নাজমীন মর্তুজা, লেখক ও গবেষক, অ্যাডিলেড, অস্ট্রেলিয়া:

“সবাই ছেড়েছে নাই যার কেহ
তুমি আছ তার আছে তব কেহ
নিরাশ্রয় জন পথ যার যেও
সেও আছে তব ভবনে।”
“তবুও তো গায় মন ত্যাগের মহিমা নিয়ে ....
আমি হারাতে জানি ফিরে পেতে জানি না “
বর্তমানে মানুষ ভোগবাদী এবং প্রগতিশীল জীবনযাত্রার জেলে আবদ্ধ। মানুষ ভুলে যেতে বসেছে যে তাদের একটি আধ্যাত্মিক দিক রয়েছে এবং তারা চাইলেই তাদের আত্মা থেকে দূরে সরে যেতে পারবে না। এবং আমরা জেনে হোক না জেনে হোক, কেন যেন কৃত্রিমতার মাঝে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে বেশি ভালোবেসে আসছি।
আমরা সবাই কমবেশি জীবনের কোন না কোন পর্যায়ে মনে হয়েছে যে আমাদের জীবন থমকে গেছে, এই স্থবির অবস্থা থেকে মুক্তির কোন উপায় জানা নেই। কারো মনে হয় সর্ম্পকে আটকা পড়েছে, আবার কারো কাছে পুরো জীবনটাই থমকে গেছে বলে মনে হয়! আর এমতাবস্থায় বিষণ্ণতা, অসহায়ত্ব, ভবিষ্যতের দুশ্চিন্তা আমাদের গ্রাস করে ফেলে।
আমাদের প্রতিটি না পাওয়া জিনিস গুলোর জন্য চিলেকোঠায় বসে থাকা হতাশার অবসাদ গুলোকে আমরা আদর করে জ্যৈষ্ঠের  ঘুঘু ডাকা দুপুরবেলা বিষন্ন শস্যদানা ছিটিয়ে দিই।
আমাদের মেরুদণ্ড যখন আস্ত একটা অমল-তাসের গাছ হয়ে উঠে , তখন কেবল বিষন্নতার সিগারেট ফুঁকে ছাদের  উপরে গোল গোল বৃত্ত এঁকে সৃজনে মত্ত থাকি । আমাদের বেঁচে থাকার উঁচু নিচু পথ ধরে  প্রতি রাতে যে সমস্ত মগ্ন জোনাকিরা ভালবেসে ফেলে জীবনের এই বিপন্ন অন্ধকারকে । তাদেরকে দিব্বি
অতিথি বানিয়ে ঘরে নিয়ে আসলে আলোর কমতি হবে না । তখন কিন্তু এই পৃথিবীর সমস্ত পাখিরা আকাশে উড়বে ডেকে উঠবে জয়গান সমস্ত মাতাল হৃদয় সমুদ্রের ডাকে, সমস্ত পাহাড়ি নদীর ঔদ্ধত্যের ডাকে সাড়া দিয়ে চমৎকার ভাবে বেঁচে উঠাই যায়।
তারপর যাদেরকে ছুঁতে পারা যাবে না তাদেরকে দেখতে দেখতে একদিন প্রেমিক কিংবা হয়ে যাওয়াই যায়।
সেই গ্রামের পথের পুরনো ল্যাম্পপোস্ট হাত বুলিয়ে বুঝতে চেয়েছিলাম আমি, প্রিয় মানুষের  শরীরের স্পর্শের অমোঘ সুখ । ভেবেছিলাম আমার পুরনো ক্যাসেটর বাক্সে লুকিয়ে রাখা প্রথম প্রেমের চিঠি চিঠিগুলো এবার সত্যি পোষ্ট করবো আকাশের ঠিকানায় । আমার যে নীল রঙের শাড়ি পড়া তেলরঙের আর্ট ওয়ার্কটা ওচা নিলামে তুলে দেবো । যে আঁকিয়ে এঁকে দিয়েছিল , তাকে আমার পায়ের কাছে আদরভূক বেড়ালটাকে দিয়েছিলাম একাকিত্বকে ওম দেবার জন্য । তাকে আমি কথা দিয়েছিলাম- তার আঁকা ছায়াটুকুও আমি কাউকে দেব না।
আমার মতো স্বার্থহীন অন্ধ মেয়েকে মায়া এঁকে দেওয়ার মত কোন ছবি আঁকতে পারেনি বলে নিজেকে খুব ভর্ৎসনা করতো । আর এখনো আমি, ওর জন্য এমন একটা কবিতা লিখতে পারিনি যে লেখা হলেই ফিনিক্স পাখির মতো উড়ে যাবে পাহাড় দেখবে বলে। আমার আবেগ গুলো ছেলেবেলার দিঘির ওপর এখনো কলার ভেলা হয়ে ভাসে .. যখন দেখি বাঁশের বৈঠা হাতে অপর প্রান্তে আমার সাহস বন্ধুটি নেই । আমি তখন মাঝ নদীতে আমার বিষণ্ণতা নিয়ে হাবুডুবু খাই একা একলা হবার কষ্টে।
তখন কেবল একটি গানই মনে আসে
আমি  একা বড় একা আমার
আপন কেউ নাই।


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours