ভবানীপ্রসাদ ভট্টাচার্য্য, ফিচার রাইটার, দুর্গাপুরঃ পশ্চিম বর্ধমান জেলার কাঁকসা ব্লকের গোপালপুর গ্রাম!জেলার বৃহৎ আয়তনের গ্রামগুলির অন্যতম! পূর্বে ১৮ টি পাড়া ছিল বর্তমানে পাড়ার সংখ্যার সাথে আয়তনেও বেড়েছে!
গ্রামে সব দেবতার পুজা হয়! এমনকি নারদ মুনিরও ! গ্রামের নামকরন সম্ভবতঃ চ্যাটার্জী পরিবারের কুলদেবতা গোপাল ঠাকুরের নামে!
এই গ্রামে চারটি প্রাচীন বনেদী বাড়ীর দুর্গাপুজো এবং একটি পরিবারিক পাতিদুর্গার( শুধু,মা দুর্গার আবক্ষ মূর্ত্তি পুজা হয়!)
গ্রামে বড় কালী সহ অনেককুলি মা কালীর পুজাও হয়! কিন্তু গ্রামে কোন জগদ্ধাত্রী পুজা ছিল না, এজন্য গ্রামের মানুষের আক্ষেপও ছিল!
গ্রামের অভিন্ন হৃদয় বন্ধু সুকুমার অধিকারী,রবীন্দ্র নাথ মন্ডল ও বাদল মন্ডল, প্রাথমিক থেকেই এক সাথে পড়াশোনা করে তিনজন চাকরী পেয়েছেন কিন্তু তখনও বাদল মন্ডল বেকার! এজন্য চার বন্ধুরই মন ভালো নেই!
সালটা ১৯৭২ দুর্গাপুজোর সময় বাদল মন্ডল দুর্গাপুর মিশ্র ইস্পাত কারখানায় নিয়োগ পত্র পাওয়ায় চারবন্ধুই আনন্দে আটখানা! তাঁরা সিদ্ধান্ত নিলেন তাঁরা গ্রামে একটা পুজো করবেন! বাদল মন্ডল প্রস্তাব দিলেন সরস্বতী পুজো করার! অন্য বন্ধুরা নাকচ করলেন দুটি কারনে এক, গ্রামে সরস্বতী পুজো হয়, দ্বিতীয়তঃ সরস্বতী পুজো
ঢের দেরী আছে!সুকুমার অধিকারী পরামর্শ দিলেন জগদ্ধাত্রী পুজো শুরু করার, কারন গ্রামে জগদ্ধাত্রী পুজো নেই! প্রস্তার মনে ধরল অন্য বন্ধুদের!শুরু হ'ল পুজার প্রস্তুতি!প্রতিমা নির্মানের দ্বায়িত্ব দেওয়া হ'ল সুকুমারের পূর্ব পরিচিত চন্দননগরের মৃৎশিল্পী নারায়ন দাসের ( তখন দুর্গাপুরের বাসিন্দা) উপর!
কাপড় বাঁশ দিয়ে পাড়ার ছেলেদের নিয়ে নিজেরাই তৈরী করলেন মন্ডপ! এগিয়ে এলেন গ্রামের প্রবীনরা ও, শুরু হ'ল পুজা পাড়ার একজন কাঁধে করে নিয়ে এলেন বিরাট একটা চাল কুমড়ো ! বললেন, " বলি না হলে কি দেবী পুজা হয়?" সেই শুরু ! আজ সেই চার বন্ধুর সকলে আজ বেঁচে নেই, কিন্তু আজ পুজোর দ্বায়িত্ব নিয়েছে বর্তমান প্রজন্ম! মায়ের পাকা মন্দির নির্মিত হয়েছে! কার্ত্তিকী শুক্লা পক্ষের নবমী তিথিতে প্রতিবছর পুজা হয়! চার ইয়ারের পুজো এখন সার্বজনীন রূপ পেয়েছে! দশমী থাকে নিরামিষ পংক্তি ভোজের ব্যবস্হা! গ্রামের একমাত্র জগদ্ধাত্রী পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে ওঠে সারা গ্রাম! পরিনত হয় আনন্দ উৎসবে!
Post A Comment:
0 comments so far,add yours