জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

লেনিন যে বোকা ছিলেন না, অন্ততঃ সেটা মানা হোক।কিন্তু সেখানে যাওয়ার পূর্বে, গত লেখায় একটি সুত্র বলা হলেও, তার ব্যখ্যা রেখেই, বর্তমান শিরোনামায় ফিরে আসবো।
 বর্তমান শিরোনামাতেও, এই সংখ্যায় লেখায় শুরুটা করলেও,  মধ্যমবর্গ সম্পর্কে লেনিনীয় অভিমুখটিকে রাখবো পরের লেখায়, বিস্তারিত। তবে একটা কথা শুরুতেই বলে রাখি। ভারতে  মধ্যমবর্গীয় মানবিক উপাদান গুলিকে চিহ্নিত হলে, মধ্যমবর্গ থেকে ওঠা কোন মানবিক ব্যক্তিত্বকেই লেখাটা লিখতে পারবেন। অবশ্য, তাকে নৃতত্ব, মনস্তত্বের সর্বোচ্চ দার্শনিক রুপ এবং ইতিহাসের সংশ্লেষন করার দ্বান্দ্বিক নিয়মকে নিশ্চতভাবে আয়ত্ব করতে হবে।ভারতীয় ইতিহাসের এই 'শক্তি'কে কোন 'শ্রেণি' বিবেচনা করা থেকেও, ইতিহাসের ভালো মন্দের বিচারধারা নিয়ে, একটি সম্প্রদায় বলা যাবে। এরা কালের কোন মূহুর্তে দয়ার সাগর এবং  মহাবিপ্লবের পতাকাবাহী, আবার বিপরীত প্রবাহের মুখে ভিক্ষা করে যিনি খান, তার থেকেও কঞ্জুস এবং প্রতিবিপ্লবী নিমকহারামদের সেবা করেন। এই সম্প্রদায়ের বিস্তারিত গবেষনা ব্যতিরেখে, কোন সাম্যবাদী দল, কোন রনকৌশল নিতে পারবে না; সেটা যখন ঘটে না, তখন কিভাবে নিজেই যে মধ্যমবর্গীয় দোলাচলে আচ্ছন্ন হয়ে যান, তা প্রমান বর্তমান কাল।

----যাইহোক মাঝখানি ছন্দপতন ঘটলেও, গতকালের তুলে ধরা সুত্রটা সম্পর্কে দু'চারটে কথা বলে নেই। ইতিহাসের উপর তাত্বিক কথাবার্তায় অনেক বিষয় এমনভাবে জড়িয়ে থাকে, সেখানে কোন বিষয় যদি শব্দবন্ধনের জটিলতায় ঢাকা থাকে, তখন অর্ধসত্যের থাবা পরে, যেকোন আলোচনার অভিমুখে। আর একবার ভূলে গেলে, আর ফিরে আসে না।
----- উল্লেখ করেছিলাম,এই যে আমেরিকান মিলিটারারী তন্ত্রের বেতনভূক চাকর অর্থনীতিবিদরা বলে দিলেন, সোভিয়েত ভেংগে যাওয়ার সাথে ইতিহাসের পরিসমাপ্তি ঘটেছে, সেটা ছিলো - যে মার্ক্সীয় দর্শনকে ওরা 'পাগলের' প্রলাপ বলে বাতিল করে দিয়েছিলো, সেই প্রতিবাদ্যের কাছ থেকে চুরি করে আনা 'ইতিহাসের সমাপ্তি' নামক শব্দটিকে কাজে লাগিয়ে 'দাসত্ব'কে 'চিরন্তনতার' সিলমোহর লাগিয়েছে।
---- বলা হতেই পারে,  'ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটেছে' শব্দটার মধ্যে 'দাসত্বের' ঠিকানা খোজাটাও এক 'উন্মত্ততা' ।বিষয়ের পার্থক্যটা  নিম্নের বিষয়গুলের সাথেঃ
 মার্ক্সের 'ইতিহাসের অবসানে' কোন ভেতর কিংবা বাইরের জবরদস্তি কিংবা প্রতারনা অথবা স্বরযন্ত্র নেই। ওটা এমনিতেই উঠে যাবে পুজিতন্ত্রের 'সমাজতান্ত্রিক' অভিমুখ ধরে 'সাম্যে পৌছুনোর পর - মিলিয়ে যাবে কর্পুরের মতো যেমন বাতাসে মিলাতে থাকবে দল, রাষ্ট্র এব্ং শ্রেনী শোষনের যন্ত্রগুলি।
------ আমেরিকার 'ইতিহাস' উঠে যাচ্ছে - স্বরযন্ত্র, প্রতারনা ভেতরের এবং বাইরের গায়ের জোরের কাছে। দ্বিতীয়ত; কখন, ইতিহাস থেকেও ইতিহাসের বিলোপ ঘটানোর বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে, যখন বিশ্বঃমেহনতকে লুঠ করা এবং লুঠ প্রতিরোধের শক্তি দুটি সারা বিশ্বে লড়ছে। ভারতের মতো দেশেরই অর্থনৈ্তিক ক্ষমতা যে ৯ পরিবারের হাতে তাই নয়, এখন বলা হচ্ছে ইরাক যুদ্ধ হয়েছিলো, বুশ পরিবারের কয়েক ডজন মানুষকে নিয়ে যে যুদ্ধের ব্যবসা চলছে, তাকে মজবুত করতে।
------- কখন ইতিহাসের পরিসমাপ্তি দেখানো হচ্ছে, যখন আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্র ৮০টি দেশে ১৫০ট সামরিক ঘাটি বসিয়ে, দেশে দেশে এরকম ৯ পরিবারের শাসন স্থাপন করে, বিশ্বময় পাহারা দিয়ে, একটি ফ্যাসিস্ত পুজিকেন্দ্র যেমন গড়ে তুলেছে, তেমনি, দেশে দেশে  ভেতর থেকে  দাসত্ব নির্মানের আয়োজন করছে।

এটাই ভারতীয় মেহনতি আন্দোলনের ট্রেজেডি যে মধ্যমর্বগীয়, ইংরাজী সর্বস্য, মহানগরী কেন্দ্রিক, অসংগঠিত অভিমুখে নেতাদের 'মূর্খতা'রা কাছে এটা ধরাই পরছেনা কিভাবে
-------দেশের বৌদ্ধিক সত্বার প্রায় আপাদমস্তক দাসত্বের ভাবসত্বায় ঢেকে গিয়ে, মধ্যমবর্গীয় সত্বাকে সামনে রেখে, দেশে ইতিমধ্যেই পুরোপুরি দাস ব্যবস্থা।

প্রশ্ন করা হবে, প্রমান কোথায়? প্রমানের জন্য তো অর্থনীতির কোনায় কোনায় যেতে হয় । পরিনতির কথাটাই আবারো বলে দিই। বার বার বলেছে। যখন দেখা যায়, 'নারী  দেহক শুধু বানিজ্যিক বিজ্ঞাপানে নয়, নারীত্যের অমার্য্যাদা সামাজিকভাবে প্রাতিষ্ঠানিক করে নেওয়া হচ্ছে, শিক্ষিত দাস রপ্তানীর সাথে সাস্থে  নারী রপ্তানীর ব্যবসাকেও গৌ্রবান্বিত করা হচ্ছে - তখন বুঝতে হবে বৌদ্ধিক জগতে, স্বাধীন মতের যাতায়তের দায় কার্য্যত বন্ধ। আমরা ট্রেড ইউনিয়ন নেতারাও মধ্যমবর্গীয় কালগত আবিষ্ঠতায় বুদ্ধিভ্রষ্টতায়, নিমজ্জিত হয়েছি।

---- ভারতে বিশ্বায়নের নাম  স্বয়ংসম্পূর্নতার আত্নমর্য্যাদা নিধনে এবং ভারতের উপরে নেমে আসা পরাধীনতার কুজ্ঝটিকার পেছনে,বিশ্ব মিলিটারীতন্ত্রের 'মধ্যম বর্গীয় পরিকল্পনা বিপুল' । মধ্যমবর্গ থেকে আসা যেসব শ্রমিকরা বিরাষ্ট্রীয়করনের বিরুদ্ধে লড়েছেন তারাও
---- মধ্যমবর্গীয়  আত্মপরতার কারনে, বিরাষ্ট্রীয়তা বিরোধী আন্দোলকে, নিজের অস্তিত্বের প্রশ্নের বাইরে রাষ্ট্রীয় অস্তিত্বের প্রশ্নে কিঞ্চিত টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এসব বিবেচনায়, মধ্যমবর্গীয়তার ভেতর থেকে  কিভাবে বৈপ্লবিক উপাদানগুলি উঠিয়ে আনার এবং সাথে সাথে মধ্যমবর্গের ভেতরে 'কেরানী কিংবা দাসত্বের মানষিকতাকে, দাবিয়ে রাখা হবে
----- সে সম্পর্কে লেনিনীয়   সাম্যবাদী প্রকৃয়ার কিছু ব্যখ্যা  রেখেই আজকের লেখা শেষ করবো।তবে স্মরন করিয়ে দেবো,ভারতীয় সমাজে দুই মূখ্য শ্রেনীর বাইরে সম্প্রদায় হিসেবে মধ্যমবর্তীয় উপাদান সম্পর্কে বিস্তারিত গবেষনা ব্যতিরেখে,দেশে স্বাধীনতার সমস্যা এবং এমনকি দলের মধ্যে 'দাসত্ব অভিমুখীনতাকেও আটকানো যাবে না।

কাজেই আজকের আলোচনার পর,
গ্লোবালাইজেসন এবং মধ্যমবর্গীয়
উপাদানের উপর আলোচনা চলতে
থাকবে।
এখন লেনিন কোন পথে সংগঠন, সরকার, শ্রমিক রাজনীতি এবং সরকার পরিচালনায়, মধ্যমবর্গ সমেত,বুর্জোয়া সমাজ থেকে আসা বিদ্যজন এবং প্রযুক্তিবিদদের , সমাজতন্ত্র গঠনের কাজে লাগানোর নীতি নির্ধারন করেছিলেন, তার কিঞ্চিত  ব্যখ্যা করা যেতে পারে।
 তিনি আন্দোলনে নিখাত বৌদ্ধিক সত্বাকে শ্রেণির অভিমুখে রাখতে প্রতি জনে দশজন করে শ্রমিক জুড়ে দেওয়াটাকে বাধ্যবাধকতার সর্ত যদি রেখে থাকেন, তাতে তার ব্যক্তিভাবনা থেকেও ব্যক্তিতে, অতীত শ্রেনী সম্পর্কের প্রতিবিম্বকে নিয়ন্ত্রনের কথা বিবেচনা করেছেন।
যে দীর্ঘ তপস্যায় তিনি, রেনেশার পচে যাওয়া অবস্থায়, মাঝামাঝি সম্প্রদায়গুলিতে ইতিহাসের অতীত হয়ে যাওয়া অভ্যাসগুলি যে শেষ পর্য্যন্ত  বিশ্বাসঘাতকতার ভূমিকায় পর্য্যন্ত নেমে আসে, সেসব উপলবদ্ধিতে বোধ জগতের গভীরে গিয়ে বিবেচনা করেছেন।
সুত্রটি  নিজেও বুঝতে পারতামনা যদি বৃহৎশিল্পের প্রথম পুরুষ শ্রমিকদের সাথে কাজ না করতাম এবং প্রথমে কমরেড বিনয় চৌধুরী, পরে কমরেড বি টি আর এর মতো শিক্ষকদের খুব  কাছে পাওয়ার কারনে - বুঝেছিলাম,  গনতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতা এবং আকশচুম্বি ট্রেড ইউনিয়ন গনতন্ত্রের সামঞ্জস্য স্থাপনে, উল্লেখিত লেনিনীয় তত্ব সিংহপ্রমান গুরুত্ব ধরে। শুধু বাইরের বুদ্ধিতন্ত্র নয়, ভেতরের প্রথম পুরুষ থেকে আশা শিক্ষিত শ্রমিকদেরকে বিগরে যাওয়া থেকে বাচাতেও যে সব সুত্র নিয়ে চলতে হোত, সেগুলিও লেনিনীয়  শিক্ষা থেকি সুত্র খুজতে হবে।
---- যে পেশা এবং যে শিল্পে কাজ করতে হয়েছে, সেখানে উপরের উল্লেখিত দ্বিমুখীনতার সমাধানে বুঝেছিলাম, লেনিন কেন মার্ক্স উত্তর কালে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট বৌ্দ্ধিক সত্বা হিসেবে আবিস্কার করেছিলাম। পরে আরো বুঝেছি
---- যেভাবে লক্ষ কাজকে ২০ হাজার ডিউটি পোস্টে বন্ঠন করা সমেত সারা দেশের এই মাপের শ্রমিকদের এক করতে, লেনিনবাদ  ছাড়া অন্যপথ খোলা ছিলো না।
----উল্লেখিত দুই গুরুর মধ্যে দেখেছি, শুধু কমরেড চৌধুরী নয় কমরেড  বি টি আর নিজেও  কারখানা কিংবা খনি মুখের ডাইনামিজম বুঝতে, শ্রমিকদের কাছ থেকে নিরন্তর শিখেছেন। সেই শিক্ষা থেকেই, বিশেষতঃ কমরেড বিটি আর এর কাছ থেকে সুত্রগুলির উপযুক্ত ব্যখ্যা পাওয়ার পর,
----- সেকালে যা পেয়ে গিয়েছিলাম, বাইরে থেকে এসে হুট করে নেতা হয়ে যাওয়াদের, ইদানিং বুঝেছি,  নিজে নিজে বুঝতে আট/দশ প্রজন্ম লেগে যাবে। তবে কমরেড বি টি আর চলে যাওয়ার পর, আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, এসব লেনিনবাদী তত্ব বুঝতে হলে, ভয়ানক '।

এই বলেই বর্তমান লেখাটা শেষ করছিঃ
যদি মেনে চলাহয়, সাধারনভাবে মধ্যম বর্গের মনস্তত্বে,
মেহনতিদের বৈপ্লবিক প্রভাবের সাথে ভারতীয় প্রাচীনত্ব,
যেখান বর্নাশ্রম ও নারী-বিরুপতার সাথে ত্যাগের বিপুল ভুমিকা, ,
ঔপনেবেশিক কালের কেরানীয়ানা, ইংরাজীয়ানা এবং মহনগরিল
অহংকারের মিশ্রন ঘটেছে; সাথে সাথে আধুনিক শ্রমিকদের মধ্যে-
মেহনত এব মেহনতি চরিত্র উপরের দ্বন্দ্বগুলির সমাধান -
একমাত্র মেহনত থেকে উঠে আসা বৌদ্ধিক শক্তিই সমাধান
করত পারে।
অন্যপ্রান্তে এই সমাধারনের মধ্যেই মেহনত এবং মেহনতির মুক্তি। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours