নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড অস্ট্রেলিয়া:

জীবন বাঁচান, আওয়াজ তুলুন- এটা হচ্ছে এবারের নিরাপদ সড়ক সপ্তাহের মূল স্লোগান।

“আমার ভাই কেন আজ
প্রাণ দিবে রাস্তায়
আমার বোন কেন আজ
মরবে গাড়ির চাপায়! “

ইলিয়াস কাঞ্চন সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির জন্য অশিক্ষিত চালক, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন, দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থা, জনগণের অসচেতনতা, অনিয়ন্ত্রিত গতি, রাস্তা নির্মাণে ত্রুটি, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, আইন ও তার যথাযথ প্রয়োগ না থাকাকে দায়ী করেন।
এটা কি উনার ভুল অভিযোগ , আপনাদের কি মনে হয় সচেতন জনগণ?

এটাই তার দোষ। যাহ! সব বরবাদ হয়ে গেল!
কম কথা তো নয় তিরিশ বছর তো হবেই। আন্দাজে বলছি , আমি ছোট বেলা থেকেই শুনছি নিরাপদ সড়ক মানে আমাদের নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
সত্যি শুধু অবাক না , পুরোই হতভম্ব হয়ে গেলাম, ফেসবুকে কিছু ছবি পোষ্ট দেখে।
কিচ্ছু হবে না ! হবে না , হবে না এদেশে কিচ্ছু হবে না।

একটা নিউজে পড়ছিলাম -জাতিসংঘ ২০১১ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি অর্ধেক কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে প্রতিবছর কমপক্ষে ১৩ লাখ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীরাই বেশি। পথচারী ও সাইকেল আরোহী মারা যায় ২৬ শতাংশ। যাত্রী কল্যাণ সমিতির তথ্য অনুযায়ী ২০১৮ সালে ৫ হাজার ৫১৪টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৭ হাজার ২২১ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন মনে করেন, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব। তার মতে, এটা কোন কঠিন রোগ নয়, সারানো যাবে না। এটা মানুষের ভুলে হয়। মানুষ সচেতন হলে অবশ্যই কমিয়ে আনা সম্ভব।
এবার বুঝলেন তো ভাই!
রোগ সারবে কি করে ইলিয়াস ভাই ? মানুষ সচেতন না মহা সচেতন , রাস্তায় বেপরোয়া গাড়ি চালিয়ে পটকে দেবার জন্য । যত দুর্নীতি যত অসামাজিক কাজ , যত অনিয়ম বেআইনি কাজ তো রাস্তাতেই হয় । এই রোগ সারানো এত্তো সোজা না , ভয়ঙ্কর অনিয়মের মহামারী আমাদের দেশে...অরাজকতার রোগে পেয়েছে।
তা না হলে কি করে পারে এমন একজন মানুষ কে এই ভাবে অপমান হুমকী দিতে।
যে কিনা একাই দাঁড়িয়ে ছিল খোলা রাস্তায় ... স্বজন হারানোর হাহাকার নিয়ে।
নাহ ! আর নয় অনিয়ম নিয়মের গাড়ি চলবে রাজপথে .. এই ছিল ব্রত।
ভাই কিচ্ছু হয় না উট পাখির দেশে। আপনি শুধু শুধুই সময় নষ্ট করে গেছেন এতো দিনের পর দিন ! নিজের পয়সা খরচা করে , মানুষ এমন অপমান ব্যর্থতা কিনে নেয় বুঝি?
কে বলেছিলো আপনাকে এই কাজে নামতে, তার চেয়ে যদি আপনার ওয়াইফের নামে একটা শপিং মল করতেন । সকাল বিকাল সেই নাম উঠতো মানুষের মুখে । আহ ইলিয়াস কাঞ্চন একটা কামের কাম করেছে , মলে ফাও এসির বাতাস খেয়ে আসতে তো পেরেছি।  ইসস! কম করে হলেও তিরিশটা বছর ! পাথরেও ফুল ফোটা সহজ সম্ভব হতো আপনার, কিন্তু অনিয়মের দেশে আপনি নিয়ম করে চললে যে এমন উপহার’ই পাবেন। “নিরাপদ সড়ক “ এই শ্লোগান তো রাজপথেই গায়েব করে দেবে। অনিয়মকে জায়েজ করতে আপনার উপরেই গাড়ি তুলে দিয়ে।

খুব খারাপ লাগছে ইলিয়াস ভাই । আপনার একান্ত আপনার আপনজনের পিচ ঢালা কালো রাজপথটা লাল রঙে রঞ্জিত হয় ! যে গেল, সে তো গেলই ! কিন্তু যার গেছে হায় ! সেই বোঝে , হারানোর কী যন্ত্রণা!

আপনি বোঝেন আর আপনার মতো যাদের ঝড়ে গেছে আপন জনের জীবন সেই তো বোঝে এই ব্যথা ভার।
জীবনের মূল্য অনেক বড় নাকি ! এইসব ঘটনা দেখলে তো মনে হয় পরিবহণ মানিক শ্রমিকদের কাছে মশা মাছির মরার মতো ঘটনা । নিরপরাধ মানুষ মারার রাস্তার দানব এক একজন।
সমালোচনা যারা করে সবেতেই নোংরা ঘাটে... স্বভাব তাদের!

নিরাপদ সড়ক চাই স্লোগানকে নিয়ে জনপ্রিয় অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন একুশে পদক পাবার আশায় এতো দীর্ঘবছর ধরে আন্দোলন করেনি ; তাঁর রয়েছে স্বজন হারানো , হৃদয় ফাটানো তীব্র যন্ত্রণা ! কিন্তু আমরা কখনো কি তাঁর সেই আর্তনাদে কর্ণপাত করেছি?  করিনি , আর করবোই বা কেন , আমাদের তো কেউ মরে যায় নি ? যখন নিজের কেউ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় তখন একটু চেতন ফেরে , তার আগে শুধু অযথা লোকটা এই সেই করে সময় নষ্ট করেছে কেন!

এই তো মাত্র বছর খানেক হয়ে গেল রাস্তা কাঁপানো আন্দোলন ।
সহপাঠী হারানোর বেদনায় মৃত্যুকে , পুলিশকে , বৃষ্টিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঢাকা শহরে আন্দোলনে নেমেছিল স্কুল ছাত্ররা । এর দাবানল সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে । এজাতির জন্য শিশু -কিশোরদের এই আন্দোলন একটি চরম লজ্জা।
কিন্তু আমরা বেহায়া হলে লজ্জা শব্দের মানে আমরা ভুলে যাই কিনা!
“নীতি রাজনীতি মোরা বুঝিনা
নেতা-নেত্রীও মোরা খুঁজিনা।
শতটা নয় মোদের দাবী একটাই
শুধু "নিরাপদ সড়ক চাই"।

ইলিয়াস ভাই শুধু এইটুকু বলতে চাই -

“যদি তুমি ভয় পাও তবে তুমি শেষ, যদি তুমি রুখে দাঁড়াও, তবে তুমি বাংলাদেশ।“




Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours