সীমন্তী দাস, লেখিকা, দুর্গাপুর:

হঠাৎই এক ভুল পথের মোড়ে তোমাকে দেখেছিলাম, ফেরিওয়ালা।

চুড়ি চাই চুড়ি?
রবি ঠাকুর সেই ছোট্ট বেলা থেকেই তো বলছে  "ওতে চিনের পুতুল" আছে।
ওতে আর কিসের রহস্য বাপু?
পথ ছাড়ো।
ফেরিওয়ালা বললো, বাব্বা ঐ দাড়িওয়ালা বুড়ো কবে কি বলছে সেই নিয়ে এখনো বসে আছো খুকী?
এস, এস একবার দেখেই যাও।
বলেই সে ঝুলি খুলে বসলো।

তাতে রঙ বেরঙের স্বপ্ন।বারো মেসে রঙ।
সে বললো কি কেমন?
অবাক করা রঙ।
আমার এক্ষুনি সবকটা রঙের স্বপ্ন চাই।
সব রঙতো একসাথে পাবেনা খুকী।
না । না। আমার সব সব চাই।এক্কেবারে চাই।
সে হবে না।গম্ভীর গলায় বললো ফেরীওয়ালা।

সর্ত হলো ফেরিওয়ালা মাসে একবার আসবে।

মাস বুঝে খুকী কে একটি রঙ ও একটি স্বপ্ন দেবে।
বদলে কী দেবো তোমায় ফেরিওয়ালা?
মূল্য আমি বুঝে নেব গো।
বিনা পারানীতে যাবো না।
তুমি যা চাইবে তাই পাবে।
খুকী ধার বাকী রাখে না।
আজ আসি গো খুকী।
আজকের টা?
আজ নয়।

খুকী অপেক্ষা করতে থাকে। ফেরিওয়ালা না এলোও স্বপ্ন আসতে থাকে।খুকী অবাক হয়।এমন স্বপ্ন তো আগে দেখিনি। ফরিঙ ফরিঙ স্বপ্ন।ফিঙে ফিঙে স্বপ্ন।বা ভারি মজা তো।

এরমাঝেই কানে আসে হেমিলটনের সুর।ফেরীওয়ালা ডাকছে। না না যাবো না।আমার স্বপ্ন আছে।

পারে না।খুকী ছুটে যায়।
কিরে? আসবি না ভেবেছিলি তাই না।
খুকী মাথা নীচু করে থাকে।
আমার স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন চাই না।
আরে তোর ঐ স্বপ্ন? আরে আমার কাছে দেখ নদীর মতো বাতাসের মতো স্বপ্ন।
স্বপ্ন শেষে খুকী বলে কি দিতে হবে?সে হেসে বলে দিলিতো? এই দিন। এই দিনটা আজ থেকে আমার হলো।
মাসে মাসে ফেরীওয়ালা আসে।খুকী যাবে না ভেবে ও ছুটে যায়  মায়াবী সুরের টানে।
দিন শেষে ফিরে আসে এক মুঠো অলৌকিক স্বপ্ন নিয়ে।
এই ভাবেই শেষ হয়  বারোটা মাস। ফেরিওয়ালা চলে যায়।অনেক দূরে। অন‍্য কোন খুকীকে স্বপ্ন ফেরী করতে।

খুকীর ক্যালেন্ডারে এখন স্বাভাবিক ভাবে ই একটা করে দিন কম। এই সব দিনগুলো সে গর্ব  করে বেচে স্বপ্ন কিনেছে।
এই সব তারিখ হীন দিনে খুকীর ফেরিওয়ালাকে নয়---
রবি ঠাকুরকে খুব মনে পরে।

সখী যাতনা কাহারে বলে, সখী ভাবনা কাহারে বলে...


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours