গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

মঙ্গলবার সকাল থেকে সোনা আর গরুর দুধ নিয়ে পোস্টে পোস্টে সোস্যাল মিডিয়া ছেয়ে গেছে! দিলীপ ঘোষের একটি  মন্তব্য ঘিরে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়েছে, সোমবার বর্ধমান জেলায় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন, "ভারতীয় গরুর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তার দুধের মধ্যে সোনার ভাগ থাকে, সেজন্য ওই দুধের রঙ একটু হলদে হয়।"
বিতর্কের কারণটা খুব স্পষ্ট, দিলীপ ঘোষ মানে ভারতীয় জনতা পার্টি, মানেই আর এস এস, তারমানে গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের গরু নিয়ে বক্তব্য, মানা যায় না! তাই তুমুল হৈচৈ আর বিতর্ক!
বাংলার হোক, পাকিস্তানের হোক কিম্বা ব্রাজিলেরই হোক গরুর দুধের জনপ্রিয়তা কিন্তু পৃথিবীজুড়ে, গরুর দুধ এমন এক খাদ্যপানীয় যা বহুকাল ধরেই মানুষের দেহের প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। যদিও অন্যান্য গবাদি পশু যেমন ছাগল, মহিষ থেকেও পাওয়া দুধও প্রায় সমান গুরুত্ব বহন করে, তবুও বলতে দ্বিধা নেই যে গরুর দুধই সর্বাধিক পান করা পানীয়, যা কয়েকশো বছর ধরে বিশ্বজুড়ে গরু লালন পালনের মাধ্যমে উৎপাদিত হয়ে আসছে।
এই অনবদ্য ব্রেইন টনিক বা সুপার টনিকের মাধ্যমে আপনার শরীরে পৌঁছে যায় শরীরের চাহিদা অনুযায়ী ক্যালসিয়াম যা হাড় মজবুত করার অন্যতম উপাদান। বলা হয়ে থাকে দুধে উপস্থিত শতভাগ খনিজের ভেতরে ষাট ভাগই ক্যালসিয়াম, এছাড়াও পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, জিংক ও আয়রণের মতো গুরুত্বপূর্ণ 'খনিজ' উপাদান আছে, অর্থাৎ সোনা না থাকুক শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর পরিমাণে খনিজ পদার্থ এই গরুর দুধে কিন্তু আছে। এছাড়াও বিজ্ঞানসম্মত ভাবে খাঁটি গরুর দুধ রক্তকে বিশুদ্ধ করে। এ সমস্ত উপাদান গরুর দুধে থাকার কারণ হচ্ছে গরু যেহেতু ঘাস, ভুষি, পাতা ইত্যাদি খায় সেইহেতু বেশিরভাগ উপাদান এসব খাবারের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়। তাই অন্য কথায় একে ওয়ান্ডার টনিকও বলা হয়। গরুর দুধ একটু হলদেটে রংয়ের হয় কেন! সেকি সোনা থাকার কারণে! বিতর্কিত গুজরাতের জুনাগড় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োটেকনোলজি বিভাগের প্রধান ড. বি. এ. গোলাকিয়া এবং তার গবেষকদের দল কয়েক বছর আগে দাবী করেছিলেন যে গোমূত্রের মধ্যে তারা সোনা খুঁজে পেয়েছেন! কিন্তু গরুর দুধে সোনা থাকে কী না, সেটা তাদেরও জানা নেই ! তাদের বক্তব্য গরুর দুধে হলদেটে ভাব থাকে 'ক্যারটিনয়েড'-এর কারণে," একটি পাশ্চাত্য মিডিয়াকে জানিয়েছেন ড. গোলাকিয়া।                             
               
  এবার পৌরাণিক হিন্দু শাস্ত্রের যে কথার সূত্র ধরে এই মুহূর্তে রাজনীতির রঙ্গমঞ্চ সরগরম! গরুর দুধে সোনা আছে কি নেই! প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্রে উল্লেখ করা হয়েছে এক সূর্যকেতু নাড়ির কথা, গরুর কুঁজের মধ্যে দিয়েই নাকি গিয়েছে এই সূর্যকেতু নাড়ি! যার সঙ্গে সূর্যের সরাসরি সংযোগ আছে, শাস্ত্রমতে সেই কারণেই নাকি ঘি, মাখন ও দুধ স্বর্ণরঙা! আর সূর্য থেকে কুঁজ হয়ে সোনা তৈরির যে বক্তব্য যা নিয়ে এতো হৈচৈ, সেটার উৎস এই প্রাচীন হিন্দু শাস্ত্র, ঘোষ মহাশয় নতুন কিছু বলেন নি। হিন্দু শাস্ত্রের সব কথা সব ধর্মের মানুষকে মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই! আবার হিন্দু শাস্ত্রে বলা আছে বলেই সুইডো সেক্যুলার বুদ্ধিজীবী বা হিন্দু বিদ্বেষীরা রে রে করে তেড়ে আসবে এটাও ঠিক নয়, যেমন মানুষ শৃষ্টি বা মানুষের আত্মার শান্তির বিষয়ে নিয়ে এক ধর্মের ব্যাখ্যা অন্য ধর্ম মেনে নেয় না! খাদ্যাভ্যাস নিয়ে বিভিন্ন ধর্মের বিভিন্ন যুক্তি! ধর্মীয় তত্ত্ব সর্বদাই আবেগ নির্ভর,  প্রায়শই যুক্তিহীন! বিজ্ঞান আর শাস্ত্রের দ্বন্দ্ব তাই দীর্ঘদিনের!  গরুর দুধের উপকারিতার সম্পর্কে মুসলমানদের পথ প্রদর্শক আল-কুরআনের নিম্নোদ্ধৃত আয়াত সমূহ তার প্রমান:- “আর গৃহপালিত পশুর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে শেখার মতো উদাহরণ। ওগুলো দেহ-অভ্যন্তর থেকে আমরা এমন কিছু উৎপাদন করি (দুধ) যা তোমরা পান করো। ওগুলোর মধ্যে অসংখ্য উপকার আছে তোমাদের জন্য আর ওগুলো (গোস্ত) তোমরা খাও।” [২৩:২১]                        সোজা কথা এই সুপার ফুড সর্বগুণ সম্পন্ন গরুর দুধে সোনা থাকুক বা না থাকুক, গরুর দুধ খেয়ে সবাই তরতাজা থাকুক কারণ, এতেই রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি- 12, নিয়াসিন ও রিবোফ্লভিন যা আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখে,শক্তি বাড়ায় ও মানসিক চাপ দূর করতে সাহায্য করে, গরুর দুধ পান করলে সহজেই কিন্তু ঘুমের উদ্রেক হয়, ফলে মস্তিষ্ক শিথিল থাকে ও মানসিক চাপমুক্ত হওয়া যায়! বিশেষত রাজনীতিবিদদের মানসিক চাপ দূর করতে, শান্তির ঘুম নিশ্চিত করতে প্রতিদিন রাতে এক গ্লাস গরম দুধ পান করা উচিত। ওই দুধের নানান পুষ্টিগুণ, রাজনৈতিক কূটকচালি করা রাজনীতির সাথে যুক্ত মানুষদের আরও সুস্থ, সবল ও তর্ক বিতর্ক করতে সাহায্য করবে!!!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours