দেবর্ষি মজুমদার, লেখক, বীরভূম:

সর্বশেষ সমাবর্তণে দীক্ষান্ত ভাষণ দেন বিবেকানন্দ বিশ্ব বিদ্যালয়ের আত্মপ্রিয়া নন্দ মহারাজ। প্রথা অনুযায়ী সাধারণতঃ কোন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এই দীক্ষান্ত ভাষণ দিয়ে থাকেন বলে জানান এক আশ্রমিক। স্মরণকালের ইতিহাসে এই ঘটনার কোন ব্যতয় ঘটে নি কোন দিন। আবার যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিদর্শক হিসেবে রাষ্ট্রপতি এবং রেক্টর হিসেবে রাজ্যপাল উপস্থিত থাকতে পারেন, সেক্ষেত্রে ফার্স্ট লেডি হিসেবে সমাবর্তন মঞ্চে তাঁদের স্ত্রীরা আসীন থাকতে পারেন না। কিন্তু এবার সেই প্রথা ভাঙছে বিশ্বভারতী। জানা গেছে, এই দুটো প্রথা ভাঙা হচ্ছে, রাষ্ট্রপতি ভবনের প্রটোকল অনুযায়ী নির্দেশক্রমে এবং তাঁদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই। তবে পূর্বে যে এমন পরিস্থিতি আসে নি, তা নয়।  তবে সেক্ষেত্রে আশ্রমের প্রথাকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়,  ১৯৯৬ সালে বিশ্বভারতীর প্লাটিনাম জুবিলির অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তদানীন্তন রাজ্যপাল শঙ্কর দয়াল শর্মা। সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী বিমলা শর্মা। বিমলাদেবী কিন্তু মঞ্চে না বসে, নীচেই বসে ছিলেন, কারণ সেটাই প্রথা। এবার অবশ্য সব ছাত্র ছাত্রীদের যেতে দেওয়া হবে না। যতদূর জানা গেছে, প্রতিটি ডিপার্টমেন্টের পড়ুয়া যাদের রেজাল্ট খুব ভাল এমন চারজন করে ছাত্রছাত্রীদের হাতে সপ্তপর্ণী তুলে দেবেন উপাচার্য। এবছর ২০১৮ - ২০১৯ শিক্ষা বর্ষে মোট ৪৭২৫ জন ছাত্র ছাত্রী কে সমাবর্তনের পর সার্টিফিকেট প্রদান করা হবে।  জানা গেছে,  কবির আঁকা চিত্রাবলী উপহার দিয়ে সন্মানিত করা হবে বিশ্বভারতী পরিদর্শক তথা দেশের রাষ্ট্রপতিকে। রবিবার দুদিনের সফরে শান্তিনিকেতনে আসছেন সস্ত্রীক রামনাথ কোবিন্দ। শতাধিক ক্যামেরার নজরদারি তে কড়া নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে আম্রকুঞ্জ পরিসর সব ক্যাম্পাস।  তবে বুলবুলের আগমণে বিকল্প স্থান হিসাবে নাট্য ঘর কে প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। কিন্ত সমাবর্তনের আগেই সি আই এস এফ এর বিতর্ক দানা বেঁধেছে। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টার পড়েছে।
তাই  অস্বস্তি এড়াতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ কোন ঝুঁকি নিতে চাইছে না। পাছে ভি ভি আই পি দের উপস্থিততে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সতর্ক জেলা পুলিশ ও বিশ্বভারতী। সমাবর্তন কে প্লাস্টিক মুক্ত রাখার ব্যবস্থা নিয়েছে কতৃপক্ষ।
১১ নভেম্বর বিশ্বভারতীর আম্রকুঞ্জে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রথা অনুযায়ী আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী সমাবর্তনে উপস্থিত থাকার কথা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী সময় দিতে না পারায় পরিদর্শক হিসাবে রাষ্ট্রপতি উপস্থিত থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড। রবিবার বিকালে শান্তিনিকেতনের কুমির ডাঙার মাঠে হেলিকপ্টার নামবেন তিনি। বুলবুলের কারণে পানাগড সেনা ছাউনি থেকে হেলিকপ্টার না ওডে। তাহলে সড়ক পথে তাকে শান্তিনিকেতন আনার বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া আছে। রাষ্ট্রপতি থাকবেন বিশ্বভারতী রথীন্দ্র অতিথি নিবাসে। রাজ্যপালের থাকার ব্যবস্থা হচ্ছে রতন কুটিরে ।
সোমবার সকালে ঐতিহ্য মেনে উত্তরায়নের উদয়ন বাড়িতে কবি কক্ষে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি পৌঁছবেন ছাতিমতলা। এর মাঝে বিশ্বভারতী ভিজিটর বুক খেয়াল খাতায় স্বাক্ষর রাখবেন পরিদর্শক। ছাতিমতলা থেকে  থেকে বিশ্বভারতী কর্ম সমিতির সদস্য, একাডেমিক কাউন্সিল সদস্য, কোর্ট সদস্য, বিভিন্ন ভবন অধ্যক্ষ দের সঙ্গে মিলিত হবেন। উপাচার্য কে সঙ্গে নিয়ে বকুল বিথি থেকে শুরু হবে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা। আম্রকুঞ্জে মাঝ খান দিয়ে শোভাযাত্রা পৌঁছবে জহরবেদীতে। সমাবর্তন মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোবিন্দ রাজ্যপাল জগদীশ ধনখড এবং উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। শুরুতে হবে জাতীয় সঙ্গীত। পরে অতিথি দের বরণ করবেন ছাত্রীরা। বেদগানের মাধ্যমে শুরু হয়ে যাবে সমাবর্তন। সংকল্প বচন পাঠ শেষে উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী স্বাগত ভাষন দেবেন। পরিদর্শক তথা রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ এবছর সমাবর্তনে দীক্ষান্ত ভাষন দেবেন। শান্তি মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে অনুষ্ঠান শেষ হবে।
তবে এবার ও সমাবর্তন পর্বে বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ সন্মান দেশিকোত্তম সহ অন্যান্য পুরস্কার দেওয়ার প্রথা বন্ধ থাকছে। শেষ ২০১৩ সালের সমাবর্তনে দেশিকোত্তম, গগন, অবন, রথীন্দ্র পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত ২০১৮ সালে আচার্য নরেন্দ্র মোদী উপস্থিততে সমাবর্তনে দেশিকোত্তম সহ কোন পুরস্কার দেওয়া হয় নি। পুরস্কার প্রাপক দের নাম পাঠায় নি তৎকালীন মানব সম্পদ বিদেশ মন্ত্রক। এবারও এই পুরস্কার দেবার জন্য রাষ্ট্রপতি দপ্তরে অনুমোদনের জন্য পাঠালো হলেও সময়ের অভাবে তা বাতিল করা হয়েছে বলে বিশ্বভারতী সুত্রে জানা গেছে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী কে ও আমন্ত্রন জানিয়েছে বিশ্বভারতী। তবে তিনি আসবেন কিনা জানা যায় নি।
বিশ্বভারতী পক্ষ থেকে পরিদর্শক কে উপহার স্বরূপ রবীন্দ্রনাথের হাতে আঁকা ছবি রেপ্লিকা তুলে দেওয়া হবে। এছাড়াও কিছু বই। দেশের ফাস্ট লেডি কে দেওয়া হবে শাড়ি। উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী পরিদর্শকের হাতে বিশ্বভারতী পক্ষ থেকে উপহার তুলে দিয়ে সন্মানিত করবেন।
সমাবর্তনের শেষে রাষ্ট্রপতি বিশ্বভারতী আশ্রম প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করায় তার ও প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্বভারতী। পরিদর্শক বাংলাদেশ ভবন পরিদর্শনে যাচ্ছেন না। তিনি যেতে পারেন পাঠভবন, কলাভবন, রবীন্দ্রভবন ইত্যাদি চত্বর।
একই সঙ্গে আশ্রম প্রাঙ্গণে নিরাপত্তা অনেক গুন বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতি ভবনের আধিকারিকেরা দুদফায় সমগ্র আশ্রম ঘুরে দেখেছেন।
২০১৮ সালের ২৫ মে প্রধানমন্ত্রী মোদী উপস্থিততে সমাবর্তনে চলা জল কেলেঙ্কারি জন্য ভাষন দিতে উঠে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নেন আচার্য। সেই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে শীতকাল হলেও এবার অনুষ্ঠান স্থলের জায়গায় জায়গায় পর্যাপ্ত জলের ব্যবস্থা রাখছে বিশ্বভারতী। সমাবর্তন কে প্লাস্টিক মুক্ত রাখার জন্যে জলের পাউচ বা বোতল নিয়ে ঢোকা বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours