অপর্ণা ভট্টাচার্য লেখিকা ও সমাজকর্মী, আসানসোল:

জন্মিলে মরিতে হবে 
অমর কে কোথা কবে...
জানি তো, বুঝিও সব, তবু কেন যে চোখের জল বাঁধ মানে না। দুঃখের মধ্যেও কেমন করে সুখ খুঁজে নিতে হয় দিদির কাছে শিখে ছিলাম। কেমন করে খুশির মোড়কে মুড়িয়ে কঠিন কথা পেশ করতে হয় সেও তো তাঁর প্রশিক্ষণ। এত আপন করে নিতে পারে কজন?  
পরীক্ষার সকালে সিঁড়ির ধাপে ধাপে সার সার বসে আছি মুখ ঝুলিয়ে। আগের দিনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র  অত্যন্ত দুরূহ হয়েছিল, প্রশ্নপত্র হাতে ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী অরুনিমা জ্ঞান হারায়। ও পরীক্ষা দিতে পারেনি। বুকের মধ্যে দামামা বাজছে, জানিনা আজ কি হবে। ঠিক সেই মুহূর্তে কপালে অগ্নিশিখার মত জ্বলজ্বলে টিপখানি পরে, ঝলমলে হাসি মুখে দিদি এসে দাঁড়ালেন আমাদের সামনে। এই মেয়েগুলো কি হয়েছে রে তোদের? এমন রাম গরুড়ের ছানার মত মুখ করে বসে আছিস কেন? অস্ফুটে গতকালের প্রশ্নপত্রের কথা বললাম। এমন হো হো করে হাসলেন যেন কি একটা মজা হয়েছে। তারপর বললেন যা যা তোদের এমিনিটি সেন্টারে গিয়ে খুব খানিকটা আড্ডা সহযোগে ডালপুরি খেয়ে আয়, দেখবি আজকের পরীক্ষা ভাল হবেই। সত্যিই তাই হয়েছিল। 
গল্প লিখতে শিখেছিলাম তাঁর ছোটগল্পের হাত ধরে। বলতেন, ছোট্ট ছোট্ট বাক্য লিখবি। প্রতিটি শব্দ ভেবে ভেবে চয়ন করবি। আজো তাই করি দিদি। কত স্মৃতি ভিড় করে আসছে। মাত্র দুটি বছর তাঁকে কাছের থেকে দেখেছিলাম।অমূল্য রত্নের মত তাঁর উপদেশ সঞ্চয় করে রেখেছি মনের মণিকোঠায়। 
  যখন দিদি 'সই ' গড়ে তুললেন, নতুনদের সাদরে আমন্ত্রণ জানালেন, সকলকে অধিকার দিলেন নিজেকে গড়ে পিটে তৈরী করে নেবার তখন আমি মফস্বলে বসে সংসার জালে আবদ্ধ হয়ে ছটফট করেছি শুধু, পৌঁছতে পারিনি সই এর কাছে। নবনীতা দেবসেন। 
নামটাইতো যথেষ্ট। তিনি নিজেই তো একটি ইনস্টিটিউসন্। তাঁর সম্পর্কে নতুন করে বলার কি আছে? বুকের নীচে বালিশ নিয়ে অনন্ত কাল তিনি লিখে চলেছেন। সোনাঝরা সদাহাস্যময়ী মুখচ্ছবি চির অমলিন থাকবে আমাদের মানসপটে। আপনার প্রদর্শিত পথে আমৃত্যু হেঁটে চলব। দূরূহ  কর্কট রোগ তাঁকে পরাস্ত করতে পারেনি, কেড়ে নিতে পারেনি তাঁর ঝলমলে হাসি। জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে তিনি ভরপুর উপভোগ করে গেছেন।আপনাদের মৃত্যু নেই দিদি। আপনি ছিলেন, আছেন, থাকবেন আমাদের  প্রতিদিনের নিঃশ্বাসে প্রঃশ্বাসে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours