জীবন রায়, প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ, রাজ্যসভা:


নয় শব্দের এই  শব্দ বন্ধনে  সোভিয়েত উত্তরকালে কেন্দ্রিভূত পুঁজির আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক এবং  ভাবাদর্শগত অবস্থানকেই নয়, উত্তর কালের আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রের অভিমুখকেই চিহ্নিত করছে। 

উল্লেখ্য  মার্ক্সকে নকল করে,  ইতিহাস স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার যে তত্ব নব্বই দশকে মিলিটারী তন্ত্রের দাস অর্থনীতিবাদীরা সামনে এনে চিরন্তন 'দাসত্বের' যে চালচিত্র এরা নির্মান করেছিলো
-----  ইতিহাস নিজেই, প্রতিকুলতার বাধগুলি অতিক্রম করে  যে সেটা ভেঙ্গে দিয়ে, কিভাবে ইতিহাসের প্রবাহকে সচল রেখেছে, সে কথা একের পর এক পোস্টিং মারফত এই কলম বলে যাচ্ছে।
-----  ইতিহাস যখন শেকল ছিড়তে শুরু করেছে, 'দাসত্ব'কেও যেভাবে জমানোর কথা ভাবা হয়েছিলো, সেটা ইতিহাসের চলন্তিকা রুপের কাছেই বাধা পাচ্ছে নিরন্তর।কোথায়ো উল্লেখ করেছি, বিগত তিন চার বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে, যেভাবে শ্রমিকদের সামনে রেখে, মানুষের প্রতিরোধ বিস্তৃত হচ্ছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কালে, দেখা যায় নাই। প্রথমে ফ্রান্স এবং সাম্প্রতিক কালে চলির সান্তিয়াগোতে শ্রমিক নেতৃ্ত্বে শ্রমিক-ছাত্র বিক্ষোবের সামুদ্রিক উচ্ছাস, বিশ্ব শ্রমিক আন্দোলনের ভাবাত্মক দিকে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
----- যে সান্তিয়াগোতে ১৯৭৩ সালে চিলির নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকে, বিশ্ব মিলিটারীতন্ত্রের অনুচররা রাজপ্রাসাদেই হত্যা করেছিলো, সেই সান্তিয়াগোকে শ্রমিক ছাত্ররা একযোগে ফ্যাসিস্ত সরকারের পতন ঘটিয়েছেন। এমনকি ইরাকে যে বিদ্রোহ চলছে, সেটা 'সন্ত্রাসের' চছুদ্দি পেরিয়ে, শ্রমিক নেতৃ্ত্বে সমাজতান্ত্রিক প্রতিরোধের দিকে এগুচ্ছে । 

-----  এসব থেকে স্পষ্ট, এক উদ্বেল পরিস্থিতির মুখে, ভারত অনেকটা পিছিয়ে থাকলেও,  বিশ্ব  শ্রমিক আন্দলোলন ব্যক্তিগত বা কারখানাগত দাবীর শরীর সর্বস্বতা ভেদ করে ক্রমে জাতীয় সংকট মোকাবিলায়, আন্তর্জাতীকতার অভিমুখী হতে শুরু করেছে।
----- এটা ঠিক ভারতের শ্রমিক আন্দোল অতীতের 'বৃত্ত' ভেংগে  এখনো শ্রমিক আন্দোলনকে, 'দাসত্ব বিরোধী ' মঞ্চে উঠিয়ে এনে, এই বিরোধীতার সাথে যুক্ত সব সামাজিক অভিমুখগুলিকে একাত্ম করে এগিয়ে যাওয়ার প্রশ্নে মিলিটারী তন্ত্রের 'মধ্যমবর্গীয় বৌদ্ধিক দাসত্বের' হাতিয়ারটিকে প্রতিহত করার মতো কোন মঞ্চ নির্মাণে এখনো পিছিয়ে পড়েছে এবং সেটা ঘটেছে - ট্রেড ইউনিয়ন এবং সাম্যবাদী আন্দোলনের নেতাদের 'শ্রেনীগত' সীমাবদ্ধতার কারনে - 
------ কিন্তু নিশ্চিতভাবে, ভেতরের ও বাইরের আধুনিকতার ক্রম প্রসারীত অভিমুখটি মৌিলবাদী রক্ত ত্রাসকে, এখনো দমনে রেখেছেন। এই কলমের লেখক যদিও বা, বিদ্যমান ট্রেড ইউনিয় কর্মনীতি যে ক্রমে 'মধ্যবিত্ততার' শেকলে বাঁধা পরছে, সে সমালোচনা করে যাচ্ছেন, তবু  বলবো,   সাধারনভাবে বাইরে  আধুনিকতার বিজ্ঞান ভিত্তিক স্বরুপ যেমনভাবে, বিজেপির হাতের অনুমান ভিত্তিক 'বিজ্ঞানের' নামে প্রেতনৃ্ত্যের উপর আঘাত হানছে, তাতে ভেতরটাও ওয়ার্ম আপ বা শিতলতা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছে।
-----  পরিস্থিতিকে যারা 'সম্ভবনার' বাইরে চলে গেছে বলে ভাবছেন, তাদের বিরোধীতা না করেও বলবো - আমেরিকান মিলিটারীতন্ত্র ভারতের জন্য যে 'আয়োজন' রেখেছেন, সে তুলনায় এখন যা দেখছেন, তাকে বুঝতে হবে 'কলির সন্ধ্যে' মাত্র। ইতিহাসের শিক্ষাকে ভাবের গভীরে নিয়ে গিয়েই ভবিষ্যতে পরিস্থিতির সম্ভাব্য রুপটি চিহ্নিত করতে হবে।
-----  উপমহাদেশের বিচারে, বাইরে থেকে যা দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে গত নির্বাচন, অনেক অভিযোগ থাকলেও, ধর্মান্ধ রাজনীতিকে অনেকটা দমনে রেখেছে। উপমহাদেশে অন্য দেশ নেপালে যেহেতু একটা কমিউনিষ্টদের সরকার - সেজন্য সে পথে ভারতীয় 'দাসত্বপন্থীরা' বিশেষ সাহায্য পাবেন বলে মনে হয় না।  চিন কিংবা ইন্দোচীনের দেশগুলির বিরুদ্ধে যতই নেকড়ের থাবা বাড়ানো হোক না কেন, এরা কোন দিন এবং কোথায় ধর্মান্ধতার থাবা বসাতে পারবেন না।
----- ফ্যাসিস্ত বিপদ বৃদ্ধি পাচ্ছে অন্য দুটি পথ ধরে। প্রথমতঃ ভারতের অভ্যন্তরে, বেসরকারী করন সহ সাধারনভাবে  শিল্পপুঁজির বানিজ্যিক পুঁজির কাছে আত্মসমর্পনের পরিনামে,
-----  অভ্যন্তরে দাসত্বের বৌদ্ধিক সত্বার বিস্তৃতি ঘটানোর কারনেই ক্রমে যুদ্ধের একটা পরিবেশ নির্মান করেই এগুতে চাইবে। সে লক্ষে, বানিজ্যিক পুজিরঁ আন্তর্জাতীক মুরুব্যি যখন চাইবে,  ভারতীয় সৈন্যবাহিনীকে বিশ্বভিবাবকত্বের  মিলিটারী অধিনে এনে -
-----  একপ্রান্তে বঙ্গোপোসাগর পথে কোলকাতা ও চট্টগ্রাম হয়ে, সপ্তম নৌবহরকে চিনের কাছাকাছি নিয়ে যাওয়, অন্যপ্রান্তে ভারতীয় মাটিকে কাজে লাগিয়ে চিনের সীমানায়, 'অভিবাবক সৈন্যবাহিনী'কে ঢুকিয়ে দেওয়া। 
-----   এই সুত্র থেকেই জম্মু-কাশ্মীরকে ভেংগে দিয়ে তিন টুকরো করে দেওয়ার ভারতীয় ফ্যাসিস্তদের সিদ্ধান্তকে বিচার করতে হবে। এখন এই তিন রাজ্যে দুটি ফ্রন্টে ফ্যাসিস্ত নেতৃ্ত্বাধীন  সামরিকতন্ত্র কীভাবে কাজ করবে, তা আমেরিকা মিলিটারী তন্ত্র ছাড়া, বাইরের বিশ্বের জানাই সম্ভব হবে না। 'লাদাক' চলে যাবে সম্পুর্নভাবে চিন বিরোধী বিশ্ব সামরিকতন্ত্রের হাতে, হয়তো বা অনেকটা সিরিয়ার মতো ভাগাভাগি করে।
-----   এইভাবে ভারতের উত্তরের আন্তর্জাতীক রেখায়, যে ত্রিকোন নির্মান  হয়েছে, তাকে আমেরিকাকরনের দিকে ঠেলাকে নিস্কৃয় করে দেওয়ার প্রশ্নে
ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন কত দ্রুত, নিজের রক্তকে 'সামন্তিক বর্ণপ্রবাহ' থেকে মুক্ত করে আন্তর্জাতীকতায় নিজেকে এগুতে পারবে এবং দাসত্বের বিরোধীতাকে সর্বমুখীনতায় ঠেলে নিয়ে যেতে পারবে, তার উপরেই শুধু ভারত নয়, উপমহাদেশ 
---- হয়তো বা বিশ্বের ভবিষ্যত নির্ভর করছে।   খবরের কাগজে, যেমনই লেখাঝোকা থাক না কেন, পাকিস্থান সরকার পূর্ববর্তী সরকারগুলির তুলনায়, যেহেতু কিঞ্চিত হলেও সেকুলার এবং নিজেক অর্থনৈ্তিক ভাবে খুজে নেওয়ার চেষ্টা করছে, সেজন্যেই -  শ্রীমোদি-অমিত সাহ, যুগলবন্দি, কাশ্মীরকে সামনে রেখে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সামনে রেখে  'বিশ্বফ্যাসিস্ত সংঘ' এর সাথে ভারতীয় সৈন্যবাহিনীর সেতুবন্ধনে চেষ্টা চালিয়েই যাবে।

অর্থনীতি বানিজ্যিক পুজির হাতে চলে যাওয়া এবং সেই অর্থনীতি মূলত দাসত্ব নির্ভর হয়ে যাওয়ার কারনে, সাধারনভাবে তো বটেই, মুলতঃ মধ্যবিত্ত আধারিত নেতৃ্ত্বের কারনে সাম্যবাদী নেতা-কর্মীরাও যেভাবে
---মধ্যমবর্গীয় হয়ে গিয়ে, বিপ্লবী তো দুরের কথা, বিদ্রোহি মনন সত্বা হারিয়ে ফেলছেন, সেখানে পুরো রাষ্ট্রটাই আমেরিকা মিলিটারীতন্ত্রের যুদ্ধ স্বরযন্ত্রে জড়িয়ে গিয়ে এক অবিমিশ্র দাসরাষ্ট্রে বদলে যাওয়ার সম্ভবাবনা বিস্তর। 
---- ইতিমধ্যে পুরো সাম্যবাদী আন্দোলন না হলেও, ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের সংগঠিত অংশ এবং বাবুবাদী নেতারা সমেত বাবুদের সিংহ ভাগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকিয়ে দিতে সাহায্য করা হয়েছে,
---- যেন দেশটা 'মধ্য বিত্তদের'। বোধ সে কারনেই হয়তো বা 'কাজের ঘন্টা কমানো, সমকাজে সমবেতন, ঠিকাদারী প্রথার বিলোপ,  'সার্বজনীন শিক্ষা , গন শিক্ষা সমেত সমস্ত শিক্ষাকে ইংরাজীয়ানা থেকে সরিয়ে জ্ঞানমুখী করা, জনস্বাস্থ্যটা অন্ততঃ বাংলাদেশের  যায়গায় তুলে আনা, সংস্কৃতিতে নারী দেহের বানিজ্যকরন বিরোধীতা ইত্যাদি দাবীগুলিকে সামনে রেখে এগিয়ে যাওয়ার কোন মানষিকতাই দেখা যাচ্ছে না। এসব কিছুই যে সর্বনাসের মুখ উন্মুক্ত করছে সেটাও বোঝানো যাছে না। 
----- সব থেকে ত্যাজ্জবের বিষয়, নারীত্বের অমর্যাদাকে যখন প্রাতিষ্টানিক করা হচ্ছে, দাসত্বের অর্থনীতিকে চাংগা করতে, তখন এটাও বোঝানো যাচ্ছে না নারীর অমর্য্যাদার বিষয়টি আসলে 'মেহনতের' অমর্য্যাদার বিষয়ের সাথে কাঠামোগতভাবেই যুক্ত। ‍

যাইহোক, অর্থনীতি এবং রাজনীতিকে দাসত্বের অনুসারী নিতে মধ্যবিত্তকরনের যে অভিমুখ নিয়ে, ভারতের জন্য আমেরিকার লাইন নির্মান হয়েছিলো সেই নব্বই দশকে সেটাও, ফ্যাসিস্ত অর্থনীতির আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের কারনেই,  অর্থনীতি অতলে যাছেঃ
---- অর্থনীতিটা যখন বানিজ্যিক ও চোরছেচরদের হাতে চলে গেছে, তখন
সাধারনভাবে ক্যাপিট্যাল গুডস শিল্প বন্ধ হয়ে যাওয়, পুরো শিল্প ব্যবস্থাটাই  ঊপকরনের দিক থেকে আমদানী নির্ভরতায় থাকতে হয়েছে। সিংগুর থেকে টাটা এবং পুরুলিয়া থেকে জিন্দল ইস্পাত তাড়ানোর পর, বাংলা কেন সারা দেশেই কেউ ক্যাপিট্যাল গুডস শিল্পে পুরো বিপুল বিনিয়োগ করতে চান নাই।
----- কাজেই আমদানীর দামচুকাতে শুধু দেশেই যে দলিত, আদিবাসি, মুসলিম এবং মেয়েদের নিয়ে একটি দাস বাহিনী নির্মান করা হয়েছে তাই নয়, রপ্তানীর দাম চুকাতে 'জীবন্ত দাস' দেশ দেশান্তরে পাঠানো হচ্ছে, সে রকম দাস নির্মানের উপযোগী করে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হচ্ছে। এখন শিক্ষীত এবং অদক্ষ দাস রপানীতে আমরা প্রথম হওয়ার চেষ্টা করছি। সব থেকে বিপদ জনক
------- আমরা কাতারে কাতারে মেয়েদের গৃহদাস হিসেবে বিদেশে পাঠাচ্ছি। বাংলাকে ঘিরে যে 'দাস ব্যবসা' দানা বেঁধেছে তা রাজ্যে রাজ্যে দাস রপ্তানী করছে। এ রকম অবস্থা, ঔপনেবনিশক কালেও বাংলায় ছিলো না। 

'মধ্যবিত্তদের নিয়ে বাজার, মধ্যবিত্ত শিক্ষিতদের রপ্তানী, মধ্যবিত্তদের কেরানী বানিয়ে শাসনের আমেরিকান নীতি ডুবে যেতে যখন শুরু করেছে, তার প্রতিধ্বনী এখন রোজ শেয়ার এবং সোনার বাজারে পরছে। 
---- দাসত্বকে চক্রবৃদ্ধির আকারে বাড়িয়ে দিয়েও ভারত সরকারের  ক্ষমতা নেই, অর্থনৈ্তিক দাসত্ব থেকে বেড় করে আনার।
-----  আমদানী করা স্পেয়ার এনেও এখন শিল্প বাচানাও যাচ্ছে না। পুরো অর্থনীতিটাকে যখন, মধ্যবিত্তদের কাছে গাড়ী বিক্রীকে কেন্দ্র করে দাড় করানো হয়েছিলো, এখন কি হবে কেউ গাড়ী তেল কেনা কিংবা রক্ষনাবেক্ষন করতে পারছে না। 
-----  কাজেই একপ্রান্তে চক্রবৃদ্ধির আকারে দাসের সংখ্যা বাড়তে থাকবে, দাস রপ্তানীও বাড়বে, অন্যপ্রান্তে নানা রকম হেরিফেরি করে শেয়ার মার্কেট উপরে রাখার চেষ্টা হবে। আন্তর্জাতীক ফ্যাসিস্ত জোট চেষ্টা করবে শেয়ার মার্কেটকে তুলে রাখতে ......
দেখতে থাকুন কী ঘটে। 
তবে ভারতীয় বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মান্ধদের  বকলমে ভারতীয় ফ্যাসিস্তদের হাত ঘুরে, আমেরিকান মিলিটারী তন্ত্রের দাস হয়ে যাওয়ার দুর্ভাগ্য আসার পূর্বেই যেন চলে যেতে হয়, সেটাই এখন ভাবতে শুরু করেছি।
----- বাকি টা পরের প্রজন্ম বুঝতে থাকুক। (ক্রমশ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours