জীবন, রায় প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

শ্রমিক আন্দোলনে যারা নেতৃত্ব দেন কিংবা কোন সাম্যবাদী দলের হয় দিক নির্দেশ করার দায়ীত্ব নিয়েছেন, তারা অন্ততঃ যদি দেশের সর্বজন গ্রাহ্য সাম্যবাদী দলটির কেন্দ্রিয় কমিটিতে গৃহীত ১৯৬৭ সালের দলিলটি পড়তেন এবং আশির দশকের শুরুতে , ট্রেড ইউনিয়ন একতার প্রশ্নে  বি এম এস এর সাথে ট্রেড ইউনিয়ন একতার প্রশ্নে  উল্লেখিত দলে যে বিতর্ক হয়েছিলো সেগুলি যদি পড়তেন, তবে
---- যে সব নেতারা, ভাষন দিতে উঠেই নিজেদেরকে বাম ট্রেড ইউনিয়ন বলে ঘোষনা করে তৃপ্তি পান, তারা নিজেদের 'কান ধরে দশবার উঠবোস' করতেন। আজকাল আবার, একটা সময়ে তো  ট্রেড ইউনিয়ন মঞ্চেও ভাষব দিতে বুঝিয়ে দেওয়ার প্রানপন চেষ্টা হোত বুঝিয়ে দেওয়ার, যে বক্তা শাসক দলে খুবই গুরুত্বপূর্ন।  অথচ, এমন ব্যক্তিকে খুজে পাই নাই আমার নগরীতে যিনি, প্রথমে 'আমায়' দলের নামে সম্বোধন করার পর, জীবন রায়ের নাম উচ্চারন করেছেন। সম্প্রতি কয়লার সম্মেলনে গিয়েছিলাম, প্রথা মত  এখনো ভাষনের পূর্বে স্বম্ভাবনের রীতি পালন করতে গিয়ে, কমরেডরা যখন আমাতে এসে, কমরেড শব্দটাও উচ্চারন না করে সরাসরি 'জীবন দা' বলে সম্বোধন করেছেন, অনেক অনেক আপনত্ম মনে হয়েছে। এতো উদাহারন ১৯৬৭ সালের দলিললের মূল কথা যে সেখানেই লিপিবদ্ধ
----- যাই করো যেভাবে সাম্যভাবকে নিয়ে যাও না কেন, তাতে যেন একটা আপনত্মভাব প্রসারিত হওয়ার সুযোগ পায়।
১৯৬৭ সালের ট্রেড  ইউনিয়ন সংক্রান্ত দলিলটিকে ,  এদেশের যে সাম্যবাদী দলটিকে মানুষ,  সাম্যবাদের প্রধান দুর্গ-রক্ষকের মর্য্যাদা দিয়েছিলেন, তাদের কেন্দ্রিয় কমিটি অনুমদন দিয়েছিলেন। সেই দলিল এবং পরবর্তীকালে লক্ষ লক্ষ ঘন্টা বিতর্কের পর সি আই টি ইউ এর চলার  পথকে, সংবিধানের সাথে সাযুজ্য রাখতে যে সব গতিমুখ  নির্মান করা হয়েছিলও, সেগুলিকে মূলতঃ নিম্নের কয়েকটি ভাগে চিহ্নিত করা যেতে পারেঃ
(ক) প্রথমতঃ সে নিজেকে ভারতে একতার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে গিয়ে, শ্রমিক গনতন্ত্রকে ক্রমাগত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতী  কখনো লংঘিত হতে দেবে না। এই গনতন্ত্রের অভিমুখ যেহেতু, সর্বাত্মক একতা সেকারনে তর্ক-বিতর্কই,  'শ্রমিক চিন্তনের বদ্ধ দরজার উন্মুক্তি - সে কারনেই একতা এবং   উন্মুক্ত গনতন্ত্রকে  এক সুত্রে বাধা হয়েছে।
(খ) এই অভিিমুখটি  উন্মুক্ত করাই হবে, গনতন্ত্রের অভিমুখে শ্রমিক চিন্তনে নব বিকশিত   আত্মমর্য্যাদাবোধকে ক্রমে শ্রেনী এবং সামাজিক-রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন শ্রেণী হিসেবে
------- নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার পথে - অর্থনীতির যে সব বিষয়কে নিয়ে সামাজিক সম্পর্ক নির্মান হয়, সেগুলিকে সমাজের তলদেশ পর্য্যন্ত,  জ্ঞান এবং সংস্কৃতির অসংখ্য সামাজিক ধারার উন্মুক্তি ঘটিয়ে, শ্রমিক শ্রেনীকে নতুন ব্যবস্থার জন্য সংগ্রাম এবং সেই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য  হাতে কলমে উপযুক্ত করে তোলা।
(গ)   চিন্তন প্রকৃয়া যেহেতু  বিরাজমান ভাবপ্রবাহের অংগ এবং   এই ভাবপ্রবাহ যেহেতু বিশ্বপ্রবাহের অংশ, সেকারনে শ্রমিক  আন্তর্জাতিকতা যাতে কোন মতে খন্ডিত না হয় কিংবা শ্রমিক আন্দোলনের নামে কোন রকম সংকীর্নতা দ্বারা প্রভাবিত না হয়, সে কারনে, সি আই টি ইউ এর আন্তর্জাতীক নীতি হিসেবে তিনটি সুত্রকে সামনে আনা হয়েছিলোঃ
প্রথমতঃ বিশ্বের সব ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র কিংবা বৃহৎ ইউনিয়নগুলির সাথে সংযোগ রেখে চলা।পারস্পরিক সম্পর্ককে সমৃদ্ধ করে, পরস্পরের কাছ থেকে শেখা।এই সুত্রে প্রথমে নিজেকে  উপমহাদেশে শ্রমিক একতার কেন্দ্র হিসেবে পুনঃ নির্মান করা।
দ্বিতীয়তঃ সরাসরি কোন কেন্দ্রের সাথে তখনই যোগ দেওয়া  হবে কিংবা কোন নতুন  কেন্দ্র নির্মান করা হবে, যখন সি আই টি ইউ এর সাধারন একতার লাইনের উপরে, দাঁড়িয়ে সে এই একতার দিক নির্দেশ করার মতো নিজেকে উপযুক্ত করে নিতে পারবে।
তৃতীয়তঃ ইতিমধ্যে সি আই টি ইউ দিল্লীতে, ভারতীয় ইতিহাস, সেইং ইতিহাসে ভারতীয় শ্রমিকদের যোগদান, সেই যোগদানের ভেতর দিয়ে, একটি আন্তর্জাতীক শ্রেনী হয়ে ওঠার পথে তার আন্তর্জাতীক কার্য্যকলাপের সুত্র ধরেই - ভবিষ্যতের চলার পথ অন্বেষনে সে দিল্লীতে একটি গবেষনা কেন্দ্র গড়ে তুলবে। সেই লক্ষপথেই একদিন দিল্লীত কমরেড পি রামমূর্তী গবেষনা কেন্দ্রের পরিকল্পনা রচিত হয়।
উল্লেখিত লক্ষকে সামনে রেখে,
 শ্রমিকদের এক মনোলিথ বা একক শিলীভূত
 শক্তির ধারনাকে সামনে রেখেই, ১৯৬৭ সালের ট্রেড ইউনিয়ন
 দলিল এবং তা ক্রমে অগনিত ঘন্টার তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে,
এই মনোলিথ শক্তির মধ্যেঃ
একপ্রান্তে প্রদুষনের বিপদকে আটকে দেওয়া, অন্যপ্রান্ত সামগ্রিক একতার কথা মনে রেখেই, সি আই টি ইউ  -
বি এম এস সহ সবাইকে নিয়ে, শ্রমিকদের বামে-ডাইনে ভাগ করার সুযোগ না দিয়ে একতার নীতি নির্মান করেছে।
বিএম এস এর সাথে একতার প্রশ্নেওঃ দু'দিকেই বিপুল বিতর্ক হয়েছে।
এই ঐক্যের সুত্র নির্মানের সময় একপ্রান্তে কমরেড বি টি আর এবং
অন্যপ্রান্তে মাননীয় ঠ্যাংড়ে মহাশয় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নিয়েছিলেন।
পরের অংশে, দেখানোর চেষ্টা করবো - কীভাবে লেনিনীয় সাংগঠনিক রীতিনীতিগুলির উপর গুরুত্ব দিয়েই ১৯৬৭ লাইন এবং পরবর্তী 'কনভেনসন' সমুহ নির্মিত হয়েছিলও। (ক্রমশ)
Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours