দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য পদ পেয়েছেন অনেক অরাজনৈতিক ব্যক্তি। আজও সেই নিয়মে আচার্য হন বিশেষ ব্যক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাই ছিল। কস্মিন কালে রাজনৈতিক জরিপ মঞ্চ এটা ছিল না। একসময় গুরুদেব নিজে, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, আচার্য ক্ষীতিমোহন সেন প্রমূখ সমাবর্তন করতেন। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত। সেই সময় কাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সেই ধারাই বহাল ছিল। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মারা যান। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তারপর আক্ষরিক অর্থে প্রথম সমাবর্তনে আসেন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু। যদিও, শুধু প্রধান মন্ত্রী হিসেবে নয়, বিশ্বভারতীর সাথে ছিল তাঁর প্রাণের সম্পর্ক।
রীতি মোতাবেক সমাবর্তনে প্রধান মন্ত্রী আচার্য হতে থাকেন। তবে স্ট্যাটুউটে কোথাও বলা নেই যে, প্রধান মন্ত্রীকেই উপাচার্য হতে হবে। আসলে কেউ বিরাগভাজন হতে চান না। যাইহোক, ইন্দিরাগান্ধী পর্যন্ত এই প্রথা ছিল। পর্যায় ক্রমে চরন সিং, চন্দ্র শেখর একটা সময় প্রধান মন্ত্রী হলেও কেউ বিশ্বভারতীর আচার্য হন নি। তবে, মোরারজি দেশাই বিশ্বভারতীর আচার্য হন। ইন্দিরা গান্ধী যখন হেরে গেলেন, তারপর প্রধান মন্ত্রী না হয়েও, উমাশংকর যোশীর মত স্বনামধন্য কোন ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর আচার্য করা হয়। উমাশংকর যোশী গুজরাতি ভাষার সাহিত্যিক ছিলেন। জ্ঞানপীঠ পেয়েছিলেন। পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু সেই সমাবর্তনে লোক হল না। তবুও তিন বছর সেই পদেই আসীন ছিলেন তিনি। তার পরের বার ইন্দিরা গান্ধী জিতে ফিরে এলেন। যথারীতি ইন্দিরা গান্ধী জিতে ফিরে এলেন ঠিকই, তবে তাঁকে প্রধান মন্ত্রী হিসেবে আচার্য করা হয় নি। ব্যক্তি হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীকে উপাচার্য করা হল। সেই রীতিই চলে আসছে। এই রীতিই রবীন্দ্রনাথের জীবিত কালে বহাল ছিল।
আগের সমাবর্তনের দিনগুলিতে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোন জায়গা ছিল না। বরং ছিল তা মজার, উপভোগ্য। সকলের কাছে। বিশ্বভারতীর মধ্যে চাপা শ্বাস প্রশ্বাসে কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, অনেক অজানা কথা জানা যায়। একবার মোরারইজি দেশাই যখন আচার্য হিসেবে শান্তিনিকেতন আসেন, তখন সবাইকে অলিখিতভাবে বলা হয় খদ্দরের পোশাক পড়তে। কারন উনি খাদি ছাড়া কিছু পছন্দ করতেন না। তখন আরেকটা ব্যপার ছিল। আচার্যের সাথে খাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। সমাবর্তনের পর কোর্টের মিটিং হত। সেখানে দেখা যেত কোর্টের মিটিংয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত থাকতেন আচার্য। মোরারজি দেশাই পর্যন্ত এই রীতি বজায় ছিল। সম্ভবতঃ রাজীব গান্ধীর সময় একবার হয়েছিল বলে জানান এক আশ্রমিক। রাজীব গান্ধী ছেলেদের হোস্টেলে চলে যেতেন। সেখানে তাদের সাথে খেতেন। একবার অরবিন্দ পাত্র নামের একজন দুঃস্থ অন্ধ ছেলের কথা জানতে পেরে তিনি তাঁর সহকারী ভিন সেন্ট জর্জকে ঠিকানা লিখে নিতে বলেন। ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ হাজার টাকা চলে আসে। সেদিনের সেই ছাত্র আজ বেহালার ঠাকুর পুকুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। রাজীব গান্ধীর মা ইন্দিরা গান্ধীও মেয়েদের হোস্টেলে চলে যেতেন। নন্দলাল বসুর বাড়ি যেতেন। উনার বন্ধু কিরণ সিংয়ের বাড়ি যেতেন। সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে শ্রীসদনে চলে যেতেন। ছাত্রীদের সাথে বাংলায় কথা বলতেন। সোনিয়া গান্ধীও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে এসে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবী সোহিনী বসাক, সুধা দ্বিবেদীদের দেখিয়ে বললেন, যাও ওদের সাথে কথা বল!
এখন আসা যাক নিকট অতীত দিনেই, যা অনাগত দিনগুলোকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, বলে জানান এক আশ্রমিক। সমাবর্তনে তিনটি পছন্দের নাম নিয়ে “ই সি” তে প্রস্তাব হিসেবে পেশ করা হয়। গতবারের ক্ষেত্রে যে বিশেষ ব্যক্তিগুলো ছিলেন, তাঁরা হলেন নরেন্দ্র মোদি, অমর্ত্য সেন এবং আরও একজনের নাম প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু এব্যাপারে ঐক্যমত গড়ে না ওঠায় “ই সি” তে নরেন্দ্র মোদী, প্রকাশ জাভরেকর ও আরেকজনের নাম গৃহীত হয় বলে সূত্রের খবর। যথারীতি প্রথম নামে যিনি ছিলেন, তিনি রাজী হওয়ায়, এসেছিলেন। উপাচার্য সুশান্ত দত্ত গুপ্তের আমলে আচার্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। উপাচার্য স্বপন কুমার দত্তের কার্যকালের পর নির্দেশ ক্রমে তার মেয়াদ বৃদ্ধি হয়। নিয়ম মাফিক প্রতিবছর সমাবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু আচার্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার পক্ষে সময় বের করা কঠিন। সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু গতবার দেশিকোত্তম, অবন, গগন পুরষ্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা না হওয়ায়, বিতর্কের জন্ম দেয় বিভিন্ন মহলে। সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেশিকোত্তম দেওয়ার জন্য মনোনীত করে। কিন্তু পি এম ও থেকে মঞ্জুরি না মেলায়, তা স্থগিত হয়। এঁদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, লেখক অমিতাভ ঘোষ, সুনীতি কুমার পাঠক, সুরকার গুলজার, সঙ্গীত শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী অশোক সেন এবং চিত্র শিল্পী যোগেন চৌধূরী। তখন ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদে সরব হন। ২০১৯ সালে ৫০ তম সমাবর্তনে দেশিকোত্তম, অবন, গগন পুরষ্কার নেই!- ক্ষোভ আশ্রমিকদের একাংশের। তাঁরা জানান, গতবার বিবেকানন্দ বিশ্ব বিদ্যালয়ের আত্মপ্রিয়া নন্দ মহারাজ দীক্ষান্ত ভাষণ দেন। এবার দীক্ষান্ত ভাষণ কে দেবেন? হয়ত জানা যাবে শেষ মুহুর্তে! ঘটনার সূত্র বার বার মনে করিয়ে দিতে চায়, রবীন্দ্রনাথের যক্ষপুরীর রাজাকে। যারঔদ্ধত্যের ঘোষণা ছিল - আমি পর্বতের মতো, শূন্যতাই আমার শোভা।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য পদ পেয়েছেন অনেক অরাজনৈতিক ব্যক্তি। আজও সেই নিয়মে আচার্য হন বিশেষ ব্যক্তি। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায় তাই ছিল। কস্মিন কালে রাজনৈতিক জরিপ মঞ্চ এটা ছিল না। একসময় গুরুদেব নিজে, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, আচার্য ক্ষীতিমোহন সেন প্রমূখ সমাবর্তন করতেন। ১৯২১ সালে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত। সেই সময় কাল থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সেই ধারাই বহাল ছিল। রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর ১৯৪১ সালে মারা যান। ১৯৫১ সালে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়। তারপর আক্ষরিক অর্থে প্রথম সমাবর্তনে আসেন প্রধানমন্ত্রী জওহর লাল নেহেরু। যদিও, শুধু প্রধান মন্ত্রী হিসেবে নয়, বিশ্বভারতীর সাথে ছিল তাঁর প্রাণের সম্পর্ক।
রীতি মোতাবেক সমাবর্তনে প্রধান মন্ত্রী আচার্য হতে থাকেন। তবে স্ট্যাটুউটে কোথাও বলা নেই যে, প্রধান মন্ত্রীকেই উপাচার্য হতে হবে। আসলে কেউ বিরাগভাজন হতে চান না। যাইহোক, ইন্দিরাগান্ধী পর্যন্ত এই প্রথা ছিল। পর্যায় ক্রমে চরন সিং, চন্দ্র শেখর একটা সময় প্রধান মন্ত্রী হলেও কেউ বিশ্বভারতীর আচার্য হন নি। তবে, মোরারজি দেশাই বিশ্বভারতীর আচার্য হন। ইন্দিরা গান্ধী যখন হেরে গেলেন, তারপর প্রধান মন্ত্রী না হয়েও, উমাশংকর যোশীর মত স্বনামধন্য কোন ব্যক্তিকে বিশ্বভারতীর আচার্য করা হয়। উমাশংকর যোশী গুজরাতি ভাষার সাহিত্যিক ছিলেন। জ্ঞানপীঠ পেয়েছিলেন। পণ্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। কিন্তু সেই সমাবর্তনে লোক হল না। তবুও তিন বছর সেই পদেই আসীন ছিলেন তিনি। তার পরের বার ইন্দিরা গান্ধী জিতে ফিরে এলেন। যথারীতি ইন্দিরা গান্ধী জিতে ফিরে এলেন ঠিকই, তবে তাঁকে প্রধান মন্ত্রী হিসেবে আচার্য করা হয় নি। ব্যক্তি হিসেবে ইন্দিরা গান্ধীকে উপাচার্য করা হল। সেই রীতিই চলে আসছে। এই রীতিই রবীন্দ্রনাথের জীবিত কালে বহাল ছিল।
আগের সমাবর্তনের দিনগুলিতে রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের কোন জায়গা ছিল না। বরং ছিল তা মজার, উপভোগ্য। সকলের কাছে। বিশ্বভারতীর মধ্যে চাপা শ্বাস প্রশ্বাসে কেউ প্রকাশ্যে কিছু না বললেও, অনেক অজানা কথা জানা যায়। একবার মোরারইজি দেশাই যখন আচার্য হিসেবে শান্তিনিকেতন আসেন, তখন সবাইকে অলিখিতভাবে বলা হয় খদ্দরের পোশাক পড়তে। কারন উনি খাদি ছাড়া কিছু পছন্দ করতেন না। তখন আরেকটা ব্যপার ছিল। আচার্যের সাথে খাওয়ার একটা ব্যাপার ছিল। সমাবর্তনের পর কোর্টের মিটিং হত। সেখানে দেখা যেত কোর্টের মিটিংয়ে চেয়ারম্যান হিসেবে উপস্থিত থাকতেন আচার্য। মোরারজি দেশাই পর্যন্ত এই রীতি বজায় ছিল। সম্ভবতঃ রাজীব গান্ধীর সময় একবার হয়েছিল বলে জানান এক আশ্রমিক। রাজীব গান্ধী ছেলেদের হোস্টেলে চলে যেতেন। সেখানে তাদের সাথে খেতেন। একবার অরবিন্দ পাত্র নামের একজন দুঃস্থ অন্ধ ছেলের কথা জানতে পেরে তিনি তাঁর সহকারী ভিন সেন্ট জর্জকে ঠিকানা লিখে নিতে বলেন। ১৫ দিনের মধ্যে ৩০ হাজার টাকা চলে আসে। সেদিনের সেই ছাত্র আজ বেহালার ঠাকুর পুকুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। রাজীব গান্ধীর মা ইন্দিরা গান্ধীও মেয়েদের হোস্টেলে চলে যেতেন। নন্দলাল বসুর বাড়ি যেতেন। উনার বন্ধু কিরণ সিংয়ের বাড়ি যেতেন। সোনিয়া গান্ধীকে নিয়ে শ্রীসদনে চলে যেতেন। ছাত্রীদের সাথে বাংলায় কথা বলতেন। সোনিয়া গান্ধীও প্রিয়াঙ্কা গান্ধীকে নিয়ে এসে একবার বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বেচ্ছাসেবী সোহিনী বসাক, সুধা দ্বিবেদীদের দেখিয়ে বললেন, যাও ওদের সাথে কথা বল!
এখন আসা যাক নিকট অতীত দিনেই, যা অনাগত দিনগুলোকে আরও স্পষ্ট করে তোলে, বলে জানান এক আশ্রমিক। সমাবর্তনে তিনটি পছন্দের নাম নিয়ে “ই সি” তে প্রস্তাব হিসেবে পেশ করা হয়। গতবারের ক্ষেত্রে যে বিশেষ ব্যক্তিগুলো ছিলেন, তাঁরা হলেন নরেন্দ্র মোদি, অমর্ত্য সেন এবং আরও একজনের নাম প্রস্তাব রাখা হয়েছিল। কিন্তু এব্যাপারে ঐক্যমত গড়ে না ওঠায় “ই সি” তে নরেন্দ্র মোদী, প্রকাশ জাভরেকর ও আরেকজনের নাম গৃহীত হয় বলে সূত্রের খবর। যথারীতি প্রথম নামে যিনি ছিলেন, তিনি রাজী হওয়ায়, এসেছিলেন। উপাচার্য সুশান্ত দত্ত গুপ্তের আমলে আচার্য ছিলেন নরেন্দ্র মোদী। উপাচার্য স্বপন কুমার দত্তের কার্যকালের পর নির্দেশ ক্রমে তার মেয়াদ বৃদ্ধি হয়। নিয়ম মাফিক প্রতিবছর সমাবর্তন হওয়ার কথা। কিন্তু আচার্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় তার পক্ষে সময় বের করা কঠিন। সেটাও ঠিক আছে। কিন্তু গতবার দেশিকোত্তম, অবন, গগন পুরষ্কার প্রাপকের নাম ঘোষণা না হওয়ায়, বিতর্কের জন্ম দেয় বিভিন্ন মহলে। সাতজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেশিকোত্তম দেওয়ার জন্য মনোনীত করে। কিন্তু পি এম ও থেকে মঞ্জুরি না মেলায়, তা স্থগিত হয়। এঁদের মধ্যে ছিলেন অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, লেখক অমিতাভ ঘোষ, সুনীতি কুমার পাঠক, সুরকার গুলজার, সঙ্গীত শিল্পী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বিজ্ঞানী অশোক সেন এবং চিত্র শিল্পী যোগেন চৌধূরী। তখন ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদে সরব হন। ২০১৯ সালে ৫০ তম সমাবর্তনে দেশিকোত্তম, অবন, গগন পুরষ্কার নেই!- ক্ষোভ আশ্রমিকদের একাংশের। তাঁরা জানান, গতবার বিবেকানন্দ বিশ্ব বিদ্যালয়ের আত্মপ্রিয়া নন্দ মহারাজ দীক্ষান্ত ভাষণ দেন। এবার দীক্ষান্ত ভাষণ কে দেবেন? হয়ত জানা যাবে শেষ মুহুর্তে! ঘটনার সূত্র বার বার মনে করিয়ে দিতে চায়, রবীন্দ্রনাথের যক্ষপুরীর রাজাকে। যারঔদ্ধত্যের ঘোষণা ছিল - আমি পর্বতের মতো, শূন্যতাই আমার শোভা।
Post A Comment:
0 comments so far,add yours