সৈয়দ কামরুল, কবি, প্রাবন্ধিক ও  
সম্পাদক, কবিতালাপ, নিউইয়র্ক, আমেরিকা:

বিশেষ করে বাঙালি নারী যখন মধ্য বয়সে পা রাখেন, নানান শরীর অনুষঙ্গ তার মনকে অস্থির করে তোলে। টরেন্টোর সাইকোএ্যানালিস্ট এলিয়ট জ্যাকস নরনারীর এই সংকটের একটা নাম দিয়েছিলেন, একটা শব্দবন্ধ কয়েন করেছিলেন, মিড-লাইফ ক্রাইসিস (যদিও বর্তমানে বিজ্ঞজনেরা তা মানেন না)। আমি কিন্তু সেটা মানি। আমার মতো কোটি কোটি মানুষও তা মানে।

এই মিড-লাইফ ক্রাইসিস প্রকট হয়ে ওঠে যদি ডিভোর্সের মতো একটা ইভেন্ট কারো মধ্য বয়সে ঘটে। ঝড় যেমন হঠাৎ সাজানো বাগানকে বিস্রস্ত করে দেয় তেমনি ডিভোর্স ইভেন্ট এলোমেলো করে দেয় মাঝ বয়সের নারীমন। মাঝ বয়সের নারীর সমাজ জীবন। তেমনটা ঘটেছিল প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদের প্রেমিকা, প্রিয়বধূ, গুলতেকিনের জীবনে। এই ফেনোমেনন গুলতেকিনের জীবনে তার মিড-লাইফ ক্রাইসিসকে ট্রিগার।  করেছিল। ছাড়াছাড়ির ইভেন্ট তার মিড-লাইফ ক্রাইসিসে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মতো দহন জ্বেলেছিল, একটা stressor প্রচন্ড বেগে স্টেরয়েডের মতো ছুটে এসে হাই-ম্যাগনেচ্যুড তৈরি করেছিল তার মনস্তত্বে। গুলতেকিন বয়ে বেড়াচ্ছিলেন একটা মনস্তত্বের ট্রাউমার অসহন।
গুলতেকিন সেই stressor নিয়ে মনোজগতে ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিলেন বছরের পর বছর। বাংলাদেশের সমাজ অনগ্রসর সমাজ। সেখানে ডিভোর্সি নারী যদি তিনি মধ্য এসে ডিভোর্সড হন, ভাবটা এমন তিনি যেন পাপ করে ফেলেছেন। তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে তার আচমকা একটা alienated অবস্থা তৈরি হয়। ভিড়ের ভিতর তিনি একটা দ্বীপ বনে যান। তার দ্বীপের মতো বিচ্ছিন্ন জীবনে মনের আকাশে মেঘের পরে মেঘ জমতে থাকে।

শিক্ষিত, মার্জিত, রত্নগর্ভা মা গুলতেকিন খাঁন দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে গুলতেকিন খাঁনের এই অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও পজিটিভ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানাই। তিনি শুধু একজন পুরুষকে বিয়ে করেন নি। তিনি বিয়ে করেছেন একজন কবিকে। কবিতা ও শিল্প সাহিত্যের প্রতি গুলতেকিনের আজন্ম অনুরাগ। তার ডিএনএ প্রোফাইল স্ট্রীমে এমবেডেড হয়ে আছে শিল্পানুরাগ। এই সিদ্ধান্ত তার জীবনের তাবৎ ‘অপ্রকাশের ভার’ একজন সংবেদী কবির চিত্তে প্রকাশ করার চেস্টা।

হুমায়ুন আহমেদের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ির পর প্রয় কুড়ি বছর পেরিয়ে গিয়েছে। যে নারী পারসোনা এতোটা প্রলম্বিত সময় বিরহী জীবনের নি:সঙ্গ যাতনাযাপন পার হয়ে এসে দ্বিতীয় বিয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তা কোন বিদ্বেষপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়। তা একজন পরিশীলিত নারীর সুসংহত মনের সিদ্ধান্ত। আচমকা ধাক্কায় bruised হয়ে যাওয়া ego কে সারিয়ে তোলার জন্য জরুরী সিদ্ধান্ত।

গুলতেকিনের এই শিল্প-প্রমিত সিদ্ধান্তকে কতিপয় লোকজন স্থূল ভাষায় প্রত্যাখ্যান করে ফেসবুকে কদর্য স্ট্যাটাস দিয়েছে। এদের মধ্যে একজন সংবাদকর্মীও আছে। বিস্মিত হইনি। এটা এক শ্রেণির বাংলাদেশী লোকজনের প্রাক-শিক্ষিত মনের সংস্কৃতি। তারা একটা ঘটনাকে বুদ্ধিবৃত্তি বা rationality দিয়ে ব্যবচ্ছেদ না করে তার বিরুদ্ধে হুটহাট ভর্ৎসনা উগরে দেয়।

আজ গুলতেকিনের মেঘাবৃত আকাশে অনির্দেশ ওড়াউড়ির বিরতি হলো। তার মেঘে ছাওয়া আকাশে দেবতা এ্যাপলো চার ঘোড়ার চ্যারিয়টে চড়ে রোদ্দুর ছড়িয়ে দিয়েছে এন্তার। এবার গুলতেকিন আর তার সখা ডানায় ডানায় উড়বে ভালোবাসার ভেলোসিটি রবিকরোজ্জ্বল অথৈ প্রেমের নীলিমায়।
প্রিয় গুলতেকিন ও কবি আফতাব আহমেদ, আপনাদের জন্য অফুরান শুভেচ্ছা অনাগত দিনের প্রতিটি মুহুর্তকে লিরিক আঙুলে বুনুন ভালোবাসার একটি চাদর। জড়িয়ে রাখুন দুজন দুজনকে। বেজে উঠুক ভালোবাসার মোৎসার্ট, প্রেমের সনাটা।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours