নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

পুষে রাখে যেমন ঝিনুক
খোলসের আবরণ মুক্তোর সুখ...
স্বপ্ন চলছে দিন , আমিও চলছি স্বপ্নের হাতে আত্মসমপর্ণের আকূতি নিয়ে । কখনো কখনো নিজের দিকে তাকিয়ে ভাবছি অক্ষমের গান গাইছি না তো!
আসলে আমি কিছুটা স্বভাবে জল পিপি , তাই যখনি আমি এক দ্বীপ ছেড়ে অন্য দ্বীপে যাই তখনি আমি মাপি , জল নয় জলত্ব , দ্বীপ নয় তার দীপতা।
আজকাল ফোন বিদ্রুপে আছি , আমার বলে কিছু সময় আর নেই , কুশল জানবার জন্য কিছু মানুষ আসে , কিছু দেয় ফোন কল , বাকী যা সময় তা কন্যাদের ভাগাভাগীর পর ব্যস্ততার  হা হুতাস।
মাঝে মাঝে মনে হচ্ছে আমার মুখের ভাষা , অনুভূতির দেশের আলো না পেয়ে একটা নিছক ক্রিয়া বিশেষণ । সব কেমন এলোমেলো নিরাশ্রয় শব্দের কঙ্কাল।
মাঝে মাঝে আরো ভাবছি , কি হলো বার বার জীবন প্রসব করে , জীবন দানের , জ্ঞানের কোন জ্ঞানই তো অর্জন করতে পারলাম না । জ্ঞান বিহনে কোন প্রেম নাই , আর প্রেম হীন জীবনে প্রাণ নেই , আর যেখানে প্রাণ নেই , সেখানে জ্ঞান বলে কিছু নেই । শুধু মানুষের মাঝে ভিড় বাড়িয়ে যাচ্ছি না তো?
চারপাশের জীবন যাপনের মানুষ গুলোর কচ্ছপের চামড়ার মত কঠিন একটা ভাব।
মাকড়শার জালের মত জড়িত চোখ , আর ভেটকী মাছের হাসি দেখতে দেখতে ভুলেই গেছি আসলে , মানুষ পাইন গাছের মত উঁচু হতে পারে দয়ায় বা প্রেমে , কিংবা মানবিকতায়।
আমার অপারগতার দেয়ালে যত ভাঙ্গা গ্লাসের কাঁচ  আমি স্তুপ করে রেখেছি , অনেক রক্তের দাগ তাতে আছে , বেদনার অন্তহীন ভাঙ্গা চোড়া। সেখানে যেন সমস্ত বেদনা ঝন ঝন করে কেঁপে উঠে।
এখন যে চামড়াটা মেরুদন্ডটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি  , সেটা কেবল শীতের দেশের দেবদারুর মাংসের মত দৃঢ়তা । হয়ত আমার হাসির শব্দ সমুদ্র পারের ফরসা শঙ্খের মতো নিটোল কিন্তু ঘন। তবুও ভাঙ্গা গলা , শীতকালের দেবদারু গাছ হয়েও আমার স্বপ্ন দেখতে ভাল লাগে। কেন লাগে জানি না । জানি নিরাশা ধিক্কারে ভরাতুর এক স্বপ্ন , নীলিমায় নীলিমায় সূর্যে রৌদ্রে আকাশ পথে পাখির পালকে নেমে আসে।
আমি জানি অতীত বিলাসে মুক্তি নেই কোন , কোন ভবিষ্যত নেই , তবুও আশায় হয়ত বেঁচে থাকবো কোথাও কোন কান্তিময় আলো দেখবার জন্য। দূর্দশা থেকে এগিয়ে যাবো স্নিগ্ধ আঁধারের দিকে।
আমার ভেতরে আমি কখনো আগুন বাঁচিয়ে রাখতে চাইনি । বিকেলের নদীর মত , নক্ষত্রের রাত্রীর মত স্নিগ্ধ হতে চেয়েছি। যদি তা না পেরে থাকি তা শুধু মানুষ হয়ে জন্ম নেবার প্রতিবন্ধকতার জন্য। মানব সত্তার আত্মার মাঝে একটা নতুন দিনের তাপহীন সূর্য হতে চেয়েছি বার বার।
স্বপ্নের ভেতরে ঘুমিয়ে স্বপ্নের মধ্য দিয়ে ঘুম ভেঙ্গেছে আমার । কিন্তু অবশেষে যে সত্য জেনেছিল সেটা হলো এ পৃথিবী স্বচ্ছ ঘুমের পৃথিবী নয় । এই ঘুম আর স্বপ্ন নিয়ে অনেক আগে আমি কাফকার একটা বই পড়েছিলাম। তার স্বপ্ন বৃতান্ত , তার জেগে উঠা শয়ন স্বপ্ন ঘুমোঘোরে পাওয়া অনেক কিছু । তখন আমি পাগলের মতো এই সব নিয়ে ভাবতাম , মেতে উঠে ছিলাম নিজের অতল কে জানবার । তবে অভিজ্ঞতা কাজে যে লাগেনি তা নয়।
আমার কাছে জীবন চিরকাল উর্ধ্বগামী নদীর নত , স্বপ্ন দিয়ে সাজালে বহু বণির্ল হয়ে উঠে।
বৃষ্টি ভেজা  কাঁচের জানালায় দু হাত ছড়িয়ে দিয়ে যদি গান টা ধরেন --"
“যাও পাখি বল হাওয়া  ছলছল
আবছায়া জানালার কাঁচ
আমি কি আমাকে হারিয়েছি বাঁকে
রূপকথা আনাচ কানাচ..."
একবার নয় আরো আরো একবার , অসম্ভব  নয় কিছু , নতুন করে দেখতে ইচ্ছা করবে আঙুল গুলোর শূন্যের দিকে ছড়িয়ে থাকা , গেঁথে থাকা হাস্যভর স্বপ্ন শুধু স্বপ্ন ...... এটা কিন্তু মোটেও খালি পাগলামী নয় !
জীবনের কোনো অধ্যায় হয় সুখকর আবার কোনো কোনো অধ্যায় হতে পারে অসহনীয় নিরবধি দুঃখে রচিত। তাতে কি! জীবন গাড়ি চলতে চলতে  স্টেশন তো পাবেই।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours