জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:

একবার তিনি বোঝালেন - "Jivan,  don't  waste one bullet for a single target, but fire one target man"  অর্থাৎ যে কোন সংগ্রামে এমন একটি   নিশানাকে চিহ্নিত করে শেকর ধরে টান দিতে হবে যাতে
----- আনুসাংগিক সব বিষয়গুলি মাটি ফুরে বেড়িয়ে এসে আনুসাংগিক সব কিছুকে কামানের গোলার মুখে নিয়ে আসে।ছোট্ট কথা, যখন শুনেছিলাম তখন বিষয়টিকে খুব ক্ষুদ্র গন্ডিতে দেখেছিলাম, বুঝেছিলাম - তাও আবার একেবারে অর্থনৈ্তিক দাবী দাওয়াকে ঘিরে। পরে ক্রমে বুঝেছিলাম, ব্যক্তিগত,  কিংবা মেসিন কেন্দ্রিক দাবী কিংবা শিল্প ভিত্তিক দাবী থেকে সামাজিক দাবীতে উত্তরন ঘটানোর এটাই একমাত্র পথ।
---- একেবারে  ইদানিং কালে,  সেই ছোট্ট কথার অর্থটাকে নতুন করে আবিস্কার করলাম।  মানুষের ভাব জগতের মানবিক উত্তোরনে,
বৈপ্লবিক অভিমুখ হিসেবে খুজে পেলাম।
সামাজিক রুপান্তরের প্রশ্নে, লেনিনবাদের সৃজন মুখীনতার সমস্যা এখানেই। যে সব নেতারা ফরমুলায় নেতা - যারা, বায়ে গিয়ে ডাইনে, ডাইনে থেকে আবার ডাইনে, এমন ফরমুলায় ট্রেড ইউনিয়ন শিখেছেন, তাদের সামনে নতুন কিছু আসলেই, সেই ধর্মঘট ভাঙ্গায় শ্রীমতি মমতার বাঁশধারীদের পাঠিয়ে দেওয়ার  মতোই গতানুগতিক  পন্থিরা তাড়া করবেনই।
----- বুঝবার জন্যে বলি। ট্রেড ইউনিয়ন দাবীকে  একটি বিশেষ বিন্দুতে চিহ্নিত করে, সামাজিক রাজনীতৈক রঙ্গমঞ্চের কেন্দ্রবিন্দুতে পৌছে দিতে
----- কাজের ঘন্টা কমিয়ে তিন থেকে  চার সিফট কাজের দাবীকে একটা সাধারন ধর্মঘটের কেন্দ্রিয় দাবী হিসেবে রাখা হোল। ধর্মঘটে বিপুল সারাও পাওয়া গেলো।এই সফলতা সত্বেও  সরকার থেকেও, আমাদের এই দাবীর সম্ভাব্যতার বিষয়টি আগে মনে হোল। আমার কয়লা ছেড়ে আসার পরে দাবীটারো এমনিভাবে পঞ্চাপ্ত পেলো।
এখানেই বুঝতে হয়, আপনি যখন 'গোলাটা'  ফেলছেন, তখন যদি স্মরনে রাখেন, গোলাটা যক্ষপুরীর সদরদরজায় ফেল্লেও, লক্ষহোল 'দৈত্যকুল' এবং রাজনী্তির বিচারে দানস সাম্রাজ্যের নিধন।
------ আজকের নিয়ম কানুন মেনে নিয়ে যদি ভাবতে শুরু করেন, তবে ঠিক কথা ----  কোন সরকার মানতে যাবে তিন থেকে চার সিফট।
------- কিন্তু ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোনকে দাবীটি রাখতে গিয়ে, কোন বুনিয়াদী দ্বন্দ্বের ভিত্তিতে, দাবীটি রাখা হয়েছে সেটা বুঝে নিয়ে 'পরিনতির' কথাটি দুরগামী ভবিষ্যতের বিবেচনাতে রেখেই বিষয়টিকে সামনে আনা হবে কিংবা বিবেচনা করতে হোত।
সম্প্রতি ভারতের অন্যতম বরেন্য অর্থনীতিবিদ এবং জে এন ইউ এর  আমিরেট অধ্যাপক, কাজের ঘন্টা কমানোর আর্থ-রাজনৈতিক দিকটিকে
উন্মোচিত করেছেন। তিনি যা বোঝালেন, সেখানে দ্বন্দ্বটি এখানেইঃ
------ কোন সরকার যান্ত্রিকরনকে যখন ক্রমাগত প্রযুক্তিকরনে নিয়ে গিয়ে শ্রমিককে কমিয়ে দিয়ে সামাজিক সংকট সৃষ্টি করছেন তখান শ্রমিকরা কাজের ঘন্টা কমিয়ে দিয়ে, কাজের স্থানগুলি সংকুচিত হতে দিতে অস্বিকার করছেন।
 কোন দাবীর সম্ভাব্যতার তত্বকে কমরেড বি টি আর কাজের অধিকারের দলিলে ব্যখ্যা করেছেন।   কমরেডদের অর্রথনীতিবাদী বা আত্মসর্বস্ববাদী ধারাটি , যখন  জানিয়ে  দেন
----- "যুক্তি তো ঠিক, কিংন্তু এই দাবীকে যদি কোন সরকারকে মেনে নিতে হয়, তবে তো তাকে, 'বাজার অত্থনীতি থেকে' সমাজতান্ত্রিক বিশ্ব বাজার নির্মানের দিকে হাটতে হবে।

একেবারে হক্ কথা। যিনি বল্লেন, মারো গোলা একটা, কিন্তু সব ভিমরুলকে 'চাক' ছেড়ে বেরিয়ে আসতে বাধ্য কর। অর্থাৎ টারগেট যখন করা হবে, তখন পূরো শেকরটা ধরে টান মারতে হবে --
কাজের অধিকারের দলিলে, উনি যে দাবীর সনদ দিয়েছেন, সেখানে, কাজের সময় কমানোর দাবী থেকে, নিরন্ন বস্ত্রহীন শিক্ষাহীন এবং তার সাথে  নিপিড়ীত নির্যাজিত অপমানিত - ইত্যাদির সবাইকার দাবী, যারা আত্মমর্য্যাদার দাবীতে সোচ্চার হচ্ছেন সবাইকার দাবী রেখেছেন।
------- সব শেষে বুঝালেন, এসব দাবী আর বর্তমান কাঠামোর মধ্যে আদায় করা যাবে না। বুঝালেন, যদি ন্যায় এবং সত্যের সাথে শ্রমিক শ্রেনীকে টিকে থাকতে হয়, তবে তাকে ঘোষনা করতেই হবে - সমাজতন্ত্রকে বাদ দিয়ে, ন্যায় এবং সত্যের পথে ভারতের এগিয়ে যাওয়ার সব পথ বন্ধ।

কাজেই বুঝতে হবে, ন্যায়ের দাবীর প্রশ্নে যারা সম্ভাব্যতার কথা উঠান তারা কার্য্যতঃ সোভিয়েত উত্তর কালে, আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্রের, ইতিহাস স্তব্ধ হয়ে যাওয়া এবং দাসত্বের তত্বে আত্মসমর্পনের প্রবৃত্তি থেকেই বলেন।

দুই।

এই সুত্রেই অন্য বিষয়টিকে স্মরনে রাখতে হবে,
বর্তমানেদেশের জাতীয় সংগীত এবং পতাকা সমেত  সংবিধানকে বদলে দিয়ে সংসদীয় কাঠামোটাকে বদলে দেওয়ার চেষ্টাটাকে ক্রমাগত এগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, সেটাকে আটকে দিতেও
-------- শ্রমিক সহ মানুষের সে সব দাবীগুলিকে সামনে আনতে হবে, যে সব দাবী শেষ বিচারে, সংবিধানে দেওয়া ন্যায় এবং  সত্যকে সমর্থন করবে। সেখানে সম্ভাব্যতার তত্বে বেঁধে দাবী ঠিক করার অর্থটাই হবে - সংবিধান এবং সংসদীয় কাঠামো ভেংগে দেওয়ার  প্রশ্নে শত্রুদের একধাপ এগিয়ে রাখা।

এই সুত্রেই ইতিহাসের অন্য একটি সুত্রকেও আজকের দিনে চিন্তার মধ্যবিন্দুতে ধরে রাখা উচিত হবে।সংবিধান বদল, সংসদীয় ব্যবস্থাকে সংকুচিত করা কিংবা অর্থনীতির অভিমুখ ফ্যাসিবাদী পথে এগিয়ে দেওয়ার প্রশ্নে শুধু বিষয়গুলি ঠিক হয়ে গেছে তাই নয় -পুরো দেশটাকেই 'সংবিধানক সামনে রেখাই উলটে দেওয়ার  যা কিছু প্রয়োজন, তার সব কিছু বিজেপি সরজকারে মুঠোতে ,
------- তবু যে শাসক এবং তার আন্তর্জাতীক সাকরেদরা ,  এখনো যে কেন  এই বদলগুলি করে  দিচ্ছে না, তার কারন একটাই; অন্যদিকে মানুষ এবং সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের শক্তিটাও বিপরী শক্তির  এই 'দুর্বকতাতেই।
------  সত্যেকে যদি মেনে চলতে হয়, তবে স্বিকার করতেই হবে, অর্থনীতি থেকে যখন বন্ঠন ব্যবস্থাকে তুলে নেওয়া হোল, তখন সেই কংগ্রেস আমলেই, সংবিধানের 'সমাজতান্ত্রিক' এবং 'সামাজিক ন্যায়ের' ধারাগুলি অব্যাহত রাখাটাই একটা ব্যতিক্রম । আরে এই দুটি ধারা উঠে গেলে, আইনের চোখ সমতা এবং তার সাথে যুক্ত সব ধারাই কার্য্যতঃ বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
----- নিজেরই অনেক সময় লজ্জ্বা হয়েছে, কতকগুলি মিথ্যাকে রেকে জাল বুনতে। নিজে কয়েকবার সংসদে তুলেছি এবং জানতে চেয়েছি - "এখন আর সংবিধানের প্রাসংগিকতা কোথায়?

তিন।

শ্রীমোদির হাতে ক্ষমতায় আসার পাচ বছরের মাথয়, অর্থনীতিতে বৈসম্য যেভাবে, দাসত্বে নেমে গেছে এবং দাসত্বকে স্থায়ী করতে যেভাবে দেশকে শুধু আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রের- সাথে বেঁধে ফেলাই হয় নাই
----- ওদের সেই ইতিহাসের পরিসমাপ্তির নীতির সাথে, ভারতে ইতিহাস এবং বিজ্ঞান বধের কর্মসূচীর সাথে এক সুত্রে বেধেছে এবং ধর্মান্ধতা নিয়ে এসে যেমনভাবে সংবিধানের সেকুলারিজম সমেত, সমতার অন্যান্য বিষয়গুলিকে যেভাবে শেষ করে দেওয়া হয়েছে, শ্রেণীগত দিক দিয়েও ভারত বিশ্ব সম্পদ কেন্দ্রিকরনে দ্বিতীয় হয়ে যাওয়ায় এক প্রান্তে যখন দাসত্ব একেবারে উচুতে উটে এসেছে, তেমনি ফ্যাসিবাদী শক্তিও একান্তভাবে শক্তিশালী
-----  এসব সত্বেও, ভারতীয় ফ্যাসিস্তদের  হাতে, যেভাবে সবকিছু বদলে দেওয়ার শক্তি চলে আসার পরেও, যে কেন সব কিছু এখনো বদলে দিতে এখনো সময় নিচ্ছে
----   এসব প্রশ্নের জবাব এসেছে, মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানার নির্বাচনী ফলাফলে।
এই বিন্দুটাকে বুঝেই, শুধু 'সম্ভাব্যতা কিংবা অসম্ভাব্যতার' বিষয় থেকে দূরে এসে, সেই বিন্দুটাতেই বোমা ফেলা প্রয়োজন হবে,যেখানে আঘাত হানলে, সব ভিমরুল চাক ভেংগে বেরিয়ে আসবে তাই নয়
----- পূর্বের লেখায়, ফ্যাসিবাদের স্বপক্ষে ইতিমধ্যে মধ্যবিত্তের উচু অংশকে নিয়ে, 'দাসত্বের' সমর্থনে যে মঞ্চ নির্মান করা হয়েছে তিলে তিলে সেখানেও আঘাত করতে হবে।
সেখান থেকেই খুজে বের করতে হবে,
 যক্ষপুরির সেই সেই সদর দরজাটিকে, যেখানে কামানের গোলা পরলেঃ

(১) কাজের অধিকারের দাবীর স্বপক্ষে কমরেড বি টি আর যে দাবীগুলিকে উল্লেখ করেছেন, কাজের ঘন্টা কমানো সমেত সব দাবী ধরা পরবে।
(২) সে সব দাবী শ্রমিক আন্দোলনের সাথে সাথে ছাত্র, মহিলা ,যুব, সংস্কৃতির সাথে যুক্ত সব মানুষ এক সুত্রে বাঁধা পরবে।এইভাবে 'চিলিতে' গনবিদ্রোহের মতো পরিস্থিতি নির্মান করবে।
(৩) এই পথেও, ফ্যাসিস্ত কেন্দ্রিকতা এবং দাসত্বের কারনে যখন নারীদেহই বানিজ্য প্রতিযোগিতার বিজ্ঞাপনেই নয়, নারীত্ব বিনাশ - শিশু কিশোরীর উপরেও জঘন্যতায় নেমে এসেছে এবং এসব সামাজিকভাবেই নয়, কার্য্যতঃ রাজনৈ্তিক দিক থেকেও প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাচ্ছে
----- তখন যক্ষপুরির ফটক দরজায় বোমা পরার সাথে সাথে, নারীত্বের মর্য্যাদার বিষটি নারী আন্দোলনের মধ্যমনি হয়ে দাড়াবে।একজন মহিলা এম পি যখন বলছেন - বলাৎকার নাকি ভারতীয় প্রাচীনত্বের অংগ
তখন বুঝতে হয় - এসব কিভাবে সমাজে প্রাতিষ্ঠানিক হয়ে যাচ্ছে।

শুতরাং BOMBER THE SLAVERY, দাসত্বের উপরে কামান দাগুন
এক সাথে সব ধরা পরবে। এই সুত্রেই কমরেড বি টি আর শেখালেন -
" JIVAN DON'T WASTE ONE BULLET FOR A SINGLE TARGET. TARGET ONE AND KILL MANY." (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours