দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

বলুন তো? "আমি তাকে চিনি"। তার ইংরেজি তর্জমা কি? রসিকতা করে উত্তরে বলা হয়, আই সুগার হিম। সুগারের বাংলা তর্জমা তো চিনিই। যদিও, আমরা সবাই জানি, এই চিনি সেই চিনি নয়। "নো" ও "সুগারে"র তফাৎটা আমরা সবাই জানি।
কিন্তু জানলে কি হবে? খাদ্য চিনি এত ক্ষতিকর, যে আমরা তাকে হাড়ে হাড়ে চিনি। এবারও বলতে হবে, আই সুগার হিম ফ্রম বোন টু বোন। চিনির ক্ষতির মাত্রার কথা মাথায় রেখে চিনিকে " হোয়াইট পয়জন" বা "সাদা বিষ" বলে।  ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োজনের তাগিদে ভোকাবুলারি চেঞ্জ হয়।  তাই কারো ক্ষতি করতে চাইলে, " আই সুগার হিম" - বললে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। সেক্ষেত্রে অবশ্যই তর্জমা দাঁড়াবে-- আই (সুগার) পয়জন হিম।
এখন আসা যাক, কেন সুগার পয়জন বা বিষ! সেই কথায়!
সম্প্রতি নেদারল্যান্ডের লাইডেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা   ৫০-৬০ বছর বয়সী মোট ৬০ জনের রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ে গবেষণা করেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, রক্তে ১ মিলি গ্রাম চিনি বেশি থাকা মানে ৫ মাস বেশি বুড়ো হওয়া। শুধু তাই নয়, ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকিও নাকি থেকে যায়। বিশেষ করে ব্রেস্ট ও কোলন ক্যান্সারের সম্ভাবনা!
চিনি শরীরে ইনসুলিনের উৎপাদনের মাত্রা বাড়ায়। কোষ বিভাজনের গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক এই ইনসুলিন। আমরা জানি, কোষ বিভাজনের অস্বাভাবিকতা ডেকে আনে মারণ রোগ ক্যান্সার।
এছাড়াও ডায়াবেটিস হওয়ার ক্ষেত্রে চিনির ভূমিকা অনস্বীকার্য। ৯ লক্ষ ১ হাজার ৪৯ জন মহিলার উপর পরীক্ষা করে এক সমীক্ষায় দেখা যায়, যারা প্রতিদিন এক গ্লাস মিষ্টি পানীয় খান তাদের ডায়াবেটিসের ঝুঁকি ৮৩ শতাংশ বেশি যাঁরা মাসে একবার খান তাদের থেকে।
ফ্যাটি লিভার আরেক দান আমাদের প্রিয় চিনির। লিভার চিনিকে ফ্যাটে পরিণত করে। তাই বেশি চিনি খেলে ফ্যাটি লিভার হবে এবং তার ফলে লিভারের অন্যান্য কাজ ব্যাহত হবে।
আমেরিকান জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশন তাদের এক সমীক্ষায় প্রকাশ করে , চিনি দাঁতের ক্ষয় ঘটায়। কি করে? মুখের মধ্যে উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে বিনষ্ট করে। এর ফলে দাঁতের ক্ষয় ছাড়াও, ঔজ্জ্বল্য নষ্ট হয়। চিনিতে না প্রোটিন, না মিনারেল এবং না ফাইবার পাওয়া যায়। তবে, হ্যাঁ চিনি জাতীয় খাবার খেলে খিদে বাড়ে। আমেরিকার ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এক গবেষণায় দেখেছে, চিনি খেলে খিদে বাড়ে। খাবার পরিমাণ বাড়ে। তবে কর্মোদ্যম  কমে। চিনি লেপটিন নামক এক হরমোন নিঃসরণে বাধা দেয়। এই হরমোন মস্তিষ্কে রিপোর্ট করে শরীরে খাবার লাগবে, না লাগবে না? এর ফলে ভুল তথ্য গেলে, শরীরে চর্বি জমে। পেটে চর্বি জমার ফলে হৃদ রোগের সম্ভাবনা বাড়ে!  বাজারের চিনিতে ক্ষতিকর সোডিয়াম সাইক্লামেট বা ঘন চিনি থাকে। তাই  খেজুর খান।  ফল খান।  ফলে চিনি পাবেন। তবে ফ্রুট জুস খাবেন না।  বাজারে  আইস কফি, আইস টিতে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। বাজারে সুগার ফ্রি খাবারে চিনি বর্জন হয় না। ফ্রি তেই চিনি দেয় না, ঠিকই! তবে চিনি নেই কে বলতে পারে! আর আপনি যদি ভাবেন, যে খায় চিনি, তাকে যোগায় চিন্তামণি, তাহলে এই সব শারীরিক হ্যাপা নিয়ে হ্যাপি থাকুন! বেস্ট অফ লাক!


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours