জয়ন্ত কুমার সাহা, ফিচার রাইটার, কলকাতা:

পাঁচ, দেশের সমস্ত তদন্তকারী ও নিরীক্ষা সংস্থাগুলিকে সরাসরি আদালতের অধীনে আনতে হবে।

ছয়, এর পরেও যাতে দুর্নীতি না হতে পারে তার জন্য যথাসাধ্য ফুলপ্রুফ ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রথমত : নগদ টাকা পয়সার ব্যবহার তুলে পুরোটাই অনলাইন বা সোয়াইপ মেশিনের মাধ্যমে করা যেতে পারে। এতে কালো টাকা আটকানো যাবে। যাবতীয় অবৈধ আর্থিক লেনদেন আটকানো যাবে।
দ্বিতীয়ত : রাষ্ট্র তার প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য ও বাসস্থানের উপযুক্ত ব্যবস্থা করবে।
তৃতীয়ত : কোনও নাগরিককেই মেধা ও যোগ্যতা অনুযায়ী দশ হাজার টাকার কম ও পঞ্চাশ হাজার বেশি বেতন দেওয়া হবে না। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রেও ব্যক্তিপিছু  পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি আয় সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এর ফলে ব্যবসায়ী একটি নির্দিষ্ট মাত্রার পরে আর ব্যবসা করতে উৎসাহী নাও হতে পারে কারণ তাতে তার মুনাফা বাড়বে না। কিন্তু বাজারের চাহিদা পূরণ করতে অন্য ব্যবসায়ীরা ঐ ব্যবসায় আসতে পারবে।
চতুর্থত : এর ফলে আয়কর বা বিক্রিয় কর বা পণ্য ও পরিষেবা করের আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকবে না।
পঞ্চামত : দেশের সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারি ছাতার তলায় এনে অভিন্ন পর্ষদের অধীনে অভিন্ন মেধা পরীক্ষায় মেধার ভিত্তিতে ভর্তির সুযোগ দিতে হবে।
ষষ্ঠত : দেশের সমস্ত চাকরি হবে সরকারি। কাজ করলে চাকরি যাবে না। তবে না করলে যেতেই পারে। শুধুমাত্র  যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি হবে। যেহেতু সরকার খাদ্য বাসস্থান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের খরচ বহন করবে তাই চাকরিতে মহার্ঘভাতার  প্রয়োজন নেই। তবে যোগ্যতার ভিত্তিতে কিছু পারকুইজিট বা সুযোগ সুবিধা দেওয়া যেতে পারে।

সাত, এর পরেও দুর্নীতি বা স্বজনপোষণ বা অন্য অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত বিচার করে শাস্তি দিতে হবে।

আট, বিচার ব্যবস্থার সরলীকরণ করে এবং প্রয়োজনে লোক আদালতের বিস্তার ঘটিয়ে সর্বাধিক দু বছরের মধ্যেই একটি মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে।

নয়, বড়ো বা মাঝারি বা ক্ষুদ্র শিল্পের ক্ষেত্রেও সমবায় পদ্ধতিতে যৌথ বা কমিউনিটি মালিকানাধীন ব্যবসা হতে পারে। এটি খানিকটা শেয়ার হোল্ডার ব্যবসার মতো হতে পারে। তবে সমবায় মালিকানাধীন। তবে সব ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত পঞ্চাশ হাজার টাকার বেশি আয় সরকার নিজে গ্রহণ করবে।

এবং পরিশেষে,
নির্বাচন পদ্ধতি বা আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার বিস্তারিত খুটিনাটি বিষয়ে আরো নানা পরিমার্জনের ক্ষেত্র ও অবকাশ আছে। সেগুলি টেকনিক্যাল ও একাডেমীর বিষয়। তবে মূল স্পিরিটটি এই রকম হতে পারে বলে আমার ব্যক্তিগত ধারণা। এতে সমাজতান্ত্রিক সাম্যবাদের মধ্যেও যোগ্যতার ভিত্তিতে কিছু সুযোগ সুবিধার অবকাশ আছে যাতে সুস্থ প্রতিযোগিতা হতে পারে। এক শ্রেণীর হাতে প্রচুর টাকা ও অপর শ্রেণী অভুক্ত বা অর্ধভুক্ত, এই বৈষম্য দূর করার ভাবনা আছে। আরও কিছু সংস্কার যেমন পরিবেশ রক্ষা, বনসৃজন, দূষণ রোধ, জল সংরক্ষণ, বিকল্প শক্তির ব্যবহার, কুসংস্কার প্রতিরোধ প্রভৃতি জরুরী বিষয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পদক্ষেপ দরকার। দরকার ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক ও সরকারি স্তরে।

তবে ব্যাপকভাবে না হলেও খুব ছোট কমিউনিটি থেকে এই প্রচেষ্টা শুরু হতে পারে। অতিরিক্ত ভোগবাদ যে অন্তঃসারশূন্য সেটি উপলব্দ্ধি করতে হবে। ভোগবাদ সম্পূর্ণ বিসর্জন নয়, ন্যূনতম করতে হবে। বই পড়ে শেখা নয়, আত্মস্থ করতে হবে নৈতিক শিক্ষা ও চরিত্র গঠন। অন্তত দুটি প্রজন্মের নৈতিক শিক্ষা সম্পূর্ণ না হলে এই প্রচেষ্টা কোনও ভাবেই সফল হতে পারে না।

এখনও আমরা কার্যত মধ্যযুগেই বাস করছি। যেদিন বিশ্বের সমস্ত দেশ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তুলে নিয়ে সকলের খাদ্য, বস্ত্র, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান নিশ্চিত করবে, ভিসা পাসপোর্ট থাকবে না, একটি কেন্দ্রিয় অবস্থান থেকে বিশ্বের প্রশাসন চালিত হবে সেইদিন থেকে প্রকৃত আধুনিক যুগের শুরু হবে। সেই দিন হয়ত এমনই একটি সুস্থ, সুন্দর, সাম্যময় সমাজের ভাবনার রূপায়ন হতে পারে। সেটি সারা বিশ্বে হতে পারে, একটি দেশে হতে পারে, একটি রাজ্যে বা প্রতিষ্ঠানে বা পরিবারেও হতে পারে। 'হতে পারে' আসলে একটি ভাবনা, একটি সম্ভাবনা, একটি স্বপ্ন...(শেষ)


Share To:

THE OFFNEWS

Post A Comment:

0 comments so far,add yours