের, দিক নির্দেশকের নামে নিয়ন্ত্রনের নামে, চিন্তনকে কোন্ট্রল শুরু হোল। এই পরিস্থিতি কমরেড বি টি আর আটকানোর চেষ্টা করেছেন, কিন্তু অতীত থেকে পাওয়া সাংগঠনিক
নিয়ন্ত্রনের ধারার মুখে উনি নিজেও এই প্রকৃয়া্কে রোধ করতে পারে নাই।
এ আই টি সির সাথে কর্মীদের অধিকাংশ চলে যাওয়ায়, সেখানে নেতারা চাইলেও হয়তো বা পরিস্থিতির বদল করা যেতো। কিন্তু দলনেতাদের হাত ধরে, মুলতঃ অসংগঠিত বোধের হাতে সংগঠিত চেতনা সপে দেওয়ার ফলে
----- চিন্তন প্রকৃয়া্টাই সংঙ্খ্যবৃত্তের উচ্চ ধাপে না উঠে এসে, নিচে গড়িয়ে আসাটাই নিয়ম হয়ে দাড়ালো। পরিনতিতে চিন্তা যেমন স্থবির হয়েছে, তেমনি সংগঠিত সিল্প শ্রমিকদের মধ্যে পরিস্থিতিকে অতিক্রমনের অপেক্ষা পরিস্থিতের সাথে আপোষ করাটাই নিয়ম হয়ে দাড়ালো। অনুরুপ পথে সংগঠনের অভিমুখে পূর্বের ধার কমতে লাগলো।
পরিনতিতে, শেশ পর্য্যন্ত জীবন রায়ের প্রজন্মের অনেকের পক্ষেই উচ্চতর সামাজিক ধাপে থেকে ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতিতে টিকে থাকাই অসম্ভব হোল, কর্মীবাহিনীর বাজার ধর্মীতার চাপের মুখে।
এখন শ্রমিক আন্দোলনের পক্ষে মধ্যমবর্গীয় চেতনাক উঠিয়ে আনার বিপরীত, ক্রম কলুষিত মধ্যমবর্গীয়বোধের কাছেই শ্রমিক শ্রেনীর
চেতনা আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হচ্ছে
যেমনভাবে এই প্রকৃয়া এগুচ্ছে, তেমনভাবেই শ্রমিকের ভবিষ্যত, শ্রমীক শ্রেনীর ভবিষ্যত এবং দেশের ভবিষ্যত সাফ হয়ে চলেছে। শ্রমিক আন্দোলন, ক্রমেই সংখ্যবৃত্তে উঠে না এসে, ক্রমেই নিচের বৃত্তে নেমে আসছে - অসংগঠিত চেতনার মধ্যাকর্ষনের নিম্ন টানে। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours