নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

"এ স্কেচ অব মাই লাইফ " আজ বড় আলসেমিতে পেয়েছে , বই পড়ছি না , কিছুই ভাবছি না , কাজ ও করছি না ,তবে কি ?
এই হলাম আমি !
একটা মানুষ , যেমন হবার কথা ছিল , তার বদলে হলাম কি ?
মনে মনে একটা পৌরাণিক যুগ পার করছি , বসে আছি কোন অতিদুর পিছন দিনে । একটা নৈসর্গিক আনন্দ আমাকে ঘিরে আছে । অবশ্য কিছুটা স্বার্থপরের মতো আছি । এটা অবশ্য স্বাভাবিক , মানুষ মাত্রই আত্মকেন্দ্রী। ভাবতে গেলে আমাদের সমস্ত নৈসর্গিক আনন্দই তো স্বার্থপরতা।
আজকের এই আত্মকেন্দ্রিক আহ্লাদেপনার প্রতি মুহুর্তে কানের কাছে এক জপ: দেখো দেখো , তোমার প্রাপ্য তুমি পেয়েছো । শুনলাম পৃথিবী থেকে ভালোবাসা লোপ পেয়ে গেছে।
আমার মনটা ঈশ্বর ঘেষা মন , তাই শাস্তি - প্রায়শ্চিত্তের ভাবনা সহজেই উঠে আসে মনে। আমি অল্প নিয়ে থাকি বলে যা যায় তা যায়। একটা পাখি কি যেন বুকের মাঝে গেয়ে যাচ্ছে - নজরুলের সেই গানটাই মনে হয় " শূন্য এ বুকে পাখি..." বহুদিন পর যেন কুহু কুহু কুহরিল মহুয়া বনে ! বিপদের সাথে খেলা করে জীবন ধারণ কাকে বলে , বহু চেনা স্বর , চেনা মুখ যেন খুঁজে পেয়েছি এ সময়টাতে।
আমার পুরোনো বন্ধুরা অপেক্ষা করছে , আগের নিয়মে মাসের শেষে , পার্কের ময়দানে , শীতের সকালে প্রথম প্রহরের প্রথম যামে। শুধু আমার আসার অপেক্ষায় । আমিতো আছিই তোমাদের সাথে কান্নার সংসর্গে, সৃজনের স্বর্গে, শিশুদের পারিজাতে, পরিযায়ী পাখিদের সাথে। আমি তোমাদের ভালোবাসি বন্ধু!
গতরাতে কিছুতেই ঘুমাতে পারিনি , কোন ঘুমের ঔষধ ও আমার চোখের পাতায় ঘুম আনতে পারেনি । জেগে জেগে সানাই শুনলাম , সাথে জোনাকির কোরাস।
আমার স্বপ্নানুভূতিতে আঘাত করেছে ধূসর উর্দি পরিহিত স্মৃতি হন্তারক অসুখের ট্যাবলেট! একেকটা নির্ঘুম রাত কেটে যায় দুঃস্বপ্নের মুর্দাফরাসদের মুহুর্মুহু কাতরতায় ।আমি যেন সবুজ ঐন্দ্রজালের ফাঁদে স্বেচ্ছাবন্দী ।
মনে মনে ভাবলাম আচ্ছা আমার একলা থাকার ক্ষণগুলো কাকে দেবো ? যারা পৃথিবীর দেদার মায়ায় ব্যস্ত পরিপাটি স্বপ্নের ঘুমে কাতর । তারা কি করে বুঝবে একলা কাকে বলে .. দিতে চাই নিতে কেহ নাই "
আসলে পুরো পৃথিবীটা চলছে টাকা আর প্রচারের গ্রাস , শাসন ও নেই , শৃঙ্খলাও নেই , কার কাছে বলবো , কাকে নিয়ে অভিযোগ করবো , এরা সবাই আমার আত্মীয় বন্ধু পরিজন , বাকী সব নিজের ছেলে মেয়ের মতো।
গোলক ধাঁধার জীবন মাঝে বুঁদ হয়ে রই সব ভুলে, আপন পর শত্রু মিত্র।
বহুদিন আগে সরেজিনী নাইডুর কবিতা পড়ে , আমার মাঝে একা একলা হওয়ার ভাবুক সত্ত্বায় পেয়ে বসেছিল । আমার ঝড় জর্জর জীর্ণ কুটিরে ধাক্কা দিয়েছিল তার কবিতা । আমি ভাবতে শিখেছিলাম বাকী জীবন আমার কি অবলম্বন হবে , সেই টুকুই লজিক।
জীবনের যদি কোন একটা মানে নিজের চারপাশে খুঁজে না পায় , মানুষ বিপন্ন সেই অথর্হীনতার মুখোমুখি তাকে খুঁজে নিতে হয় এক ধর্ম । শূন্যতার সামনে দাঁড়ানো মানুষ কখনো কখনো তাই নিবার্চন করে নেয় ম্যাজিক কিংবা নার্কোটিক , আজকালকার ভার্চুয়াল সম্পর্ক গুলোকে !
শিল্প বিপ্লবের পরেই ভেঙ্গে গেছে মানুষের সব গৃহাশ্রয় ! জন্মনিরোধের ধারণা , প্রেম আজ কেবল শাররীক সংঘর্ষ বিবাহ এক সুবিধাজনক সাময়িক চুক্তি । আকস্মিক জন্ম আর আকস্মিক মৃত্যুর মাঝখানে সীমায়িত এই জীবনের মানে হয়ত আছে , তার সীমার বাইরে , একদিন মানুষ তা বিশ্বাস করেছে কোথাও আছে হয়ত তার শৃঙ্খলা।
এক ধারাবাহিকতা , বুদ্ধির অগোচর কোন কল্যাণ ভরা অস্তিত্ব আছে হয়ত কোথাও , এই বিশ্বাসের সামনে ছিল ঈশ্বর।জীবনের বাইরে জীবন গুলো জীবনের আর কোন মানে খুঁজে পায় না , সে দেখে শুধু পাপের ছায়া , শুধু দু:খের ছায়া , ভগ্নস্তুপ আর শূন্য গহ্বর । তার প্রভাব দেখা যায় কবিতায় যুক্তিতে।পরে আর দু:খের কথা ছাড়া কিছুই থাকে না।
আমাদের বতর্মান অবস্থা দেখলে বোঝা যায় , বয়সন্ধির আকস্মিক অভিজ্ঞতার সামনে এসে তরুনরা যেমন হয় , আমরা আজ তেমন বিপর্যস্ত ভারসাম্য হারা । আশা রাখছি পরিণতি আসবে একদিন , শরীরে মনে সামঞ্জস্য হবে একদিন, প্রাপ্তির সঙ্গে সভ্যতার । বিশ্বাস হারানো পাপ বলেই আমি এই নির্ভরে বিশ্বাস রাখি ।
আমি মানি পূর্ণ আত্মা যেমন খুঁজে পায় পূর্ণ আত্মার ঠিকানা , মন যদি তার মতো হয় , তবেই সে মনের মত হবে । কারণ মানুষেই কেবল পারে তার মন কে একটু একটু গড়ে তুলতে , পারে গ্রহিষ্ণু ও সহিষ্ণু  করে তুলতে । এমন সব ভাবনা আমার খালি পাগলামীর একটা অংশ ও হতে পারে ।
জীবন সত্যই গোলকের মধ্যে, যেখান থেকে শুরু সেখানেই এসে মিলে যাবে। এটাই  চরম সত্য!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours