শ্রাবণী মজুমদার, লেখিকা, বীরভূম:

ব্রাইড ফেয়ার বা বসন্ত মেলা বসে বুলগেরিয়ায়। এটা অবশ্য শহরের বাইরে এবং যাযাবর উপজাতিদের মধ্যে প্রচলিত। সেই উপলক্ষে মেলা বসে। বসে দোকান পাট।
বিবাহযোগ্য মেয়েদের বিক্রি করেন এই মেলায়, দাঁড়িয়ে থেকে মেলায় মেয়ের জন্য দর হাঁকেন। কিন্তু শর্ত, কুমারিত্ব নষ্ট হলে মেলায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

দ্যা ট্রাকিস্কি কালাইদঝি’ বা ‘দ্যা টিন্সমিথস অব থ্রেস’।
এই জন গোষ্ঠীর বিবাহ ইচ্ছুক কুমার-কুমারীরা নিজেদের জনগোষ্ঠীর বাইরে অন্য কাউকে বিয়ে করার নিয়ম নেই। বুলগেরিয়ার এই জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতিতে যে মেলা জড়িয়ে আছে তা বড়ই অদ্ভুত! এমনকি বিয়ের আগে ছেলে-মেয়েরা বাইরে কোথাও দেখা করতেও যেতে পারে না। অল্প বয়সেই মেয়েদের বাইরে যাওয়া এমনকি পড়াশুনা পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়ে থাকে। তাই সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত মেয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের নারীরা এ মেলায় অংশ নেন স্রেফ জীবনসঙ্গীকে খুঁজে বের করতে। শুধুমাত্র এই ব্রাইড ফেয়ার  যদি তাদের জীবন সঙ্গী মেলে তবেই তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সুযোগ পান।

বুলগেরিয়ার স্তারা জাগোরা নামে এই অঞ্চলের রোমা জনগোষ্ঠীর মহিলারা এভাবেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বুলগেরিয়াতে এদেরকে অনেকে কালাইদঝি বলেও ডাকে। তারা মূলত তামার বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে থাকে। এটাই এদের রুজি-রুটি। দারিদ্র্য আর অনটন এদের নিত্যসঙ্গী। ফলে, বিবাহের মতো ব্যয়বহুল আনুষ্ঠানের আড়ম্বর এদের পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই, এ জনগোষ্ঠীর জন্য এই মেলাই হচ্ছে জীবনসঙ্গিনী খুঁজে পাওয়ার একমাত্র জায়গা।

শহরের বাইরে বিশাল এক মাঠে মেলাটি অনুষ্ঠিত হয় , যেখানে পুরাতন এবং নতুন ফ্যাশানের সাজে উপস্থিত হয় তরুণীরা। কালাইদঝি তরুণীরা ব্রাইডের বেশে চুলকে সজ্জিত করে, লং ভেলভেট স্কার্ট আর রং-বেরঙের হেড স্কার্ফ সাথে গা ভর্তি গয়না দিয়ে সাজিয়ে তোলে নিজেদের।

মডার্ন বুলগেরিয়ান তরুণীর মতই এদের দেখতে লাগে।  কোন পাত্রী কেমন দর পাবেন, তা নির্ভর করে তাঁর সৌন্দর্য থেকে শুরু করে সাজপোশাক, আচার ব্যবহারের উপরে। পাত্রীর সাজে মেলায় আসা মহিলাদের শুধু পছন্দ করলেই হবে না, পুরুষদের এর জন্য খসাতে হয় ট্যাঁকের কড়িও। কারণ, যে পুরুষের যে মহিলাকে জীবনসঙ্গিনী হিসাবে পছন্দ হবে, তার জন্য তাকে যথার্থ দাম দিতে হয়। কয়েক লক্ষ টাকা পর্যন্ত দর ওঠে মেলায় পাত্রী হিসাবে যোগ দেওয়া নারীদের।
১৩ বছরের মেয়ের সমবয়সি পুরুষসঙ্গীও এখানে দেখা যায়। বাবা-মায়েরা ছেলে-মেয়েকে অল্প বয়সেই এই মেলায় অংশগ্রহণের জন্য নিয়ে এসেছে। কারণ, তাদের ধারণা, বেশি দেরি করলে হয়তো ছেলে-মেয়েকে সারা জীবন চিরকুমার বা চিরকুমারী হয়েই কাটাতে হবে। বছরে চার বার এই মেলা বসে। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় বসন্তের মেলা।

মেলার নিয়ম অনুসারে, মেয়েরা যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন অথবা মেলার জন্য প্রস্তুত মঞ্চেও নিজেদের পাত্রী হিসাবে তুলে ধরতে পারেন। মঞ্চে ওঠা মেয়েদের জন্য নিলামের মতো দরও হাঁকাহাঁকি করা হয়। আবার পুরুষরা মঞ্চে থাকা মহিলাদের সঙ্গে সেখানে নাচ-গানেও অংশ নিতে পারেন যাচাই করার লক্ষ্যে। এর পর পরই পছন্দের মহিলার জন্য দরাদরি করতে পারেন তিনি।

কুমারীর পিতাদের মূলত গ্যারান্টি দিতে হয় যে তার কন্যা আসলেই ভার্জিন। এর পেছনে আসলে যে কারণ দাঁড়ায় তাতে করে এটাই বলতে হয়, বিবাহ ইচ্ছুক পুরুষেরা এতে করে নিশ্চিত থাকতে পারেন যে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সন্তানেরা সত্যিই একমাত্র তারই সন্তান।

বেচা কেনার ডিল আসলে মেলাতেই পুরোপুরিভাবে সম্পন্ন হয়ে যায় না। এরকম অসংখ্য সামাজিকতায় আবিষ্ট আলাপচারিতা দু’পক্ষের মাঝেই চলতে থাকে মাসের পর মাস।  তরুণীর পরিবার আসলে বিক্রির দাম ‘অর্থ’ হিসেবে পায় না।  পরবর্তীতে গিফট বা আর্থিক সহায়তায় দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে তরুণীর পরিবারের উচ্চমানে হাঁকা দাম আসলে দেখা হয় যে, তার হবু জামাতা ঐ পরিমাণ আর্থিক সাহায্য দিতে আসলেই সমর্থ কিনা?

গড়পড়তা বুলগেরিয়ান তরুণীদের দাম সর্বনিম্ন শুরু হয় সাত হাজার ডলার থেকে। তরুণী যদি অসাধারণ সুন্দরী হন, তবে এই দাম গিয়ে ঠেকে পঁচিশ হাজার ডলারে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours