সুমিত তালুকদার, সিনিয়র জার্নালিস্ট, নৈহাটী, উত্তর ২৪পরগনা:

রাজ্যে এখন বারো মাসে ছুটির তেরো পার্বণ চলছে। ছুটি সংস্কৃতিতে মাতোয়ারা রাজ্য ও রাজ্যবাসী। নির্ধারিত পয়ষট্টিটি ছুটির তালিকা সিনথেটিক রাবারের মতো প্রয়োজনমত এবং পছন্দমত বাড়ানো কমানো হচ্ছে। সরকারি পঞ্জিকা ও ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পূজো- পার্বণের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি পালা করে ক্রমবর্ধমান লালকালির কর্মনাশা দিন। পাঁচ – ছয় দিনের দুর্গাপূজো এখন টেনে প্রায় দুসপ্তাহের ছুটিতে পরিণত। সম্প্রতি ছটপূজোকেও গোটা ছুটির দিন ঘোষণা করে বাঙালির ছুটি সংস্কৃতির সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। গুরুত্ব বাড়ছে গণেশ চতুর্থী, ধনতেরাস, রামনবমী প্রভৃতি দিনগুলোর। এছাড়া সংখ্যালঘুদের বিজাতীয় উৎসবের দিনগুলো যাতে আরও উৎসবমুখর, সমাদৃত এবং সম্প্রীতির রাজনীতিতে ছাড় পায় তার জন্যও আছে পাকা ও ঢালাও ব্যবস্থা। আসলে আফিমের মতো উৎসব – আনন্দে, পালা- পার্বণে চাকুরিহীন কর্মহীন যুবক-যুবতীরা মেতে থাকুক, বুঁদ হয়ে থাকুক, ভুলে থাকুক তাদের অভাব-অভিযোগ, বঞ্চনার পুঞ্জীভূত শোক – ছুটি সংস্কৃতির পিছনে গূঢ় রাজনৈতিক অভিসন্ধি – এমনটাই। এছাড়া আছে কেন্দ্র- রাজ্যের মধ্যে উৎসব – অনুষ্ঠান, ছুটি নিয়ে প্রতিযোগিতা ও সংঘাত। হনুমান জয়ন্তী, রামনবমী, জন্মাষ্টমী নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে আমাদেরও তালিকায় মুখোমুখি সংঘাতের জন্য, যোগ্য জবাবের জন্য প্রস্তুত আছে কালী- দুর্গার পাশাপাশি লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, বিশ্বকর্মা; দরকার হলে বাবা লোকনাথ, ঠাকুর পরমহংসদেবকেও এন.আই. অ্যাক্টের ক্ষমতাবলে বিশেষ ছুটির দিনের তালিকায় তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অনেকে আবার সমালোচনা করে এত সব অতিরিক্ত ছুটির দিনগুলো বনধ – ধর্মঘটের জন্য কর্মনাশা দিনের সঙ্গে তুলনা করে আত্মতৃপ্ত হন। 
ছুটির সমালোচনা যাই হোক না কেন বারো মাসে ছুটির তেরো পার্বণ চলছে, চলবে। সম্প্রতি মেয়েদের অন্দরমহলে ঢুকেছে ঋতুকালীন ছুটির অলস অবসরের কটা দিন। স্বহস্ত লিখিত একদা ক্যালেন্ডার রঞ্জিত লাল কালি চিহ্নিত দিনগুলি এখন সরকারি নির্দেশের ফলে বাস্তবায়িত। ঋতুমতী নারীর অস্বস্তিকর অবস্থার দাবি মেনে নিয়ে ছুটির তালিকা তাই দীর্ঘ করা হচ্ছে। বলাই বাহুল্য সমানাধিকারের প্রশ্নে শারীরিক নানাবিধ সুবিধা – অসুবিধার কথা মাথায় রেখে পুরুষদের তুলনায় মহিলারা ছুটি উপভোগ করেন কয়েকগুন বেশি। ইতিপূর্বে চাইল্ড কেয়ার লিভ (CCL), মাতৃত্বকালীন ছুটির আস্বাদলাভ করলেও ঋতুকালীন ছুটির ভোগস্বত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল বঙ্গ ললনারা, কন্যাশ্রীরা। এখন তাদের সে প্রত্যাশাও পূর্ণ হয়েছে। তবে শবরীমালার দেবমন্দিরে ঋতুমতী মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে যে আইনি লড়াই, আন্দোলন চলছে সে ক্ষেত্রে ঋতুকালীন ছুটি চালু করে মেয়েদের কি কর্মক্ষেত্রে, সামাজিক জীবনে আরো ব্রাত্য করে রাখা হবে না?


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours