গৌতম দাস, অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার, রাজ্য আবগারি দফতর ও লেখক, কলকাতা:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এক জায়গায় লিখেছিলেন:-
"সাধারণত স্ত্রীজাতি কাঁচা আম,ঝাল লঙ্কা এবং কড়া স্বামীই ভালোবাসে, যে দুর্ভাগা(পড়ুন হতভাগ্য) পুরুষ নিজের স্ত্রীর ভালোবাসা হইতে বঞ্চিত, সে যে কুশ্রী অথবা নির্ধন তাহা নহে, সে নিতান্ত নিরীহ"..... ব্যাপারটা কিন্তু খুব জটিল আর গোলমেলে! নিরীহ না হইয়া স্বামীদের সত্যিই কি আজকের দিনে বাঁচার কোনো উপায় আছে!
স্ত্রী জাতি কি ধরনের পুরুষ মানুষ পছন্দ করেন তাহা বোধহয় স্ত্রী জাতি নিজেরাও জানেন না, একই অঙ্গে তাঁরা বীর অর্জুন, সত্যপাদি যুধিষ্ঠির আর প্রেমিক শ্রীকৃষ্ণ কে কামনা করেন তাদের স্বামী দেবতার ভিতরে! প্রেমিক শাহজাহানও হয়ত উত্তম স্বামী হিসেবে স্বীকৃত হইতে পারেন, শুধু ওই একাধিক বিবাহের বিষয় ব্যতিরেকে, কারণ অতিব পরিস্কার, একজন নারী আর যাহাই হউক সতিনের সঙ্গে থাকিতে পছন্দ করেন না কোনো অবস্থাতেই ! তবে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা কি কারণে ওনার প্রেমের ব্যাপারে এতো জনপ্রিয়তা সেটা অবশ্যই গবেষণার বিষয় আর ভোলে-ভালা দেবধিদেব মহাদেব, কেন যে উনি স্বামী হিসেবে এতো জনপ্রিয় সে বিষয়ে আলোচনা বা সমালোচনা করার সাহস বা ধৃষ্টতা আমার বিন্দুমাত্র নেই, তাই আর কথা না বাড়িয়ে সোজা এ যুগের উপেক্ষিত নিরীহ স্বামীদের বিচিত্র উপাখ্যানে আসছি:-                                         
বর্তমান যুগে স্ত্রী-দেবীর আঁচলের তলায় বিরাজমান মহান এবং নিতান্তই নিরীহ পুরুষ মানুষরাই মনে হয় সবথেকে সুখী প্রাণী! সমাজের বিভিন্ন উচ্চ পদে প্রতিষ্ঠিত এবং দাপুটে পুরুষ মানুষের সহিত আলাপচারিতায় এযাবত্কাল যাহা মগজস্ত হইয়াছে তাহা বড়ই করুণ, বহির্বিশ্বে তাঁহারা যতোই ব্যাঘ্রের ন্যায় হুঙ্কার ছাড়েন না কেনো, ইহারা স্বচ্ছন্দে সুখী গৃহকোণে প্রবেশ করিয়া, স্ত্রী-দেবীর সামনে নিতান্তই পোষ্য বিড়ালের ন্যায় মিউ মিউ করিতে অভ্যস্ত এবং সদম্ভে এই গুনের কাহিনী ঘোষণা করিতেও এতটুকু দিধা বোধ করেন না! কবি, সাহিত্যিক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী, বণিকশ্রেণী সমস্ত সুশীল পুরুষ মানুষেরাই শান্তি চুক্তির মাধ্যমে কম বেশি আত্মসমর্পণ করিয়া বসিয়া আছেন স্ত্রী-দেবীর নিকট! বিবাহের পূর্বে ভীষ্মের ন্যায় যতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোউন আর না হোউন প্রায় প্রতিটি শুভবুদ্ধি সম্পন্ন পুরুষ প্রথম বিবাহবার্ষিকী পালনের আগেই স্ত্রী দেবীর কাছে 'স্বেচ্ছায়' আত্মসমর্পণ করিয়া বসেন! অধিকাংশ শ্বশুরিমাতা এ বিষয়ে সর্বদা কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করিয়া থাকেন, কি রুপে অপরের সন্তানকে আপন সন্তান করিয়া লইতে হয় সুকৌশলে, এই বিষয়ে তাহাদিগের জুড়ি মেলা ভার, উল্খেযোগ্য বিষয় এই যে, এই প্রক্রিয়ায় শালিকা দিদিভাইদের ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভূমিকা থেকেই যায়! অতঃপর শুরু হয় অনিবার্য 'অধঃপতন', সারা জীবন ধরিয়া সুবোধ বালকের ন্যায় স্ত্রী-ভক্ত হনুমান হইয়া, সাগর পার করিয়া অসাধ্য সাধন করিয়াও, মূর্তিমান অপদার্থ রুপে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে, নিঃশর্তে বৈবাহিক চুক্তি মোতাবেক হাসিমুখে  জীবনযাপন করে যাওয়া! আজকের শিক্ষিত সমাজে পুরুষ মানুষের অবস্থা তাহার স্ত্রীর কাছে অনেকটাই দাঁড়ে বসিয়া ছোলা খাওয়া পোষা পাখা-হীণ পাখির ন্যায়! স্বামী দেবতাকে আদর করিয়া নিজ হস্তে ছোলা খাওয়ানো অভিভাবিকা স্ত্রীর খাঁচার দাঁড়ে বসিয়া তাহার ইশারায় শিস্ দিয়া গান করিয়া স্ত্রী দেবীর  মনোরঞ্জন করিয়া যেতে পারিলে মঙ্গল নহিলে বিপদ বাড়িতে পারে! অর্থাৎ "যতোই ওড়া-উড়ি করুন না কেন লাটাই তো বৌ এর ই হাতে" .....                                                        পুনশ্চ:- বুদ্ধিমান পুরুষ মানুষরা অবশ্য আজকাল নতুন নতুন কৌশল আর সুচতুর অভিনয়ের দ্বারা কখনও কখনও এই বিষয়টিকে শিল্পের পর্যায়ে পৌছে দেন! "নিরীহ মুখ করে গাছেরও খান তলার ও কোড়ান!"....



Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours