ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য,ফিচার রাইটার, দুর্গাপুর:
" আমার তিনটি শর্ত আছে, ঘোষাল মশাই"- প্রথমতঃ আমি বরপন দিতে অনিচ্ছুক! দ্বিতীয়তঃ আমি এই ফাল্গুনেই বিবাহ দিতে চাই! তৃতীয়তঃ আমি আমার কন্যাকে আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে শিক্ষিতা করছি! চার পাঁচ বছরেই সে সুদক্ষা চিকিৎসক হয়ে উঠবে! আমার বাসনা সে নরনারী নির্বিশেষে আসা রোগীর সেবা করতে পারে! রোগাক্রান্তকে রোগমুক্ত করতে পারার সুযোগ পায় "বললেন রূপেন্দ্র!
রূপেন্দ্রর কথা শেষ হওয়ার আগেই ঘোষাল মশাই বললেন, " তাহলে তো মুশকিল হ'ল ভেষগাচার্য,আপনার শেষ শর্তদুটি আমি নিব্যূঢ় শর্তে স্বীকার করে নিলাম! আমার পুত্রও আধুনিক মনস্ক! সে তার স্ত্রীর স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে না, এ বিশ্বাস আমার আছে! কিন্তু আপনার প্রথম শর্তে আমি রাজী হতে পারলাম না! আমরা কুলীন ব্রাক্ষ্মন! বরপন গ্রহন আমাদের কৌলীক প্রথা! বরপন না নিয়ে আমি বংশমর্যাদাকে ক্ষুন্ন করতে পারব না!
রূপেন্দ্র বিস্মিত! ঘোষাল পরিবার রীতিমতো ধনী, অর্থের কাঙাল হওয়ার কথা নয়! দ্বিধাগ্রস্হ রূপেন্দ্র! সৌম্যসুন্দরকে তিনি চিকিৎসা করতে এসেই ভালবেসে ফেলেছেন! ছেলেটি সুদর্শন ও প্রখর বুদ্ধিমান!কিন্তু বরপন? কৌলিন্য প্রথা? দাঁতে দাঁত চেপে গম্ভীর হয়ে রূপেন্দ্র জানতে চাইলেন কি পরিমান বরপন তাঁকে প্রদান করতে হবে? তাঁর,সাধ্যের মধ্যে হলে তবেই তিনি সৌম্যসুন্দরের সাথে তাঁর কন্যার বিবাহের বিষয়টি চুড়ান্ত কর়বেন!
ঘোষাল মশাই গম্ভীর হয়ে উত্তর দিলেন, " সৌম্যসুন্দরের চিকিৎসার জন্য প্রথম দিন যে পরিমান 'বৈদ্যবিদায় ' গ্রহন করেছিলেন! ঠিক সেই পরিমান! একমুষ্টি আতপ চাল, এবং পাঁচটি কপর্দক !একটি মাত্র কপর্দক কম হ'লে আমি বর তুলে নিয়ে চলে আসব!"
রূপেন্দ্র অট্টহাস্য করে উঠলেন!
ঘোষাল মশাই বললেন," এটা হাসির কথা নয় ভেষগাচার্য! 'বৈদ্যবিদায় ' যেমন একটি কৌলিক প্রথা, কৌলীন্যমর্যাদা গ্রহনও তাই! ওটা দিতেও হয়, নিতেও হয়!
রূপেন্দ্র এবার সৌম্যসুন্দরকে জিজ্ঞাসা করলেন," তোমার কোন শর্ত আছে বাবা?"
সৌম্যসুন্দর নত মস্তকে বললেন," আছে আচার্যদেব! নদিয়য় গুরুদেবের চতুষ্পাঠীতে অদ্বৈতবেদান্তের পাঠ শেষ করে আমি আপনার নিকট অথর্ব বেদ অধ্যয়ন করতে যাবো! তিজলহাটিতে চকিষ্পাঠী প্রতিষ্ঠার বাসনা আমার নেই! বাবা মশাইয়ের সম্পত্তি দেখাশোনা দাদা ও খুড়োমশাই করতে পারবেন! বাবার অনুমতি নিয়ে আমি এখানে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র স্হাপন করতে ইচ্ছুক! আপনাদের আশীর্বাদে যদি সস্ত্রীক সে পুন্যকর্মের অধিকারী হই নিজেকে ধন্য মনে করব!
উচ্ছসিত আবেগে সৌম্যসুন্দরকে বুকে টেনে নিলেন রূপেন্দ্র!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours